Posts

চিন্তা

ইসলাম কী বলে আমরা কী করি!

November 23, 2024

ফারদিন ফেরদৌস

46
View

• 'খালাকাল ইনসানা ফি আহ্সানে তকবিম', -অর্থাৎ মানুষকে আমি অতি উৎকৃষ্ট উপাদান দিয়ে গঠন করেছি (সুরা আল ইমরান, আয়াত ৪)। 

• 'সাখখারা লাকুম মা ফিসসামাওয়াতে অমা ফিল আরদে', -অর্থাৎ বিশ্বজগতে যাহা সৃষ্টি করেছি তা তোমারই অধীন (সুরা লোকমান, আয়াত ২০)। 

• 'ইন্নি জায়েলুন ফিল আরদে খলিফা' -অর্থাৎ আমি এমন একজনকে সৃষ্টি করতে যাচ্ছি যে সে আমার প্রতিনিধি স্বরূপ পৃথিবীতে রাজত্ব করবে (সুরা বাকারা, আয়াত ৩০)। 

ইসলামি মিথোলজি অনুযায়ী মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। যাকে নিজের ধ্যানজ্ঞান দ্বারা সর্বসুন্দররূপে সৃজন করে পৃথিবীতে নিজের প্রতিনিধি রূপে প্রেরণ করেছেন মহান সৃষ্টিকর্তা। পৃথিবীতে আমাদের কর্তব্যটাও তাই অনেক বড় ও মহিমান্বিত। আমার বাক্যে ও কৃতকর্মে স্রষ্টার ছাপ থাকা অতি আবশ্যক। আমি এই পৃথিবীতে স্রষ্টার প্রতিনিধিত্ব কতটা করতে পারলাম তার উপর নির্ভর করবে পারলৌকিক অনন্ত জীবনের যথোচিত কর্মফল। তাই এই পৃথিবীতে আমার ভূমিকা বিশেষভাবে ধর্তব্য ও অগ্রগণ্য। 

আল্লাহ্ সুবহানাহু তাআ'লা বলেন, 'মন কানা ফি হাজিহি অমা ফহুয়া ফিল আখেরাতে অমা অ আদাশো সাবিলা', -অর্থাৎ যে ইহকালে অন্ধ থাকল, সে পরকালেও অন্ধ থাকবে এবং সে আরও বিপথে যাবে (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭২)। 

কোনোমতেই আমাদেরকে ভণ্ড, অসাধু ও ঘৃণাজীবী হওয়ার সুযোগ নাই। ক্ষমা, সহনশীলতা, ঔদার্য মহানুভবতা ও প্রেম হলো ঈশ্বরচরিত্রের প্রধানতম পরিচয়। সেই ঈশ্বরের প্রতিনিধি হয়ে আমরা মানুষে মানুষে হিংসা ও জিঘাংসা উস্কে দিতে পারি না। সমাজের দাগি অপরাধীকেও আল্লাহ্ না খাইয়ে রাখেন না, বাতাস, জল, সূর্যের কিরণ না দিয়ে থাকেন না। আমরা সেই স্রষ্টার খলিফা হয়ে ঈশ্বরসত্তার বদনাম কী করে করতে পারি? 

অজ্ঞানতা, অন্ধকার ও সন্দেহের কুয়াশা দূরীভূত করে এমন এক আলোময়তার চর্চা আমাদের করা উচিত যা দেখে চরম বিরুদ্ধবাদীও আমাদেরকে মায়ায় জড়াবে। 

আমাদের নিজেদেরকে পরিবর্তন করে নিতে হবে। তা নাহলে আল্লাহ্ তাঁর এই প্রতিনিধির পক্ষে থাকবেন না। আল্লাহ্ বলেন, 'লা ইউ গাইয়েরো মা বে কওমিন', -অর্থাৎ আমি কারো অবস্থা পরিবর্তন করি না, যে পর্যন্ত সে নিজে তার অবস্থা পরিবর্তন না করে (সুরা রা'দ, আয়াত ১১)। 

অযথা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মব ভায়োলেন্স উস্কে না দিয়ে আসুন ব্যক্তিগত হীনস্বার্থ পরিত্যাগ করে সমস্ত শ্রম, শক্তি ও প্রজ্ঞা জগৎসেবায় নিয়োজিত করি। 

নিষ্ঠ সাধনায় প্রকৃত শান্তির পথে জীবন বদলে নিয়ে প্রতিপালকের প্রতিনিধিরূপে জীবনযাত্রা নির্বাহ করি আর পবিত্র কোরানের সুরা ফজরের ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০ নাম্বার আয়াত অনুযায়ী স্রষ্টার পরম সান্নিধ্য অন্বেষণ করি। 'হে আত্মা যে শান্তিতে আছ, তোমার সৃষ্টিকর্তার নিকট ফিরে এসো নিজেও সন্তুষ্ট হইয়ো এবং তাঁকেও সন্তুষ্ট করো; এভাবে তুমি আমার প্রকৃত সেবকদিগের মধ্যে প্রবেশ লাভ কর এবং শান্তি উপভোগ কর।' 

লেখক: সাংবাদিক 
২৩ নভেম্বর ২০২৪ 

তথ্যসূত্র:
প্রবন্ধ: কোরানে মানবের স্থান ও অর্থনীতি | কমরদ্দীন আহমদ বি.এ.
শিখা সমগ্র | সংকলন ও সম্পাদনা: মুস্তাফা নূরউল ইসলাম
পবিত্র কোরান

Comments

    Please login to post comment. Login