- **অবাক ভালোবাসার গল্প**
আমার নাম সিকান্দার। আমি বরাবরই একটু আলাদা প্রকৃতির মানুষ। মেয়েদের দিকে তাকানো বা তাদের সঙ্গে সহজে মেশা আমার অভ্যাসে নেই। তবে জীবনে কখনো কখনো এমন কিছু ঘটে, যা আমাদের ধ্যানধারণা বদলে দেয়।আর আমার গল্প শুরু হয় সেই দিন থেকে, যেদিন আমি শারমিনকে প্রথমবার অন্যভাবে দেখি।
আমরা একই ক্লাসে পড়তাম, তবে আমি তাকে কখনোই আলাদা করে লক্ষ্য করিনি। কিন্তু একদিন ক্লাস শেষে হঠাৎ করে তাকে এমন এক রূপে দেখি, যা আমাকে অবাক করে দেয়।তার চোখের গভীরতা, মুখের কোমলতা—সবকিছু যেন আমার মনে গেঁথে যায়। আমি তাকে দেখে নিজের অজান্তেই মুগ্ধ হয়ে যাই। মনে হচ্ছিল, পৃথিবীর সবকিছু যেন মুহূর্তে থেমে গেছে, আর আমি শুধু তাকে দেখছি।
তবে এই অনুভূতি কারো সঙ্গে শেয়ার করা সহজ ছিল না। আমি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাশেদকে বলি, কারণ তার গার্লফ্রেন্ড ছিল আমাদের বর্ষের।আশা ছিল, রাশেদের মাধ্যমে কিছু জানতে পারব। কিন্তু সেই আলোচনা কিভাবে শারমিনের কাছে পৌঁছায়, আমি জানি না।
একদিন রাত দশটার দিকে হঠাৎ আমার ফোনে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। প্রথমে একটু দ্বিধায় ছিলাম। অপরিচিত নম্বরে উত্তর দেওয়া আমার স্বভাব নয়।তবে কৌতূহলবশত কলটি রিসিভ করি। শুরুতে সাধারণ কথাবার্তা হয়, কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমি বুঝতে পারি, ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটি আর কেউ নয়, শারমিন!
আমি কিছুটা বিস্মিত ছিলাম। প্রথমবার কথা বলার সময় সে তার পরিচয় দেয়নি। কিন্তু কথার ধরন আর তার কণ্ঠের মাধুর্য আমাকে জানান দিল, এটাই সেই মেয়ে,যার জন্য আমি অস্থির হয়ে আছি। সেদিন খুব বেশি কথা হয়নি। ফোনটি শেষ হওয়ার পর আমার মনে হয়েছিল, হয়তো এটা একবারই হবে। কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিল।
প্রায় দুই দিন কোনো ফোন বা যোগাযোগ ছিল না। মনে হচ্ছিল, সে বুঝি আর কখনো কল করবে না। কিন্তু আবার এক রাতে ঠিক একই সময়ে আমার ফোনে তার কল আসে।এবার আমি অপেক্ষা করছিলাম। তার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, সে আমাকে মনে মনে পছন্দ করে। সেই রাতের কথাগুলো যেন আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল।
আমাদের কথাবার্তার পর আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হতে শুরু করে। অবশেষে একদিন, আমি সাহস করে তাকে সামনে থেকে প্রপোজ করি। সেদিন সে সম্মতি জানায়। সেই মুহূর্ত আমার জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত হয়ে থাকবে।
এরপর আমাদের মাঝে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়। আমরা একসঙ্গে সময় কাটাতে শুরু করি। প্রতিদিন একে অপরের সঙ্গে কথা বলতাম, জীবনের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতাম। তবে প্রতিটি সম্পর্কের মতো আমাদের মাঝেও কিছু রাগ-অভিমান ছিল।
দুই মাসের এই স্বল্প সময়ে অনেকবার ঝগড়া হয়েছে। কখনো কখনো মনে হয়েছে, সম্পর্কটা বুঝি শেষ হয়ে যাবে। তবে আমাদের ঝগড়াগুলোর সময়সীমা ছিল খুবই ছোট, সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টা। তারপর আমরা নিজেরাই নিজেদের ভুল বুঝতাম এবং একজন আরেকজনের কাছে ফিরতাম।
আমাদের সম্পর্কটা এত ছোট হলেও, এত গভীর ভালোবাসা এবং বোঝাপড়া আমার জীবনে আগে কখনো অনুভব করিনি। আমি বুঝতে পারি, আমি তাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।
তার চোখের মায়া, তার কণ্ঠের মধুরতা, তার হাসির কোমলতা—সবকিছুই আমাকে আরও বেশি তার প্রতি আকৃষ্ট করে। শারমিন শুধু আমার ভালোবাসার মানুষ নয়, সে আমার জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
আজ আমি তাকে ছাড়া নিজের জীবন কল্পনা করতে পারি না। এই ছোট্ট সময়ের গল্পটি আমার কাছে একটি মহাকাব্যের মতো। আমাদের মাঝে থাকা ভালোবাসা যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি। আমি জানি, আমরা একে অপরকে চিরকাল ভালোবাসব।
এটাই আমাদের গল্প। প্রেম, বিশ্বাস, আর ভালোবাসায় গড়া একটি অমূল্য সম্পর্ক।
~~~মুজাহিদ শিহাব