পোস্টস

উপন্যাস

কিডন্যাপ রহস্য

২১ নভেম্বর ২০২৪

ইব্রাহিম খলিল

সময়টা দুই হাজার কুড়ির ডিসেম্বরের শুরুর দিকে। কলকাতার বেঙ্গালোর সিটিতে হঠাৎ  এক বিষ্ময়কর আত্মকের দেখা!  একসময় কলকাতার এই নামকরা শহরে মানুষের বসবাস ছিল অত্যন্ত বিলাসবহুল! কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে হঠাৎ  শহরের  যুবতি মেয়েদের কিডনাপ হওয়ার আতম্ক  নিস্তব্দ করে দিয়েছে শহরবাসীকে।  স্কুল কলেজগুলোও সরকারি নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যোই  ব্যাঙ্গালোর সিটি সহ,  পাশ্ববর্তী কিছু শহরে লকডাউন জাড়ি করা হয়েছে।  
 শহরের এমন বিষ্ময়কর ঘটনা অনেকের কাছেই এক আসুরিক শক্তির  কার্যকলাপ বলে মনে হলেও, অনেকেই এটিকে এক আজগুবি কাহিনি  হিসেবে মেনে নেয়। তবে এটা সত্যি যে আজ পর্যন্ত এই বেঙ্গালোর সিটি থেকে প্রায়  পঁনেরো ষোলো জনেরও অধিক যুবতি কন্যা কিডনাপ হয়েছে। এ নিয়ে ভারতের বিখ্যাত  পত্র পত্রিকাগুলোতেও খবর ছেপেছে। পত্রিকার পাতায় এই ঘটনা কোন আসুরিক শক্তির কার্যকলাপ বলেই  ছাপা হয়েছে।

শহরের এইসব কার্যকলাপ  কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেনা,বেঙ্গালোর সিটির পাশ্ববর্তি শহরের পুলিশ স্টেশানের এক মহিলা কর্মকর্তা, রুচিকা ব্যানার্জি।  আজ সকাল থেকেই রুচিকা ব্যানার্জি বেশ চিন্তিত। সে অফিসের একটা হেলা দোলা চেয়ারে বসে নিজেকে এক ভাবনার জগৎে ডুবিয়ে রেখেছে।  বেশ কিছুক্ষন ভাবনার  পর, রুচিকা তার সামনে থাকা  খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করে। খবরের কাগজের পাতাটা উল্টাতেই, রুচিকা ব্যানার্জির চোখ কপালে উঠার উপক্রম হয়।  

" একই ঘটনা রোজ রোজ ঘটেই চলেছে, অথচ আমি একজন আইনের লোক হয়ে কিছুই করতে পারছিনা! না না এইভাবে থেমে থাকলে চলবেনা।  আমাকে দ্রুত এই রহস্যোর সমাপ্ত  করতেই হবে।  "

এই বলে রুচিকা ব্যানার্জি হাত থেকে খবরের কাগজটা ছুড়ে ফেলে দেয়।  খবরের কাগজটা উড়ে গিয়ে দরজার  সামনে থাকা দারোয়ানের মাথায় পড়ে।

দারোয়ান : একি ম্যাম আপনি এত রেগে ফায়ার হচ্ছেন কেন?  কি হয়েছে আমাকে বলুন।  

রুচিকা :  কী হয়েছে, তুমি এতক্ষনে জিজ্ঞাস করছো?  শোনো, আমাদের পাশ্ববর্তী ব্যাঙ্গালোর সিটিতে হঠাৎ যুবতি মেয়েরা কিডনাপ হয়ে যাচ্ছে।  তবে কেন হচ্ছে,  এ আজও সবার অজানা।  

দারোয়ানের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।

দারোয়ান : ম্যাম, আমার মনে হয় এইসব কাজে আমাদের আগ বাড়ানো একেবারেই অনুচিত।  কেননা  ব্যাঙ্গালোর সিটির সেই রহস্যময় ঘটনার পিছনে মানুষ অশরীরী শক্তিকেই দাবি করছে।  

রুচিকা ব্যানার্জির রাগের মাত্রা  যেন আরও  বেড়েই চলেছে৷  দ্রুত সে নিজেকে কন্ট্রোল না করতে পেরে, বসে থাকা চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে।  

