পোস্টস

চিন্তা

রবুবিয়ত, রাষ্ট্রীয় পালনবাদ ও মওলানা ভাসানী

১৫ নভেম্বর ২০২৪

ফারদিন ফেরদৌস

বুদ্ধি ও কৌশলের জোরে বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের তরফে একসময় আইরন লেডি তকমা পাওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যার রাজনৈতিক দলকে ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে মাহফুজ-নাহিদ-সারজিসরা। এদের অহংকার দেখানোটা তাই সাজে বৈকি। আবার কোনো পক্ষের দ্বারা ওরা পরাজিত হলে তখনকার রাজনৈতিক বন্দোবস্তও ওরাই বুঝে নেবে। ১৫ বছর ধরে যেনতেনভাবে ক্ষমতা চর্চা করা বা জনসমর্থনের তোয়াক্কা না করে আঁকড়ে ধরে রাখা দলটি ওদের কাছে হেরেছে -এটা স্বীকার করে না নেয়া অনুদারতা ও একধরনের মানসিক দৈন্য।

কঠিন দাম্ভিকতার বীজ পুঁতে রেখে গিয়েছে জনরোষে পলায়নকারী ওই দলটিই। তিপ্পান্ন বছরের ইতিহাসে তো এমনটা ঘটেনি যে, রুলিং পার্টি ক্ষমতাকে গাট্টি বোঁচকায় গোল করে বেধে নিয়ে চলে গেছে সীমানার বাইরে। এমনকি এমনতর ঘটনা এই বাংলায় ঘটেছিল মাত্র আরেকটি সেই ৮৫০ বছর আগে। ইখতিয়ার উদ্দিন খিলজির মাত্র ১৭ সৈন্যের ভয়ে বাংলা ছেড়ে পালিয়েছিলেন রাজা লক্ষণ সেন। 

কাজেই ওই Fleeing Partyকে নিয়ে খানিকটা মজা-তামাশা করবে যুদ্ধে জেতা দল -এটা আর অস্বাভাবিক কী? এতো পূর্বতনেরই শিখিয়ে যাওয়া আবর্তনিক তরিকাই। 

ওই আইরন লেডি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা‌ ঘোষণা দেয়া মেজর জিয়ার অবদানকে খাটো করেননি? তাঁকে স্বাধীনতাবিরোধী বলেননি? খালেদা জিয়াকে বিনা দোষে জেলে ভরে রাখেননি? বিচার শেষ করার পরও ড. শফিকুর রহমানদেরকে নিয়ে বিষোদগারে মেতে থাকেননি? দলের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম মওলানা ভাসানীর প্রকৃত মর্যাদা খাটো করে রাখেননি? তাহলে অমন এক পলিটিক্যাল কালচার রেখে যাওয়া দেশে মাহফুজ আলমরা বঙ্গভবনের অনার ওয়াল থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামিয়ে ফেললে ওদের নিন্দা করবেন কোন মুখে? দায় তো আগে নিজেদেরকে নিতে হবে। কেন স্বাধীনতার স্থপতিকে সর্বমানুষ সমান সম্মান করবে না! 

বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমকে গণ-অভ্যুত্থানের পেছনের কারিগর বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হালের উপদেষ্টা সেই মাহফুজের সাম্প্রতিক একটি ভিডিও বয়ান নিয়ে আবার আলোচনা হচ্ছে। সেখানে তিনি সতীর্থদের সামনে 'পালনবাদ' বিষয়ে ভাষণ দিচ্ছেন। অনেকেই যেন আকাশ থেকে পড়ছে! পালনবাদ এটা আবার কী? এতো বাংলা অভিধানে নেই! এক্সট্রিমিজম-টিজম কিছু নাকি? 

