Posts

গল্প

বিচ্ছেদ

November 30, 2024

দেবশ্রী হালদার

Translated by দেবশ্রী


-- ম্যাডাম ডিভোর্সের কারণ হিসেবে কি লিখবো? আপনার হাজবেন্ড আপনার ওপর শারিরীক টর্চার করেন নাকি পরকীয়া প্রেম? 
-- কিছুই না । 
-- কিছুই না? ম্যাডাম তা'হলে লিখি আপনার শ্বশুরবাড়ির লোক আপনার ওপর টর্চার করে? 
-- নাহ্ । 
-- তা'হলে কীভাবে ডিভোর্স হবে ম্যাডাম? 
-- লিখুন আমরা আর সম্পর্ক এগোতে পারছিনা । তাই ডিভোর্স চাই । 
-- কিন্তু ম্যাডাম এটা তো স্ট্রং কারণ না । স্ট্রং কারণ ছাড়া তো ডিভোর্স সম্ভব না । 
-- আপনি লিখুন । আমার হাজবেন্ড এর ওপর তো আমি অযথা দোষারোপ করতে পারবো না । আমরা আমাদের সম্পর্ক এগোতে পারছি না , চাইছি না জন্য আলাদা হতে চাইছি । 
-- ডোন্ট মাইন্ড ম্যাডাম আপনাদের কি এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ ছিলো? 
-- নাহ্ লাভ ম্যারেজ । 
-- লাভ ম্যারেজ? 
-- জ্বী । চার বছর সম্পর্কের পর আমরা বিয়ে করি এবং সাড়ে সাত বছর সংসার আমাদের । 
-- ম্যাডাম এতদিন পর ডিভোর্স? 
-- জ্বী । 
আনোয়ার শেখ এবার সোজা হয়ে বসলেন । 
চশমা টা ঠিক করে মনযোগী হয়ে তাকালেন তার সামনে বসে থাকা নারীটির দিকে । 
ছিপছিপে , মাঝারি গড়নের উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের সে । 
পরণে বেগুনী রঙা একটা শাড়ি তার সাথে ঢিলেঢালা একটা বেণী , সাজগোজ খুব সাধারণ আর হাতে কালো চামড়ার একটা ঘড়ি ব্যাস! 
ওহ্ একটা কালো চামড়ার ব্যাগও সে কোলের ওপর নিয়ে বসে আছে । 
সাজগোজ কিংবা মুখের নকশা দেখে মনে হচ্ছে রুচিশীল একজন মানুষ আর বেশ টাকাপয়সা ওয়ালা । 
এত মায়াবী মেয়েটার কি এমন হলো সে ডিভোর্স চাইতে আসলো? 
এসব নানাকিছু ভাবনা মাথায় আসলো আনোয়ার সাহেবের । 
হালকা কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে উনি ক্লায়েন্ট কে জিজ্ঞেস করলেন_ 
-- ম্যাডাম আপনি যদি মাইন্ড না করেন তা'হলে একটা প্রশ্ন করতে পারি কি? 
-- জ্বী বলুন? আর আমাকে ম্যাডাম বলার দরকার নেই আমার নাম রুশরা । রুশরা বলেই ডাকতে পারেন । 
-- রুশরা মা আপনি আমার মেয়ের বয়সী হবেন । মা আপনি খুব মায়াবী । এমন মায়াবী মানুষের জীবনে দুঃখের ছায়া নামার কারণ কি জানতে পারি মা? আপনি আমাকে আপন ভেবে বলতে পারেন । যদি আমি সমস্যা সমাধান করতে পারি? 
এবারে একটু নড়েচড়ে বসলো রুশরা নামক নারীটি । 
-- বুঝতে পারছি না কোথা থেকে শুরু করবো । 
-- আপনি শুরু থেকেই শুরু করুন মা কোনো সমস্যা নেই । 
-- তা'হলে আমার ছেলেবেলার কাহিনী থেকেই শুরু করি? 
-- আচ্ছা । 
একটু দম নিয়ে বলতে শুরু করলো সে_ 
আমার বাবা'র বাড়ি রংপুরে । রংপুরের স্থানীয় মানুষ আমরা। 
আমার ছোট চাচা রাজনীতি করতেন এবং সেই সুবাদে আমাদের খুব নামডাক এলাকায় । 
আমাদের যৌথ পরিবার , সেই সুবাদে ভাইবোন সংখ্যা মোটামুটি অনেক । 
ফুপিরাও আমাদের সাথেই থাকতেন । 
তো সব ভাই বোনের মধ্যে আমি সবচাইতে ছোট এবং আমার বাবা'র একমাত্র মেয়ে । 
বাবা মা অনেক কষ্টের  পর আমাকে পেয়েছেন । 