রুচিকা : শোনো রাঘব, আমি মানছি তুমি একজন দারোয়ান।  তবে তোমার এইটা খেয়াল রাখা উচিত যে তুমি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট  এর দায়িত্ব পালন করছো।  
আমরা আইনের লোক,  আর আইনের লোক হিসেবে  দেশকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করা এইটা আমাদের কর্তব্য। 
ঠিক আছে তুমি এখন তোমার কাজে মন দাও৷ আমি দেখছি কি করা যায়।

সেইদিনের মতো অফিসের কার্যক্রম সমাপ্তি ঘটে।  তাছাড়া এখন সরকারি নির্দেশে লকডাউন জাড়ি করায়,  অফিস আদালতে ততোটা কাজ কর্মের ঝামেলা নেই।  ধরা যায় সাধারণ লোকেরা এখন বন্দি জীবন যাপন করছে।  যাইহোক,  আজকের মতো অফিস শেষ করে রুচিকা  বাইকে করে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন। বাইকে করে বেশ কিছুটা পথ  এগোবার  পর একটা দুতলা বাংলোর কাছে এসে  সে বাইকে ব্রেক চাপে।  চারিদিক নিস্তব্দ, শোন শান নিরবতা বিরাজ করছে।  তখনই  রুচিকার এলাম ঘড়ির কাটায় দুপুর দুটোর এলাম বাজে।  ঘড়ির এলাম বাজতেই রুচিকা একটু অবাক হয়।  

রুচিকা : একি এখনতো ঘড়িতে দুটো এলাম বাজলো।  কই এখনওতো লোকটা এলোনা৷  লোকটাতো আমাকে নিজেই বলেছিলো,  এই পুরনো  দুতলা বাড়িটার  নিচে দঁড়াতে।  

রুচিকা ব্যানার্জি আর কোন উপায় না পেয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করে৷  চারিদিকে একটা কাক পক্ষিরও ডাক শোনা যাচ্ছেনা। এইটা যদিও অস্বাভাবিক কিছুনা,  এমন ভর দুপুরে গ্রাম শহরের মানুষ ভাত ঘুমে আচ্ছাদিত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। 
বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে বিরক্ত বোধ করে রুচিকা।  

রুচিকা: ওহ একজন মানুষের কি কমন সেন্স নেই নাকি?   আমাকে দুটোর সময় দাঁড়িয়ে থাকতে বলে নিজে আসছে চারটে বাজে৷  এইদিকে ছেড়ে চলেও যেতে পারছিনা।  যাক আর কয়েক মিনিট অপেক্ষা,  তারপর!

শেষ বারের অপেক্ষায় যেন বিধাতা রুচিকার দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন।  বেশ কিছুক্ষনের অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটিয়ে আগমন  ঘটে সেই ব্যাক্তির।  লোকটা দেখতে একেবারেই হ্যান্ডসাম। গায়ে লাল রঙের টি শার্ট,  আর পরনে কালো প্যান্ট।  চেহারায় যেন আলো ঝলক দিচ্ছে।  লোকটার নাম রিত্তিক সমাদ্দার।   সমাদ্দার পরিবারের ছেলে ও,  যদিও কোন চাকরি বাকরি নেই,  তবে বাপের যা টাকা আছে তাতে যে  ওর চাকরি বাকরির প্রয়োজন তা মনে হয়না।

রিত্তিককে দেরি করে আসতে দেখে রুচিকা ব্যানার্জি যেন রাগে ফেটে পড়ছেন।  

রুচিকা : কীহে রিত্তিক বাবু৷  এতক্ষনে তোমার আসার সময় হয়েছে? কখন থেকে এখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি হ্যাঁ। আচ্ছা যাইহোক,  আমি তোমাকে যেইসব ইনফরমেশন যোগার করতে বলেছি,  সেগুলো যোগার করেছ?  

রিত্তিক : আসলে না মানে ইয়েব মানে ম্যাম।  

রুচিকা : কী না মানে ইয়েব মানে করে যাচ্ছ?

