বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে বাংলা একাডেমি। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) জাতির মননের প্রতীক এই প্রতিষ্ঠানটি তার গৌরবময় পথচলার সাত দশক পূর্ণ করেছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার সকাল সাড়ে নয়টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা এবং বাংলা একাডেমির পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি এবং বাংলা একাডেমির স্বপ্নদ্রষ্টা ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে একাডেমির একটি প্রতিনিধিদল।
বুধবার বিকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বক্তৃতা এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বক্তৃতা দেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, আজ থেকে সাত দশক আগে তদানীন্তন যুক্তফ্রন্ট সরকারের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন বাংলা একাডেমি। মূলত তা ছিল পূর্ববাংলার জনগণের গভীর আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন। নানা সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সত্তর বছরে বাংলা একাডেমির সঞ্চয়ও সামান্য নয়।
তিনি আরও বলেন, এটা সত্য যে বাংলা একাডেমিতে বিভিন্ন সময় কায়েমি স্বার্থবাদী শক্তি ও রাজনৈতিক গোষ্ঠী তাদের অপপ্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছে। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠান একটি জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক সাংস্কৃতিক পরিচয় নির্মাণ ও উদ্ঘাটনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত, তাকে চূড়ান্তভাবে পদানত করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।
এদিকে ফয়জুল লতিফ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, বাংলা একাডেমিকে বাংলা ভাষার স্বীকৃত ও প্রধান অভিভাবক বলা চলে। বিশ্বমঞ্চে বাংলা ভাষাকে উপযুক্ত মর্যাদায় উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির ভূমিকা অগ্রগণ্য। শুধু ভাষার ক্ষেত্রে নয়, সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বাংলা একাডেমির গুরুত্ব সমান সত্য।
সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ভবিষ্যতে বাংলা একাডেমি মানবিক বুদ্ধিদীপ্ত সমাজ নির্মাণের পাটাতন তৈরিতে সাহসী ভূমিকা পালন করে যাবে।
উল্লেখ্য, ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, গবেষণা ও প্রচারের লক্ষ্যে ঢাকায় বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন বর্ধমান হাউজে একাডেমির প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়। পরে নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হয় প্রশাসনিক ভবন। পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালের এপ্রিলে ‘দ্য বেঙ্গলি একাডেমি অ্যাক্ট ১৯৫৭’ অনুযায়ী বাংলা একাডেমিকে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেওয়া হয়।