'দেহের নিয়মে দেহ জাগে যদি মন না জাগে '' গৌতম ঘোষের মনের মানুষ সিনেমার এই কথাটা আমাকে অতীত মুখি করে তোলে।কথাটাই প্রতিটি লোম শিওরে উঠে ।দেহের নিয়মে দেহ জেগেছিল কিন্তু মন জেগে উঠলো ৩০ বছর পরে ।দেহ টানে যখন তখন কিন্তু মন যে কখন টানে তা মন নিজেই জানে না .৬০ বসন্তের দাড় প্রান্তে এসে নিজেকে বড় নিঃস্ব মনে হয়।নিজেকে অতিত হীন এক মানুষ বলে মনে হয় ।না আমি অতীত হীন মানুষ নয় বরং অতীত বিমুখ মানুষ ।কিন্তুই কিছু অতীত মানুষ নিজের অজান্তেই তৈরি করে ফেলে, সে অতীতের স্মৃতির ভার বয়ে চলা তখন বড় কঠিন মনে হয়।স্মৃতির ভারে মস্তিষ্ক যেন কুজো হয়ে আসে ।অতীতের কথায় মনে পড়ে যায় আমার এক অতীত ছিল।নিঃসংগ জীবনে মানূষের নিজের রক্তের কথা মনে পড়ে যায়।আমারো কি সন্তান ছিল?হ্যা এই সন্তানের টানেই নিজের অতিতের পানে ফিরে যাওয়া।যার ,ভবিষ্যত আর বর্তমান ক্ষীন সে ততই অতীত মুখি হয়।দেহ জেগেছিল ৩০ বছর আগে আর মন জাগলো ৩০ বছর পরে এসে।নিঃসংগ জীবনে মানুষ আলতো করে চোখ বন্ধ করলেই অতীতের বুকে ডুবে যায়...............।
আমি তখন সদ্য চাকুরীতে জয়েন করেছি।আমি তখন টগবগে যুবা ।নতুন নতুন সম্ভব অসম্ভভ কল্পনাতে বিভোর।সফলতার পেছনে ছুটতে গিয়ে প্রেম ভালবাসার পেছনে সময় দিতে পারেনি।মন তখনো জাগেনি ,কিন্তু দেহ সে বাধ মানতে চাইনি।মন যত না মন খুজেছে দেহ তার শত গুন আগ্রহ নিয়ে দেহ খুজেছে .২৫ বছর বয়স বড় ভয়ংকর।এই বয়সে পুরুষদের জাগতিক কর্ম কান্ড দেহ কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে চায়।আমার দেহ এমন কাউকে নিজের অজান্তেই খুজে ফিরছিল।আর মন পড়ে ছিল ছোট ভাই বোনদের মানুষ করা আর আর মাকে সকল দুশ্চিন্তা হতে রেহায় দেয়া।মা বিয়ের কথা অনেক বলেছেন কিন্তু মন সাড়া দেয়নি ।কারন দেহ তত দিনে দেহ খুজে পেয়েছে।আমি যে সরকারী কুয়াটারে থাকতাম তার পাশেই ছিল তন্ময় দাদা আর অনিতা বৌদির সুখের সংসার।তন্ময় দাদা ছিলেন ব্যবসায়িক মানুষ টাকা পয়সার অভাব ছিল না। টাকা ,নাড়ি আর খ্যাতি এই তিনের লোভ বড়ই ভয়ংকর ব্যয়ার ।যার যত আছে তার ক্ষুধা যেন ততই বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুন গতিতে।আমার ছিল নারীর লোভ আর অনিতা বৌদির ছিল টাকার লোভ আর তন্ময় দাদার ছিল ক্যাতির মোহ।অনিতা বৌদি খুব সুন্দর ছিলেন না , তবে দেখতে খারাপ ও ছিলেন না ।বয়স ৩৫ এর মত হবে তবুও এই বয়সে যে ফিগার ধরে রেখেছিলেন তাতে ২৫ বছর বয়সি নারীরা তাকে দেখে রীতি মত জ্বলবে।তার চেহেয়ারায় একটা মাটি মাটি ভাব আছে ।