আজকে ছুটির দিন , বাসায় একাই বসে আছি ।অন্যান্য কলিগরা কেউ বেড়াতে গেছে কেউ বা নিজেদের গ্রামের বাড়িতে গেছে ।একটা সময় প্রেম করতাম তখন ছুটির দিনে হাওয়ার বেগে চলতাম ।কিন্তু প্রেমে ছ্যাকা খাওয়ার পর ছুটির দিন আর যেতে চাইনা ।পরে আর প্রেমের দিকে গেলাম না। আর এখন চাকরি নিয়ে ব্যাস্ত । কিন্তু সারা জীবন কি এই ভাবেই যাবে।শাল মানুষের মন বড়ই অদ্ভুত ।মানুষ যখন একা থাকে তখন মানুষ আপন খেয়ালেই নিজের মনের সাথে কথা বলে । কিন্তু মানুষ যখন মানুষের মাঝে থাকে মানুষ এর মন তখন একা হয়ে যায়।মানুষ তখন মুখ দিয়ে কথা বলে ।এসব কি ভাবছি , বিকেল টা শেষের দিকে মানুষের মন হাহা কারে ভরে ওঠে কেন যে এমন হয় মানুষ নিজেই জানে না ।কপখন থেকে একা বসে আছি কিন্তু খারাপ লাগা শেষে হচ্ছেই না। এর মাঝেই খেয়াল করে দেখলাম আকাশে পুর্ন চাঁদ উঠেছে , আজ পূর্ণিমা নাকি / মন আপন মনেই গেয়ে উঠল,
আজ এ পূর্ণিমা রাতে চল পালিয়ে যায়
গানটা শেষ না হতেই ল্যান্ড ফোন টা বেজে উঠলো ।শালা মেজাজটায় বিগড়ে গেল খোলা মনে একটু গান গাইবো সে সুযোগ টাও মেলে না ।থানা থেকে ফোন আস্তেই থাকে
;- ইয়েস শাওন স্পিকিং
;-(ওপার থেকে ) স্যার আপনাকে সালাম জানিয়েছেন।
;-একটু পরে আসছি
;-ওপার থেকে স্যার একটু ইমারজেন্সি আসতে বলেছেন।
-ওকে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম।
থানায় একজন নতুন দারোগা এসেছেন
তার তত্তাবধানেই আমাকে কাজ করতে হবে । শালার (মনে মনে ) আজকে সকালে জয়েন করেই একদিন গরাতে না গড়াতেই দাদা গীরি দেখাতে শুরু করেছে । না আজ মেজাজ টা বড়ই তিরিক্ষি কেন বুঝতে পারছি না । কোন এক মনীষী বলেছিলেন যে পুরুষ নারী সঙ্গ হতে বঞ্চিত তার মেজাজ নাকি আবহাওয়ার মত যখন তখন পরিবর্তীত হয়।আমার ও কি একই দশা হল নাকি । না শালার একতা বিয়ে করেই ফেলতে হইয় দেখছি। কিন্তু এ জগতে নারীর চেয়ে ভারী জিনি আর কি আছে ? কিন্তু আমার হল টা কি ? প্রেম হীন এ জীবনে এতো দর্শন আসে কই থেকে বুঝে উঠতে পারি না ।মিনিট সাতেকের মাঝেই আমি রেডি হয়ে থানায় পৌছে গেলাম।আমাদের থানাটা বাংলাদেশের মডেল থানার মধ্যে অন্যতম সেরা । পরিবেশ টাও দারুন ।এই থানাতেই আমার ১ম জয়েন বলে এই থানার প্রতি আমার মায়া জন্মে গেছে ।শাল এই মায়া জিনিস টা একদম ভাল না । ছায়ার মত লেগে থাকে ।যকাইহক স্যারের অফিসের সামনে একজন কন্সতেবল কে জিজ্ঞাসা করলাম স্যার আছেন কিনা ? স্যার এই মাত্র বের হয়ে গেলেন। বিরক্ত যা লাগে না মনে মনে বললাম।কিন্তু কিছু করার নাই। বস রা এমনই হয়। বিরক্তির মাঝেই আমার এক বন্ধ সাথে দেখা হল । আমি বললাম কি হে বন্ধু কেমন আছ ? বন্ধু ভাল আছে বোঝায় যাচ্ছে কিন্তু আমাকে জিজ্ঞাসা করলো আমি কেমন আছি /
ভাল নেই বন্ধু
কেন কি হল তোমার আবার
কি জানি বন্ধু বিকেল টা এলেই মনের মাঝে হুহু করে ওঠে বিশেষ করে যখন একা থাকি আর সময় টা যদি হয় বসন্ত কাল। কি জানি এই বসন্ত কাল আমাকে পাগল করে দেয়।
বিয়ে করে ফেল বন্ধু
কে আর মেয়ে দেবে / পুলিশদের তো মানুষ মেয়ে দিতে চাইনা ।
কেন
কি জানি । তবে একটা গল্প বলই শোন বন্ধু ।
বল
আমার এক বড় ভাই বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গিয়েছিল । তো সে মেয়ে পুলিশ ছেলে বিয়ে করবে না । কারন কি তা জানতে চাইলে মেয়েটা ভাইকে বলেছিল পুলিশ্বের স্বভাব ভাল না। এরা এমন কোন ঘুষ নাই যে খাইনা । মেয়েটা গল্প করে বলেছিল এক পুলিশ খুব সকাল বেলায় এক রিকশালাকে ধরে বলেছিল দে ৫০ টাকা, রিকশালা বলেছিল এখনো বৌনি হয়নি , তখন পুলিশটা বলেছিল তাহলে রিকশায় করে ঘুরিয়ে আন
। রিকশাওলা মুখ কাচুমাচু করে বলেছিল , স্যার বললাম না বোউনি হয়নি তাই বিনি পয়সায় তো কাউকে নিতে পারিনা । পুলিশ বেটা নাকি বলেছিল তাহলে পিঠ চুলকিয়ে দিয়ে যা।
এই হল পুলিশের অবস্থা তাই তো মেয়ের বাপ তো বাপ মেয়েরাই পুলিশকে বিয়ে করতে চায়না। দুজনে হ হো করে বেশ হেসে দিয়ে ছিলাম।তারপর অফিসে কিছুক্ষন বসে চলে এলাম রুমে ।আমার এখন কিছুই ভাল লাগছে না ।নিজেকে বড় নিঃসঙ্গ মনে হচ্ছে ।এমন হয় কেন বুঝি । শালা একটা প্রেম করেছিলাম । সময় মত ছ্যাকাও খেয়েছিলাম। শালার জীবনে কি একতা মেয়েই সব। নিরব (আমার এক বন্ধু) ঠিকই বলেছিল পৃথিবীর সব সুখ যখন একজনের মাঝে চলে যায় তখন কেবলি সুখের অভিনয় করতে হয়।দরিদ্রতা যেমন মানুষ্ কে দার্শনিক বানায় তেমনি প্রেমে ছ্যাকা খাওয়া প্রেমিক ও দার্শনিক বনে যায়। আর আমি ত পুলিশ দার্শনিক। হা হা হা হা ।
;-
( ২ )
কাল আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম-
-জ্বী স্যার এসেছিলাম কিন্তু ।।
কিন্তু কি
স্যার আপনি ছিলেন না । আমি আস্তে আস্তেই আপনি
ঠিক আছে তা আপনার পুরো নাম নাহিদ হাসান কিন্তু অনেকেই নাদু বলে ডাকে তাই তো?
ইয়ে মানে স্যার আমার দাদু আমাকে ও নামে ডাকতেন । কিন্তু আপনি জানলেন কি করে স্যার।জানাই তো আমার কাজ। সত্য হোক আর মিথ্যা হোক । জানায় ত আমার কাজ।
জ্ব স্যার জানাই তো আমাদের কাজ।
পরে আরো কয়েকটা কথা বলে বুঝলয়াম বেশ করা প্রকৃতির মানুষ।কিন্তু চেহারা কি কমলতা ! বয়স ও ৩৫ মত অথচ দেখে বোঝার উপায় নেই। প্রথম দেখায় মনে হবে বয়স ২৫ । । তার সম্পর্কে একটু জানার চেষ্টা করলাম, সম্প্রতি জাদেরেল গোয়েন্দা অফিসার হিসেবে খুব নাম করেছেন । উচ্চতা বেশি নয় আবার কমও নয়.কিছু টা পাতলা গড়নের তবে চিকন নয় ।চোখ দুটো অসম্ভব সুন্দর , কথা বলেন ধীরে কমল ভঙ্গীতে তবে দৃড়তা রয়েছে , যেন ভাঙ্গবে তবুও মচকাবে না।এতোদিন গোয়েন্দা বইয়ে যেসব গোয়েন্দা দের দেখে এসছি তার চেয়ে সম্পুর্ণ ভিন্ন চরিত্র।ছোট বেলা থেকে অনেক গোয়েন্দা কাহিনী পড়েছি ,শার্লক হোমস, ফেলুদা, বোমক্যাশ , কিরীটি , শবর কিন্তু গোয়েন্দা হিসেবে এসব বইয়ে যেসব পড়েছি তার ধ্রে কাছেও নাছে বলে মনে হল না। শালার নিজের গড়নের জন্য হলেও নিজেকে কত যে গোয়েন্দার চরিত্রে কল্পনা করেছি তা বলে শেষ করা যাবেনা । যে কেউ দেখলে আমাকে একজন জাদ্রেল অফিসার হিসেবে মনে করবে। কি নেই আমার কিন্তু কাছের মানুষেরা আমাকে যারা চেনে তারা আমাকে কানা কড়িও মুল্য দেয় না ।কিন্তু আমার বস তেমন না যে কারো মনে ভয়ের উদ্রেক ঘটবে ।দেখলে বরং মনে প্রেমের উদ্রেক হবে ।অহ তার নামটা আবার দেখলাম নটবর গুপ্ত ।। তিনি হিন্ধু নাকি এতা তার ছদ্ম নাম তা জানিনা । হতে পারে ছদ্ম নাম। মানুষের মনের যে কত বাহার । কিন্তু নামে কি আসে যায়।তিনি নাকি গোয়েন্দা অফিসার হিসেবে খুব সুনাম করেছেন। কি জানি স্রষ্টা কার মাধ্যমে নিজের কোন কার্য যে হাসিল করে নেন তা তিনিই ভাল জানেন।এই যে তিনি আমাকে পুলিশ বানালেন অভাবের তাড়নায় কিন্তু মনে ছিল সাহিত্যর প্রতি অগাধ ক্ষুধা।ছিল বলেই অনেক গোয়েন্দা কাহিনী পড়েছি।কিন্তু গোয়েন্দা কাহিনী পড়ে কি আর করলাম । শেষ পর্যন্ত হলেম গোয়েন্দার সাগরেদ। তা আবার এমন রোমান্টিক চেহারার গোয়েন্দা , জীবনে দেখি নাইরে বাবা , কোন দিন পড়িও নাই , শুনিও নাই।! দেখি বেটা রোমান্টিক গোয়েনদা লি করেন।কথায় যেমন ঝাজ আছে তেমন আছে রস ।কিন্তু তিনি রোমান্টিক গোইয়েন্দা হলে এখনো নাকি বিয়ে থা করেন নি, চির রোমান্টিক গোয়েন্দা ।চেহারা রোমান্টিক হলেও ভিতরে কত খানি রোমান্টিক তা কে জানে।
(3)
স্যার আমাকে ডাকলেন আমি স্যারের আমি রুমে গেলাম।তখন রাত আনুমানিক ৮ টা বাজে । তখন স্যার আমাকে বললেন শান্তিপুর গ্রাম টা চেনেন নাকি?
আমি বললাম চিনি স্যার
গাড়ি বের করতে বলুন ।
অকে স্যার
কয়েকজন কন্সটেবল সহ আমরা স্যারের সাথে রোনা দিলাম।স্যার বললেন শান্তিপুর গ্রামে নাকি খুন হয়েছে ।কোন এক ধনী লোকের বউ খুন হয়েছে । গাড়ি নিয়ে আমরা বড় পুল নামক স্থানের পাশ দিয়ে গেলাম। জায়গাটাস বেশ ভয়নক জায়গা। চুরি ছুন্তায় ইত্যাদির জন্য জায়গাটা বিখ্যাত । এর আগেও বেশ কয়েকবার এই দিকে আস্তে হয়েছে । কাচা পাকা রাস্তা পার হয়ে কিছু দূর পর এওক্টা ইট ভাটা দেখতে পেলাম। ইট ভাটাতেও বেশ কয়েকবার এসছি। বিভিন্ন তদন্তের জন্য। ভাটা টি পার হলেই একটা বেশ বড় রাজবাড়ির মত বাগান বাড়ি।বাগান বাড়ির পাশেই বড় একটা পুকুর রয়েছে । পুকুরটি দেখেই বোঝা যায় কোন জমিদার তার সখ পুড়নের জন্য পুকুর টি ক্রেছিল। পুকুরের পুর্ব পাশে আরেকট পুকুর আছে। দুই পুকুরের মাঝখানে যে বাধটি রয়েছে সেখানে বেওশ ঘন গাছগাছালীতে পুর্ণ ।বাধটি কেটে একটি সুন্দর সেতু করা হয়ছে।সেতুটি বাড়ি থেকে একটু দূরে। বাড়িটি দেখলে ঠিক বোঝার উপায় নেই এর বয়স কত। পুর্ব পাশের যে পুকুরের কথা বলছিলাম তার সামনে দিয়ে রাজবাড়ি বরাবর পাকা রাস্তা চলে গেছে । প্রাসাদের বিপরীত পার্শ্ব রয়েছে বড় গ্রাম।বেশ অবস্থা এই গ্রামের লোকদের বলেই মনে হচ্ছে। প্রাসাদটি গ্রাম থেকে ১/২ কি.মি. দূরে। প্রাসাদে প্রবেশের পথেই রয়েছে দুট সিংহ মুর্তি। আগের দিনের জমিদার বাড়ির মত। এ বাড়িতেই কি খুন হয়েছে ? এরা তাহলে কোন জমিদার বংশের উত্তর পুরুষ হবে হয়তো।বাড়ীর ফটকের সামনে যেতেই অনেক মানুষের ভীড় দেখা গেল। অগত্যা আমাকেই সেই ভীড় ঠেলে স্যার কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হল। বাড়ির যে মুল ফটক সেটি প্রায় ১০০ ফুট দূরে। তাতে মানুষ গিজ গিজ করছে। এতো বড় বাড়ীর কেউ খুন হয়েছে গ্রামের মানুষ তা দেখার লোচভ হয়তো স্মবরন করতে পারেনি। আমরা ভিতরে যেতেই একজন বেশ ভারিক্ষিচেহারার স্মার্ট মানুষ বয়ইস আনু মানিক ৪৫-৫০ হবে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন অফিসার আসুন আসুন। আমি একটু বিব্রত হলাম, কারন পেছনেই আমার বস ছিলান। স্যার হয়তো একটু আকার আকৃতে আমার থেকে ছোট কিংবা স্যার পেছনে থাকায় আমাকেই বড় অফিসার বলে হয়তো ভুল করেছেন। উপর উপর বিব্রত ভাবটা দেখালেও মন্টা কেন জানি আনন্দে ভরে গেল। সে যাই হোক আমি স্যার কে জায়গা ছেড়ে দিলাম। স্যার সামনে গেলেন।স্যার নিজের পরিচয় দিলেন নটবর গুপ্ত, ইনভেস্টিং অফিসার লোকাল থানা । ভদ্র লোক আমাদের সাথে করে ঘটনাস্থলে নিয়ে গেলেন।।বিশাল বাড়িটা বাইরে থেকে যেমন ভিতরে গিয়ে তার চেয়েও রাজকীয় ব্যপার। ভেতরে না গেলে কেউ বুঝতেই পারবে না । মাস দুয়েক আগেই এওক্টা কেসের ব্যপারে আসতে হয়েছিল। এ গ্রাম বাংলাদেশের আর কয়েকটা গ্রাম থেকে বেশ অবস্থাপন্ন। পাশে পদ্মা নদী , নদী কে ঘিরেই এদের নানা ধরনের ব্যবসা গজিয়ে উঠেছে,সেই প্রাচীন কাল থেকেই। যাইহোক ঘটনাস্থলে গেলাম। গিয়ে দেখলাম রক্তাক্ত অবস্থায় একজন মহিলা পড়ে আছে , মাথাটা বিছানার উপর আর পা দুটো মেঝেতে আছে। । বিছানা আর মেঝে রক্তে ভেসে গেছে । কেউ টাচ করেনি। দেখা মাত্রই পুলিশকে খবর দেয়া হয়েছে। স্যার আমাকে পাশে রেখে সবাইকে আশে পাশের ঘর গুলো সার্চ করতে বললেন।আর আমাকে আর ভদ্র লোকের মাঝে বলা কথা গুলো নোট করতে বললেন।
নটবর গুপ্তঃ লাশ প্রথমে কে দেখে ?
