Posts

গল্প

বিচ্ছেদ

November 30, 2024

দেবশ্রী হালদার

Translated by দেবশ্রী

পর্ব:২
আমি যখন দশম শ্রেণীতে উঠলাম তখন একটা ফ্যামিলি অকেশানে আমার কাজিনদের বন্ধুরা দাওয়াতে এসেছিলো । 
সেই বন্ধুদের মধ্যে একজন ছিল আমার হাজবেন্ড ইয়াসির আহমেদ । 
সেদিনই নাকি আমাকে ভালো লেগে যায় তার কিন্তু আমার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখে আমি তার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট । 
সে তখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে আর আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী । 
বয়সের ব্যবধানের সাথে সাথে ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের ও মিল ছিলো না আমাদের । 
আর তাছাড়াও আমি স্বাধীনচেতা ফ্যামিলির মেয়ে অপরদিকে সে রক্ষণশীল ফ্যামিলি বিলং করে । 
স্টুডেন্ট সেও ভালোই ছিলো , তারাও রংপুরেরই বাসিন্দা কিন্তু গ্রামাঞ্চলের । 
ওদের পৈতৃক সম্পত্তি অনেক , বাবা একজন রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার । 
ওরা তিন ভাইবোন এবং ও ই সবার থেকে বড় । 
বড় হিসেবে ওর দায়িত্বও বিশাল , ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে আর টিউশন করিয়ে যা আর্ন হয় তা বাসায় পাঠায় । 
যদিওবা ওদের অভাব নেই কিন্তু এক্সট্রা এ্যাসেট এগুলো । 
আর ম্যাক্সিমাম সময়ই সকল খরচ ওর চাচা দিয়ে থাকেন না চাওয়া সত্বেও । 
কারণ একটাই ওর বাবা ওর চাচা কে রাস্তা থেকে তুলে এনে নিজের আপন ছোট ভাইয়ের আসনে বসিয়েছে , পড়াশোনা করিয়েছে , সম্পত্তি লিখে দিয়েছে এবং সংসার পেতে দিয়েছে । 
ওর চাচা ওর কাছে আরেকজন বাবা । 
আমি মূলত ওর সম্পর্কে প্রথম দিনই ইনফরমেশন কালেক্ট করেছিলাম কারণ ও আমাকে প্রত্যেকটা পদে পদে বুঝিয়ে দিয়েছে ও আমার ওপর ইন্টারেস্টেড । 
আমি তো ভালোবাসায় তখন বিশ্বাসী না , ওর স্ট্যাটাস টা মনে করিয়ে দেবার জন্যই সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে নিয়েছিলাম । 
ভেবেছিলাম ও হয়তো প্রপোজ করে দিবে কিন্তু আমার ধারণা ছিলো ভুল । 
ওরা আরো তিনদিন আমাদের বাসায় থাকলো কিন্তু প্রথম দিনের ন্যায় দ্বিতীয় দিন থেকে আমার ওপর ইন্টারেস্ট দেখালো না আর এমনকি আমার দিকে তাকাতোও না অবধি । 
আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই ভাইয়া রা ব্যাটাকে কিছু বলে আটকেছে । 
কয়েকদিন পর আমার স্কুলের সামনে হঠাৎই তার সাথে দেখা  , আমাকে দেখে সে ই এগিয়ে এসে কথা বললো । 
আমি তো অবাক , তবুও ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বললাম । 
সে আবার আমাকে চা খাওয়াতে চাইলো , আমার বিরক্ত লাগছিলো আমি নানা অজুহাত দেখিয়ে চলে আসলাম । 
দু'দিন পর আবার দেখা হলো ঐ স্কুলের সামনেই । 
কিন্তু সেদিন ছাড়লো না চা খাওয়ালোই । 
দ্বিতীয় দিনও আমলে নিলাম না কিন্তু এর পর প্রায় প্রতিদিনই দেখা হতে লাগলো । 
