মেঘালীর গ্রামের নাম ছিলো নীলকুঞ্জ। পাহাড় আর নদীর মাঝখানে এই গ্রাম যেন প্রকৃতির এক আশ্রয়স্থল। মেঘালী ছোটবেলা থেকেই একটু আলাদা। মেয়েটি কথা কম বলত, কিন্তু তার চোখে ছিল গভীর কৌতূহল। গ্রামের লোকেরা তাকে মেয়ে হিসেবে "কিছুটা অন্যরকম" বলে তাচ্ছিল্য করত। তার মা-বাবাও প্রায়ই বলত, "মেঘা, এভাবে চললে জীবনে কিছুই হবে না।"
মেঘালী কিন্তু কখনো হতাশ হয়নি। তার ছিল গভীর স্বপ্ন। সে বুঝত, নিজেকে জানার চেষ্টা করলেই জীবনের সত্যিকারের মানে পাওয়া যায়।
একদিন, গ্রামের মেলায় এক বয়স্ক পীরকে দেখে মেঘালীর মনে হলো, তার সাথে কথা বলা উচিত। পীরটি ছিল শান্ত, কিন্তু তার চোখে যেন জ্ঞানের আলোকছটা। মেঘালী পীরকে সরাসরি বলল, "সবাই বলে আমি জীবনে কিছুই করতে পারব না। আপনার কি মনে হয়, তারা ঠিক বলছে?"
পীর একটু হাসলেন। তারপর মৃদু কণ্ঠে বললেন, "মেয়ে, তুমি কি জানো তুমি কে? যদি তা না জানো, তাহলে অন্যের কথার ওপর নির্ভর করেই তোমাকে চলতে হবে। নিজের আত্মাকে বোঝা শিখো। তুমি এমন কিছু করতে পারবে, যা তোমার স্বপ্নের বাইরে।"
মেঘালীর মনে এ কথাগুলো গভীর দাগ কাটলো। সে বাড়ি ফিরে এক অদ্ভুত শক্তি অনুভব করলো। সেই রাত থেকেই সে তার জীবন পাল্টানোর পরিকল্পনা শুরু করলো।
মেঘালী লেখাপড়ায় মন দিল। প্রথমদিকে পরিবার থেকে বাধা এলেও সে নিজের লক্ষ্যে অবিচল রইলো। সে জানতো, তার পথ সহজ নয়। কিন্তু আত্মবিশ্বাস ছিল তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। সে একসময় নিজের গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করলো। মেঘালীর পড়ানোর ধরন এত সুন্দর ছিল যে ছাত্রছাত্রীরা খুবই আগ্রহী হয়ে উঠলো।
ধীরে ধীরে, গ্রামের সবাই মেঘালীর পরিবর্তন দেখতে পেল। যাকে তারা একসময় তুচ্ছ করত, সেই মেয়ে এখন গ্রামের সবচেয়ে সম্মানিত একজন মানুষ। মেঘালী জানত, এ সবই সম্ভব হয়েছে তার নিজের ভেতরের আলো খুঁজে পাওয়ার জন্য।
একদিন, সেই পীর আবার গ্রামে এলো। মেঘালী তার কাছে গিয়ে ধন্যবাদ জানালো। পীরটি শুধু বলল, "আলো তোমার ভেতরেই ছিলো, মেয়ে। আমি শুধু তোমাকে সেটা দেখতে সাহায্য করেছি।"
মেঘালী বুঝল, আত্ম সচেতনতা মানে নিজের দুর্বলতাকে মেনে নিয়ে সেগুলোকে শক্তিতে রূপান্তর করা। নিজের ভেতরের আলোকে চিনতে পারলেই জীবনের আসল সৌন্দর্য ধরা দেয়।