ভদ্রলোকঃ আমি অফিসার
নটঃআপনি উনার কি হন?
ভদ্রঃউনার হাজবেন্ড
নটঃ আপনার নাম ?
ভদ্রঃ মোর্শেদ খন্দকার।
নটঃ উনার বয়স কত ?
মোর্শেদঃ৩২ বছর
নটঃ(ভ্রূ টা কুঞ্চিত করে কি যেন ভাবলেন) আপনার বয়স কত?
নটঃআপনারা কি এখানেই থাকেন?
মোঃ আজ্ঞে না।
নটঃ ডিটেইলস খুলে বলুন তো কি হয়েছে?
স্যার খুব ধীরে অথচ বেশ প্রাঞ্জল ভাষায় কথা বলছেন।আমি গোয়েন্দার গোয়েন্দা গিরি দেখে মনে মনে একচোট হেসে দিলাম। মোর্শেদ সাহেব যা বলতে লাগলেন তাহল উনারা সপরিবারে ঢাকায় থাকেন ।তাদের দুই মেয়ে ।বড় মেয়ের বয়স ১৬ বছর , আর ছোট্টার বয়স ২ বছর ।উনার দাদা এই অঞ্চলের জমিদার ছিলেন।কিন্তু এখন আর জমিদারি টা না থাকলেও সে ভাবটা যায় নি।এই বাড়ি তিনি পৈতৃক সুত্রে পেয়েছেন(লোকটি বেশ সাবলীল ভাষায় কথা বলছেন মনেই হচ্ছেনা তার বউ কিছুক্ষন আগে মারা গিয়েছেন। তবে লোকটা বাহ্যিক ভাবে বেশ শক্ত সমর্থ, এবং কড়া প্রকৃতির বলে মনে হচ্ছে)।তিনি জানালেন তিনি ছাড়াও তার আরো বড় দুই ভাই রয়েছেন। তারা গ্রামের ওই মাথার দিকে মানে পুকুরে পুর্ব পাড়ের রাস্তার শেষ দিক টায় থাকে। বাড়ির সাথে তিনি বিশাল প্লট ভাগ পেয়েছেন। শুধু বারির পেছনে যে ইটভাটাটা রয়েছে সেটা বাদে । ওইটা তার মেজো ভাই পেয়েছেন। তারা ঢাকা থেকে সপরিবারে মেজো ভাইয়ের ছেলের বিয়ে খেতে এসেছে ।গত ঈদে ।এসেই বাধার মুখে পড়েন। যিনি খুন হয়েছেন মানে মোর্শেদ সাহেবের স্ত্রি
কে কুকুরে কামড় দিয়েছিল । স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে চিকিতসা করানো হয়েছে। ডাক্তার রেজাউল করিম। নটবর গুপ্ত সাহেবকে শুধু মাথা নাড়তে দেখলাম , আর কথা কথা হুহু ধরে যাচ্ছেন । কিন্তু চোখে মুখে চিন্তার কোন রেখা নেই। যাইহোক গুপ্ত সাহেব লাশের আশে পাশে খুটিয়ে খুটিয়ে য়েসব দেখলেন। আর আমাকে লিখে রাখতে বললেন,তিনি লাশ পোস্টমর্টেম এর জন্য পাটিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। এদিকে অন্যান্য কন্সটেবুলরা কোন কিছু তেমন খুজে পায়নি বলে জানালেন। আর স্যারে মোর্শেদ সাহেবকে বলে দিলেন বাড়ির সবাইকে একত্রিত হতে,কিছু জিজ্ঞাসা বাদ আছে । বাড়ির সবাই মানে সবাই আসলেন। যারা কুকুরের কামড় দেয়া থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত উপস্থিত আছেন সবাইকে ডাকলেন। সবাই এসে উপস্থিত হলেন।
১। মোর্শেদ আর মোর্শেদের দুই মেয়ে তিনা আর ন্যানি
২।বর ভাই খোরশেদ আর তার ছেলে আর ছেলের বউ
৩। মেজ ভাই আর্শেদের বউ , তার সদ্য বিবাহিত ছেলে , ছেলের বউ , আর ছোট ছেলে বয়স আনুমানিক ২৩
৪।শাহেদঃবড় ভাইয়ের বউমার ভাই দেখতে সুদর্শন, বলিষ্ট দেহ
৫।অর্কঃমেজ ভাইয়ের ছোট ছেলের সিয়ামের বন্ধু
৬। সুফিয়াঃকাজের লোক । দীর্ঘদিন মোর্শেদ সাহেবের সাথে আছেন, বেশ বিশ্বস্ত ঢাকা গ্রাম উভয় জায়গাতেই থাকেন।
রমিজঃএ বাড়ির কেয়ার টেকার । দীর্ঘদিন ধরে আছে, বেশ বিশ্বস্ত।
শরিফঃবাড়ির কাজের ছেলে , রমিজের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে
রাজনঃ মেজ ভাইয়ের বাড়ির কাজের ছেলে , শরিফের বেশ ভাল বন্ধু।
আর দু একজন ছিলেন কিন্তু কি জানি আমাদের গোয়েন্দা নটবর গুপ্ত ( নামটা শুনলে শুষ্ক খর খরা মনেইও হাসির জল চলে আসে ।) আর কারো তথ্য প্রয়োজনীয় মনে করলেন না। আমি কিছু বলতে চাইলাম কিন্তু কিছু বললাম না , দেখি গুপ্ত সাহেব কি করেন। গুপ্ত সাহেব মানে আমাদের গোয়েন্দা স্যার বাড়ির সব দিকে ঘুরে ফিরে দেখলেন । বাড়ীর পেছন দিকে গেলেন , কিন্তু এক জায়গায় থমকে দাড়ালেন কি যেন ভাবছেন , এমন ভাব করে আবার আমার দিকে এমন করে চাইলেন । আমিও মনে মনে ভাবলাম গুপ্ত সাহেব গুপ্ত কিছু পেলেন কিনা , নামটা শুনলেই হাসি পাই। এত সুন্দর ছেলে যে সিনেমার নায়ক হার মেনে যাবে আর নাম কিনা নটবর গুপ্ত! আমাদেরে স্যার মোর্শেদ সাহেব কে =ডেকে বলে দিলেন তদন্তের স্বার্হে আপাতত কেউ যেন সপ্তাহ খানেক কোথাও চলে না যায়। মোর্শেদ সাহেব আমাদের সামনেই সকল্কে বিষয়টা জানিয়ে দিলেন। কিন্তু অর্ক নামের ছেলে টা এওকটু ইতস্তত করে বলল তার এক্সাম আছে , তাই আছে তাই যেতে হবে । তখন সিয়াম নামের ছেলেটাও দুইজনের এক্সাম আছে । গুপ্ত সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন কয়টা আছে । তখন তিনি জানালেন ঠিক আছে এক্সাম দিয়ে চলে আসবেন। রাত অনেক হল অবশেষে আমরা সব কিছু বুঝে শুনে তাহ্নায় ফিরলাম, গুপ্ত সাহেব গুপ্ত চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে হটাত বললেন নাদু সাহেব কাল সকালেই মানে ৬ টায় আসবেন, এখানে এসে নাস্তা করে যাবেন।আসার সময় ফাইল টা নিয়ে আসবেন ।আর রাতে ভাল করে ঘুম দিবেন।রাতে ভাল ঘুম মানে ভাল করে চিন্তা করার শক্তি। মনে মনে ভাবলাম প্রথম প্রথম সবাই এরকম ভাব দেখায় তারপর আসল রুপ বেড়িয়ে আসে। আবার ডাকলেন , ডেকে বললেন না থাক ৭.৩০ আসবেন। এবার আমি খুশি হলাম। এবার ভাল ঘুম হবে , ভালকরে চিন্তাও করতে পারবো।
(৪)
আমি সকালেই ঘুম থেকে উঠলাম। উঠেই দেখি ৭ টা বাজে । আমি ফ্রেশ হয়েই স্যারের বাসার সামনে গেলাম। মনে ছিল না যে তিনি কোয়াটারে উঠেন নি ।পরে এক কলিগ এর কাছে থেকে স্যারের বাসার ঠিকানাটা যোগাড় করে নিয়ে স্যারের বাসার সামনে গিয়ে দেখলাম বাসার গেইট ভেতর থেকে বন্ধ করা । স্যারের ফোনে ফোন দিলাম । বেশ কয়েক বার । কিন্তু ফোন টাও ধরে না মেজাজটা এদানিং এমনিতেই ভাল না । আর বস যদি এমন হয় তবে মেজাজটা যে কই গিয়ে দাঁড়ায় তা কাকে বোঝাবো। ভাবলাম চলে যায় কিন্তু যেতেও পারছি না । শালা গরীব মানুষের এই এক জ্বালা ।কিছুক্ষন বাইওরে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম । ভাবলাম হইতো বা মর্নিং ওয়াকে যেতে পারে। যেইনা আমার ফিটনেস তার জন্য নাকি আবার মর্নিং ওয়াকে যেতে হয়। বড়লোকেদের ভীম্রতি দেখলে গা জ্বালা করে। ফিরেই যাচ্চঘিলাম । ঘুরে যেতেই দেখি নট সাহেব বাইসাইকেলে করে কোথা থেকে আসছেন।
গুড মর্নিং নাদু সাহেব । ভাল করে ঘুম দিয়েছেন তো ?
জ্বি স্যার ভালই ঘুম হয়েছে
ঘুম তো দিয়েছেন ভাল , কিন্তু চোখে মুখে কেমন যেন অন্য কথা বলছে ।
( আশ্চর্য হয়ে গেলাম। বেটা বুঝলো কি করে ।চোখে মুখে স্বাভাবিক ভাব করার চেষ্টা করলাম , যাতে স্যার বুঝতে না পারে আমি তার এহেন আচরনে বিরক্ত হয়েছি) তা স্যার এতো সকালে কোথাও গেছিলেন বুঝি ।
এই তো একটু জগিং সেরে নিলাম।
জগিং? বাইসাইকেলে ! পারেন ও স্যার। ( মনে মনে বললাম উলটাপালটা কথা বলার আর জায়গা পায়না ) তবুও মুখে হাসি হাসি ভাবটা রেখেই বললাম। আমি কিন্তু নাস্তা সেরেই যাব।
যাবেন বইকি। আসুন ভিতরে আসুন। স্যার তাই বলে স্যার বাসার ভিতরে নিয়ে গেলেন। স্যার সোফার রুমে বসতে বললেন। আর ফাইল্টা একটু দেখতে বলে স্যার ঘরের মধ্যে গেলেন হয়তো ফ্রেশ ট্রেশ হবেন। আমি ড্রিওং রুমটা একটু ভাল করে দেখতে লাগলাম। বেশ পরি পাটি । পাশেই বিশাল বুকসেলফ। সেখানে অনেক দেশি বিদেশি বই দেখলাম । আনুমানিক ১২০০ মত হবে।মনে মনে বেশ শ্রদ্ধা এলো যাক এমন রসকস হীন মানুষ ও বই পরে । পরক্ষনেই মনে হল দ্রইং রুমে বই রাখার কি দরকার । মানুষ জনকে হইতো দেখাবে আমি ভীষন জ্ঞানী মানুষ । দেখ আমি কত বই পড়ি। কিছুক্ষন পরে স্যার আসলেন হাতে আরেকটা ফাইল। ফাইলটা খুলে দেখতে বললেন । দুটো ফাইল মিলে একটা খসড়া দাড় করালাম ( স্যারের দিকে বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে দেখলাম)। দুটো ফাইল মিলে যে খসড়া দাড়ালো তা হল
- সকাল ৯ টায় আজ সেই বাড়িতে যেতে হবে । সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
-বাড়ির বর্ণ্না আছে তাতে লেখা হল বাড়িটি দুই তলা বিশিষ্ট । চারে পাশে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ।বাড়িতে প্রবেশের দুটি রাস্তা । একটি সদর আর একটি পেছনের দরজা তালা দেয়া থাকে ।পেছনের প্রাচীরের দেয়ালের পলেস্তার খসে পড়ে আছে। এটা কয়েক ঘন্টা পুর্বে তা দেখলেই বোঝা যায়। কারন পায়ের ছাপ স্পষ্ট , তরতাজা।
-বাড়িতে নিচ তলায় ৩ টা বেড রুম । আর উপর তলায় ৬টি বেড রুম। বাড়ির চারে পাশেই বেলকনি রয়েছে।রুম গুলো বেশ প্রশস্ত।
-ঘটনার দিন সবাই বিয়ে বাড়িতে ছিল। শুধু ভিক্টিম, তার স্বামী ও কাজের মানুষ গুলো।
-মারা হয়েছে মাথার উপর থেকে কপাল থেকে একটু উপরে। ভারি লোহার রোড কিংবা সমান্তরাল কোন কিছু দিতে ।
- ঘটনা স্থলে প্রথমে আসেন নিহতের স্বামী।
ওদের জিজ্ঞাসা বাদ করা হয়েছিল। আবার করা হবে । দেখি আমাদের গুপ্ত সাহেব কি করেন। অবশ্য অনেক কিছু ময়না তদন্তের উপর নির্ভর করে এগোতে হবে। গতকাল জইজ্ঞাসা বাদের সময় জানা গিয়েছিল মোর্শেদ সাহেবের সাথে তার মেজ ভাইয়ের জমি জমা নিয়ে দ্বন্দ চলছিল।এই দ্বন্দের ফলেই কি খুন করা হয়ে ছিল? কিছু চুরি গিয়েছিল কিনা এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়ে ছিল। ওরা তাতক্ষনিক ভাবে কিছু বলতে পারেনি। তবে একটা বিষয়ে স্যারের খটকা লেগেছিল। স্যার আমাকে বললেন আচ্ছা নহিদ সাহেব একটা বিষয় কি আপনি খেয়াল করেছেন? আমি বললাম কোন বিষয় স্যার।বাড়িতে কেউ যদি মারা যায় তাহলে পরিবেশ টা কেমন হয়?
