💔#Divorce💔
Tahmina Toma
Part:3
অন্তরাঃ(আপু মাকে ডাকতে ডাকতে চলে গেলো আর আমি আমার কাজে মন দিলাম। একটু পর আরিয়ান কোথা থেকে এসে আমার চুলের মুঠি ধরে গালে থাপ্পর বসিয়ে দিলো। আমি অবাক হয়ে তাকালাম উনার দিকে)
আরিয়ানঃ তোর সাহস কিভাবে হয় আমার বোনের সাথে খারাপ আচরণ করার??
অন্তরাঃ আ,,আমিতো আপুকে শুধু বলেছি,, গহনা গুলো আমি মাকে দিয়ে দেবো,,,,,
আরিয়ানঃ তুই বলতে চাইছিস আমার বোন মিথ্যে বলছে?? তোকে কালই বলেছিলাম আমার মা বোনের সাথে খারাপ আচরণ করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
অন্তরাঃ( উনি আবার মারতে আসলে তিথি আপু আটকালেন)
তিথিঃ কী করছিস ভাইয়া?? বাড়ি ভর্তি মেহমান,,,, এখন যদি কেউ এসব জানে মান সম্মান ধুলায় মিশে যাবে। তুই চল আমার সাথে,,,,(হাত ধরে টেনে)
আরিয়ানঃ দাঁড়া,,,,, (তিথির হাত ছাড়িয়ে অন্তরার সামনে দাড়ালাম) লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি আমার মা আর বোনদের সাথে ভুলেও খারাপ আচরণ করেছিস তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না,,,,
অন্তরাঃ(কথাটা বলে হনহনিয়ে বের হয়ে গেলেন রুম থেকে। তিথি আপু আমার দিকে তাকিয়ে একবার তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বের হয়ে গেলেন। ধুপ করে বসে পড়লাম বেডে। গাল ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে,,, স্পর্শ করতে পারছি না। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আল্লাহর কাছে একটাই কথা বললাম ধৈর্য্য দাও সয্য করার)
আরিয়ানের মাঃ বৌমা,,,,,,
অন্তরাঃ (তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালাম।) আসসালামু আলাইকুম মা,,
মাঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,, তোমার গহনা গুলো দাও তো,,,,
অন্তরাঃ মা,,,, ওগুলো আমার মায়ের গহনা। বাবা বিয়ের সময় দিয়েছিলো,,,,। আপনাদের গহনা দেওয়ার কথা ছিলো,,, দেননি তাই মায়ের গহনা দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলো,,,,,
মাঃ তোমার মত ফকিরের মেয়ে বাড়ির বউ করে এনেছি তাই তোমাদের সৌভাগ্য আবার গহনা,,,।
অন্তরাঃ মা,,,, যা বলার আমাকে বলুন,,, আমার বাবা-মাকে কিছু বলবেন না দয়া করে,,,,(একটু উচু গলায় বললাম)
মাঃ তোমার এতবড় সাহস আমার মুখে মুখে কথা বলো,,,, আরিয়ান,,,,
অন্তরাঃ(কোন মেয়েই পারবে না নিজের বাবা-মায়ের অপমান সয্য করতে।)
মাঃ আরিয়ান কোথায় গেলো?? (তিথিকে উদ্দেশ্য করে)
তিথিঃ এখন এসব বাদ দাও,,,,,, নতুন বউ দেখতে এসেছে অনেকে,,,,
মাঃ আচ্ছা,,,, অনুষ্ঠানের ঝামেলা যাক,,, বাড়ি আগে ফাকা হোক এর উচু গলায় কথা বলা বের করছি,,,
,,,,
বিথীঃ আসবো,,,,,??
অন্তরাঃ জী আসুন,,,,,,(উনিই বাকি ছিলেন,,, সেও চলে এলেন)
বিথীঃ তোমার খাবার,,,,, সরি আসতে লেট হয়ে গেলো,,, বাড়িতে অনেক মেহমান,, সব আমাকেই দেখতে হচ্ছে,, তাই তোমার দিকটা তিথিকে দেখতে বলেছি,,, কিন্তু খাবার পাঠাবো তাকে খোঁজেই পেলাম না,,, তাই আমিই নিয়ে এলাম।
অন্তরাঃ(যাক এই বাড়িতে একজন অন্তত মানুষ পেলাম।) না আপু ঠিক আছে,,,,
বিথীঃ তুমি আমার সম্পর্কে ছোট ভাইয়ের বউ আর বয়সেও অনেক ছোট,,,,,,, আমাকে বড় বোনের মত ভাবতে পারো। আরিয়ান তোমাকে অনেক বেশি পছন্দ করে ফেলেছিলো তাই কারো কথা শুনেনি। আমি ওকে বুঝিয়েছিলাম তোমার বয়স অনেক কম কিন্তু কোন কথাই শুনেনি। একটু মানিয়ে নিয়ো কষ্ট করে,,,,।
অন্তরাঃ হুম,,,, (এই বাড়িতে এই একজন মানুষকেই আপন মনে হলো)
বিথীঃ এখন খাবারটা খেয়ে নাও,,, তারপর আমি তোমাকে সাজিয়ে দিচ্ছি,,,, অনেকে তোমাকে দেখতে এসেছে।
অন্তরাঃ আচ্ছা আপু,,,,(খেয়ে নিলাম,,, অনেক ক্ষুদা পেয়েছিলো।)
বিথীঃ এটা খেয়ে নাও,,, (একটা মেডিসিন এগিয়ে দিয়ে)
অন্তরাঃ কীসের মেডিসিন এটা,,,??
