Posts

ফিকশন

ভিনগ্রহের অভূর্থনা

November 26, 2024

সোহেল রানা

অধ্যায় ১: হঠাৎ পৃথিবীতে ঘূর্ণয়মান আলো
এটি একটি অদ্ভুত ও রহস্যময় মুহূর্ত ছিল। একদিন দুপুরের তাপমাত্রায় আকাশ একেবারে পরিষ্কার ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই আকাশে ঘূর্ণায়মান এক অদ্ভুত আলো দেখা দিল। পৃথিবীর এই স্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনার সূচনা হতে চলেছে তা তখনো কেউ বুঝতে পারেনি।

জার্সি পরিহিত একটি ছেলে তার সঙ্গীর সাথে হাঁটছিল। দু’জনেই মসৃণ রাস্তার উপর হাঁটছিল। আলো ও বাতাসের মধ্যে এক রকম প্রশান্তি বিরাজ করছিল। আচমকা, আকাশের কোণে এক অস্বাভাবিক আলো ঝলমল করতে শুরু করল। প্রথমে তা ধীরে ধীরে দেখা দিলেও কিছু মুহূর্ত পর তা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। আলোটি এক অদ্ভুত ভাবে ঘূর্ণায়মান, অস্পষ্ট রঙের ছিল। প্রথমে সাদা, তারপর হলুদ এবং শেষে এক অজানা বর্ণে মিশে যাচ্ছিল। তার গতিতে আকাশের আকার ও নকশা পুরোপুরি পরিবর্তিত হতে শুরু করল। আলোটি আকাশের এক কোণ থেকে অন্য কোণ পর্যন্ত ঘুরপাক খাচ্ছিল। ফলে চারপাশের সব কিছু অদৃশ্য হতে শুরু করল।

মানুষ জন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। কেউ কেউ দৌঁড়ে পালাতে শুরু করল। কেউ আবার সবার চোখের সামনে ওই আলোকে নিবিষ্ট ভাবে দেখতে থাকল। তাদের মধ্যে এক ধরনের অজানা ভয় এবং আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল। এই আলো কি পৃথিবীতে কোনো বিপর্যয় ডেকে আনবে? না কি এটি কোনও নতুন সম্ভাবনার আভাস? কেউ নিশ্চিত ছিল না। রাস্তায় উপস্থিত লোকজন একে অপরকে নানা প্রশ্ন করতে থাকল। তবে কেউই তার সঠিক উত্তর জানত না। একমাত্র নিশ্চিত ব্যাপার ছিল—এই আলো একেবারে নতুন এবং আগে কখনো দেখা যায়নি।

এদিকে, ছেলে দুটি বুঝতে পারছিল না কী ঘটছে। প্রথমে তারা ভেবেছিল, হয়তো কোনো বড় সায়েন্স ফিকশন সিনেমার শুটিং হচ্ছে। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি তাদের মনে এ আশঙ্কা চলে আসে—এটা সিনেমা নয়, বাস্তব। তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হতে শুরু করল। ত্বকে শীতলতা অনুভূত হচ্ছিল এবং মনে মনে প্রশ্ন করছিল—এই আলো কি শুধু আকাশে ঘুরপাক খাচ্ছে, না কি পৃথিবীর কোনো অংশে এটি অন্যভাবে প্রভাব ফেলছে?

ঘূর্ণায়মান আলোর আলোড়ন আরও তীব্র হতে থাকে এবং পৃথিবী পুরোপুরি আলোয় ভরে যায়। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল, ওই আলো যেন কোনো বিশাল শক্তি বা শক্তিশালী বস্তুর উপস্থিতি জানাচ্ছে। কিছু মানুষ তখন একে "বিনাশী শক্তি" হিসেবে অভিহিত করছিল। অন্যরা এটিকে "আত্মবিশ্বাসের সংকেত" বলে মনে করছিল।

মানুষের চিন্তা ভাবনার এক পর্যায় তারা দেখতে পায়  আলোটি হঠাৎ করে মিলিয়ে যাচ্ছে। তখন সবাই নিরাপদে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু আলোটি মিলে গেলোও তারা একে অপরকে জিজ্ঞেস করতে থাকে—"এটা কি ছিল? কোথা থেকে এল?" কেউ উত্তর দিতে পারেনা। তবে এ ঘটনা একটি প্রশ্ন রেখে গিয়েছিল: পৃথিবী কি কিছু ভিন্ন পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছে? আর সেই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আগামী অধ্যায়গুলোর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় রইল না।