স্যার সবাই কান্নাকাটি করবে আর যেহেতু খুন সেহেতু কিছূটা হলেও আতংকে থাকবে।কিন্তু
কিন্তু কি নাদু সাহেব?
কিন্তু স্যার তার কোন ছিটে ফোটাও দেখতে পেলাম না।তার কারন্টা কি বুঝলাম না।
-তাহলে কি দাড়াচ্ছে ? খুন টা হয়ে কি ওদের বাড়ির লাভই হয়েছে । যদি হয় তবে কার। আবার কোন কিছু যে চুরি হয়েছে তাও কেউ কিছু বলতে পারছে না।
-স্যার এই বিষয়টায় কেমন যেন লাগছে স্যার।
-তো সব ঠিক আছে নাদু সাহেব। আপনি কি এখানেই নাস্তা করবেন বলে কি ঠিক করেছেন/( চোখে মুখে এবারো ভাব্লেশ হীন। এমন হলে কি যে মনের মধ্যে চলছে তা বোঝা যায় না। গোয়েন্দারা বুঝি কাউকে তার মন বুঝতে দেয়না)
-ইয়ে মানেস্যার।
-আর লজ্জা কেন। এক সাথেই নাস্তা করে বের হই। আপনি কি একেবারে বের হয়েই এসেছেন?
- না স্যার ।নাস্তা সেরেই বের হয়ে আসবো।( নাস্তার দাওয়াত দিয়ে কিরকম অপমান টাই না করল । আমিও সুদে আসলে তুলে নেব যদি কেস টা সল্ভ না হয়)
স্যার নাস্তা র আয়োজন্টা খারাপ করেন নি। না মানুষ টা বোধ হয় ভালই আছে। একবেলা ভাল খাবার পেলে বাঙালি যে কি রকম খুশি নিজেকে দেখে বুঝে নিতে কষ্ট হল না।
(৫)
অবশেষে আমি আর গুপ্ত সাহেব ঘটনা স্থলের দিকে রওয়ানা দিলাম। বাকা পুল দিয়ে নিচে নেমেই পুকুরের ধার দিয়ে পাকা রাস্তা বরাবর যেতেই স্যার বললেন নাদু সাহেব ইট ভাটা র লোকেশন টা খেয়াল রাখবেন। আমি জ্বি স্যার বিলে ক্ষান্ত দিলাম। কিছুদুর যেতেই হাতের বাম পাশ টায় যে সাকোটা দেখা যায় স্যার যেতে যতেতি বললেন নাদু সাহেব এই যে সাকোটা দেখছেন এটাও একটু খেয়ালে রাখবেন। আমি এবার আর শুসধু জ্বি স্যার বলাতেই ক্ষান্ত দিলাম না।মনে মনে বললাম এই সাকোটা কি পুলসিরাত যে মহিলাটার আত্না এটা দিয়ে পার হয়েছেন । যত্তসব। ২য় পুকুর টা পার হয়ে যে রাস্তা টা সেটা দেখিয়ে বললেন এই রাস্তা টা ওডেড় মেজ ভাঈ আড় বোর ভাঈয়েড় বাড়ির রাস্তা । তিনি সেই রাস্তা দিয়ে ড্রাইভার কে যেতে বললেন।( মনে মনে ভাবলাম ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা বলে উনি রাস্তার ম্যাপ তৈরী করতে বের হয়েছেন।) সেই রাস্তা বইরাবর যেয়ে কিছূতা দূরে যেদিক দিয়ে সাকোটা গেছে সে বরাবর একটা রাস্তা দেখা গেল । এবার মাথায় কিছুটা আসলো। নকশাটা দিলে আপনাদের মাথায় ও কিছু আসবে ।
স্যার রাস্তাটা ভাল করে দেখে কি ভেবে আবার মোর্শেদ বাসায় ঢুকলাম। তখন আনুমানিক ১১ টা বাজে । স্যার মোর্শেদ সাহেব কে আবার নির্দেশ দিলেন সবাইকে ডাকতে । এবং একটি নির্দিষ্ট রুমে একেক জন কে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে । তার আগে স্যার ঘুরে ঘুরে সব কক্ষ দেখলেন। এওকটা রুমে একটা বই দেখলেন।খাটের উপরে পড়ে আছে। রুমটি মোর্শেদ সাহেবের বড় মেয়ের রুম।কিন্তু মেয়ে রুমে নাই।অবশ্য অন্য রুমে তাকে দেখতে পাওয়া গেল সে টিভি দেখছে।হয়ত কোন হিন্দি সিরিয়াল দেখছে। আমি তা দেখে নিজের বিস্ময় আর চেপে রাখতে পারলাম না। এই বাড়িতে গত কাল খুন হয়েছে। ওই মেয়ের মা খুন হয়েছে।দুনিয়ার একি হল মায়ার বাধন আসতে আসতে খুলে যাচ্ছে ।মা মরেছে না শত্রু মরেছে। শত্রু মরলেও মানুষ একটু শোক করে,কি জানি বড় লোকেদের সব ব্যপারই কি গরীব্দের থেকে আলাদা কিনা । হয়ত মন্টাও ভিন্ন। যাকগে নিচের একটা রুমে ঠিক করা হল এই রুমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। স্যার আমাকে বললেন সব বিষয় গুলো নোট করতে ।বড় থেকে ছোট এই ভাবে জিজ্ঞাসা বাদ করা হবে ।
মোর্শেদঃ
স্যারঃ ভিক্টিম কে প্রথমে কি আপনি দেখেন?
মোর্শেদঃজ্বি স্যার
স্যারঃ কখন ঘটে ঘটনাটি?
মোঃআমি বাইরে ছিলাম স্যার। আনুমানিক সাতটার সময় আমি ভাবলাম ওর কাছে থেকে ঘুরে আসি ।ঘরে ঢুকেই দেখি ও পড়ে আছে । সারা রুম রক্তে ভেসে গেছে। তারপর আপনাদের ফোন দিয়ে জানায়।
স্যারঃকারো সাথে কোন শ্ত্রুতা ছিল?
মোঃস্যার আমি তো কালই বলছি। শত্রুতা বলতা আমার মেজ ভাইয়ের সাথে জায়গা জমি নিয়ে চলছিল।আমাকে বাড়িতে আসতে দিতে চায়না আমাকে শাসিয়েছিল।
স্যারঃ নিতু মানে আপনার স্ত্রী মানুষ হিসেবে কেমন ছিল?কারো দসাথে ঝামেলা বা অন্য কিছু ছিলো?
মোঃনা স্যার ওতো সাধাসিধা মানুষ ওর বয়সটাতো কম ছিল তাই একটু আধটু চঞ্চল ছিল। কিন্তু তাই বলে খুন করে দিবে এমনটা ভাবা যায় না।
স্যারঃবাড়ির অন্যরা সবাই কোথায় ছিলেন?
মোঃস্যার সুফিয়া রান্না ঘরে আর আমি ও রমিজ বাইরে ছিলাম।ওর ভ্যাক্সিন্টা আমি নিজ হাতে দিয়ে এসে আমি আর রমিজ একটু বাইরে গেছিলাম।
স্যারঃআপনার সাথে আপনার স্ত্রীর সম্পর্ক টা কেমন ছিল?
মোঃ স্যার স্বাভাবিক ছিল
স্যারঃআপনাদের মাঝে ঝগড়া হতো কিনা ?সর্বশেষ কবে ঝগোড়া করেছেন?
মোঃস্যার ওটা তো টুকটাক হবেই। কোন পরিবারেই বা হয়না বলুন। সেতো আপনার পরিয়াবারেও হয়।(স্যার একটু বিব্রত হলেন মনে হয়)মাঝে মাঝেই হয় স্যার। তবে অতোটা জোড়ালো নয়।
স্যারঃ কাউকে কি সন্দেহ করেন?
মোঃস্যার স্নদেহ করার মত যদি বলেন তবে আমার মেজ ভাইকে ছাড়া এই মুহুর্তে কাউকে পাচ্ছি না। তবে সেটা খুব একটা না। হাজার হোক নিজেরি তো ভাই। ও আমাকে ভুল বুজতে পারে আমি তো আর পারি না। তবে ও আমাকে গ্রামে আর আসতে দিতে চায় না।
আমি নোট নিয়ে রাখছি।
স্যারঃ তাই বলে খুন করে দিল?
মোঃস্যার ও এমন কাজ নাই যে করতে পারে না । ওর জন্যই তো বাবা মারা গেল।
স্যারঃ কিভাবে ?
মোঃ বাবা আমাকে এই বাড়ি লিখে দিয়েছিল।ওর সহ্য হয়নি। বাবার সাথে প্রায়ই ঝগড়া ঝাটি করতো। ওর অবস্থা অনেক ভাও কিন্তু ওর লোভ বেশী।
স্যারঃ উনার ছেলে মানুষ হিসেবে কেমন?
মোঃনা স্যার ও অনেক ভাল ছেলে। ও বলতে গেলে আমার কাছেই মানুষ। ওর বিয়ের জন্যই তো এখানে আসা। না হলে ওর কোন কাজের জন্য আমি আসি নাকি?
স্যারঃঢাকায় কোথায় থাকেন ? কি করেন/ কত বছর ধরে থাকেন?
মোঃ স্যার ঢাকায় প্রায় আজ ৩০ বছর ধরে আছি। ওখানেই পড়াশোনা।পড়াশোনা শেষ করে একটা প্রাইভেট ব্যাংকে জব করতাম। প্রে বাবার ব্যবসার হাল ধরি। আর অকে বিয়ে করি । ও বাবা মার একমাত্র মেয়ে ছিল।ওর বাবা মারা গেছেন। ওর মাও থাকেন আমদের সাথে। কিছুক্ষন পরে উনি আসবেন।
স্যারঃকিছু কি চুরি গিয়েছে?
মোঃ না স্যার।
স্যারঃ বিয়ে বাড়িতে যানিনি কেন?
মোঃস্যার গত পরশু দিন ওর সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে। আর তাছাড়া ও অসুস্থ বিধায় আর যাওয়া হয়নি।
স্যাঃ আপনার মেয়ে কি গিয়েছিল
মোঃজ্ব স্যার গিয়েছিল
স্যাঃবিয়েতে কে কে যায় নি?
মোঃউম্ম (একটু মনে করার চেষ্টা করে)বড় ভাই শুনে ছিলাম যায়নি , আর আমার বাড়ি থেকে শুধু আমার মেয়ে গিয়েছিল।
স্যাঃ ওরা আনুমানিক কয়টার সময় এসেছিল?
মোঃস্যার ওরা রাত ৮টার দিকে এসছিল । আমিই আপনাকে ফোন দেয়ার পর ওদের ফোন দিয়ে জানায়।
স্যারঃ ঠিক আছে একটু আপনার মেয়েকে ডেকে পাঠান ।
মোঃ জ্বি স্যার।
ঘরে এসে একটা মেয়ে প্রবেশ করলো। দেখতে বেশ সুন্দর। এবং বেশ স্মার্ট মনে হচ্ছে । স্যার মেয়েটাকে দেখে চেয়ার দেখিয়ে বসতে বললেন।
স্যারঃ তমার নাম কি বাবু ?
তিন্নিঃ আমি আর ছোট নেই যে আমাকে বাবু বলবেন , আর আমার নাম তিন্নি ।
স্যারঃ (চোখে মুখে কেমন যেন একটা মায়া মায়া ভাব এনে) ওহ আচ্ছা ।তিন্নি আমি জানি তোমার খুব খারাপ লাগছে তবুও কথা বলতে হবে না হলে তোমার আম্মুর খুনিকে কিভাবে ধরবো বল , তা তোমার মা বুঝি তমাকে খুব ভাল বাস্তেন। ?
তিন্নিঃ সব বাবা মায় তার সন্তান্দের খুব ভালবাসেন , এ আর নতুন কি ( মেয়েটা যেন কেমন খাপছড়া ভাবে কথা বলছেন)
স্যারঃ তা ঠিক বইলেছ , তা তিন্নি তুমি কোন ক্লাসে পড়া শোনা কর ?
তিন্নিঃ আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি।
স্যার ঃ তাহলে তুমি তো আর ছোট টি নেই। অনেক বড় হয়ে গেছ তাহলে তুমি আমাকে অনেক হেল্প করতে পাড়বে।তমার মায়ের সাথে কি কজারো কন ঝামেলা ছিল? বা কোন রকম কিছু যার জন্য খুন হতে পারে ।
তিন্নিঃ জানিনা
স্যারঃ তোমার খারাপ লাগছে হয়তো।
তিন্নিঃএকটু লাগছে । তবে বেশি না( গলার স্বর একটু নিচু করে)
স্যার; তিন্নির চোখের দিকে খুব মোলায়েম করে তাকিয়ে ) ঠিক আছে তুমি যেতে পার
স্যার তিন্নি চলে যাওয়ার পরে মাথা টা নিচু করে চোখ একদিকে দিয়ে কি যেন ভাবছেন । আমি স্যারের চোখের দিকে এবার ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম স্যারের চোখ কতটা তিক্ষন আর ধারাওল। গোয়েন্দাদের চখ বুঝি এমনি হয়। অথচ তিন্নি দিকে যখন তাকালেন তখন কত সুন্দপ্র করে তাকালেন । একইতা মানুষ মুহুর্তের মাঝেই কিভাবে নিজকে চেঞ্জ করে নিতে পারে তা স্যারকে না দেখলে বোঝা যেতো না। স্যার আমাকে সুফিয়াকে ডাকার নির্দেশ দিলেন।সুফিয়াকে ডেকে চেয়ারে বসালাম।
স্যারঃআচ্ছা সুফিয়া তুমি এ বাড়িতে কত দিন ধরে আছো?
সুফিয়াঃ স্যার ধরেন ৫০ বছর ধরে আছি
স্যারঃ ৫০ বছর! তার মানে মোর্শেদ সাহেব তো আপনার হাতেই মানুষ হয়েছে তাই না?
সুফিয়াঃজ্বে স্যার ।
স্যারঃ তাহলে তুমি অন্য ভাইদের কাছে থাকো না কেন?
সুফিয়াঃযতদিন বাড়ির মালকিন ছিলেন উনাদের সাথেই থাকতাম। তারপর এই বাড়িতে ছোট সাহেব থাকা শুরু করলেন , তখন থেকেই ছোট সাহেবের সাথে আছি।
স্যারঃ আপনার কেউ নেই? মানে বিয়ে হয়েছিল কিনা ?
সুফিয়াঃস্যার বিয়ে হয়েছিল । কিন্তু কোন ছেলে মেয়ে হয় নাই বলে স্বামীটা আমাকে ছেড়ে অন্য খানে আবার কাজ সারছে।কয়েক বছর আগে সেও গত হয়েছে।
স্যারঃওহ আপনার ম্যাডামকে কে খুন করতে পারে ? আপনার কোন আইডিয়া আছে। কাউকে কি কোন রকম সন্দেহ হয়?
সুফিয়াঃ না স্যার আমি মুখ্য সুক্ষ মানুষ ।আর ম্যাডাম স্যার এর মত ভাল মানুষ খুবই কম আছে।
স্যার তাকে যেতে বললেন আর আমার দিকে তাকিয়া বললেন এ মহিলা খুবিই প্রভু ভক্ত মানুষ, এরা খুবি নিরীহ। এরা পৃথিবীর বড় উপকার করে তবে কারো ক্ষতি করে না।এরা কেবল কাজই করে যান। আমি মনে মনে বললাম, উনি সব জেনে ফেলেছেন।কালে কালে আর কত যে দেখতে হবে। উনি একদিনেই সব উদ্ধার করে ফেলেছেন। তবে তার কাজের গতি অন্যান্য গোয়েন্দাদের মত স্পিড নেই।স্যার আমাকে রমিজ মিয়া কে ডাকতে বলল্লাম।আমি রমিজ মিয়াকে ডেকে চেয়ার দেখিয়ে বসতে বললাম।
স্যারঃ কত দিন ধরে আছেন এ বাড়িতে ?