শব্দ আসে মানুষের মুখের বয়ান থেকে। মুখনিঃসৃত সেই শব্দবন্ধই কালক্রমে ডিকশনারিতে অঙ্গীভূত হয়। তো পালনবাদ লেক্সিকনে না থাকলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি ছিল, এখনও নিশ্চয়ই থাকবে। 

State Patronage বা রাষ্ট্রীয় পালনবাদ মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর পলিটিক্যাল ন্যারেটিভ থেকে এসেছে। যেহেতু পরাজিত আইরন লেডিকে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বাতিল বলে গণ্য করে রাখতে হবে, ওই সূত্রে তার পিতাকেও এখন পাশ কাটাতে চায় নতুন রেজিম। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়টিও মনে রাখা হবে না যতক্ষণ না লাস্ট রেজিম তাদের শাসনকাল ও শেখ মুজিবের শাসনকালের ভুলভ্রান্তি নিয়ে জাতির কাছে অ্যাপোলজি প্রকাশ করছে। চর্বিত চর্বন আর কি! নাথিং নিউ। 

ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুর যেমন বিশ্বস্বীকৃত নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শন আছে, অমনধারার পলিটিক্যাল ফিলোসফি মাহফুজ-নাহিদদের নেই। ওঁরা কেউ এসেছে শিবির থেকে, কারো অ্যাফিলিয়েশন হিজবুত তাহরীরের সাথে, কেউবা ছাত্র ইউনিয়ন, কেউ দল নিরপেক্ষ, আবার কেউ কেউ সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে এসেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজনৈতিক দর্শনটা তাহলে কী হবে? বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে দেয়ার পর মাঠ তো শূন্য রাখা যাবে না। মুজিবইজম এখন টোটালি অপাঙ্ক্তেয়। রইল বাকি মুজিব গুরু মওলানা ভাসানী। যিনি একাধারে অসাম্প্রদায়িক, সমাজতান্ত্রিক, উদারমনা এবং ধর্মীয়ভাবেও আধ্যাত্মিক নেতা। এমনতর সর্বজনীন লিডার ভাসানী তাই এইসময় পুরোদস্তুর প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা ভাসানীর জীবনপাঠ নিয়ে একাডেমিক আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। ফরহাদ মজহারের মতো পলিটিক্যাল থিওরিস্ট ও থিওলজিয়ানরা ভাসানীর আলাপে মঞ্চ কাঁপাচ্ছেন। 

মওলানা ভাসানী যেখানে অতি প্রাসঙ্গিক, তাঁর পালনবাদ নিয়ে সেখানে সরব আলোচনা হতেই হবে। 

সৈয়দ ওয়াকিল হাসানের লেখা 'বাংলাদেশের বাম রাজনীতি ও মওলানা ভাসানী' গ্রন্থের মতে, মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শন ছিল রবুবিয়ত। ওই দর্শনে ভাসানী এবং আল্লামা আবুল হাসিমের গুরু ছিলেন আল্লামা আজাদ সুবহানী। ‘রবুবিয়ত’ শব্দের বাংলা অর্থ বলা যায় ‘রাষ্ট্রীয় পালনবাদ’। আল্লাহ সমগ্র বিশ্ব এবং সকল জীবনের প্রতিপালক। তিনি সকল জীবের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সৃষ্টি করেছেন এবং তা ব্যবহার করারও বিধান দিয়েছেন, যার একটি বিশেষ অর্থনৈতিক দিক হল রবুবিয়ত। রবুবিয়ত সমাজে কায়েম করবে এমন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা যে ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের কর্ণধার সকলের প্রতিপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। রাষ্ট্র সকল মানুষের জীবিকা ও প্রতিপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করলে- এই ক্ষেত্রে ইসলাম ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য তেমন থাকে না। এই বিশ্বাস নিয়েই মওলানা ভাসানী রবুবিয়ত কায়েমের জন্য সমাজতন্ত্রকে পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন বলে মনে হয়।' 

পালনবাদ কী এবং কেন এর প্রাসঙ্গিকতা ফুরোয়নি, এই আলোচনা থেকে পরিষ্কারভাবে প্রতিভাত হলো। মুশকিল হলো বঙ্গবন্ধুকে সর্বজনীন করতে পারেনি তাঁর দল এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকা নিজ কন্যা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা পাওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শনকে সর্বজননন্দিত হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবে? আমরা মনে করি পারবে না। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের প্রধানতম লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে একটি সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন। ওই নির্বাচনে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে তারা জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দর্শনের বাইরে যাবে না। যদি জামায়াতের কাছে ক্ষমতা যায়, তাদের আছে আবুল আ'লা মওদূদী। অন্যান্য দলের কোয়ালিশন হলে তারাও ভাসানীকে শ্রদ্ধা করলেও তাঁর রাজনৈতিক দর্শনকে পাত্তা দেবে না। তবে জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন ভাসানীকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণে রাখছে এবং তারা স্লোগান তুলছে, 'ভাসানীর পথ ধরে জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হোন।' 