অধ্যায় ২: ভয় এবং লুকোচুরি

ঘূর্ণায়মান আলো যখন পৃথিবীকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল, তখন চারপাশে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছিল। মানুষ আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে ছুটোছুটি করতে শুরু করল। যেন পৃথিবী ধ্বংসের মুখে চলে এসেছে। কেউ বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল, কেউ রাস্তায় ছুটে পালাতে লাগল। আর কিছু মানুষ শুধু দাঁড়িয়ে গিয়ে এই অস্বাভাবিক দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে রইল। তবে, জার্সি পরিহিতা ছেলেটি এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও সাহস হারায়নি। সবাই যখন পালাচ্ছিল, তখন সে একটুও বিচলিত হয়নি। বরং তার মধ্যে এক অদ্ভুত কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। যা তাকে এক দুঃসাহসিক কাজে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

ছেলেটি জঙ্গলের দিকে এগিয়ে গেল। তার শরীরে ভয় কাজ করছিল, তবে সেই ভয় তাকে পিছিয়ে নিতে পারল না। সে জানত, এই অদ্ভুত আলোর রহস্য জানার জন্য তাকে কিছু না কিছু করতে হবে। এই আলো যা এতক্ষণ আকাশে ঘূর্ণিত হচ্ছিল, তা নিশ্চয়ই কোনো বিশেষ সংকেত বা ঘটনা বহন করছে। তার মনের মধ্যে চলছিল এক অস্থির প্রশ্ন—কী ছিল সেটা? কোথা থেকে এসেছিল? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল—এই আলো মানুষের জন্য কি কোনো বিপদ নিয়ে এসেছে, না কি এটি কোনো নতুন সম্ভাবনার সংকেত?

ছেলেটি পুকুরের পাশে গিয়ে থামল। এখানে শান্ত পরিবেশ সবকিছু নিরব। চারপাশে গাছপালার ছায়া, পুকুরের পানিতে তার প্রতিচ্ছবি এবং এক ধরণের নিঃসঙ্গতা। তবে তার চোখের সামনে যে দৃশ্য ছিল তা ছিল একেবারে বিপরীত। হতাশার ও ভয়ংকর এক ব্যাপার। আলোটি যেন পুকুরের পাশে এসে থেমে গিয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনো পরিবর্তন ঘটছিল না। এখন আলোটি ছিল আরো শক্তিশালী এবং তার উপস্থিতি তীব্র হয়ে উঠেছিল।

ছেলেটি জানত যদি সে অন্যদের মতো নিরাপদ স্থানে চলে যায়। তবে কখনোই এই রহস্য উন্মোচন করতে পারবে না। তাই সাহস নিয়ে সে জঙ্গলের গভীরে ঢুকে পড়ল। সেখানকার গাছের ছায়ায় নিজেকে আড়াল করে সে পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করল। তার চোখে-মুখে ছিল এক ধরনের সিদ্ধান্ত—সে কিছু না কিছু জানতে চাইবে না পারলে তা এক সময় তাকে মেনে নিতে হবে।

জঙ্গলের মধ্যে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছেলেটি দেখতে পায় আলোটি ধীরে ধীরে পৃথিবীর দিকে আরও নিচু হয়ে আসছে। সে আরো দেখতে পায়, আলোটি যেন কিছু একটা প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার হৃদয়ের কাঁপুনি বাড়ছিল কিন্তু সে একটুও ভয় পায়নি। সে বুঝতে পারছিল না আলোর কাছে গেলে কি ঘটবে? তবে সে জানত যে শুধু পালিয়ে গেলে তার কোনো উত্তর পাওয়া যাবে না। আর এখানেই ছিল তার সাহসিকতার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।

এক সময় সেই আলো পুকুরের পানিতে প্রতিফলিত হতে থাকে এবং ছেলেটির চোখের সামনে এক নতুন দৃশ্য উন্মোচিত হয়। পুকুরের তলদেশে একটি অদ্ভুত রেখা ফুটে ওঠে যা যেন কোনো ভাষা বা সংকেত। ছেলেটি অবাক হয়ে তা লক্ষ্য করে এবং তার মন এক নিমিষে প্রশ্নে ভরে ওঠে। এই রেখা কি কোনো ধরনের ম্যাপ অথবা অজানা প্রযুক্তির কোনো আভাস?

এদিকে, তার আশেপাশে প্রকৃতির মৌনতা বিরাজ করছিল। কিন্তু ছেলেটির মনের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল—ভয়, সাহস এবং কৌতূহল এক সঙ্গে কাজ করছে। কি এমন ঘটেছিল আকাশে? কেন এই অদ্ভুত আলো পৃথিবীকে আচ্ছন্ন করেছে? আসলে কী আমাদের অজানা কোনো প্রাণী বা সভ্যতা পৃথিবীতে আসছে?