রমিজঃ তাও প্রায় ৩০ বছর আছি স্যার।
স্যারঃ তাহলে তো খুবি বিশ্বস্ত আপনি এদের?
রমিজঃ তা এ বাড়ির মালিক বলতে পারবেন। আমি গরিব মানুষ দুইতা করে খেয়ে দিন গুজরান করি স্যার
স্যারঃভাল ভাল ।(ঘাড় ঝাকিয়ে বললেন) শুনলাম কিছু স্বর্নালংকার চুড়ি হয়েছে। ( আমি শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম, স্যার এ কথা কখন শুনলেন ! মনে হয় অন্ধকারে ঢিল ছুড়লেন , দেখা যাক কি হয়)
রমিজঃ জ্বি স্যার। কিন্তু আপনি কোথা হতে জানলেন! ( চোখে মুখে ভয়ের ছাপ) স্যার আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন। কিন্তু আবার মুখে সি গাম্ভির্য্য। মানুষ মুহুর্তেই যে কিভাবে নিজেকে পাল্টাতে পারে তাই এ লোকটাকে দেখলে ভাবি।
স্যারঃ আপনার ম্যাডাম যখন খুন হোন তখন কোথায় ছিলেন।
রমিজঃকখন খুন হোন জানিনা । তবে আমি স্যারের সাথেই ছিলাম।প্রে স্যার যখন বাসার ভিতরে যান তখন কিছুক্ষন পরেই চিতকার করেন আমি তা শুনেই দৌড়ে চলে যায়।
স্যারঃ আপনার কি মনে হয় যে আপনার স্যার খুন টা করতে পারেন?
রমিজঃ স্যার তো আমার সাথেই ছিলেন ।তিনি কখন করলেন। আর কেনই বা খুন করবেন।
স্যারঃ আপনারা দুজনে মিলে খুন করেন নিতো?
রমিজঃ আমরা !( চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট) কি সব বলছেন স্যার?
স্যারঃ তোমার স্যার তো বলছেন কোন কিছু চুরি যায়নি। কিন্তু তুমি বলছো চুরি হয়েছে । বিষয়টা কেমন হয়ে গেল না
রমিজঃ স্যার বলছেন?
স্যারঃ হ্যা বলেছেন।
রমিজঃ কি জানি বর লোকদের কখন কি মর্জি হয়
স্যার। মর্জি? দাঁড়াও মর্জি কিভাবে বের করতে হয় স্তা আমার জানা আছে। সব খুলে বল ( স্যারের চোখ মুখ কেমন জানি কঠোর হয়ে গেল।)
রমিজঃ আমি কিছু জানিনা স্যার।
স্যারঃ থানায় যখন নিয়ে গিয়ে ডাণ্ডা দেব তখন সব বেড়িয়ে আসবে । যা যানিস সব বলবি । না হলে এমন মার দেব না,। সব খুলে বল যদি পরে জানতে পারি ঘতনার এক বিন্দুও তুই জানিস কিন্তু আমাদের বলিস নাই তাহলে তোর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে দেব। , বল
রমিজঃ স্যার আমি খুনের ব্যপারে সত্যি বলছি কিছু জানিনা ।কিন্তু
স্যারঃ কিন্তু কি? ( চোখের ভ্র ভাজ করলেন)
রমিজঃস্যার আর ম্যাডামের মাঝে ভাল সম্পর্ক যাচ্ছিলো না ।
স্যারঃ কিভাবে বুঝলে ।
রমিজঃ সেদিন রাত্রে আমি আর স্যার আসছিলাম এলাকা ঘুরতে বের হয়েছিলাম। তখন স্যার কথায় কথায় বলে ফেলেন , জীবনটা আর ভাল লাগছে না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেন স্যার?উনি বললেন তোর ম্যাডামের সাথে একটা না একটা ঝামেলা লেগেই আছে ।আমি আর কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না ।আমি চাকর মানুষ তাদের পারিবারিক ব্যপারে আমি নাক গলাতে চাইনি সইয়ার তাই আর কিছু জিজ্ঞাসা করিনি স্যার।
স্যারঃ আর তোমার মেজ বাবুর সাথে তোমার স্যারের কোন ঝামেলা চলছে?
রমিজঃ জ্বি স্যার । বাড়ির পেছনে যে ইট ভাটা আছে সেটা নিয়ে স্যারের সাথে বেশ ঝামেলা চলছে। মেজ বাবু তো স্যার কে দেখে নেবার হুমকিও দিয়েছে।
স্যারঃকিরকম
রমিজঃ স্যার আমার মালিক চাওননা এই ইট ভাটা ওখানে থাকুক। এতে করে বাড়ির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে । তাছাড়াও সেখানে নানা শ্রেনীর মানুষের যাতায়াত। এই কারনেই । আর
স্যার ঃ আর কি রমিজ বল। তুমি এই ঝামেলা থকে মুক্তি পেয়েই যাচ্ছ ।
রমিজঃ আমার মালিক চান পুরো জমিটার মালিকানা কিন্তু উনার মেজ ভাই ওঠা দিতে চাওননা ।এই নিয়ে দুই ভাইয়ের মাঝে একটু ঝামেলা চলছে ।তবে মেজ বাবুর আমার স্যারের উপর ভীষন রাগ।
স্যারঃকিরকম রাগ?
রমিজঃমেজ বাবু এই বাড়িটা দাবী করেছিলান। কিন্তু আমার স্যার দিতে রাজি হননি।
স্যারঃ এই জন্য কি মেজ বাবু খুন করতে পারেন?
রমিজঃ স্যার মানুষের মন। কখন কি যে করে তা কে বলতে পারে।
স্যারঃআচ্চা চুরি হয়েছে কিন্তু তোমার স্যার স্বীকার করলেন না কেন?
রমিজঃ তাতো বলতে পারবো না ।
স্যার; ঠিক আছে রমিজ যাও।প্রয়োজন হলে আবার ডাকতে পারি।
রমিজ মিয়া উঠে চলে গেল। স্যার আমাকে বললেন নাদু বিষয়টা কেমন লাগছে বলত। আমি কিছু বলতে যাব তখনি স্যার বললেন থাক এই বিষয়ে বাসায় যেয়ে আলোচনা কয়া যাবে ।পরের জনকে ডাক। আমি শরিফকে ডেকে নিলাম। শরিফ চেয়ারে বস্তে না বস্তেই স্যার বললেন খুনটা কেন করলি?
শরিফঃ স্যার খুন আমি করিনি স্যার।
স্যারঃ তা কে করলো শুনি
শরিফঃ আমি কিছু জানিনা স্যার।(শরিফের চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ)
স্যারঃ ঠিক আছে বাবু তুমি যখন কিছু জানো না তখন কিছু বলতে হবে না। তবে , তবে যদি কোন রকম সংশ্লিষ্টতা পায় এমন ভাবে চার্জষীট দেব যাতে বাবার জনমেও পৃথিবীর মুখ আর চোখে দেখতে না হয়।
শরিফের চোখে মুখে ভয়ের চাপ। মুখ শুকিয়ে গেছে। তবে কি শইরিফ এই খুনের সাথে জড়িত?আমার মনে সন্দেহ হচ্ছে। কিংবা ওকি কিছু জানে? যাইহোক স্যার শরিফ কে ছেড়ে দিয়ে রাজন কে ডাকতে বললেন। রাজন এসে স্যারের সামনে বসল।
স্যার; রাজন , শরিফ তো তোমার ভাল বন্ধু তাই না? রাজনঃ জ্বি স্যার।
স্যারঃ তুমিও তো ওর ভাল বন্ধু তাইনা?
রাজনঃ জ্বি স্যার,
স্যারঃ কিন্তু তোমাদের একি বন্ধুত্ব ওতো সব বলে দিয়েছে।
রাজনঃ (চোখে মুখে এক রাজ্যর শঙ্কা )স্যার কি বলছে শরিফ?
স্যারঃ কি আর বলবে যা করেছো তাই বলল। তুমি আর শরিফ মিলে ম্যাডাম কে খুন করে নাকি গয়না গাটি যা ছিল চুরি করে ভাগ করে নিয়েছো।
রাজনঃ না স্যার খুন আমি করিনি ।
স্যারঃ তাহলে কে করেছে ।
রাজনঃ সত্যি বলছি স্যার , আমি কিছু জানিনা।
স্যারঃ ঠিক আছে তোমার কিছুই জানতে হবে না সময় হলে বরং আমি তোমাকেই জানিয়ে দেব।
স্যার ওকে যেতে বললেন। স্যার এবার মেজ ভাইকে ডাকতে বললেন। মেজভাই এসে চেয়ারে বসতে না বসতেই খুন টা কিভাবে করালেন ? স্যার জিজ্ঞাসা করলেন?
মেজভাইঃ স্যার এওসব কি বলেন? আর খুনের সময় আমরা কেউ তো এখানে ছিলাম না। আমরা সবাই বিয়ে বাড়িতে ছিলাম।
স্যারঃ মিষ্টি করে একটা হাসির ভঙ্গী করে বললেন আমি কখন বলাম খুনটা আপনি নিজ হাতে করেছেন । আমি বলছি করিয়েছেন।কিন্তু কাকে দিয়ে কিভাবে করালেন?
মেজভাইঃখুন আমি করাবো , তাও ছোত বোউমাকে , এখানে আমার স্বার্থ কি ?
স্যারঃ আপনার ছোট ভাইয়ের সাথে তো আপনার ভাল রকমের বিরোধ আছে তাই না?
মেজভাইঃকিন্তু তাই বলে খুন করে ফেলবো? আর ও বুঝি আপনাকে বলেছে?
স্যারঃ কে বলেছে সেটা বড় কথা না। কথা টা সত্য কিন?( দৃঢ় কন্ঠে বললেন)
মেজ ভাইঃ স্যার ওই ওর বঊকে খুন করেছে আর আমার উপর দোষ চাপাচ্ছে ( কাপা কাপা কন্ঠে বললেন)
স্যারঃ নিজের বউকে নিজে খুন করবে কেন?
মেজভাইঃ কেন আবার , ওর বউয়ের তো চরিত্র ভাল না। অনেকের সাথে ঢলাঢলি করতো। তাই হয়তো খুন করে আমার উপর দোষ চাপাচ্ছে।
স্যার আমার দিকে তাকালেন । কিন্তু কেন বুঝলাম না।
স্যারঃ তাহলে আপনি খুন করেন নি ?
মেজভাইঃ না স্যার।
স্যারঃ ওকে আপনি আসুন তবে প্রয়োজনে কিন্তু ডাকতে হতে পারে। মেজভাইটা জ্বি স্যার বলে বেড়িয়ে গেলেন। স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ,লোকটিকে দেখে কি তোমার সাধা সিধে মনে হয়? আমি কি বলবাও বুজত্রে পারছিলাম বনা । তবে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় তাই বল্লাম,না স্যার,। আমার মনে হয় এই লোকটার মাঝেই কিন্তু আছে, বড্ড চালাক প্রক্ক্রিতির লোক বলে মনে হয় ।স্যার বললেন আমারো তাই মনে হয়।কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।স্যার জিজ্ঞাসা বাদের জন্য একটু বিরতি নিলেন। তিনি বাড়িটা আবার ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগ্লেন তিনি আবার বাইরের দিকে পেছনে গেলেন, যেখানে দেয়ালের পলেস্তার খসে গিয়েছিল, সেখানে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলেন।হঠাত তিনি রমিজ কে ডাকদিলেন। রমিজ আসলে বললেন দেখুন তো এখানে কি আগে থেকে ভাঙ্গা ছিল? রমিজ দেখে যেন আশ্চর্য হয়ে গেল।রমিজ বলল জ্বিনা স্যার মনে হচ্ছে নতুন করে খসে পড়েছে।স্যার একটু ঝুকে দেখলেন , দেখে বললেন পেছনের দরজার চাবি কি আপনার কাছেই থাকে ।
জ্বি স্যার।
খুলুন তো দরজা টা । রমিজ মিয়া দরজা টা খুলে দিলেন ।স্যার দরজা খুলা রস্তা দিয়ে কিছু দূর হেটে গেলেন। আমরাও পেছনে পেছনে গেলাম। গিয়ে সাকোটা দেখলাম। তখন আমার মাথায় কাজ করলো। স্যার কেন আমাকে সাকোটা খেয়াল রাখতে বলেছিলেন।(মনে মনে তার মাথার তারিফ করতে লাগলাম)এর পর স্যার রমিজ কে জিজ্ঞাসা করলেন এই দরজা শেষবার কবে খলা হয়েছিল? রমিজ মিয়া বললেন তাতো মনে নেই স্যার তবে শরিফ আমার থেকে চাবি নিয়ে ছিল।
শরিফ কিন্তু কেন? ( স্যার ভ্রুটা কুচকালেন, কোন কিছুর গন্ধ পেলে স্যার এমন তা করেন।)
তা জানিনা স্যার কিন্তু কিছুক্ষন পরে আমি এদিকটায় এসেছিলাম চাবি দেয়ার পরপরেই।কিন্তু দরজা বন্ধই পেয়েছিলাম। স্যার গভীর ভাবে কিযেন ভাবলেন।এবার তাকে আমার গোয়েন্দা মনে হল। স্যার আবার ভিতরে আসলেন এবং জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন। শাহেদ সাহেব কে ডাকা হল কিন্তু আমার কাছে তাকে তেমন দোশি বা জইড়িত মনে হল না । উনি অথিতি মানূষ, স্যার তাও ডাকলেন।হয়তো জিজ্ঞাসা বাদ করার একতা ফর্মালিটি আছে তাই করছেন।
স্যার ঃ শাহেদ সাহেব কেমন আছেন
শাহেদ; স্যার ভাল বললে বলা ঠিক হবে না , বুঝতেই পারছেন
স্যারঃ আপনি এই পরিবারের সাথে কেমন ঘনিষ্ট ?
শাহেদঃস্যার তেমন একটা ঘনিষ্ট না। ঢাকায় আমার বাসা ও তিন্নিদের বাসা কাছাকাছি হোয়াতে মাঝে মাঝে যাওয়া হয়।তাওবিভিন্ন অনুষ্ঠানে ।(স্যার আমার দিকে তাকালেন , কিন্তু কেন খুব একটা বুঝতে পারলাম না কেন তাকালেন, কিন্তু মনে হয় স্পেষাল কিছু আছে হয়ত তাই তাকালেন।)
স্যারঃ হুম্ম , তা ওখানে সবচেয়ে বেশি মেলামেশা হয় কার সাথে?
শাহেদঃআসলে স্যার তেমন একটা মেশা হয়না ।ওর আব্বুর সাথে একটু মেশা হয় , কিন্তু কেন স্যার?
