বৃষ্টি থেমেছে কিছুক্ষণ আগে। শহরের রাস্তাগুলো এখনো ভেজা, বাতাসে তাজা মাটির গন্ধ। রবির মন আজ বিষণ্ণ। অফিস থেকে বেরিয়ে চায়ের দোকানে বসে সে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। হঠাৎ করেই তার চোখে পড়ল মেয়েটিকে। লাল শাড়ি পরা, ভেজা চুল, চোখে হালকা কাজল। মেয়েটি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কেমন যেন উদাস দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
রবির চোখ সরাতে পারল না। একটা অদ্ভুত টান অনুভব করল সে। এমনটা আগে কখনো হয়নি। কিছুক্ষণ পরে মেয়েটি ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করল। রবি বুঝতে পারল না কেন, কিন্তু সে উঠে দাঁড়াল। মেয়েটির পেছন পেছন হাঁটতে লাগল।
হঠাৎ মেয়েটি থেমে গেল। রবি থমকে দাঁড়াল। মেয়েটি ঘুরে রবির দিকে তাকাল। এক মুহূর্তের জন্য তাদের চোখে চোখ পড়ল। রবির মনে হলো, পুরো পৃথিবী যেন থমকে গেছে।
মেয়েটি মৃদু হেসে বলল, “আপনি কি আমাকে অনুসরণ করছেন?”
রবি লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল, “আসলে... না মানে... আমি...”
মেয়েটি হেসে বলল, “আপনার মতো লাজুক মানুষও আছে, তা জানা ছিল না।”
রবি তড়িঘড়ি করে বলল, “আমার নাম রবি। আমি সত্যিই আপনাকে অনুসরণ করছিলাম না। আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম কারণ... আপনি অনেক সুন্দর।”
মেয়েটি এবার একটু ভ্রু কুঁচকে বলল, “আপনি সব অপরিচিত মেয়েদের সাথেই এমন বলেন?”
“না, কখনো না। এই প্রথম বলছি,” রবি সত্যি বলল।
মেয়েটি হেসে বলল, “আমি মেঘলা। আচ্ছা, আপনি কি সবসময় এমন সরল উত্তর দেন?”
রবি হাসল। মেঘলার সরল হাসি আর তার কথার ধরণ রবিকে মুগ্ধ করেছিল। এরপর কিছুক্ষণ গল্প চলল। মেঘলা বলল, সে একটি লাইব্রেরিতে কাজ করে, বই পড়তে ভালোবাসে। আর রবি বলল, তার ভালো লাগার কথা, তার একাকিত্বের কথা।
গল্প করতে করতে তারা হাঁটছিল। শহরের আলো জ্বলে উঠেছে। রাস্তার ধারে বসে তারা একসঙ্গে কফি খেল। মেঘলা বলল, “আপনার মতো মানুষ শহরে বিরল। তবে এটা আমার সৌভাগ্য যে আজ দেখা হলো।”
রবির বুকের ভেতর কিছু একটা নড়ল। সে বলল, “আমার মনে হয়, আজকের দিনটা আমার জীবনের সেরা দিন।”
মেঘলা হেসে বলল, “হয়তো আমাদের গল্প এখানেই শেষ নয়।”
এরপর তারা দুজনই ধীরে ধীরে বিদায় নিল। কিন্তু দুজনের মনেই অনুভূতি ছিল, এ বিদায় চিরকালের নয়। বরং এটি এক নতুন গল্পের শুরু।
- রবি জানত না, এই রাতের আকাশে তারার চেয়ে বেশি কিছু অপেক্ষা করছে। মেঘলার মনেও যেন এমন কিছু অনুভূতি জন্ম নিচ্ছিল। রাস্তার ভেজা আলোয় মেঘলার হাসি যেন রবির জীবনে এক চিরন্তন স্মৃতি হয়ে রইল।