কখনো বাসার গলির সামনে , কখনো মোড়ের দোকানে কখনো স্কুলের সামনে কখনোবা টিউশন ক্লাসে গিয়ে । 
বারবার তো কো ইন্সিডেন্টলি দেখা হতে পারে না , এবার আমার মস্তিষ্কে ব্যাপারটা নাড়া দিলো । 
কিছুটা চিন্তা আর পাল্টা নজরদারি  করতেই সব জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো । 
সে আসলে আমাকে ফলো করে , আমার পিছেই লেগে থাকে কিন্তু ঠিক ছ্যাচড়া প্রেমিকের মতো না । 
অথবা ওরকমই কিন্তু বোঝাতে চায় না । 
যেদিন আমার কাছে ব্যাপারটা খোলাসা হলো সেদিন আমি ঠিক করলাম এবার সরাসরি কথা হবে । 
পরদিন সে আবার দাঁড়িয়ে ছিলো আমার স্কুলের সামনে । 
আমি সোজা বেরিয়ে তার কাছে গিয়ে বললাম_ 
-- ঐদিকে চলুন কথা আছে । 
সে ভয়ে চুপসে গেলো । 
কিন্তু আমার পেছন পেছন গেলো । 
কলেজের পাশে একটা পুকুর ছিলো , ঐ পুকুর পাড়ে গিয়ে তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম_
-- আপনি আমার পেছন পেছন ঘুরঘুর করেন কেনো? 
সে থতমত খেয়ে জবাব দিলো_
-- আমি? আমি কই? মানে ..
-- প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় দেখা হওয়া তো কো ইন্সিডেন্স না । দু একদিন দেখা হলো মানলাম কিন্তু গত একমাস থেকে প্রতিদিন? 
-- আসলে রুশরা । 
-- দাঁড়ান আগে আমাকে কথা বলতে দিন । আপনি আসলে আমার পিছে পড়েছেন কেনো? আমার আর আপনার বয়সের ব্যবধান দেখেছেন? আপনি ভালো জায়গায় পড়াশোনা করছেন ভদ্র মানুষ অথচ একটা টিন এইজ মেয়ের পেছনে এভাবে পড়ে আছেন? 
আপনার আসলে মতলব টা কি? আমার ভাইয়েরা আপনাকে বলেনি আমার সম্পর্কে? 
নাকি আমাদের টাকা পয়সা দেখে..
-- ইনাফ রুশরা । তুমি আমাকে বলার সুযোগই দিচ্ছো না শুধু নিজের মনগড়া গল্প পেড়ে যাচ্ছো । আমার স্বভাব এরকম নয় কিন্তু হয়ে গেছে আমি কি করতে পারি? সেদিন তোমাকে দেখার পর থেকে , তোমার খোঁজ খবর নেয়ার পর থেকে আমার তোমাকে ভালো লেগে গেছে আমি কি করবো এখানে? 
আমি অনেকবার ভেবেছি তুমি কোথায় আর আমি কোথায় , আমাদের কিছুরই মিল নেই তবুও এই বেহায়া মনটা মানছে না । 
তোমাকে আমার ভালো লেগে গেছে এখানে আমার দোষ কোথায় বলো? 
রাতে আমি ঠিকমত ঘুমুতে ভুলে গেছি , চোখ বন্ধ করলে তোমার চেহারা ভেসে ওঠে । 
তোমাকে পাবো না ভাবলে বুকে ব্যাথা হয় । 
-- শোনেন এসব ব্যাথা ট্যাথা আসলে আমার জন্য না আপনার হার্টে প্রবলেম হইছে ডাক্তার দেখান । 
-- আমার ডাক্তার তো তুমিই রুশরা । 
-- আরে আজব । আমি ডাক্তার হতে যাবো কেনো? ভালোয় ভালোয় বলছি আমাকে ডিস্টার্ব করা বন্ধ করুন নইলে হাত পা আস্ত থাকবে না । 
বিরক্ত হয়ে বললাম আমি ।
-- আমি কি তোমায় ডিস্টার্ব করছি রুশরা? 
উনি অসহায়ভাবে জিজ্ঞেস করলেন  । 
-- হ্যাঁ করছেন । নেক্সট টাইম আর যেন না দেখি । 
রূঢ়ভাবে বলে আমি চলে গেছিলাম ফিরেও তাকাই নি । 
বাসায় এসে ভেবেছিলাম থ্রেড দিয়েছি কাজ হবে নিশ্চয়ই  কিন্তু না হলো না । 
পরদিন একদম গলির মুখে । 