যা সহজেই যে কোন পুরুষ কে আকর্ষন করতো।আর তাছাড়াও ৩৫-৪০ বছর বয়সি নারিদের শারীরিক চাহিদা হয় সর্বগ্রাসি মত । আর কটা দিনই বা আছে সামনে যা পাই লুটেপুটে খাই খাই ভাব।আর যদি আমার মত যুবক কে শয্যা সঙ্গী করতে পারে তাহলে তো কথায় থাকে না ।তাদের চাহিদা যেন দ্বিগুন হারে বেরে যায়।যৌবনের পড়ন্ত বিকেলের কামুক নারীদের চোখ কম বয়সী ছেলেদের দিকে বেশী থাকে ।আর আমার মত যুবকরা হতে চায় বিশ্বপ্রেমিক, যেন যৌবন দিয়ে সব কিছুই তারা জয় করতে পারে।বৌদির ১৩ বছর বয়সী অন্বয় নামের ছেলে ছিল। আমার বাসার সামনে খেলার মত জায়গা থাকাতে ও প্রায়ী খেলতে আসতো ।আমিও খেলায় অংশ গ্রহন করতাম ।ওদের সাথে মিশতে মিশতে আমার একাকিত্ব কিছুটা গিয়েছিল।কিছুদিন বাদে খেয়াল করলাম বৌদি আমার দিকে বেশীই নজর দিচ্ছেন।প্রথম প্রথম একটু কেমন কেমন যেন লাগতো ।কিন্তু এই কেমন কেমন অনুভুতির মাঝে কেমন কেমন আনন্দ অনুভুত হত।বেশ ভালই লাগতো তখন ভাল লাগারই বয়স।কিছুদিন বাদেই বৌদিকে দেখার জন্য তার ছেলেকে খোজার নাম করে তাদের বাস্য যাতায়াত শুরু করলাম।বিশেষ করে যখন তন্ময় ভাই দাদা বাস্য থাকত না।কিন্তু ভাললাগার মাত্রা এতই বেড়ে গেল যে দাদা থাকলেও নানা বাহানায় ওদের বাসায় যেতাম।ততদিনে বৌদিরো আমার প্রতি দুর্বলতা বেড়ে গিয়েছিল।ক্রমেই আমাদের মেলামেশা বেড়ে গেল।কিন্তু বৌদির কিংবা আমার হাবভাব কখনো বোঝা যেত না ।বৌদি আমাকে নিয়ে খেলছে আমি বুঝতাম কারন এ সম্পর্কের কোন ভবিষয়ত ছিল না।তবে মানুষ কখনো খেলনার বস্তু হতে পছন্দ করে না।বরং খেলাতে ভালবাসে।অথচ বৌদি যেন আমাকে নিয়ে খেলতে খেলতে আরো পাগল হয়ে উঠলেন।বৌদির প্রতি মোহ আমার অনেকটায় ফিকে হয়ে এসছে। আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম এখান থেকে বদলী হয়ে যাব।এখানে আর থাকা যাবেনা ।একথা বৌদিকে জানালাম না।ভাবলাম বৌদির সাথে আর দেখা করলাম না। কিন্তু পারলাম না, মনের সাথে যুদ্ধ করে হেরে গেলাম।মানুষ তার কোন অভ্যাসকে সহজে পরিবর্তন করতে পারে না, অভ্যাস্কে বদল করতে হলে নতুন কোন অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে হয়।গেলাম বৌদির কাছে , গিয়ে দেখলাম বৌদিকে খুব খুশি খুশি লাগছিল।শুনলাম দাদা নাকি বেশ কিছুদিনের জন্য কলকাতা যাবে।কি জানি কি মনে হল বৌদিকে হঠাত জিজ্ঞাসা করে বসলাম বৌদি কি আমাকে ভালবাসেন কিনা ।বৌদি এমন করে ডাইনির মত করে হাসলেন যেন বাচ্চা ছেলে এসব কি বলে ।বললেন ভাল না বাসলে এতদিন এসব কি আর এমনি এমনি করছেন। এসব বৌদির কথার ধরন এমন যে আপনি এদেরকে এড়িয়ে যেতে পারবেন না।