গ্রামের এক প্রান্তে ছিল একটি বিশাল বট গাছ। দিনের বেলা গাছটি সুন্দর দেখালেও রাত নামলে এর চারপাশে এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে আসত। কেউ বলে, সন্ধ্যার পর এই গাছের তলায় কাক ডাকতে শোনা যায় না, আবার কেউ বলে রাত গভীর হলে গাছ থেকে শোঁ শোঁ আওয়াজ ভেসে আসে।
গ্রামের বয়স্ক লোকেরা বলত, বহু বছর আগে সেখানে এক ধনী জমিদার ছিলেন। তিনি নৃশংস অত্যাচার চালিয়ে গ্রামবাসীর সম্পদ কেড়ে নিতেন। একদিন গ্রামবাসীরা বিদ্রোহ করে জমিদারকে হত্যা করে এবং তার মৃতদেহ সেই বট গাছের নিচে পুঁতে রাখে। তারপর থেকেই গাছটিতে জমিদারের আত্মা বাসা বাঁধে।
গ্রামের মানুষ বলত, মাঝরাতে গাছের নিচে লাল শাড়ি পরা এক মহিলার ছায়া দেখা যায়। যারা সাহস করে কাছাকাছি যায়, তাদের অনেকেই ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়ে। একবার এক পথিক ভুল করে বট গাছের নিচে রাত কাটানোর চেষ্টা করেছিল। সকালে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়, আর তার মুখ থেকে একটিই কথা শোনা গিয়েছিল:
“ওই চোখ... ওই আগুনের চোখ!”
গ্রামের এক ওঝা একদিন ঠিক করলেন, এই গাছের পিশাচ আত্মাকে তাড়াতে হবে। তিনি গাছের নীচে পূজা করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু পূজা করার সময় এমন এক প্রবল ঝড় ওঠে যে, গ্রামের সবাই ছুটে পালায়। পরে জানা যায়, ওঝাও আর জীবিত ছিলেন না।
এরপর থেকে গ্রামের কেউ আর বট গাছের কাছে যায় না। রাত হলে সবাই দরজা বন্ধ করে দেয়। গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করে, সেই জমিদারের অভিশপ্ত আত্মা এখনো গাছটিতে বন্দী এবং কেউ তাকে বিরক্ত করলে তার পরিণতি খুব ভয়ানক হবে।
বট গাছটির গল্প সত্য, না কি কেবল লোককথা, তা কেউ নিশ্চিতভাবে জানে না। তবে আজও সেই গ্রামে সন্ধ্যার পর বট গাছের আশেপাশে কেউ পা রাখে না।
এই কাহিনী হয়তো কল্পনার, কিন্তু ভয়টি বাস্তব। বট গাছ ও ভূতের এই সম্পর্ক আজও বাংলার লোককাহিনীর অমূল্য অংশ।