স্যার?না এমনি । আপনি এখন আসতে পারেন।
স্যারকে এবার আমি না জিজ্ঞাসা করে পারলাম না , স্যার কেন শাহেদ সাহেব কে এমন প্রশ্ন করছেন? তখন স্যার আমাকে বললেন ।মানুষের মন বড়ই অদ্ভুত।যেখানে একটু আনন্দ পায় সেখানে আর সব কিছু ভুলে খোচা দেবেই। আমিও মানুষ তাই একটু খোচা দিয়ে রাখলাম।কিন্তু আমি কিছুই বুঝলাম না। যাকগে কর্তার মন দেবতার ধন। এরপর স্যার অর্ক কে ডাকতে বললেন।অর্ক এসে বস্তে না বস্তেই বল্লএন কি নায়ক তা দিন কাল কেমন চলছে সব( আমি কিন্তু কিছুই বুঝি নাই)
অর্কঃস্যার ভাল
স্যারঃএতো কিছুর মাঝে ভাল থাকেন কি করে বলুন তো?
অর্কঃ না মানে স্যার মানসিক দিয়ে ভাল নেই কিন্তু শারিরিক ভাবে ভাল আছি তাই বলে ফেললাম যে ভাল আছি।
স্যারঃহুম্ম আপনাদের যা বয়স তাতে মন ভাল থাকবে না স্বাভাবিক।তা প্রেম কেমন চলছে বলুন( স্যার মিট মিট করে হাসছেন, আমারো মনে হচ্ছিল কিসের মধ্যে কি পান্তা ভাতে ঘি ।এলাম খুনের রহস্যর কিনারা করতে আর উনি দেখছেন কে কোথায় প্রেম করছে।)
অর্কঃ স্যার কিছুই বুঝলাম না
স্যারঃ আমি বুঝেছি, বরং আপনি একটু খুলে বললে আমার সহকারীও একটু বুঝেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন কি বলেন নাদু সাহেব? ঠিক বলেছি না?
আমি বললাম জ্বি স্যার।
অর্কঃ আমতা আমতা করে বলল স্যার আমি তিন্নি কে পছন্দ করি তিন্নিও হয়তো করে আবার করে না। কিন্তু এর মাঝে আবার শাহেদ ভাই এসে গিয়েছেন?(আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম)
স্যারঃ কিরকম?
অর্কঃশাহেদ ভাইকেও আবার তিন্নি পছন্দ করে।কিচ্ছু মাথায় ঢুকছেনা । কিন্তু আপনি বুঝলেন কি করে ?
স্যারঃ (বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে) বোঝাই যে আমাদের কাজ।
অর্কঃ স্যার তাহলে ওকি আমাকে ভালবাসে ?
স্যারঃ সময় হলে আপনিও বুঝবেন নায়ক আপনিও।
স্যার অর্ককে যেতে বললেন । আর আমার দিকে তাকালেন ।কেন যে তাকালেন কিছুই তো বুঝলাম না।কিন্তু বলে উঠলেন প্রবল প্রেমিক মন শোক বোঝে না।এরা কেবল প্রেমের সুখ খুজে ফেরে।শোকের দিনেও এরা প্রেমিকার মুখ খুজে ফেরে, ক্ষনিক সুখের আশায়( কি জানি হঠাত করে তিনি এমন প্রেমিক হয়ে উঠলেন।)
কৌতুহল দমন করতে পারলাম না। জিজ্ঞাসা করেই বসলাম স্যার অর্ক যে প্রেম পার্থি কি করে বুঝলেন? স্যার আমাকে যা বললেন তাতে প্রশ্ন না করাই ভাল ছিল। স্যার বললেন আপনি ছ্যকা খাওয়া প্রেমিক এসব আপনার বোঝার কথা না। ( মনে মনেই বললাম উনি জবর সফল প্রেমিক)যাইহোক স্যার এরপর আর কয়েক জনের সাথে কথা বললেন তা থেকে তেমন কিছুই জাওন্তে পারলাম না। তবে একেবারেই যে জানা যায়নি তা নয় এই যেমন মোর্শেদ সাহেবের চরিত্র খুব একটা সুবিধার ছিল না। , মেয়েটাও একটু বখে গিয়েছে,যেমন ফর্মা তেমন ইত। এরপর স্যার বেরিয়ে আসলেন। এসে বড় রাস্তা বরাবর মেজ ভাইয়ের বাড়ির সামনে যেদিক দিয়ে দান পার্শ্বে রাস্তা চলে গিয়েছে ওখানে বরাবর যেয়ে সাকো দেওয়া রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবলেন। তারপর আমাকে বললেন তারপ্র নাদু সাব চলে যয়া যাক কি বলেন আমিও বললাম জ্বি স্যার । ( কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। তিনি বোধ হয় আমাকে আমার ভাল নাম ধরে ডাকবেনই না বলে পণ করেছেন। কিন্তু কেন জানি এই নামটাও আমারো খুব একটা খারাপ লাগে না। )
(৬ )
নটবর গুপ্ত সাহেব আমাকে রাত ৭.৩০ এর সময় উনার বাসায় আসতে বলেছিলেন। আমি যথারিথী তার বাসায় এসে হাজির হলাম। স্যার আমাকে বললেন কি নাদু সাহেব খেয়ে এসেছেন না গিয়ে খাবেন? আমিও কম যায়না বললাম স্যার বস্তে যখন দিয়েছেন তখন খেতেও দেবেন নিশ্চয়। স্যার ও বললেন সুযোগ তো ভালই নিচ্ছেন। আমিও বললাম বড় মানুষের সানিধ্য আমাকে জ্ঞানে ঋদ্ধ করে খাওয়ার ছলে যদি এমন মানুষের সঙ্গ পাওয়া যায় তা মন্দ কি স্যার? স্যার বললেন বাহ খেয়েও যাবেন আবার শিখেও যাবেন? তা সকালে খেয়ে কি শিখলেন বলুন দেখি শুনি।(আমি বুঝলাম না স্যার আমার সাথে মশকরা করছেন নাকি সিরিয়াস ভাবেবলছেন।) আমিও বললাম ঠিক কি বলতে চাচ্ছেন স্যার। স্যার বললেন কেস টার বিষয়ে মাথায় কিছু ঢুকছে? আপনি তো অনেক গোয়েন্দা কাহিনী টাহিনি তো বেশ পড়েন ( আমার আবারো অবাক হবার পালা স্যার জানলেন কি করে)গোয়েন্দা কাহীনি পরলেই কি স্যার গোয়েন্দা হওয়া যায়?
তা ঠিক আছে কিন্তু কিছু কি বুঝলেন?
স্যার আমার কাছে এখনো তেমন কিছু বোধগম্য নয় তবে কয়েকটা বিষয় মাথায় আসছে।
হুমম তা কি কি মাথায় আসছে শুনি ?
জ্বি স্যার বলছি।
১।চুরি হল আবার অস্বিকার করল আর আপনি কিছুই বললেন না ?
বাহ তুমি দেখছি আমার দোষ্টাও ধরে ফেলেছো । ভালই ছকনি যেমন ময়লা ছাপ করে তেমনি সমালোক গন ও চরিত্র শুদ্ধ করে
কাচুমাচু ভাব করে কি আর বলবো ভাবছিলাম উনি বলেই দিলেন তো আর কি কি মাথায় আসছে শুনি
২।পলেস্তার খসে পড়ল কিন্তু চাবি ছিল শরিফের কাছে
৩। ভিকটিম এর চরিত্রের দোষ আছে তবে মেয়েরেও কম নয় সেক্ষত্রে মেয়ে তেমন গুরুত্বপুর্ণ নয়
৪।আপনার সাকো আর বাড়ির পেছনে দেখা কিন্তু কেন?
আর কিছু ?
না স্যার এই ক্ষুদ্র মাথায় যা এলো তা বলে ফেললাম ।
স্যার বললেন ওকে আপনার চার নং টা আমি পুর্ণ করে দিচ্ছি। খুনি বা চোর যায় বলি না কেন বাড়ির পেছনে দিয়ে সাকো ব্যবহার করে পালিএছে মেজ ভাইয়ের বাড়ির সাওমনে যে মোড় ওখানে গিয়ে মিলিত হয়েছে। কিন্তু কারা ছিল তারা ? তারা ছিল.২ থেকে ৩ জন যাদের কে আজ সকালে আমি দেখেছি। কারা ছিল স্যার?
শরিফ, রাজন এবং মেজ বাবু কিন্তু ওরা আমাকে দেখেনি ।
কিন্তু স্যার ওরাই যে ছিল আপনি কি নিশ্চিত?
না তবে অনুমান তিন জন না থাকলেও দুই জন দেখা করেছে খুন বা চুরি করার পরে ।
কিন্তু স্যার এখানে মেজবাবুকে আনছেন কেন? উনি তো বিয়ে বাড়িতে ছিলেন তাইনা ?
হ্যা সে জন্যই তো দুই জনও হতে পারে বছি।কিন্তু বিয়ে বাড়ি থেকে উনি যদি আগেই চলে আসেন
কিন্তু স্যার ছেলের বিয়ে ছেড়ে উনি কি আগেই চলে আসবেন?
সেটাই তো প্রশ্ন।আর আর ৫ নং টা হচ্ছে কুকুরের কামড়
কুকুরের কামড়?
হ্যা জনাব হ্যা কুকুর এলেয়াকায় আর কাউকে কামড় দেয়নি কিন্তু উনি বেড়া তে এসেই কুকুরের কামড় খলেন বিষয়টা কেমন লাগছে। আরও দু একটা মোটিভ যে আসছেনা তা নয় কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ না করে কিছু অনুমান করা যাবে না।আর তাছাড়াও ময়না তদন্তের রিপোর্ট আমাদের হাতে আসা চাই তবেই আমাদের অনুমান কতটা সটিক তা বোঝা যাবে। ইটভাটাকে কেন্দ্র করে দুই ভাইয়ের যে দ্বন্দ্ব আছে সেটাকেও অবহেলা করার উপায় নেই। ওদের বড় ভাইয়ের পরিবারের কাউকে এর সাথে যুক্ত বলে মনে হচ্ছে না। এদেরকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেয়ায় যায় কি বলেন নাদু সাহেব?
জ্বি স্যার
স্যার আমাকে খেতেও বললেন আমিও আর না করলাম না। অহ আরেকটা কথা বলায় হয়নি, আমি কিন্তু একজন খাদ্য শিল্পি( পেটুক শব্দ টা আমার একদম পছন্দ নয়) স্যার আমার খাবার পুর্বে বললেন নাদু সাহেব স্রষ্টা কিন্তু সবার জন্য রিজিক নির্দিষ্ট পরিমানে নির্ধারন করে দিয়েছেন, এতো বেশি খাবেন না যাতে অকালে মারা যেতে হয়।আমিও স্যার কে বললাম মারা যখন যেতেই হবে স্যার খেয়েই বরং মরি। না খেয়ে মরার চেয়ে খেয়ে মরা ঢের ভাল।স্যার একথা শুনে হো হো করে না হেসে মুচকি হাসলেন ।( আমি কিন্তু মুচকি হাসি তেমন পছন্দ করি না কেননা এ হাসির মাথা মুন্ডু কিছুই বোঝা যায় না।) আমার আর স্যারের খাওয়ার পর্ব শেষ হলে স্যার একটা বই বের করে রাখলেন আর আমিও আমার বাসায় ফিরে আসলাম।এসেই কেন জানি প্রবল ঘুম পেল। ভাল ঘুম স্বপ্ন দেখার মোক্ষম উপায় বটে।
(৭)
পরেরদিন আমি আর স্যার আবার ঘটনাস্থলে গেলাম।স্যার মানে গুপ্ত সাহেব আবার কয়েকজন কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকলেন।প্রথমেই ডাকলেন মোর্শেদ সাহেবকে।
গুপ্তঃ আপনার বাসায় চুরি হয়েছে আপনি মিথ্যা কথা বললেন কেন?( মোর্শেদ সাহেবের দিকে তিক্ষন ভাবে তাকিয়ে)
মোর্শেদঃস্যার আমি ভাবলাম সামান্য চুরি সে কথা বলা কি ঠিক হবে । আর আসলে তো হয়েছে খুন ।চুরির কথা বললে তো আমার স্ত্রি আর ফিরে আসবে না।
গুপ্তঃ ভাল কথা কিন্তু আপনার স্ত্রীর সাথে তো আপনার ভাল সম্পর্ক ছিল না।কিন্তু সেটাও তো আমাদের বলেন নি।
মোর্শেদঃ (একটু উত্তেজিত হয়ে) এগুল কি আপনার তদন্তের ভিতরে পরে নাকি। কার বারিতে কার বউএর সাথে কিরুপ সম্পর্ক। আজকাল এসব দেখে বেড়াচ্ছেন( এবার তার আরেক রুপ আমাদের সামনে উন্মোচিত হল।)
গুপ্তঃ আর একটু ভিতরের কথায় গেলে যে ছোট বাবু আপনি আরো উত্তেজিত হবেন।
মোর্শেদঃ মানে মানে আপনি কি বলতে চাইছেন,খুন কি আমি করেছি?
গুপ্তঃ আহ! ছোট বাবু ওটা তো সময় বলবে কিন্তু আপনার স্ত্রী খুন হল সাথে চুরিও হল আর তা গোপন করে গেলেন, কিন্তু কেন? সে উত্তর পেলে বা না পেলেও যে আপনাকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেয়া যায় না। যদি দেখি খুন টি আপনি করেছে তাহলেও তো আমি আশ্চর্য হব না ( আশ্চর্য আমি হচ্ছি ,মানুষ এতো ধীর শান্ত ওথচ তিক্ষন ভাবে কথা বলে কিভাবে )
মোর্শেদঃ তাহলে বলছেন খুন আমি করেছি । আর যায় হোক আমি ওর হাজবেন্ড। এক সাথে ১৭ বছরে সংসার করেছি। আর আপনি কিনা বলছেন খুন আমি করলেও আশ্চর্য হবেন না?
গুপ্তঃ খুন কে করেছে তা সময় বলবে মোর্শেদ সাহেব। আর স্বামীর কথা বলছেন? জগতে যত খুন হয়েছে তার অধিকাঙ্গশই হয়েছে নিকট আত্নীয় বা পরিচিতদের দ্বারা।শুনন একটা কথা এক জ্ঞানী মণিষী বলেছিলেন ফ্যামিলি ইজ দ্যা মোস্ট আনসেইফ প্লেস ফর দ্যা ওয়ইম্যান।
গুপ্তঃ গুনি মানুষের জ্ঞান না দেখাইয়া তদন্ত করুন। বড় বড় কথা না বলে কাজে প্রমান করে দেখান।
গুপ্তঃ( চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।কোথায় যেন খোচা খেয়েছেন) প্রমান তো করেই ছাড়বো এর পেছনের ঘটনা আরো কি আছে সব খুজে বের করবো । আর সেদিন ... যাইহোক ( নিজেকে সামলে নিয়ে)এবার বলুন চুরি কত খানি গেছে।
মোর্শেদঃ তিন ভরি সোনার গয়না আর ২০ হাজার টাকা।আমি আমার স্ত্রীকে ওগুলো গত পরশুই গিফট করেছিলাম। আর টাকা গুলো রেকেহ দিএতে বলেছিলাম।
গুপ্তঃ ওখানে আর কে কে ছিল?
মোর্শেদঃ স্যার কেউ ছিলনা । তবে ভিতর দিকে রান্না ঘর থেকে শরিফ কে বের হয়ে যেতে দেখলাম। তবে খেয়াল করেছিল কিনা তা জানিনা।
গুপ্তঃ হুওমম। তো আপনি এটা লুকালেন কেন? যাতে দোষটা মেজ ভাইয়ের উপর পরে? চুরি হলে ত দোষ চোরের উপর গিয়ে পরতো তাইতো?
