জুলাই আন্দোলনের স্পিরিটের ব্রেকার খুব বেশি দরকার। নতুবা আমাদের ২৪ এর শহীদদের আত্মার শান্তি ও তাদের আত্মত্যাগ নস্যাৎ হবে।এ স্পিরিট যেন থামছেই না।
আমরা দেখছি দাবি আদায়ের জন্য বর্তমানে দেশে যে ধরনের আন্দোলন-কর্মসূচি চলছে, এ রকম আর কোথাও হয়েছে বলে মনে হয় না। বিভিন্ন মহলের উত্থাপিত দাবিগুলো যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক, যা-ই হোক না কেন, দাবি আদায় করতে গিয়ে দেশের মানুষকে বিশেষ করে রাজধানীবাসীকে যেভাবে জিম্মি করা হচ্ছে, তারই বা যৌক্তিকতা কতটুকু ? যারা দাবি উত্থাপন করছেন, তারা রাস্তাঘাট দখল করে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছেন। এর ফলে নিত্যদিন সড়কে যানবাহন চলাচল এক ধরনের স্থবির হয়ে পড়ছে, সকল শ্রেনী পেশার নাগরিক চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ দিকটি দাবি উত্থাপনকারীরা কখনো ভেবে দেখেন বলে মনে হয় না।
আমরা দেখি যে প্রকৃতিতে একটা ঝড়ের পরে প্রকৃতি অনেক শান্ত হয়ে উঠে, কিছুকাল পর মাঠে সবুজের সমারোহ ঘটে। আমরা বর্তমানে বাংলাদেশে ঠিক উল্টো টা দেখছি। আমরা বর্তমান রাজধানী জুড়ে কি দেখছি? প্রতিদিন কোন না কোন সড়ক অবরোধ করে কিছু মানুষ দেশের বাকি মানুষ গুলোকে জিম্মি করে রাখছে।
এমনিতেই রাজধানীতে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে যে বিপুলসংখ্যক যানবাহন চলাচল করে, তাতে কোনো সড়কই যানজটমুক্ত থাকে না। রাজধানীতে অনেক উড়াল সড়ক থাকার পরও প্রতিদিন কোনো না কোনো আন্দোলনের কারণে ছোট-বড় সব সড়কে প্রায়শই যানজট লেগে থাকে। অসহনীয় যানজটে সব থেকে বেশি দুর্ভোগের শিকার হন বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিরা। যানজটে দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা সবসময় এক ধরনের মানসিক চাপের মুখে থাকেন। এক কথায়, দাবি আদায়ের কর্মসূচির কারণে রাজধানীর মানুষ আরও বেশি দুর্ভোগের মুখোমুখি হয়েছেন।
আমরা কি সহজ বিষয়গুলো ভুলে যাচ্ছি? আমাদের কি নৈতিকতার এতটা অবক্ষয় ঘটেছে? কিছু সময় তো দিতেই পারি! দেখি না কতদূরে যেতে পারে আমাদের আকাঙ্খা গুলো ! আজগেই যে শেষ সময় এটা ভাববার অবকাশ আছে কি?
এসবের ভিতরে নতুন করে আবার ছাত্রদের কলেজ ভিত্তিক পারস্পরিক আস্থা বিশ্বাসের জায়গায় নিজেদের কে জরিয়েছেন। আপনারা ২৪ আন্দোলনের সকলেই যোদ্ধা! সামান্য কিছু সংখ্যক হয়তো এর দলভুক্ত ছিল না। মজার ও হাস্যকর বিষয় হলো ঐ কিছু সংখ্যক ছাত্রদের কথা কাজে সম্ভবত আমরা প্রভাবিত হচ্ছি।
ছাত্রদের ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে জনতার ঐক্য প্রক্রিয়ার মেল বন্ধন বর্তমানে খুব জরুরী বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার পরও এসব আন্দোলন থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে যানজট এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমনকি পরবর্তীতে অন্য কেউ এর সুবিধা নিতে পারে। সবার মতামত দেখানোর অধিকার অবশ্যই দেশে আছে। তবে সবকিছুর একটা যৌক্তিকতা খুব জরুরী, দেশের অন্য জনগনের সামগ্রিক চিন্তা মাথায় রেখে যাতে জনদূর্ভোগ না হয় এমন কর্মসূচি দেন।
আন্দোলন-কর্মসূচির আরও একটি দিক বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তা হলো, কোনো একটি মহলের দাবি আদায়ের কর্মসূচির নিরসন হলে, অন্য আরেকটি মহল থেকে অন্য দাবি নিয়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু করা হয়। একইভাবে একটি শেষ হলে শুরু হয় আরেকটি। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, কোনো এক পক্ষ তাদের দাবি আদায় করতে পারলে, তা অনুসরণ করে অন্যরাও দাবি আদায়ের জন্য নতুন নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছেন। এভাবেই দাবি আদায়ের আন্দোলন-কর্মসূচি এক মহল থেকে আরেক মহলে চক্রাকারে আবর্তিত হতে থাকে। এর ফলস্বরূপ, দুর্ভোগের হাত থেকে দেশবাসীর মুক্তি মিলছে না। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ধারাবাহিকভাবে অবনতির দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কোনো কোনো মহল সক্রিয় রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।এমনকি জুলাই আন্দোলনের বিষয়বস্তুুকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পায়তারা করছে একটি মহল।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান টার্গেট হলো, রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরিহার্য সংস্কার শেষে যত দ্রুত সম্ভব একটি শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা এবং ওই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট প্রাপ্য দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর কর এ পরিস্থিতি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, সামনে আমাদের জন্য আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে বলে, ধরে নেয়া যায়।।
এস জামান
ঢাকা।