জঙ্গলের মধ্যে সেই মুহূর্তে ছেলেটি পুরোপুরি একাকী। সে জানে, কিছুই পুরোপুরি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত তাকে এখানে থাকতে হবে। তবে, তার মধ্যে এক ধরনের সিদ্ধান্ত তৈরি হয়েছে—যত ভয়াবহই হোক তাকে এই ঘটনার গোপন রহস্য জানতেই হবে।

অতঃপর, আলোটা ধীরে ধীরে তার আগের অবস্থানে ফিরে যেতে থাকে এবং ছেলেটি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, মনে মনে সে জানত আজকের এই সন্ধ্যার পর আর কোনো কিছু আগের মতো থাকবে না। এই আলো তার জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

অধ্যায় ৩: অপরিচিত আগুন্তক

ছেলেটি আবার পৃথিবীর আকাশে হঠাৎ করে একটি বিশাল স্টার শিপ দেখতে পায়। যা একেবারে নীরব ভাবে পৃথিবীকে নিজের আকর্ষণীয় দৃষ্টিতে আচ্ছন্ন করে ফেলল।

স্টার শিপটি বিশালাকার চকচকে ধাতুর তৈরি এবং তার পৃষ্ঠে অজানা আলোর প্রতিফলন ছিল। এটি ছিল এক ধরনের লম্বা, আয়তাকার জাহাজ। যার আকার এত বড় ছিল যে পৃথিবীর আকাশের এক তৃতীয়াংশ জুড়ে তা ছড়িয়ে পড়েছিল। এমন কিছু কখনোই এর আগে দেখেনি ছেলেটি। আকাশের গভীরের নীল আচ্ছন্নতা ভেঙে স্টার শিপটি ধীরে ধীরে নেমে আসছিল।

যতই সময় পেরিয়ে যায় স্টার শিপটি পৃথিবীর মাটির কাছে আরো নিকটে চলে আসে। অবশেষে, একটি বিশাল শিখার মতো অঙ্গ ভঙ্গি নিয়ে এটি পুকুরের পাশের মাঠে অবতরণ করে। তার কাছ থেকে বিশাল বাতাসের ঢেউ সৃষ্টি হতে থাকে। আর আশেপাশের গাছপালা ঝপঝপ করে ওঠে। শিপটি যখন স্থির হয়ে যায় তখন মানুষ একে অপরকে দেখে প্রশ্ন করতে শুরু করল—এখন কী হবে? এমন প্রশ্ন ছেলেটির মাথাতেও ঘুরপাক খেতে থাকে।

এমন সময় শিপের দরজা খুলে যায়। প্রথমে এক ধরনের পিঁপড়া বা পোকা-মাকড়ের মতো দেখতে প্রাণী বের হতে থাকে। তবে তাদের শারীরিক গঠন একেবারেই অদ্ভুত। তারা ছিল এক প্রকার ফসফরাসি উজ্জ্বল শরীরের প্রাণী। যারা হালকা নীল রঙে আচ্ছন্ন ছিল। তাদের মাথার অংশ ছিল বড় এবং চওড়া, চোখগুলো ছিল সম্পূর্ণ কালো এবং তার মধ্যে কোনো অভিব্যক্তি ছিল না। তাদের শরীর ছিল দীর্ঘ, মাংসল এবং পুরোপুরি সোজা। তাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। তবে তাদের চলাফেরায় এক ধরনের ধীরে চলা শান্তিপূর্ণ দৃঢ়তা ছিল, যেন তারা এখানে কোন ঝামেলা তৈরি করতে আসেনি। ছেলেটি অতি নিকট থেকে সব
দেখছিল।

প্রথমে পৃথিবীর মানুষ কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল, কিন্তু দ্রুতই তারা একে অপরকে সতর্ক করে দিল। "এরা কি আসলেই জীবন্ত? কোথা থেকে এসেছে?" এমন হাজারো প্রশ্ন ছিল, কিন্তু কোনো উত্তর ছিল না। এই নতুন আগুন্তকরা পৃথিবীতে কেন এসেছে, তাদের উদ্দেশ্য কী—এগুলোই ছিল প্রশ্ন যা সকলের মনে খেলা করছিল।