এরা পুরুষকে নেশা ধরাতে জানে যে যা সহজে ছাড়ে না।কিন্তু আমাকে যে নেশা ছাড়তেই হবে ।বৌদি আমাকে নিয়ে আবার মত্ত হলেন।শেষবারের মত নিজেকে নিয়ে খেলতে দিলাম, কিন্তু ভাবিকে বুঝতে দিলাম না।।কিছু দিন পরে আমি বদলি হয়ে বৌদিদের শহর থেকে অনেক দূরে চলে গেলাম ।বৌদির সাথে অনেক দিন কোন রকমের যোগাযোগ রাখিনি।কিন্তু মানুষেড় স্বভাবই হলে অতীত সম্পর্কের দিকে মাঝে মাঝে চোখ ফিরিয়ে দেখা। দেখে এই যে অতীত মানুষ টী তার চেয়ে ভাল আছে না মন্দ আছে । যদি ভাল থাকে তবে হিংসায় গা জ্বলে। আর মন্দ থাকলে মনে এক টুকরো বরফের মত প্রশান্তি লাগে।কিন্তু এই পেছনে ফিরে তাকিয়ে অপরের সর্বনাশ দেখার আনন্দ পেতে যেয়ে আমরা নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনি। কি জানি কি মনে করে বৌদিকে ফোন দিয়ে বসলাম। ফোন না দিলেই ভাল হত কিন্তু ভাগ্যে যা আছে তা ঘোটার জন্য সেখানে আপনাকে ভাগ্য টেনে নিয়ে যাবেই ।বৌদিকে ফোন দিলাম , বৌদি অনেক খুশি হলেন সাথে কেন বলে আসলাম না , বলে আসলে কি ক্ষতি হত এসব কথা র নান সম্ভব অসম্ভব সত্য মিথ্যা বানিয়ে বৌদির মন যুগিয়ে দিলা। কিন্তু বৌডী আমাকে যা শুনালো তাতে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।বৌদি জানালো আমার সন্তান নাকি তার গর্ভে ।কথাটা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। নিজের সন্তানের কথা শুনে কোথায় আনন্দ পাব । তা না মন্টা বিষে ভরে গেল।সেদিন বুঝিনি সন্তান কি জিনিস।কিছু কিছু পুরুষ আছে যত দিন যৌবন আছে তত দিন সন্তান সন্ততির কথা মনে করে না।,।এদের কেবল নারী দেহের প্রতি টান থাকে যে টানের মোহে নিজ রক্তের কথা ভুলে যায়।আমারো সেই দশা ।এরপর থেকে বৌদি প্রায়ি আমাকে হুমকি দিত আমাকে ব্লেক্মেইল করে টাকা নিত।আমি আমার এ চাকরিস্থলে এসেও অন্য নারীর দিকে ঝুকে পড়ি ।আমার টার্গেটে ঐ মধ্য বয়সি নারীরায় থাকতো।শুনেছিলাম বৌদি আমার ছেলের নাম রেখেছে মৃন্ময়। নামটা শুনে রাগ হয়েছিল কেন জানিনা। তন্ময়ের সাথে মিল রেখে মৃন্ময়। রাগে গা কেন যে জ্বলেছিল জানিনা।কিন্তু ছেলেকে দেখার মোহ পর্যন্ত কোন দিন হয়নি ।বৌদি এ সুযোগে আমার থেকে অনেক টাকা নিইয়েছে।সন্তানের কথা ভাবতেও চাইতাম না।ধুর এইসব স্নতান দিয়ে আমার কি লাভ। মানুষ যখন মোহ নিয়ে কোন বর্তমান সুখের দিকে লক্ষ্য করে এগিয়ে যায় তখন মানুষ পেছনেও তাকায় না সামনেও দেখতে পায়না । ভাবে দিন বুঝি এই একই ভাবে চিরকাল যাবে।বহু নারী আমার জীবনে এসেছিল, কিন্তু কোন নারীর আমি হইনি।সবাইকে পেতে যেয়ে আমি নিঃস্ব হয়েছি, কখনো বুঝতেই পারিনি।