এক মেয়ে এবং সবার ছোট হিসেবে আমি ছিলাম সবার চোখের মনি । 
আমি মুখ দিয়ে বলার আগেই সবকিছু হাজির হয়ে যেত আমার সামনে । 
এতো এতো আদর থাকা সত্বেও আমার মধ্যে উড়নচণ্ডী স্বভাব টা আসলো না । 
এই ব্যাপারটায় সবাই অবাক আবার গর্ববোধ করতে থাকলো । 
আমি পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিলাম , স্কুলে সবসময় প্লেসের মধ্যেই থাকতাম । 
ভালো স্টুডেন্ট , সাহসীকতা এবং ভদ্রতার কারণে আমার নামডাক ছিলো পাড়ায় । 
বন্ধু বান্ধবের মায়েরা আমাকে দিয়ে সবসময় তুলনা করতো এ নিয়ে বন্ধু মহলে অনেকেই আমাকে পছন্দ করতো না । 
আমি ওসব আমলে নিতাম না ।
আমার একটা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো এবং সে ছিলো আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ । 
কারো কথা আমলে না নিলেও ও যদি একবার আমার সাথে অভিমান করতো তা'হলে আমার পৃথিবী থমকে যেত! 
আমি অশান্ত হয়ে উঠতাম , বুঝতে পারতাম না আমার এখন কি করা উচিৎ? 
ও অবশ্য বেশি রেগে থাকতো না তবে ওর যখন রাগ ভাঙতো তখন আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম । 
ও খুব হাসতো হেসে বলতো _ " এখন যে খুব কাঁদছিস , যখন আমার  বয়ফ্রেন্ড হবে বা তোর বয়ফ্রেন্ড হবে তখন তো ভুলেই যাবি । এরকম পাগলামি করতে পারবি না ।" 
আমি আরো কেঁদে ফেলতাম , বলতাম_" ওরকম দিন কখনোই আসবে না । " 
কিন্তু ওরকম দিন আসলে আসলো জীবনে । 
ক্লাস নাইনে ওর একটা বয়ফ্রেন্ড হয়ে গেলো ওর বয়ফ্রেন্ড হওয়ার পর থেকে ওর সাথে আমার যেই বন্ডিং টা আগের মতো থাকলো না । 
আমি ওকে বলতাম তুই বদলে যাচ্ছিস কিন্তু ও বলতো নাহ্ আমি আগের মতোই আছি । 
আমি আর কিছু বলতাম না । 
ওর বয়ফ্রেন্ড আমার সাথে পরিচিত হওয়ার পর আমাকে নক দিতো মাঝেমধ্যে ।
আমি তেমন রিপ্লাই করতাম না । 
একদিন ওর বয়ফ্রেন্ড সহ ও ঘুরতে যাচ্ছিলো তো সেদিন আমাকেও নেয় । 
আমরা দু'জনেই শাড়ি পরেছিলাম । 
আমরা যখন রাস্তায় ঘুরছি , ভীড়ের মাঝে এক ফাঁকে ছেলেটা আমার শরীরে বাজে ভাবে হাত দেয় । 
আমি তৎক্ষনাৎ আমার বান্ধবী কে বলে দিই , বান্ধবী ক্ষেপে যায় । 
ছোটখাট ঝগড়া করে চলে আসি । 
অন্যদিনের মতো ও আর আমাকে মানাতে আসেনা । 
আমার খুব খুব কষ্ট হয় । 
আমি নিজেই থাকতে পারছিলাম না তাই পরে আমিই যোগাযোগ করি । 
সব ঠিক হয় মোটামুটি কিন্তু আমাদের দূরত্ব কমে না । 
এর মাঝে ছেলেটা আবার আমাকে উত্যক্ত করতে শুরু করে । 
আমি বান্ধবী কে বলায় ও ভায়োলেন্ট হয়ে যায়! 
আমি ওকে প্রুফ দিতে চাই কিন্তু ও কিছু দেখতেই রাজি না । 
ঐ ছেলের প্রতি ওর ভালোবাসা এতটাই গভীর যে ও আমাদের বন্ধুত্ব ভুলে যায় । 
আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাই । 
খুব খুব কষ্ট পাই আমি । 
ঐ ঘটনার পর থেকে আমার ভালোবাসার ওপর একটা ঘৃণা চলে আসে । 
যে ভালোবাসা মানুষকে অন্য সম্পর্ক থেকে দূরে নিয়ে যায় তা অভিশপ্ত , এটাই মনে হতে থাকে আমার । 
আমি হয়ে যাই অনুভূতিহীন পাথর স্বরুপ । 
.
(চলবে) 
 

Comments

    Please login to post comment. Login