শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ।
প্রতিটি রুম, করিডোরের আনাচেকানাচের দেয়ালে দেয়ালে রঙিন এবস্ট্রাকট আর্ট,
আলো গুলোর সুসজ্জিত বর্ষণশীল আবেশে মনোরম পরিবেশের জন্ম দেয় এখানে...
চারিদিকে নানা ধাঁচের মানুষের আনাগোনা – আবহে কর্মব্যস্ততার চাঞ্চল্য,
কিন্তু, কেনো জানি মনে হয় কোথাও কেউ নেই – চলমানতা যেন থমকে আছে, থমকে আছে সময় – থমকে আছে মূহুর্তের বিমূর্ততা – থমকেছে স্বাচ্ছন্দ।
অপারেশন থিয়েটারের সামনে অবস্থান করা মানা – যথার্থই সঠিক ব্যবস্থা,
তবু মন মানতে চায় না – জন্মান্তরের নিষিদ্ধতা না মানার স্বাভাবিক স্বার্থপরতার আবেগ – বারবার মনের মাঝে উঁকি দেয় – সব নিষিদ্ধ নিয়ম ভাঙার অদম্য ইচ্ছা জাগ্রত হয়, শুধু বাস্তবতার বেরা জালে আবদ্ধ ইচ্ছা পূরণের নিয়ম – এখানে...
এখানে অনিচ্ছার প্রভাব বেশি, অনিয়মিত সমাধান, অনির্ধারিত ফলাফল কিংবা কাংখিত স্বপ্ন পূরনের সম্ভাবনা অসম্ভব না – এখানে হাসিমুখে দেখা মিলে প্রায়ই...
অপারেশন থিয়েটারের সামনে কেমন যেন স্তব্ধতা বিরাজমান
শরীরের প্রকাশভঙ্গির কি অদ্ভুৎ আশ্চর্য সুনির্দিষ্ট অভিমান
মনের ঘরের (খাঁচার) কাঁচা বাশের জীবন স্রোতে বেগবান
সে থামবার নয় , থমকে থাকার নয় – তবু কেনো এতো অসাবধান
এতোকাল লড়াই করে আজ অটি লাইটের নীচে অবশ শুয়ে থাকা কেনো?
জীবনীশক্তি হারিয়ে যায় নি - তবু নিথর অনুভূতির ব্যবধান
হে ঈশ্বর! বিষ্ময় , কি বিষ্ময়কর তোমার অবদান।
সত্যি বলতে এখানে কলম লাচানো কঠিন।
অপারেশন থিয়েটারের বাইরে শিড়িঘর পেরিয়ে সুমনা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে,
এখনো জানে না,
সময়ের সাথে অপেক্ষা কি করে করবে,
জীবনে অনেক উপেক্ষা করেছে সে,
জানে অপেক্ষা কে কি করে উপেক্ষা করতে হয়,
তবু, আজ যে মানুষটার জন্য ভাবছে, সে মানুষটা যে একান্ত তার নিজের, আজ সে না ভাবলে আর কবে ভাববে। আবার কবে হাতেহাত রেখে হাঁটবে, দেখবে
আরো কতো সুনীল স্বপ্নে রাঙানো গল্প ময় জীবনে স্বার্থক যাপিত জীবন।
আজ হঠাৎ ভাবতে হচ্ছে, ‘কেনো’ নিয়ে...
সব ঠিকঠাক তাহলে জীবন হয় না – একথাও মানা যায় না
তাহলে কোথায় জীবন কিসের জীবন – কেনো জীবন
উত্তরটা তার জানা – কারনের বহুলত্ব বলেই তো জীবন
তবে , কি সে কারণ - কি তার ব্যাকরণ – আজ বদলে দিলো জীবন।
এসবের সাময়িকতা সে ভেবেছে,
নেড়েছে প্রতিটি পাতা, চিনেছে প্রতিটি অংক
নতুন করে এঁকেছে সামনের ছক – বেঁধেছে সংকল্প – কল্পনা প্রসূত হয়েছে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা – মাঝেমধ্যে, নোনাজল বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে – তবে সুমনা থমকে যায় নি
-সে আসলে থমকাতে চায় নি – যায়নি ছেড়ে সচেতন ভাবনা জগৎ থেকে দূরে
সব ভেবেছে সে, কি করে কি হবে বা হবে না – কেননা’দের সম্ভাবনা সব শান্তির নিঃশ্বাস আটকে রেখেছে – ছাড়েনি একটিও দির্ঘশ্বাস – তবু,
মন মানে না – মন জানে না – বুঝতে চায় না – সে শুধু অস্তিত্বে বিশ্বাসী।
না হওয়ার বা অপূরনীয় ক্ষতির – হতে পারাটার সম্ভাবনা সে ফেলনা করে দেখতে জানে না – সে জানে – জীবনে কখনো অপ্রস্তুত হওয়া যায় না...
প্রস্তুতির জীবন কেমন সেটা অন্য অভিমত – তবু আজও সে কারো কোলে মাথা রাখবে না – নিজের মাঝেই লড়বে – যে করে লড়ে এসেছে এতোটা সময় –
শিড়িঘর করিডোর পেরিয়ে অপারেশন থিয়েটারের বাইরে সুমনা চুপচাপ বসে থাকে, উপেক্ষা করে অপেক্ষার জীবন।
তবু, ভেতরের আর্তনাদ, আর্তচিৎকার সে লুকিয়ে রাখে – কেননা, এখানে জীবনের মূল্যের বনিবনা হয় নিয়তির সাথে, স্বত্ত্বার প্রণয়ের আত্মার অস্তিত্বের লড়াই হয় এখানে, সুমনা, এ লড়াই লড়তে জানে।
অপেরেশন থিয়েটারের সামনে লাল বাতি নিভে যায়,
বাতি জ্বলে অন্য কোন নতুন জীবনের – এ আলো দেখায় অন্য কোন নতুন।
আলোকিত পথ – আলোর জীবন।