আজ এ জীবনের ক্রান্তি লগ্নে একান্ত নিজের কাউকে দেখতে ইচ্ছে প্রবলতর হচ্ছে। মা, গত হয়েছেন অনেক আগেই। ভাই বোনেরতা যে যার মত প্রতিষ্ঠিত । আমার দিকে ঘুরে তাকানোর সময় তাদের কই। কিংবা তাদের ভালবে্সেই বা আমার মন তৃপ্ত হতে পারে না কেন? চাকরি থেকে অবসর নিএছি। অনেক ধন সম্পদ করেছি। কিন্তু এইসব ভোগ করার জন্য আমার নিজের কেউ নেই। যে কিনা একান্ত আমার রক্তের।চাকরি করতে যেয়ে অনেক জায়গায় বদলী হয়েছি।পরে বৌদির সাথে আর কোন যোগাযোগ ছিল না।বোউদির খোজ করতে না বৌদির না আমার রক্তের খোজ করতে আমি দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আমার প্রথম চাক্রিস্থলে গেলাম।বৌদির অনেক খোজ নিয়ে জানতে পারলাম বৌদি গত বছর মারা গিয়েছে । মন্টা ভীষন খারাপ হয়ে গেল। না বৌদির জন্য না আমার সন্তানের কথা জানতে পারবো কিনা এই আশংখায়।বৌদির সেই ছোট্ট ছেলে অন্বয় এর খোজ পেলাম। সে অনেক বড় হয়ে গেছে। তার কাছে দাদা বৌদির খোজ নেয়ার ছলে অনেক কথায় জানতে পারলাম। বৌদি মারা গেছেন। তন্ময় দাদ অসুস্থ। অন্বয়কে তার ভাই মৃন্ময় এর খোজ নিলাম। সে জানালো তার কোন ভাই নেই । সে তো একাই । শুনে আমার মাথা ঝিম ঝিম করে ওঠে। আমই আমার বাসায় ফিরে এলাম ।আমি ভীষোণ অসুস্থ হয়ে পড়েছি।আজ আমার জীবন যৌবনের ক্রান্তি লগ্নে এসে কত কথায় মনে পড়ছে।আজ মন জেগে উঠেছে।দেহের যখন ক্ষমতা কমে যায় মন তখন বেশি করে সক্রিয় হয়।অথচ মন তখন ভেবেই ক্লান্ত হয়ে পরে । আজ আমার কেউ নেই। আচ্ছা যদি আমার মৃন্ময় থাকতো তখন কি ওকে আমি আজকের মত করে ভালবাস্তে পারতাম, কিন্তু ওতো বৈধ সন্তান হত না।বৈধ সন্তান না হলেই বা কি সন্তান তো।এখন বুঝি মানুষের আগমন কখনো বৈধ-অবৈধর সঙ্গায় আসে না।প্রতিটি মানুষ বৈধ।কেবল কালের নিরিখে , , কিংবা স্থানের নিরিখে মানুষের কর্মকান্ড অবৈধ।প্রকৃতির চোখে কোণ জিনিস অবৈধ বলে পৃথিবীতে আসে না, অবস্থানো করে না।এসব ভেবে বড় হাসি পেল নিজেকে তাচ্ছিল্যর হাসি।মানুষ নিজেওর বোকামি নিজে ধরতে পারলে এক্লাকি যেম্ন হেসে ওঠে তেমন হাসি। এ হাসি বড় দুঃখে আসে। মৃত্যুলগ্নে এসে মানুষের চিন্তা ভাবনা বড় অসংলগ্ন হয়ে পড়ে । আমারো তাই,। মানুষে স্ময় ফুরিয়ে আসলে মানুষ ভবিষ্যত নিএ স্বপ্ন দেখতে পারে না। মানুষ তখন অতীত চারি হয় আর আফসোস করে এমন টা না করলেও পারতাম।কিন্তু এ বয়সে মন জেগে আর কি হবে আমার মৃন্ময় কি আসলেই ছিল নাকি বৌদি আমাকে ফাকি দিয়েছে । কিন্তু ও যদি থাককতোই তাহলে আমি ওকে কি বলতাম, কি জবাব দিতাম আমার মৃন্ময়কে ?