মোর্শেদঃনা জাস্ট শোকের সময় ।সামান্য এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইনি।
গুপ্তঃবেশ কিন্তু আপনার এই লিউকানো তা অপরাধ হিসেবে গন্য হতে পারে
মোর্শেদঃশাস্তি?
গুপ্তঃআপনি অনেক শাস্তি পেয়েছেন। হয়তো আগামীতেও আছে। তবে এখন আসতে পারেন।
স্যারকে আমি গম্ভীর দেখলাম। চোখে মুখে এখণ লাল ভাবটা কাটেনি।স্যারের ভিতরে ভিতরে নিশচয় খুব রাগ ঘচ্ছে বিষয় টা ভেবে আমার খারাপ লাগলো।
রমিজ কে ডাকো স্যার আমাকে বললেন। আমি রমিজকে ডেকে চেয়ারে বসালাম।
গুপ্তঃরমিজ মিয়া তুমি আর তোমার সাহেব আনুমানিক কতক্ষন এক সাথে ছিলে?
রমিজঃআমি আর স্যার প্রায় ১.৩০ ঘন্টা মানে ৫.৩০ থেকে ৭ টা পর্যন্ত ছিলাম একসাথে।
গুপ্তঃ শরিফ চাবি নিয়েছিল কখন আর কেন?
রমিজঃ স্যার ওতো প্রায়ী চাবি নেয়। ও চাবি নিয়েছিল প্রায় বিকেল ৪.৩০ এর দিকে আর আমাকে চাবি দেয় তাও প্রায় ৬টার সময়।আমি আর স্যার ওই সময় বাইরে হাটছিলাম।
গুপ্তঃ শরিফকে ডাকুন প্লিজ
আমি শরিফকে ডাকলা শরিফ এসে চেয়ারে বসলো
গুপ্তঃশরিফ তুমি রমিজের থেকে চাবি নিয়েছিলে?
শরিফঃ জ্বে স্যার
গুপ্তঃ কখন এবং কেন?
শরিফঃআনুমানিক ৪ টার দিকে ।আর পেছনের দিকে কিছু ঝোড়ঝাপ হয়েছিল তা কেটে দেয়ার জন্য।
গুপ্তঃ বেশ ভাল । কিন্তু দেয়ালের পলেস্তার খসে পড়েছে দেখেছো?
শরিফঃ ( মুখ কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেল)কই নাতো স্যার।
গুপ্তঃওখানে কিন্তু চার পায়া টুলের ছাপও পাওয়া গিয়েছে।
শরিফঃ( ঢোক গিলে বলল) কই জানিনা নাতো স্যার।
গুপ্তঃ ওকে রমিজ মিয়া আর শরিফ তোমরা আসতে পারো।
ব্যাপার টা কি কিছু বুঝলে নাদু ? আমিও বললাম কিছুটা বুঝেছি বলে মনে হচ্ছে স্যার।
ঠিক আছে কি বুঝলা মাথায় গুছিয়ে রাখো প্রে বাসায় গিয়ে শুনবো , রাতে কিন্তু খাওয়ার দাওয়াত রইলো ।যাইহোক তিন্নি কে একটু ডেক্কে দিন। আমি তিন্নি কে ডেকে দিলাম । ওকে দেখলেই আমার পৃথিবীর সেই সব মানুষদের কথা মনে হয় যত মনোযোগ নিজের দিকে থাকে ততটাই বাইরের দিকে বেখেয়ালি থাকে ।এরা নিজের একটু চুল পড়ে গেলে যতটা উতবিগ্ন হয় অপরের মৃত্যুতেও তাদের ততটা চিন্তিত মনে হয় না। ওকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে না দুদিন আগেই মেয়েটার মা খুন হয়েছে।
গুপ্তঃ কেমন আছো জিজ্ঞাসা করবো না , তবে দিন কাল কেমন চলছে?
তিন্নিঃভাল
গুপ্তঃশুধু ভাল মনে হয় না , একটু বেশিই ভাল চলছে, অর্ক ছেলেটা কিন্তু বেশ ভাল তাইনা?
তিন্নিঃ ভাও তো আমি কি করবো?
গুপ্তঃ কেন ওকে ভাল লাগে না?
তিন্নিঃএসব প্রশ্ন করছেন কেন আমাকে?
গুপ্তঃবেশ ভাল না লাগলে বলবো না,ওকে বলছি না।তোমার আম্মু আর আব্বুর সমপ্ররক তা নাকি তেমন ভাল ছিল না? কেন বলতে পারো?
তিন্নিঃ ওসব আমি জানিনা আর জানতেও চাই না। তবে বুঝি আমার আব্বু অনেক ভাল একটা মানুষ।
গুপ্তঃ আম্মু নয় কেন?
তিন্নিঃ জানিনা।
গুপ্তঃ শুধুই আব্বুর কথায় বলছো আম্মুর কথা বললে নাযে?
তিন্নিঃ এমনি মনে হল তাই বললাম।
গুপ্তঃ( চেহারায় একটু কমল ভাব এনে যেন রোমান্টিক দেবতা)যাই বলো তুমি দেখতে কিন্তু অনেক সুন্দর কিন্তু কথা র সাথে তার কোন মিলই নাই
তিন্নিঃ(চোখে মুখে কটমট ভাব এনে ) সব কিছু কি নিয়ম মেনে চলে ?এই ধরুন আমার আম্মু ( কথা তা বলতেই মন্তা কেমন যেন বিষিয়ে গেল)
গুপ্তঃ ঠিক আছে ওসব আর বলবো না । বলত আমাকে দেখে তোমার কি মনে হচ্ছে?
তিন্নিঃ (মুখে আবার একটু হাসি এনে) কেমন আবার আম্পনাকে দেখে তো আমার মানুষী মনে হচ্ছে।
গুপ্তঃ( একটু বিব্রত হয়ে) না মানে একটু আমার দিকে একটু দেখ( চোখ দুটো অসম্ভব সুন্দর করে, এমনিতেই চেহারা স্যারের অনেক সুন্দর তার উপর এরকম এক্টীং)
তিন্নিঃ (কিছুক্ষন স্যারের দিকে চেয়ে থেকে) বলুন কি বলতে হবে ?
বুঝলাম যার যেখানে যত আগ্রহ সে সেখাঙ্কার ইশারা ভাষা তত ভাল বুঝে। স্যার চোখের ভাষায় কি বুঝালেন আর তিন্নি কি বুঝল তা ত্রারায় ভাল বলতে পারবে । আমার এসব বুঝে আর কাজ নেই।
গুপ্তঃ তিন্নি তুমি একতা খুবি ভাল মেয়ে সবাই তোমাকে বুঝতে পারে না। তোমারো একটা সুন্দর একটা মন আছে আমি কয়দিন তোমাকে যেটুকু দেখেছি যেটুকু বুঝেছি তোমার মত সুন্দড়ি আর বুদ্ধত্মতি মেয়েদের মন খারাপের কোন কারনি থাকতে পারে না ।কিন্তু এখন তোমার সাথে আর কথা নয় তোমার সাথে আমি একান্তে বসে কথা বলব ঠিক আছে? তুমি এখন যাও
এরপরামি আর স্যার ওদের ওখান থেকে বেরিয়ে আসলাম স্যার আমাকে সকলের ফোন নম্বর কালেক্ট করে ট্র্যাকিং এ দিতে বললেন। খুনের ১ মাস পুর্বে থেকে এখন পর্যন্ত। সকল কল লিস্ট চেক ক্রার জন্য আদেশ দিলেন। আমাকে স্যার থানায় পাঠিয়ে দিলেন আর উনি মেজ ভাই আর বড় ভাইয়েরবাড়ির দিকে গেলেন এলাকার কয়েকজঙ্কেও জিজ্ঞাসা বাদ করার দরকার।। আমি আবার বাড়ির ভিতরে গিয়ে সকলে ফোন নম্বর নিলাম। থানায় গিয়ে অপারেটর কে গিয়ে দিয়ে বললাম এগুলোর ডিটেইলস আমাকে সন্ধায়ার পরপরই দিবেন এগুল স্যার কে দিতে হবে। একতা বিষয় আমার স্বীকার করার দরকার যে বই কিংবা টিভিতে অনেক কিছুই অতিমানবীয় কিছু ঘটে যেটা আমাদের বাস্তব জীবনে অসম্ভব ।আবার জিবনে এমবন ঘটনাও ঘতে যা বইয়ে পাওয়া গল্পের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।তবে স্যারকে আমার কেন জানি ভাল লাগতে শুর্যে করেছে।
(৮)
স্যারের বাসায় আমি গেলাম।স্যারকে লালন সঙ্গীত শুনতে দেখলাম। লালন আমারো ভাল লাগে" মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষেরই সনে " আমাকে দেখে স্যার মৃদু হাসলেন বললেন স্রশটার এই দুনুইয়ায় মিলন কামনা যে কত যাতনা ময় তা আপনি বুঝবেন নাদু সাহেব আমরা কি আর বুঝব বলুন।বুঝলাম স্যার আমার সম্পর্কে বেশ ভাল ভাবেই শুনেছেন স্যার এই গান শুন্তেই পারেন কিন্তু হঠাত আমাকে এই কঠা বললেন কেন? কি জানি গোয়েন্দা বমক্যাস বকশি তার লেখক বন্ধু অজিতকে নানা কথায় নানা ভাবে খোচা দিতেন আমার পড়ে কিন্তু ভালই লাগতো। কিন্তু বাস্তবে খচা খায়য়া এবং তা হজম করা এক কথিন বিষয়। আমি ত আর অজিত নয় আমি হলাম নাদু সাহেব হা হা ।স্যার কল লিস্ট শুনলাম আপনি নিয়ে এসেছে?
হ্যা নাদু সাহেব তাইত এতো গান শোনা।
স্যার কিছু কি পেলেন?
না এত তাড়াতাড়ি কিসের নাদু সাহেব বাস্তব কত ভুয়ংকর মানুষের স্বার্তেহ যদি একটু ঘা লাগে আপন পর কেউ বাছে না নাদু । এই কেসটায় দুটো বাক আছে বলে মনে হচ্ছে একটা প্রয়োজনীয় আরে একটা রোমান্স প্রিয় মানুষের জন্য একেবারে নতুন স্বাদ। আপাতত আমরা প্রথম দিকটা নিয়েই কথা বলি নাদু সাহেব।
স্যার যদি একটু খুলে বলতেন আমি তো কিছুই বুঝতেছি না ।
বলবো নাদু সাহেব বলব তার আগে খিছু খেয়ে নিই নাকি ?
জ্বি স্যার আমিও তাই বলি । আমারো প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে।
তাইতো তোমাকে খেয়ে নিতে বলছি ক্ষুধা পেটে মাথা খোলেনা
জ্বি স্যার আমিও একমত আপনার সাথে।
আজ খাওয়া টা খুব একতা ভাল হল না। না স্যারের আয়োজন ভালই ছিল কিন্তু মনের মাঝে প্রশ্ন রেখে খাওয়া দাওয়া টা একদ্ম কঠিন বিষয়। তাও মন্দ হল না
নাদু সাহেব কেমন লাগলো খাবারটা ?
স্যার খাদ্য সব সময়ি উপাদেয় যখন পেটে ক্ষুধা থাকে কিন্তুয় মষতিস্কে চিন্তা থাকলে খাওয়ার কিন্ত্যু মুখে ঢুকে না।
তা কি নিয়ে এতো চিন্তা আপনার।? স্যার আমার মত দায়িত্ব বান লোকের থেকে কি আর ভিন্ন চিন্তা পাবেন , আমি কেস টা নিয়েই ভাবছিলাম।
হুমম ভাল তো । তা কি এতো ভাবছেন?
জ্বি স্যার শরিফের সাথে কথা বলার পর আপনি আমাকে কিছু বিষয় মাথায় সাজাতে বলেছিলেন কিন্তু গবর মাথায় কিছুই তো সাজাতে পারিনি।
ময়না তদন্ত ছাড়া কিছু বলা ঠিক হবে না । তবে কল লিস্ট অনেক কিছুই বলছে।
তাই বলে সায়র কল লিস্টের একতা কাগজ আমার দিকে দিলেন অপ্র কাগজ নিজের হাতে রাখলেন।কল লিস্টের কাগজে যা দেখলাম তা হল গত কয়েক দিনে শরিফ , রাজন ও মেজবাবুর মাঝে ফোনে অনেক কথায় হয়েছে।এমন কি খুনের পুর্বে ও প্রেও তাদের মাঝে যোগাযোগ হয়েছে। স্যার আমাকে ভাবতে দেখে বললেন
কি মনে হচ্ছে?
স্যার তাহলে কি খুন এরাই কি করেছে ?
স্যার গম্ভীর ভাবে থেকে বললেন তা এখনি বলা যাচ্ছে না । তবে এদের মাঝে একজন সেক্ষত্রে রাজন কিংবা শরিফকে থানায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়ে দাও।আর আরেকটা ব্যপার শরিফ ও মোর্শেদ সাহেবের মাঝে ফোনে অনেক কথা হয়েছে। আর খুনের পরপরই মর্শেদ সাহেবকে ফোন দিয়েছিল , কিন্তু কেন?
স্যার এবার ২য় কল লিস্টের দিকে চেয়ে থেকে বললেন এবার আসুন মিলন তত্ত্বে । তিন্নির ফোন থেকে অর্কর ফোনে এদানিং বেশ ফোন গিয়েছে। আবার তিন্নির ফোন থেকে শাহেদের ফোনে অনেক কল গিয়েছে আর শাহেদের ফোন থেকে তিন্নি এবং ভিক্টিমের উভয়ের মাঝেই ব্যপক কথা চালান হয়েছে। তিন্নির মার ফোন থেকে সিয়ামের ফোন অনেক কল গিয়েছে। সিয়ামের ফোন থেকেও তিন্নির ফোনে মাঝে মাঝে মাঝে ফোন গিয়েছে। আরেকতা ০১৭০-------- এই নম্বর টা কার দেখুন ত
কেন স্যার?
এই ফোন থেকে মোর্শেদ সাহেবের ফোনে অনেকবার ফোন দিয়েছে আবার মোর্শেদ সাহেবো অনেক বার এই নম্বরে ফোন দিয়েছে। এখানে শুধু খুনই হয়নি আরো অনেক টুইস্ট আছে। খুন্টা কেন হল তা জানা যেমন জুরুরী তেম্ন তাদের রসায়ন ও জানা জুরুরী। স্যার আমাকে বললেন নাদু সাহেব আমি শুধু খুনেরই গন্ধ পাচ্ছি না । আরো কিছুর গন্ধ পাচ্ছি।কাল আরেকবার ওখানে যেতে হবে নাদু সাহেব , তবে আমি একা যাব এদিকে আপনি ময়না তদন্তের রিপোর্ট সংগ্রহ করুন। আর আরেকটা কেস হাতে এসেছে ওটার বিষয়ে একটু দেখুন । আপনার সাথে আমার ভজন পর্বে দেখা হবে।
কিন্তু স্যার?
কিন্তু কি ?
স্যার প্রতিদিন আপনি খাওয়াবেন আর আমি খাব তাই কি হয়?