বিথীঃ খেয়ে নাও ব্যাথা কমে যাবে,,,
অন্তরাঃ (অবাক হয়ে তাকালাম বিথী আপুর দিকে। কত তফাত আরিয়ান, তিথি আর বিথী আপুর মধ্যে। চুপচাপ মেডিসিনটা খেয়ে নিলাম। তারপর আপু সুন্দর একটা শাড়ি পাড়িয়ে নিচে নিয়ে গেলেন সাথে করে)
★বর্তমান★
রোজঃ তারপর কী হলো,,,??
অন্তরাঃ বউ ভাতের অনুষ্ঠান শেষে আমাদের বাড়িতে চলে গেলাম। আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমি আরিয়ানাকে চিনতে পারছিলাম না। সবার সাথে কী সুন্দর কথা বলছিলো,,,আমার ছোট বোনদের সাথে মজা করছিলো। আমাদের বাড়িতে আমার সাথে খারাপ ব্যবহারও করেনি। ভাইয়াও বাড়ি চলে এসেছে তার সাথে কত আড্ডা। আমার মা সহ প্রতিবেশী সবাই আরিয়ানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ভাইয়াও ভেবে নিলো আমি হয়তো সুখী হবো,,, আমিও ভেবেছিলাম আরিয়ানকে হয়তো ভুল বুঝেছিলাম আমি। দুদিন আমাদের বাড়িতে থেকে আবার চলে এলাম আমার শশুর বাড়ি।
পরদিন সকালেই আমার ভুল ভেঙে গেলো। আরিয়ানকে আমি ঠিকই বুঝেছিলাম।
রোজঃ কেন,,,,কী করেছিলো পরদিন সকালে,,,,,,।
ক্রিংক্রিংক্রিং
রোজঃ এক্সকিউজ মি,,,
অন্তরাঃ ওকে,,,,,(মিসেস রোজের ফোন বেজে উঠতেই উনি ফোন নিয়ে জানলার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগলেন। আমি তাকিয়ে থাকলাম টেবিলের ওপর রাখা ম্যাগাজিনে ছাপানো একটা কাঁপল ছবির দিকে,,, কানে আসতে লাগলো মিসেস রোজের ফোন আলাপ)
রোজঃ আরে,,, আমি জানিতো লান্সের সময় হয়েছে,,,,খেয়ে নেবো।
,,,,,,,,,,,
রোজঃ হ্যাঁ,,, সব শুধু তোমারই মনে থাকে। খেয়ে নেবো বললাম তো,,,। তুমি খেয়েছো,,,?
,,,,,,,,,,,,,
রোজঃ আচ্ছা খেয়ে নাও আমিও খেয়ে নিচ্ছি,,,
,,,,,,,,
রোজঃ ওকে বায়,,, লাভ ইউ টু,,,,,(ফোন রেখে আবার অন্তরার সামনে চেয়ারে বসে পড়লাম) সরি,,, আসলে,,
অন্তরাঃ স্যার মনে হয় এখনো আপনাকে অনেক ভালোবাসে,,,??
রোজঃ হুম তা বাসে,,,, তোমার বয়সী একটা মেয়ে আছে,,, কানাডায় পড়াশোনা করছে,,, এখন দুজনই একা,,, তাই নিজেরাই নিজেদের দেখাশোনা করি,,, আমার ঠিক সময়ে খাবার না খেলে বিপি লো হয়ে যায়,,, তাই কাছে না থাকলেই কল দেয়,,,,
অন্তরাঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,, আপনি খেয়ে নিন,,, আমি বরং আজ আসি,,, আগামীকাল আবার আসবো,,,,
রোজঃ না তুমি একটু বসো,,, তোমার জীবনের কাহিনী পুরোটা না শুনলে রাতে ঘুমাতে পারবো না।
অন্তরাঃ আপনি সকাল কয়টায় চেম্বারে আসেন??