আমি চোখ পাকিয়ে তাকাতেই সে মাথা নিচু করে বললো_
-- তোমাকে না দেখে ভালো লাগছিল না রুশরা । 
আমি জবাব না দিয়ে চলে গেলাম । 
তারপর আবার একদিন দেখা হলো , প্রতিদিনই সকালে নয়তো বিকেলে দেখা হতোই আর আমি পাত্তা না দিয়ে চলে আসতাম তবে তার মুখে একটা কথাই ছিলো _ 
" তোমাকে না দেখলে আমার ভালো লাগেনা রুশরা।" 
.
আরো একটা মাস অতিবাহিত হলো ।
একদিন কাক ডাকা ভোরে হঠাৎ সে আমার বাড়ির সামনে এসে আমাকে কল করলো । 
আননোউন নাম্বার দেখে প্রথমে রিসিভ না করলেও একসময় বিরক্ত হয়ে রিসিভ করতে হলো । 
আমি হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে কথা ভেসে আসলো_
" আমি তোমার বাসার সামনে রুশরা প্লিজ একবার আসবে?" 
আমি কন্ঠ শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম কে? এবং অবাক হয়ে গেছিলাম তার সাহস দেখে । 
কয়েকটা কড়া কথা শোনানোর জন্য নিচে গেছিলাম কিন্তু আমি তো আরো অবাক । 
কুচকানো একটা শার্ট , এলোমেলো চুল আট টকটকে লাল চোখ নিয়ে সে দেয়ালে মিশে দাঁড়িয়ে আছে । 
আমাকে দেখে এক পা দু পা করে এগিয়ে এসে আমার গালে হাত দিয়ে বললো_ 
-- ঢাকায় ফিরবো রুশরা । তোমাকে কতদিন দেখবোনা । খুব কষ্ট হচ্ছে । 
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলাম লোকটার দিকে । 
দেখতে পারবে না জন্য কেউ কাঁদে? 
ভ্রু কুঁচকে বললাম_
-- কেঁদেছেন আপনি? 
সে মাথা নেড়ে বললো_
-- উঁহু কিন্তু ঘুমাতে পারিনি । আসতে আসতে ৬ মাস লেগে যাবে আমি কি তোমাকে কল করতে পারি? 
-- নাহ্ পারেন না । 
-- প্লিজ রুশরা? 
কাতর স্বরে রিকোয়েস্ট করলো সে । 
আমার হাসি পেয়ে গেলো , হাসি চেপে বললাম । 
-- ঠিকাছে কিন্তু যখন তখন কল দেয়া যাবেনা । একটা নির্দিষ্ট টাইম থাকতে হবে সেটা আমি বলে দিবো । 
এবার তার মুখে হাসি ফুটলো । 
সে প্রশস্ত হাসি দিয়ে আচনক আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো_
-- থ্যাংক ইউ সো মাচ রুশরা । থ্যাংক ইউ । 
আমি দ্বিতীয় বার হতভম্ব । 
মৃদু চিৎকারে বললাম_ 
-- করছেন কি? 
সে চট করে সরে এসে মাথা নিচু করে বললো_
-- স্যরি রুশরা বুঝতে পারিনি । 
আমি চুপ করে ছিলাম । 
সে আবারো বললো_
-- স্যরি রুশরা । এক্সট্রিমলি স্যরি । মাফ করে দাও..
-- কানে ধরেন । 
-- কান ধরবো? 
-- আজ্ঞে । 
সে ইতস্তত করে কানে ধরলোও । 
হাসি চেপে রাখতে কষ্ট হচ্ছিল আমার কিন্তু আমি তো হাসবো না তার সামনে । 
হুট করে পেছনে ঘুরে গেলাম আর বাড়ির ভেতরে হাঁটা দিলাম । 
সে পেছন থেকে জানতে চাইলো_
-- আমি কি এভাবেই থাকবো? 
বাড়ির ভেতর ঢুকে মাথা বাড়িয়ে বললাম_ 
-- দুই সেকেন্ডে উধাও হতে পারলে ভালো নইলে দাঁড়িয়ে থাকেন এভাবে । 
এবার তার মুখে হাসি ফুটলো । 
সে মৃদু চিৎকার করে বললো_ 
ভালোবাসি প্রিন্সেস । খুব মিস করবো কিন্তু! 
আমি কেনো যেন লজ্জা পেয়ে হেসে দিলাম । 
লোকটা সত্যিই পাগল । 
__
চলবে,

Comments

    Please login to post comment. Login