এই বাস্তবতায় এমন ঘটনা কি ঘটা সম্ভব স্বীকৃত সব রাজনৈতিক দলকে পেছনে ফেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের কাছেই বাংলার মসনদের জিম্মাদারি রয়ে যাবে? তারাই মওলানা ভাসানীর আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করবে? জোনায়েদ সাকিরা সেখানে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে যাবে? 

বলা হয় ৭৫ -এ পরিবারসহ অ্যাসাসিনেটেড হওয়ার পর মওলানা ভাসানী রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন। এ কারণে ক্ষমতা হারানো দলটির কাছে যথোচিত সম্মান ও মর্যাদা ভাসানী পাননি। অবশ্য তাদের দিক থেকে একমাত্র বঙ্গবন্ধুকেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ বানিয়ে বাকি বীরদেরকে সাইডলাইনে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। 

কিন্তু আমরা ভাসানীকে মনে রাখব তাঁর কর্মধারায়।
১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ভাসানী পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের 'আসসালামু আলাইকুম' বলে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন। 

বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করলে তাঁর গুরু ভাসানীকে সম্মান জানিয়েই তা করতে হবে। ক্ষমতাহারা পার্টির এ কালের নেতাদের বয়ানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিবেচ্য হবে না। কেন? 

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ রেসকোর্সে ঐতিহাসিক ভাষণের পরই স্বাধীনতার দাবিতে তীব্র হাওয়া লাগে দেশজুড়ে। এর প্রমাণ অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে ৯ মার্চ পল্টনে জনসমুদ্রে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর দেওয়া ভাষণ। 

৯ মার্চ পল্টনে ভাষণ দিতে সরাসরি টাঙ্গাইলের সন্তোষ থেকে ঢাকা আসেন মওলানা ভাসানী। বঙ্গবন্ধুই তাকে ফোন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ফোনে আলোচনার পরে দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন। বিকেলে পল্টন ময়দানের ভাষণে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী স্পষ্টতই জানিয়ে দেন ‘স্বাধীনতাই একমাত্র গন্তব্য পূর্ব পাকিস্তানের।’
আমরা গর্বভরে ৭ মার্চের কথা বলি। পাঠ্যপুস্তকেও পড়ে এসেছি। কিন্তু ভুলেও ৯ মার্চের ইতিহাস মুখেও উচ্চারণ করি না। 

ড. মোঃ ফোরকান মিয়ার লেখা 'মওলানা ভাসানীঃ রাজনীতি, দর্শন ও ধর্ম' গ্রন্থ মতে,
'ভাসানীর মতো অসাম্প্রদায়িক লিডার বিশ্বের ইতিহাসে খুব হাতেগোনা। তিনি ছিলেন একই সাথে রাজনৈতিক নেতা ও আশ্চর্য ব্যতিক্রম আধ্যাত্মিক নেতা। তাঁর কাছে ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাস ছিল গৌণ, মনুষ্যত্বই ছিল মুখ্য। সে জন্যে হিন্দু-মুসলিম, আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে সকলেই তাঁর কাছে আশ্রয় পেত। তিনি নিজে ইসলামের প্রতিটি বিধিনিষেধ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পালন করতেন, অথচ এসব পালন করার জন্য তিনি তাঁর অনুসারীদের কখনো জবরদস্তি করতেন না। তবে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করুক এটা তিনি চাইতেন। প্রত্যেককে তিনি নিজ নিজ পালন করার উপদেশ দিতেন। ধর্মীয় ব্যাপারে ভাসানী এতটাই উদার ছিলেন যে, অন্য ধর্মের লোকেরা কেউই তাঁর কাছে এসে তাঁর ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে নি।' 

মওলানা ভাসানী রাজনীতির সহাবস্থানে রেখে সংস্কৃতি চর্চাকে আন্তর্জাতিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গেও সম্পৃক্ত রাখতে চেয়েছেন। কাজটা করতে গিয়ে তিনি ধর্মব্যবসায়ীদের তো বটেই, মার্কিনপন্থি সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী ইত্তেফাক পত্রিকা দ্বারাও ভীষণ ভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন। 

উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মুখে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বা পালনবাদের ন্যারেটিভ শুনে চমকে যাওয়ার আগে আমাদের সবারই ভাসানী পাঠ জরুরি। 

১৯৭৬ সালের ১৩ নভেম্বর খোদায়ী খিতমতগার সম্মেলনে সর্বশেষ ভাষণে মওলানা ভাসানী বলেন, 'জাতি-ধর্ম-দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের প্রতি আমার আবেদন- আপনারা খোদার ওয়াস্তে খোদার বান্দা তথা সমগ্র সৃষ্টির সেবায় আত্মনিয়োগ করুন। রব্বানি জীবনবিধান কায়েমের সংগ্রামে আগাইয়া আসুন। রবুবিয়াতের পথই অর্থাৎ সর্বজনীন মানবাধিকার ও সামগ্রিক কল্যাণের পথই সাফল্য ও শান্তির পথ। আল্লাহর শত্রু অর্থাৎ শোষক, জালিম, মুনাফাখোর, চোরাকারবারি, দুর্নীতিবাজ ও দুষ্কৃতিকারীদের দুশমন জানুন। আল্লাহর দোস্ত অর্থাৎ যাহারা সৎভাবে জীবনযাপন করে, হালাল রোজগার করে, হক কথা বলে, শোষিত-বঞ্চিতের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করে, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানিয়া চলে, তাহাদিগকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করুন। আল্লাহর দোস্ত আমাদের দোস্ত, আল্লাহর দুশমন আমাদের দুশমন। তাহা হইলে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী জানিবেন।' 

ক্ষমতার প্রতি নির্মোহ ভাসানী ধার্মিক ছিলেন, গোঁড়া ছিলেন না। তিনি ধর্মকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করতে বলেননি। তাঁর আধ্যাত্মিকতা ছিল মজলুমকে জালিমের হাত থেকে বাঁচনো এবং সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার পয়গাম মাত্র। তাই তো তিনি চিরায়ত বিপ্লবীদের জন্য সবকালের জন্য প্রাসঙ্গিক নির্দেশনাটি দিতে পেরেছিলেন। ভাসানী বলতেন, 'ধার্মিকের বেশে দুনিয়াতে যেমন বহু রকমের ভন্ডের আবির্ভাব ঘটিয়াছে তেমনি অহিংসাপরায়ণ সাজিয়া মোনাফেক শোষক গড়িয়া উঠিয়াছে। এই সকল পরিস্থিতির মোকাবিলা করিতে বিপ্লবী মহলকে সচেতন ও সক্রিয় থাকতে হয়।' 

কাজেই মওলানা ভাসানীর রবুবিয়ত তথা রাষ্ট্রীয় পালনবাদ বিষয়ে বিরূপ চিন্তাকে প্রাধান্য দেয়ার কিছু নাই। ধর্মীয় গণ্ডির মধ্যে আটকে রেখে তাঁর জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে বিচার করবার উপায় নেই। বাংলাদেশের ইতিহাস আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর সাথে ভাসানী নিশ্চিতই অনিবার্য উচ্চারিত নাম। ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শনের অনুবর্তী থেকে কেউ যদি রাষ্ট্র ও জনপরিসরে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পায় আমরা তাদেরকে সমর্থন দেব। কিন্তু আমাদের দৃঢ় আস্থা ও পবিত্র বিশ্বাসকে অটুট রাখতে পারবে অমন অহিংস মানুষ কারা? 

আমাদের মিলিত সংগ্রাম: মওলানা ভাসানীর নাম কবিতায় আবদুল গাফফার চৌধুরী লিখেছেন,
পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণের কালাম-
কন্ঠে শুনি তার। হতবাক সবিস্ময়ে দেখি
জীবনে জীবনে এ কী
মিলিত প্রাণের গতি; কলকন্ঠে আকাশ মুখর
বজ্রে আর ঝড়ে শুনি স্বচ্ছ স্বর
মুখের ভাষায় শুনি নাম।
মৌলানা ভাসানীর নাম। 

লেখক: সাংবাদিক
১৫ নভেম্বর ২০২৪