অদ্ভুত এই প্রাণীদের কিছু মুহূর্ত পর তাদের মধ্যে একটি অদ্ভুত শব্দ শোনা গেল। এটি ছিল একটি ভিন্ন ভাষার শব্দ। যা মানুষের কানে অজানা ও বিচিত্র মনে হচ্ছিল। তাদের মধ্যে একজন এগিয়ে এসে শব্দ করতে থাকল এবং সে যেন অন্যদেরকে নির্দেশ দিচ্ছিল কিছু করতে। তবে সেই ভাষাটি কিছুতেই মানুষের জন্য বোঝা যাচ্ছিল না।

এদিকে, ছেলেটি যে আগের অধ্যায়ে পুকুরের পাশে লুকিয়ে সেই আলো দেখছিল, এবার জঙ্গলের গহীনে থেকে এই দৃশ্যের দিকে নজর রাখছিল সে। তার মনের মধ্যে এক ভয়ংকর প্রশ্ন ছিল—"এরা কি আক্রমণ করতে আসছে? নাকি শান্তিপূর্ণ ভাবে পৃথিবীতে কিছু শিখতে আসছে?" তার মধ্যে কৌতূহল ছিল অনেক কিন্তু একই সাথে ভয়ও ঘিরে ছিল তার মনে।

বিশ্বস্ত মানুষদের একজন নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসল। তিনি ছিলেন সম্ভবত গবেষক বা বিজ্ঞানী।  যিনি আগুন্তকদের সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তার কাছে হঠাৎ করে একটি ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে উঠল—এরা কোনো যুদ্ধের জন্য বা আক্রমণ করতে আসেনি। বরং, তারা যেন কিছু শেখার জন্য অথবা পৃথিবী সম্পর্কে জানার জন্য এসেছে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার ভাবে জানার জন্য আরও অনেক কিছু করতে হবে।

ছেলেটি লক্ষ্য করল আগুন্তকরা কিছু প্রযুক্তিগত যন্ত্র বহন করছে। যা মনে হচ্ছিল পৃথিবীর মানুষদের জন্য অচেনা। তাদের গহনা বা পোশাকের মতো যন্ত্রগুলো একেবারে ভিন্ন ধরনের ছিল। তবে তা ছিল অত্যাধুনিক যা মানুষ এখনো তৈরি করতে পারেনি।

এভাবেই "অপরিচিত আগুন্তক" অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। এই অধ্যায়টি পৃথিবীতে অজানা কিছু জীব বা সভ্যতার আগমনের সূচনা ঘটায়, যার রহস্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিশাল প্রশ্ন রেখে যায় মানুষের মনে।

অধ্যায় ৪: প্রথম যোগাযোগ

বিশাল স্টার শিপটি পৃথিবীতে অবতরণের পর থেকেই মানুষের মধ্যে এক অদ্ভুত উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল। আগুন্তকরা যারা একেবারে নতুন, অচেনা, ভিন্ন পৃথিবী থেকে এসেছে তারা কিছুই বলছিল না। তবে তাদের উপস্থিতি ছিল অত্যন্ত নিবিড় এবং গভীর। মানুষের মধ্যে আশঙ্কা, কৌতূহল এবং বিস্ময়ের একটি অদ্ভুত মিশ্রণ তৈরি হয়েছিল। এটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মাইল ফলক ও ভিনগ্রহ বাসীদের আগমনের সূচনা। কিন্তু এই আগমনটি কীভাবে পৃথিবীকে পরিবর্তন করবে তা কেউ জানত না।

আগুন্তকরা শিপ থেকে বেরিয়ে একদম শান্ত ভাবে পৃথিবীর পরিবেশে ঢুকে পড়েছিল। তাদের আচরণ ছিল শান্ত। কোনো ধরনের উত্তেজনা বা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো কিছুই ছিল না। তারা ছিল এক ধরনের গভীর তত্ত্বের মধ্যে নিমজ্জিত। যেন তারা পৃথিবীর প্রকৃতি এবং প্রাণী জগত সম্পর্কে কোনো কিছু জানার চেষ্টা করছে।

যে ছেলেটি পুকুরের পাশের জঙ্গলে লুকিয়ে বসেছিল, সে কিছুক্ষণের জন্য তাদের পর্যবেক্ষণ করছিল। পৃথিবীর মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হলেও কিছু মানুষ সাহস করে এগিয়ে এসে তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছিল। বিজ্ঞানী, গবেষক এবং সরকারী কর্মকর্তারা সবাই তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে লাগল। তারা ভিনগ্রহ বাসীদের সাথে প্রথম যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছিল। তবে এরই মধ্যে একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটল।