রিত্তিক : আসলে ম্যাম তথ্য যোগার করেছি,  তবে আমি নাইন্টি পারসেন্ট শিওর দিতে পারছিনা৷

রিত্তিকের মুখে এইসব শোনে, রুচিকার রাগ আরও কঠিন রুপ নিতে শুরু করে।  

রুচিকা : কী বলছো তুমি এইসব?  তুমি জানো দেশের এখন মহাবিপদ।  শহরের  সব মেয়েরা ঘর থেকে বেরোতে পারছেনা৷  আর বের হলেই কিডনাপের স্বীকার হচ্ছে৷ আজ পর্যন্ত কত মেয়ে কিডনাপ হয়েছে,  অথচ আমরা একজন আইনের লোক হয়েও কিছু করতে পারছিনা।  

রুচিকা ব্যানার্জি কোনরকমে নিজের রাগের কন্ট্রোল করে আর  রিত্তিককে বলে।  

রুচিকা : আচ্ছা ঠিক আছে!  তোমার কাছে যতটুকো খবর আছে   ততোটুকোই দাও।  দেখি তাতে কোন উপকার হয় নাকি!

রিত্তিক : ঠিক আছে ম্যাম!  আমি এক্ষুনি দেখাচ্ছি।  

এইবলে রিত্তিক তার পকেট থেকে স্মার্ট ফোন বের করে৷  তারপর  স্মার্টফোনে রেকর্ডকৃত  আঠারো সেকেন্ডের একটি ভিডিও রুচিকাকে দেখায়।  ভিডিওতে কালো পোশাক পরা  দুই  ব্যাক্তিকে দেখা যাচ্ছে একটি মেয়েকে টেনে হিছড়ে  নিয়ে যেতে৷ লোক দুটোর মুখে মাস্ক পড়া, চোখ দুটো শুধু দেখা যাচ্ছে৷  আঠারো সেকেন্ড শেষ হতেই ভিডিও অফ হয়ে যায়।  এবারে যেন রুচিকা একটু প্রশান্তি অনুভব  করলো।  

রুচিকা : ধন্যবাদ তোমাকে!  যেটুকু যোগার করতে পেরেছ, তাতেই চলবে৷  এবারে বাকিটা আমার উপর ছেড়ে দাও।  ওদের ধরে আইনের হাতে তোলার দায়িত্ব আমার।  

রিত্তিক : আপনাকেও ধন্যবাদ।  আচ্ছা ঠিক আছে!  আমি এখন আসছি৷  

রুচিকা : আরে তোমার পারিশ্রমিকতো  নিয়ে যাও।  

রিত্তিক : আরে না না।  পছন্দের মানুষের কাছ থেকে কেউ পারিশ্রমিক নেয়।  

রুচিকা রিত্তিকের কথার কিছু বুঝতে পারছেনা।  কিছু বোঝার আগেই রিত্তিক  সেখান থেকে চলে যায়।  রিত্তিক যেতেই  রুচিকা আরও ভাবনার জগৎে ডুবে যায়।  

" লোকটা আমায় কী বলে গেলো,, পছন্দের মানুষ। হা হা পছন্দের মানুষ  আর ফানুস একই।  তবে ছেলেটা হ্যান্ডসাম।  তবে ছেলেটা অকর্মা।  
যাইহোক এইসব এখন বাদ দেই। এখন ওই রহস্যাের উৎঘাটন করতে হবে।  কে এই কিডিনাপ রহস্যাের মাস্টার মাইন্ড প্লেয়ার? কোথায় ইবা এইসব কিডনাপ হওয়া মেয়েরা উধাও হয়ে যাচ্ছে?  সব আমাকে একে একে বের করতে হবে।   "

রুচিকা  আর এক মূহুর্ত দেরি না করে  মোটর সাইকেল নিয়ে নিজ বাড়ির দিকে ছুটে চলে।  আরও অনেক কাজ পড়ে রয়েছে ওর।  এই কিডনাপ রহস্যের সত্যটা যে ওকে বের করতেই হবে।  তাছাড়া আজ পর্যন্ত যত মেয়েকিডনাপ হয়েছে, তারা কোথায় আছে?  কি করে আছে?  জীবন্ত আছে নাকি মৃত আছে,  তা আজও কেউ জানেনা!  এদের সবাইকে উদ্ধার  করা যে রুচিকার কর্তব্য! ওকে সকল রহস্য ভেদ করতেই হবে!