আপনি যদি খাওয়ার প্রতিদানে খাওয়াতে চান তাহলে খাওয়ান আর যদি মনে করেন খেতে লজ্জা করে তাহলে লজ্জা ঝেরে ফেলুন। খাওয়ায় যে লজ্জা করে তার মত নিজের ক্ষতি আর কে করে বলুন। অতএব আপনি লজ্জা বাদ দিন খেতে আসুন ।
কি আর করার আমিও লজ্জার মাথা কেটে দিলাম। ঠীক আছে স্যার আসব । তবে আরেকতা কথা স্যার।
আবার কি?(বিরক্ত হয়ে )
স্যার আপনি আমাকে তুমি করেই বলবেন। আমি আপনার ছোতই হব
অহ ঠিক আছে।
স্যার আর কথা বাড়ালেন না। কিছু একতা ভাবছেন হয়ত নিজের কোন ব্যপারে/ আমিও আর সেখানে দাড়ালাম না। মনের সুখে গান ধরে দিলাম, মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষের ও সনে ।
(৯)
বাসা থেকে ফোন এসেছিল মা অসুস্থ হয়তো দু একদিনের জন্য বাড়ি যেতে হবে। কিন্তু কেস টা এমন এক পর্যায় আমি বাড়ি যাব কিনা ভাবছি।হঠাত বিকেলে স্যার এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন ময়না তদন্তের রিপোর্ট এসেছে কিনা । বললাম আমি আর্জেন্সি জানিয়েছি হয়তো দ্রুতই দিয়ে দেবে।স্যার কোন কুল কিনারা করতে পারলেন?
আগামী কাল মেজবাবু, শরিফ আর রাজঙ্কে গেপ্তার করে নিয়ে আসোয।যদিও ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসেনি তবুও এরাই সাস্পেক্টেড আর একজনকেও মনে হচ্ছে কিন্তু ওনার বিরুদ্ধে জোরালো কোন প্রমান নেই।
কে স্যার? ভিকটিমের স্বামী ?
হ্যা।কিন্তু তেমন কোন প্রমান নেই। আজ যে টূকু জিজ্ঞাসাবাদে জাওনলাম সে অনুযায়ী মেজবাবুকেও খুব একটা দোষী মনে হচ্ছে না। তবে শরিফ ও রাজনের সাথে যে তার যোগসাজেস আছে সে ব্যপারে আমি নিশ্চিত।খুনে তার সরা সরি হাত নেই হয়তো তবে পরোক্ষ প্রভাব যে নেই তা বলা যায় না।
কিরকম স্যার?
সেটা থানায় জিজ্ঞাসাবাদেই জানা যাবে। আপনি তো আছেন তাইনা?
জ্বি স্যার (বাসায় যাওয়ার প্লান বাদ দিতে হল।) স্যার আমাকে মিলন হবে কত দিনে গানটি গায়তে বললেন। আমি লজ্জা পেলাম স্যার বললেন আপনার গানের যে কন্ঠ তা আমাকে গান শোনাতে আগ্রহী করে তোলে কিন্তু ভয় হয় কানের দশা আরো না ভয়াবহ হয়।ভীষন কষ্ট পেলাম স্যারের কথা শুনে ।মানুষ মানুষকে অপমান করে কিযে সুখ পায় ? তবুও গলায় খাকির দিয়ে গায়তে যাব ওমনি স্যার বললেন থাক গান আর গায়তে হবে না।এগান কেন শুনতে চাচ্ছি তাকি কিছু বুহতে পারছেন নাদু সাহেব । বুল্লাম জ্বী স্যার
কি বুঝলে শুনি
স্যার আপনি হয়তো প্রেমে পড়েছেন।
নাদু সাহেব আপনি ভালই বুঝেছেন।
কি যে বুঝলাম স্যারের কটাক্ষ আর প্রশংসা আলাদা করা মুশকিল।
প্রেমে পড়লে মানুষের মাথা ঠিক থাকে না। নেশা র জগতে ভয়ংকর নেশা হল মেয়ে মানুষের নেশা ।এ নেশা একবার যারে ধরেছে সে সব কিছুতেই প্রেম খুজে।প্রেম তা কথার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠে, যেমন্টি তোমার হয়েছে।
বুদ্ধ কোথাকার নুজেকে নিজেই ধিক্কার দিলাম ।তাহলে কি বোঝালেন স্যার?
তুমি যা বুঝলে তাই বোঝালাম , তোমার একখান বিবাহ করবার দরকার দেখছি হে নাদু।
সে না হয় একদিন হবে ঘটকালিটা না হয় আপনি করবেন কিন্তু এখন এ গানের হেতু কি স্যার?
বুঝবেন সময় হলেই বুঝবেন । আমিও যে সঠিক বুঝেছি তা ন কিন্তু অনুমান করছি মাত্র।
জ্ব স্যার অনুমান গয়েন্দাদের প্রধান অস্ত্র।
তা গোয়েন্দা নাদু আপনার প্রধান অস্ত্র যে প্রেম সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
স্যারের খোচাটা খেয়ে আর মুখ দিয়ে কথা বেরোল না , এমন ভাবে কথা বললে কথার পৃষ্টে কথা বলা যায়না। আমি স্যারের নিকট হতে এখন পালাতে পারলেই বাচি । স্যারের নিকট হতে বিদায় নিলাম। বাসায় এসি নিজের প্রেম জীবনের দিকে তাকালাম কিন্তু তাতেও মন নেই মন কেবল স্যারের গানের কথায় চলে যাচ্ছে মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষের সনে । স্যার এটা দিয়ে কি বোঝাতে চাচ্ছেন বুঝলাম না। অথচ এই কয়দিন তাকে দেখে বুঝেছু অযাথা কিংবা অপ্রাসংগিক কথা বলার লোক তিনি নন। তাহলে তিনি কি বোঝাতে চাইছেন এর মাঝেই হালকা ঘুমিয়ে পড়লাম একটু ঘুমে ই জমিদার বাড়ির স্বপ্ন দেখলাম এতো সুন্দর বাড়ি ঘুম ভাংতেই মনে হল এতো সুন্দর বাড়ি কিন্তু বাড়ির লোক গুলো সব কেমন জানি। না আবার একটু ঘুমিয়ে পড়লাম।
(১০)
আজ রাজন শরিফ আর মেজ ভাইকে আটক করে নিয়ে আসলাম।ওদের স্যার জিজ্ঞাসা বাদ করবেন। স্যার এদানিং কোথায় কোথায় যাচ্ছেন হুঠ করেই কিন্তু আমাকে কিছু একটা বলছেনও না আবার আমাকে সাথে নিয়েও যাচ্ছেন না ।কিছুক্ষন পরে স্যার আসলেন প্রথমেই রাজঙ্কে জিজ্ঞাসা বাদের জন্য ডাকলেন।
স্যারঃ বল রাজন খুন টা কেন করলি শরিফ তোর ব্যপারে বলে ছে যে খুন টা নাকি তুই করেছিস।
রাজনঃ স্যার আমি আসলে খুন করতে চাইনি । মেজ বাবু আমাকে ওই বাড়িতে দলিল চুরি করতে পাঠিয়েছিল।
স্যারঃ দলিল ? কেন?
রাজন স্যার ইট ভাটা র জমিটা মেজবাবু পুরোপুরি পান্নি।সেই জন্যি ছোট বাবুর সাথে মেজবাবুর দ্বন্দ্ব চলছিল।
স্যারঃ তোকে খুন করতে কে বলেছিল।
রাজনঃ কেউ না স্যার।
স্যারঃ তবে খুন করলি কেন?
রাজনঃ ম্যাডাম কে খুন করার কোন ইচ্ছে ছিল না ।কিন্তু ম্যাডাম সব দেখে ফেলে আর আমাকে ডাকতে থাকে। আমি দলিল খুজে পায়নি তবে কিছু সোনার অলংকার পায়, তাই দেখে নিজের লোভ স্মবরন করতে পারিনি যা ম্যাডাম দেখে পেলে আমি উপায়ন্তর না দেখে ম্যাডামকে হালকা ভাবে রান্না ঘরে পড়ে থাকা হাসু দিয়ে হালকা আঘাত করি। এতে ম্যাডাম ধপ করে পড়ে যায় আমি ভয়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।
স্যারঃবাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলি কিভাবে ?আবার যাওয়ার সময় তো দরজা খোলা না পেয়ে দেয়াল টপকায়ে গেছিস।
রাজনঃ জ্বি স্যার।শরিফ কথা দিয়েছিল ও দরজা খুলে রাখবে । কিন্তু ও দরজা খুলে রাখেনি।তাই দেয়াল টপকায়ে যেতে হয়েছিল।
স্যারঃ শরিফকে কে ম্যানেজ করেছিল তুই না মেজবাবু?
রাজনঃ স্যার মেজবাবু শরিফকে টাকা দিয়েছিল দলিল চুরি করে দেয়ার জন্য আর শরিফ আমার কথা বলে যাতে চুরির বিষয়ে কেউ মাথা না ঘামায়।
স্যারঃভাল ভাল খুবি ভাল অপেক্ষা কর মৃত্যুদন্ড পাওয়ার জন্য।
রাজনের চোখমুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।স্যার শরিফকে ডেকে নিলেন
স্যারঃরাজন সব বলে দিয়েছে । নে এবার তুই কিছু বল।অবশ্য তুই কিছু না বললেও চলবে । তারপরও নিজে বাচার জন্য হলেও কিছু বল।
শরিফঃ স্যার আমার কোন দোষ নেই । আমাকে মেজ বাবু সব করতে বলেছেন। আমি না করলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল।কিন্তু স্যার খুনটা আমি করিনি। কিংবা এর কিছুই আমি জানিনা।
স্যারঃ(কয়েকটা জোরে চড় মেরে) কিছুই জাননা ? আগে এসব বলে দিলে এতো কষ্ট করতে হতো না ।অপরাধ জেনে সেটা লুকানোও অপরাধ।
শরিফঃ আমি সব বলছি স্যার। আমাকে মারবেন না স্যার। মেজবাবুর সাথে ছোট বাবুর জায়গা জমি নিয়ে দ্বন্দ চলছিল। ছোত বাবুর কাছে বাড়ির জমির সকল দলিল আছে কিন্তু ছোট বাবু মেজবাবুকে সব দেখাচ্ছিলেন না।তাই মেজ বাবু আমাকে কিছু টাকা দিয়ে ছিলেন দলিল গুল নিয়ে ফটোকপি করে আবার ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু কাজটা আমি করতে পারতাম না বলে রাজঙ্কে বলেছিলাম যাতে দোষটা আমার উপর না পরে ।কিন্তু বেটা খুন করে ফেলবে তা জানতাম না।
স্যারঃ চুরির ভাগ পেয়েছিস?
শরিফঃ না স্যার আমি নিতে চাইনি। যার নুন খেয়েছি তার সাথে নেমক হারামি করতে চাইনি।
স্যারঃ জব্বর একখান কথা বলেছিস ।নিমক হারানির বাদ কি রেখেছিস হারামজাদা । স্যার ওকে লকাপে ঢুকাতে বললেন আর মেজবাবুকে ডাকতে বললেন। মেজবাবু এলেন
স্যারঃখুন করে কি লাভ পেলেন জনাব? শেষ পর্যন্ত ধরা তো খেতেই হল ।তাইনা?
মেজবাবুঃ জ্বিনা স্যার আমি খুন করিনি। ওসব মোর্শেদের চক্রান্ত ওই ওর বউকে খুন করিএছে রাজন কে দিএ।
স্যারঃতার খুন ক্রে লাভ টা কি শুনি ?
মেজবাবুঃ ওর বঊটা ছিল একটা বাজে মহিলা। নানা জনের সাথে ফষ্টিনষ্টি করতো। মোর্শেদ এসব সহ্য করেতে পারেনা তাই খুন করে দিয়েছে।
স্যারঃ আপনি সহ্য করতে পারতেন?
মেজবাবুঃনা স্যার , তাই বলে খুন করে দেব?
স্যার; খুনটা আপনিই করিএছেন মেজ বাবু । শরিফ আর রাজন সব বলে দিয়েছে তাই আর ভনিতা না করে বলে ফেলুন।
মেজবাবুঃ চোখমুখ কাচুমাচু করে) স্যার আমি ত খুন করতে বলিনি। কেবল দলিল টা চেয়েছি। আর ওটা ফটোকপি করেই আমি ফিরিয়ে দিতাম।কিন্তু ওযে সোনার লোভে খুন করে ফেলবে এসব কি আর আমি জানতাম।?
স্যারঃ কিন্তু খুন্টা হয়েছে তো আপনার কারনেই। আবার সোনারো ভাগ নিয়েছে । আপনিই এ খুনের প্রধান আসামী কতরে আমি চার্জশীট গঠন করব।
মেজভাইঃ না স্যার আমি সোনার ভাগ নিইনি ওর থেকে কেড়ে নিয়েছি। সব আমার কাছে আচঘে। এসব ধন সম্পত্তির প্রতি আমার বিন্দু মাত্র লোভ নেই
স্যারঃ আপনি ত অসম্ভব ক্রিমিনাল ব্রেইনের লোক। এ স্মাজের বুক থেকে আপনার মত লোক যত দ্রুত যায় ততই এ সমাজের মংগল।
স্যার মেজবাবুকেও লোকাপে ঢকানোর নির্দেশ দিলেন
(১১)
বিকালে স্যারের বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখলাম স্যার এওকটি বই পড়ছেন । স্যার আমাকে দেখেই বললেন কি খবর নাদু সাহেব খুব ফুরফুরে মেজাজে আছো ।জ্বি স্যার একটু আছি বইকি কত সহজেই কেসটা সমাধান হয়ে গেল । এরকম কেস সমাধান করতে অবশ্য আপনার মত চৌকস অফিসারের প্রয়োজন ছিল না আমি নিজেই সমাধান করে ফেলতাম।
তাই নাকি স্যার চোখে ভ্রুকটি রেখে বললেন
জ্বি স্যার
নাদু সাহেব এখনো কিন্তু ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসেনি তাই কেসটা যে সমাধান হয়েছে তা বলা যায় না।
কেন স্যার এটা নিয়ে আপনার কোন সন্দেহ আছে?
সন্দেহ কিনা বলতে পারিনা তবে কিন্তু কিন্তু ভাবটা কেন জানি মন থেকে সরে যাচ্ছে না
এ কথা বলেই স্যার পাশের রুমে গেলেন এবং কোথায় যেন ফোন দিলেন। স্যার এসে আমাকে বললেন
নাদু সাহেবা আমাকে হয়তো দু একদিনের জন্য ঢাকায় যেতে হতে পারে এদিকটা তুমি সাম্লে নিও। আর এর মধ্যে যদি ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসে তবে আমাকে ডিটেইলস জানিও
আমি স্যারকে আশ্বস্ত করলাম এদিকে আমি সব সামলে নেব স্যার আপনি নিশ্চিন্তে ঘুরে আসুন ।তা স্যার কবে যাবেন ?