এগিয়ে আসা এক বিজ্ঞানী প্রথমে ধীরে ধীরে তাদের দিকে হাঁটতে শুরু করল। তিনি একেবারে নিঃশব্দে এবং বিনয়ের সাথে তাদের দিকে হাত বাড়ালেন। যেন কোনো শান্তিপূর্ণ বার্তা পাঠাচ্ছেন। কিন্তু আগুন্তকরা তার দিকে কোনো দৃষ্টি দেয়নি। তারা একে অপরের চোখে চোখ রেখে কিছুক্ষণ পর নির্দিষ্ট অবস্থানে দাঁড়িয়ে রইল। যেন নিজেদের মধ্যে কিছু আলোচনা করছে। তাদের ভাষা অদ্ভুত এবং অচেনা ছিল—কেউই বুঝতে পারছিল না তারা কী বলছে।

যতই সময় যাচ্ছে মানুষের হতাশা ততই বাড়তে থাকে। পৃথিবী জুড়ে হাজারো মানুষ তাকিয়ে ছিল, আশায় ছিল, কিছু একটা স্পষ্ট হবে। কিন্তু ভিনগ্রহ বাসীরা কিছু বলছিল না। তারা শুধু পৃথিবীর প্রাণীদের দিকে বিশেষ করে পাখি, সাপ এবং অন্যান্য বন্য প্রাণীদের দিকে তাকিয়ে ছিল। এমন ভাবে যেন তারা পৃথিবীকে সম্যক ভাবে জানার চেষ্টা করছে। তাদের চোখে গভীর চিন্তা আর কিছুটা শূন্যতা এবং অজ্ঞতা ছিল। যেন তারা বুঝতে চাইছিল পৃথিবী কী এবং এখানে কী হচ্ছে।

এক সময় কয়েকটি ভিনগ্রহী তাদের হাতে কিছু যন্ত্র ধরল। এগুলো ছিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্র। যার মাধ্যমে তারা পৃথিবীর প্রাণী জগতের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করছিল। মানুষ তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দিচ্ছিল না। তাদের চোখে-মুখে কোনো অনুভূতি ছিল না—মৌন ভাবেই তারা প্রাণীদের আচরণ এবং পৃথিবী সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।

এদের মধ্যে এক জন যিনি সবচেয়ে বেশি উচ্চতর এবং বিশাল আকৃতির ছিল, সে একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে পৃথিবীর আকাশের দিকে তাকাতে থাকে। তার চোখ যেন এক ধরনের গভীর বিশ্লেষণে নিবদ্ধ ছিল। কিছুক্ষণের জন্য সে আকাশে কিছু লক্ষ্য করল। তারপর সে অন্যদের দিকে মাথা ঘুরিয়ে কিছু অদ্ভুত শব্দ করল। তবে তা মানুষের জন্য কিছুই বোঝা গেল না। শুধু কিছু আলোকিত ঝলকানি ছিল যা বুঝতে পারা অসম্ভব।

এভাবে প্রথম যোগাযোগের এই ঘটনা রহস্যময় হয়ে রয়ে গেল। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাবিদ, বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদরা চেষ্টা চালিয়ে গেলেন ভিনগ্রহ বাসীদের ভাষা এবং আচরণ বোঝার জন্য। কিন্তু সেটা ছিল এক অসম্ভব কাজ।

এ সময় ছেলেটি যে আগের অধ্যায়ে পুকুরের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন, অবশেষে সেই ছেলেটি সাহস করে এগিয়ে আসে। সে দেখল যে, মানুষ জন তাদের দিকে কিছু বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভিনগ্রহ বাসীরা কিছুই বলছে না। ছেলেটি মনে মনে ভাবল, "এরা আসলে কী চাইছে?" তার কৌতূহল আরও বাড়তে থাকে। কারণ সে বুঝতে পারছিল যে, তাদের আচরণ শুধুমাত্র পৃথিবীর প্রাণীদের প্রতি ছিল। তারা যেন পৃথিবীর জীব বৈচিত্র্য এবং পরিবেশের গভীরে প্রবেশ করতে চাচ্ছিল।

পৃথিবী এবং ভিনগ্রহ বাসীদের মধ্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হওয়ার প্রথম চেষ্টা ছিল রহস্যময় এবং অস্পষ্ট। আগুন্তকরা কিছুই বলার বদলে পৃথিবী এবং তার প্রাণীদের দিকে শুধুমাত্র নজর রেখেই যাচ্ছিল  এবং তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অজ্ঞতা তৈরি হচ্ছিল। এই রহস্যের সমাধান কী, সেটি জানতে পৃথিবীকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে হবে।
 

Comments

    Please login to post comment. Login