রোজঃ ৯ টায়,,,,
অন্তরাঃ আমি চলে আসবো,,,, আজ আমারও একটু কাজ আছে,,,
রোজঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,, এসো কিন্তু,,,।
অন্তরাঃ (মিসেস রোজের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেঁসে বের হয়ে আসলাম। বাড়ি ফিরতে হবে,,,,, রাস্তার অপর পাশে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে ওঠলো। হাসিটা কষ্টের ও না আর আনন্দের ও না। বিরবির করে বলে ওঠলাম আপনি সত্যি আমার রুপেই মুগ্ধ হয়েছিলেন। আমার রুপের সাথে আপনার আমার প্রতি মুগ্ধতাও হারিয়ে গেছে। খোঁজে নিয়েছেন নতুন মুগ্ধতার উৎস। আজ আর চোখে পানি আসে না কষ্টে। কারণ হারানোর কিছু অবশিষ্ট নেই। যা ছিলো আগেই হারিয়ে ফেলেছি। রাস্তার অপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরিয়ান আর তার প্রিয়শীর দিকে একবার তাকিয়ে রিকশায় বসে পড়লাম।) চলুন মামা,,,, আস্তে আস্তে যান আজ আর কোন তাড়া নেই,,,, (এই শহরে সবাই ব্যস্ত,,,, আমার আজ কোন ব্যস্ততা নেই)
ক্রিংক্রিংক্রিং
অন্তরাঃ হ্যাঁ জ্যোতি বল,,,,(জ্যোতি আমার বেস্টফ্রেন্ড)
জ্যোতিঃ কোথায় তুই,,,,,??
অন্তরাঃ বাড়ি ফিরছি,,,,,কেন??
জ্যোতিঃ একটু ভার্সিটির সামনে আয়,,,,
অন্তরাঃ কিন্তু,,,,
জ্যোতিঃ প্লিজ ইয়ার,,,,,
অন্তরাঃ ওকে ওকে আসছি,,,,(রিকশা নিয়ে আমার ভার্সিটির সামনে এলাম। হ্যাঁ আমি এখন অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি,,,,সেটা ভাইয়ার জন্য পসিবল হয়েছে।) কী ব্যাপার জ্যোতি,,,,,??
জ্যোতিঃ আজকে ভার্সিটি এলি না কেন??
অন্তরাঃ ক্লাস তো হয়নি তাই আসিনি,,,,,
জ্যোতিঃ কোথায় গিয়েছিলি এখন,,,???
অন্তরাঃ লইয়ারের কাছে,,,,,।
জ্যোতিঃ আমি কোনদিন বিয়েই করবো না,,,,, তোকে দেখে বিয়ের সাদ মিটে গেছে,,,।
অন্তরাঃ আরে বোকা সবাই এক হয় নাকি,,,,,আর সবার কপাল কী আমার মতো পুড়া হয়,,??? পৃথিবীর সবাই যদি এক হতো আর সবার কপাল যদি আমার মতো পুড়া হতো তাহলে সমাজ থেকে বিয়ে নামাক প্রথাই উঠে যেতো। সমাজে এমন পুরুষও আছে যারা স্ত্রীর সামান্য আঘাতও সয্য করতে পারে না আবার আরিয়ানের মতো পুরুষও আছে যারা,,,,,,,
জ্যোতিঃ প্লিজ তুই আমার জন্য পুরনো কথা মনে করে কষ্ট পাস না,,,,,,,
অন্তরাঃ এখন আর আমার কষ্ট হয়না,,,,। বিয়ে করার আগে শুধু বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করিস সে কোন ধরনের পুরুষ,,,,,
জ্যোতিঃ এখন এসব বাদ দে,,,, চল ফুসকা খেতে যাবো,,,,,,,
অন্তরাঃ এখানেই তো আছে,,,, কোথায় যাবি আবার??
জ্যোতিঃ স্পেশাল ফুসকা খাবো চল,,,,,
অন্তরাঃ (জ্যোতি জোর করে লেকের পারে নিয়ে এলো,,,,, এখানকার ফুসকা সত্যি স্পেশাল,,,, আর স্বাস্থ্যকর ভাবে বানায়। ফুসকা স্টলের সামনে গিয়ে পা থেমে গেলো। এখন না চাইতেও চোখে পানি এলো,,, আমিও তো মানুষ কোন জড়পদার্থ নই,,,,, কত অভিনয় করা যায় শক্ত থাকার,,,,,,,,, পিছনে ফিরে আসতে নিলে কারো সাথে ধাক্কা লাগলো,,)
,,,,,,সরি মিস,,,, আমি খেয়াল করিনি,,,
অন্তরাঃ (একবার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে চলে এলাম। জ্যোতি পিছন থেকে ডাকছে,,,,)
চলবে,,,,,,