আজ রাত্রেই যেতে হতে পারে
স্যার কেন বা কোন কাজে যাচ্ছেন তা বোঝা গেল না । আমিও কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না । স্যারকে ফোনেও এদানিং বেশ কথা বলতে দেখেছি। এমন ঢং এ স্যার কথা বলেন যেন মনে হয় স্যার তার প্রেমিকার সাথে কথা বলেন। কিন্তু পরিস্কার কিছু বুঝতে পারছি না। স্যার কি আগে থেকেই কথা বলেন কিনা তাও জানিনা।
স্যারের বাসা থেকে বেড়িয়ে থানার দিকে আসলাম মন্টা কেন জানি আবার উদাশিন হয়ে গ্ল। কিছুক্ষন আগেও মনটা বেশ ভাল ছিল। কিন্তু এই এক মুহুর্তের মধ্যে এমন কি হল যে মন টা খারাপ হয়ে গেল।জীবন্টা বড্ড এক ঘেয়ে লাগছে ।মন্টা ভাল করতে পদ্মার পাড়ে গেলাম সেখানে একা একা ঘুরে বেড়ালাম। আমার মনে হয় দুইটা জিনিস কবি সাহিত্যিকদের মঙ্কে প্রফুল্য দান করতে পারে আর তা হল প্রকৃতি আর সুন্দরি নারীর সানিধ্য। তেমনি প্রেকৃতি তার অনাবিল সৌন্দর্য দিয়ে আমার মঙ্কে প্রফুল্ল করে তুল্ল। নিজেকে কবি কিংবা সাহিত্যিক ভাবতে ভাল লাগে ।যদিও কোন দিন একটা কবিতা কিংবা গলপও আমি প্রকাশ করতে পারি নি।তবুও নিজেকে সাহিত্যিক ভাবতে ভালই লাগে।পৃতিবী সত্যিই আজব যে মন অল্পতেই সুখি হয় সে মন আবার অল্পতেই ব্যথা পায়।আর যারা অল্পতেই ব্যথা পায় তাদের চিত্ত বড়ই দুর্বল আর দুর্বল চিত্তের মানুষ জীবনে বড় কিছু করতে পারে না ।আমিও দুর্বল চিত্তের মানুষ। কিন্তু আমার বেশভূষা ও চাকরি জীবন আমার দুর্বলতাকে ঢেকে দেয় তবুও আমি দুর্বল দুর্বল পুলিশ অফিসার মাত্র। মনের এমন উত্থান পতনে আমিও কম বিস্ময়াপন্ন হই না।কিন্তু দুর্বল মনে যা কিছু তা মনেই চাপ পড়ে থাকে।
(১২)
গত তিন দিন হল স্যার ঢাকায় গিয়েছেন। এর মাঝে ময়না তদন্তের রিপোর্টও হাতে চলে এসেছে । স্যারকে আমি সব ফোনের মাধ্যমে জানিয়েছি। রিপোর্টে বেশ কিছু বিষয় ধরা পড়েছে। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হল ভিকটিমের মৃত্যুনাকি আঘাতে কারনে হয়নি শরিরে ডিগক্সিন এর অতিরিক্ত মাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে।এটা একটা হার্টের ওষধ কিন্তু মাত্রারিক্ত হলে এটা একটা পয়জন ।এই পয়জন টা অনেক মারাত্নক ।কারো শরীরে পুষ করলে কয়েক মিনিটের মধ্যে ভিকটিম মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। আরো একটা পয়জনের উপস্থিতি ওই ভিকটিমের রক্তে পাওয়া গেছেভিকটিমকে কুকুরে কামড়ের যে ভ্যাক্সিনের নেতিবাচক প্রভাব পাওয়া গিয়েছে। তার মানে ভ্যাক্সিন্টা এক্সপায়ারড ছিল। স্যার কি তবে এসব বিষয়ে আগে থেকে বুঝতে পেরেছিল? স্যারের অনুমান শক্তি দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম।তাহলে কি ঐ মহিলার স্বামিও কি এই খুনের সাথে জরিত? কেস টা আবার কেন জানি ঘোলাটে হয়ে গেল। কিন্তু কোন কেস একটু জটিল হলে মন্টা আপনা আপনি ভাল হয়ে যায়। না আমি তেমন কাজ পাগল মানুষ না। তবে কেসে টুইস্ট থাকলে কেমন যেন রহস্যময় জগতে মন টা হারিয়ে যায়।মানুষের মন সত্যি অদ্ভুত । স্যারের জন্য মন্টা আকুপাকু করছিল। স্যার কখন আসবেন আর চোখে মুখে রহস্যময় ছাপ একে কেস্টার সমাধান করবেন ভাবতেই মন্টা আনন্দে ভরে উঠলো। আবার আমাকে ডেকে গম্ভীর কন্ঠে বলবেন কি নাদু সাহেব কিছু কি বুঝলেন? আমি বলবো জ্বী স্যার তো উনি ববেন বেশ বুঝেছেন। যাই হোক বেন্টিয়াম ফসফেটটা ইনজেক্ট করলো কে ? এতো আর যেসে বিষ না যে হাতের নাগালেই পাওয়া যাবে। আবার বাড়ীতে খুন হয়েছে কিন্তু সবাই কেমন জানি স্বাভাবিক। বাড়িতে চুরি হয়েছে সে কথা ও অস্বীকার করে । কিন্তু কেন ? নাহ সব কিছু কেমন জানি গুলিয়ে যাচ্ছে ।আবার স্যার যে কবে আসবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। । ধুর ছাই মাথা টা একদম গেছে । এর মাঝেই হঠাত লান্ড ফোন্টা ক্রিং ক্রিং শব্দে বেজে উঠলো। অফিস থেকে ফোন এসেছে। শুনলাম গুপ্ত স্যার এসেছেন। এসি নাকি আমাকে খুজছেন । মন টা আনন্দে ভরে উঠলো। আমি রেডি ছিলাম না । রেডি হতে একটু দেরীই হয়ে গেল।রেদী হচ্ছি এমন সময় দরজয়ায় নক দেয়ার শব্দ। দরজা খুলেই দেখি স্যার । স্যার আমাকে দেখে মুখে প্রশস্ত একটা হাসি দিয়ে বললেন নাদু সাহেব একটু মিলন হবে কত দিনে গানটি গাননা । যদিও আপনার কন্ঠটা সেইরকমের দারুন । আমি গান গাওয়ার চেয়ে তাজ্জব বনে গিয়েছিলাম বেশি।স্যার ঢাকা থেকে কখন এলেন তাও আবার মুখ এক গাল ভর্তি হাসি নিয়ে । কি জানি স্যারের বিয়ে সাদি ঠিক হয়ে গেল কিনা ? স্যার যদি কিছু মনে না করেন কি হয়েছে দয়া করে বলবেন কি? আর স্যার গান গাইবো কি সেদিন যা বললেন তাতে আমার যা গলা সে গান শুনে হাসিতে আরো ফেটে পড়বেন। স্যার বললেন গান যখন গাইতে চাচ্ছেন না চলুন ঘুরে আসি কোথাও থেকে।
চলুন স্যার যায় ।
সাথে যে আরো কয়েকজন কে দরকার স্যার বললেন।
আর কাকে নেব স্যার?
নিন না হয় ৫-৭ জন কন্সটেবলকে গাড়িতেই তো যাচ্ছি । ওরাও না হয় ঘুরে আসবে।
বাইরে বেড়িয়ে দেখি স্যার কয়েকজন কন্সটেবল্কে সাথে নিয়েই এসেছেন। স্যার আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে বলতে শুরু করলেন আধুনিক এই যুগে এসে আমরা সম্পর্কের বন্ধন গুলোকে কেমন যেন আলগা করে দিয়েছি। পৃথিবীতে আমরা কেউ কারো নয়। আমরা কেউ নিরাপদ নয় । কেউ নয় বলেই স্যার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন । কিন্তু স্যার এসব কথা বলছেন কেন কিছুই বুঝলাম না স্যারের কথায় শুধু হু হা ধরে গেলাম। যেতে যেতে বুঝলাম স্যার ঘুরতে যাচ্ছেন না যথারীতি আমরা জমিদার বাড়ির সামনে গিয়ে উপস্যহিত হলাম ।জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করলাম । প্রবেশ পথেই দেখলাম ছোটবাবু মানে মোর্শেদ সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন । তিনি আমাদের এতো জনকে এক সাথে দেখে বিস্ময় ভরা চোখে আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন।স্যার মোর্শেদ সাহেব কে লক্ষ্য করে বললেন কি মোর্শেদ সাহেব খুব আশ্চর্য হচ্ছেন মনে হচ্ছে ? আশ্চর্য হয়ার কিছুই নেই বাসায় যে বা যারা আছেন সবাইকে একটু ডাকুন , ও বাড়িতে যারা আছে তাদেরো ডাকুন । আমি অবশ্য রেজাউল ডাক্তারকেও ডেকে নিয়েছি।
মোর্শেদ সাহেব বললেন কেন স্যার আবার কি হল খুনি দের তো ধরেছেন । কিছুক্ষন পড়ে রেজাউল ডাক্তার ও চলে এসেছেন। গুপ্ত সাহেব বললেন খুনি ত ধরা পরেছেই তবে সম্পুর্ন গল্প টা এখনো শেষ হয়নি।তাই একটু আসা ।গল্পটা আপনি একটু দয়া করে নিজে কানে শুনবেন গল্পটা যদি শুনে যাতে আপনার কোন সমস্যা না হয় সে জন্যই ডাক্তার সাহেবকে ডাকা আর গল্পে যদি কোন ভুল করে থাকি দয়া করে আপনি শুধরে দেবেন।নিচের ডাইনিং রুমে সবাই চলে আসলে মোর্শেদ সাহেবের নিকট হতে স্যার মানে গুপ্ত সাহেব অনুমতি নিয়ে গল্প বলাটা শুরু করলেন
গুপ্তঃ গল্পটার শুরু হয় আজ থেকে ১৬-১৭ বছর আগে । ধনী মোর্শেদ সাহেবের সাথে কম বয়সী ধনীর দুলালি নিতুর ধুমধাম করে বিয়ে হয়। তখন নিতুর বয়স ১৬-১৭ বছরি হবে । দেখতে অসম্ভব সুন্দরী নিতু রক্ষনশীল পরিবারের মেয়ে হওয়ায় সেই বয়সের যে চপলতা ছিল তা তখন প্রকাশ করতে পারেনি। কিন্তু মানব মন কিংবা যৌবন বড় ভয়ংকর, যে বয়সে যা মানায় সে বয়সে তা না করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরবর্তিতে যখন সে সুজোগ পাবে তখন তার বিস্ফোরন ঘটবেই। ঠিক তেমন্টায় ঘটেছিল নিতুর জিবনে ।সবাই গুপ্ত সাহেবের দিকে অবাক চখে চেয়ে আছে। নিতু ছিল চঞ্চল চপলতায় ভরা তরুনি ।সে বেচারা স্বামীর কাছে যা চাইতো , আর কি যা ওই বয়সী মেয়েরা স্বামীর কাছে চাই তা সম্ভবত মোর্শেদ সাহেব দিতে পারতো না । গুপ্ত সাহেব মোর্শেদ সাহেবের চোখে চোখ রেখে বললেন কি ঠিক বলছি তো ?
স্যার আবার বলা শুরু করলেন নিতু তার চাহিদা পুরন করা শুরু করলো বারিতে আসা পর পুরুষ দিয়ে যাদেরকে তার ভাল লাগতো। এদিকে নিতু সুন্দরি এবং স্মার্ট হুয়ায় বাড়িতে আসা সেই সব পুরুষদের অধিকাংশই তার প্রতি আকৃষ্ট হত, শুধু মাত্র মর্শেদ সাহেব কেন জানি হতেন না । তার নানাবিধ কারন থাকতে পারে। ফলে কি হল , ? এতে তাদের ভিতরে ক্রমেই দুরুত্ব বাড়তে লাগলো। তাদের আত্নিক সম্পর্ক কবেই ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সম্ভবত দুটো দিক বিবেচনা করে তারা ডিভোর্সের দিকে হাটেনি । এক সামাজিক চক্ষুলজ্জা( কেন জানি এটা তাদেরদের ছিল ) দুই। একে অপরের সম্পত্তির লোভ।ের মাঝে হয়তো মেয়েদের কথাও ভাবতো। কিন্তু এ বিষয়ে আমার কিঞ্চিত সন্দেহ আছে ।মোর্শেদ সাহেব মাথা নিচু করে আছেন দেখে গুপ্ত সাহেব বললেন মর্শেদ সাহেব ধরা পড়ে তো গেছে নাকি ? প্লিজ আমাকে আর কষ্ট দেবেন না । যদি বাদ বাকি গল্প টুকু আপনি বলতেন বড্ড উপকার হতো এই অধমের।
মোর্শেদঃ ( চোখমুখ শুকিয়ে গেছে )স্যার যদি কিছু মনে না করেন তিন্নিকে কি এ ঘর থেকে যেতে দেওয়া যায়?
গুপ্ত; আপনি বলুন । ও অনেক বড় হয়ে গেছে ।ও বুঝবে সব বলুন।
মোর্শেদঃ (মেয়ে তিনিনির দিকে কিছুটা অসহায়ের মত চেয়ে ) জ্বি স্যার যা বলছেন সব টিক । ওকে খুন করার প্লান ৩ বছর আগে থেকেই করছি ।
উপস্থিত সবাই অবাক । যেন সবাই আকাশ থেকে পরছে।
কিন্তু কোন সুযোগ পাচ্ছিলাম না । অনেক বার অনেক চেষ্টাও করেছি কিন্তু পারিনি । এই বার পেয়ে যায় বলেই মনে হয় যখন ওকে কুকুরে কামর দেয়। ও আমার আর আমার মেয়ের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল।
গুপ্তঃএকটা বিষিয় কিন্তু গোপ্ন করছেন সেটা কিন্তু আমি জানি।কিন্তু একটা স্বার্থেই কাউকে এ বিষয়ে বলা যাবে না ।
এবার আমি তাজ্জব হলাম এই বেটা এতো কিছু জানে কি করে,!
মোর্শেদঃ জ্বী স্যার একথাও সত্য । কিন্তু স্যার দয়া করে প্লিজ এ কথা কাউকে বলবেন না ।
গুপ্তঃ প্রমিজ বলবো না । রেজাউল ডাক্তারের থেকে যে কুকুরের কামড়ের ভ্যাক্সিন নিয়েছিলেন তা এক্সপায়ার হল কি করে ।
এবার রেজাউল ডাক্তার ধোক গিলে বললেন আমি কোন এক্সপায়ার ওষধ তো দেইনি অফিসার।
গুপ্তঃ আমি কি বলেছি আপনি দিয়েছেন । আচ্ছা মোর্শেদ সাহেব আপনি কিভাবে সে ভ্যাক্সিন পেয়েছিলেন।?
মর্শেদঃ টাকা খসালে এদেশে বাঘের দুধো মেলে ।সরকারি হাসপাতাল থেকে আপনি এগুলো পর্যাপ্ত পরিমানে পাবেন। এ জন্য অবশ্য আমাকে বেশ কিছু টাকা খরচ করতে হয়েছিল।
গুপ্তঃ তাতো হবেই। আর চুরির বিষয় টা অস্বিকার করেছিলেন যাতে দোষ টা আপনার মেজভাইয়ের ঘাড়ে পড়ে । অকে আমি শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম।ও আমার জীবনটা বিষিয়ে তুলেছিল।
গুপ্তঃকিভাবে বলুন ( চোখে মুখে রহস্যর চিহ্ন রেখে০
মোর্শেদঃ ওর জন্যই আমার জীবন্টা নষ্ট হয়েছে ।সে অনেক কথা সে কথা আপনাদের জেনে কোন লাভ নেই। বরং আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন আমার মেয়েটার কেউ রইলো না । ওর কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছি না ।
গুপ্তঃমোর্শেদ সাহেব আপনাকে আর সে কষ্ট বেশিক্ষন সহ্য করতে হবে না । ডাক্তার রেজাউল আপনি একটু মোর্শেদ সাহেবের বিপি টেস্ট করে দেখুন না ঠিক আছে কিনা ।
রেজাউলা সাহেব তাই করতে গেলেন