রাতের ট্রেনের অদ্ভুত যাত্রী
শীতের একটি রাতে, রাহুল নামের এক ব্যক্তি জরুরি কাজে শহর থেকে গ্রামের দিকে একটি রাতের ট্রেনে যাত্রা শুরু করে। ট্রেনটি ছিল প্রায় ফাঁকা, মাত্র দুই-তিনজন যাত্রী বিভিন্ন বগিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ট্রেনের ইঞ্জিনের শব্দ আর ঠাণ্ডা বাতাস রাতটিকে আরও নির্জন আর গা ছমছমে করে তুলেছিল।
রাহুল জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে ছিল। ট্রেন চলছিল গভীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। হঠাৎ সে খেয়াল করল, ট্রেনের বিপরীত দিক থেকে একটি অদ্ভুত আলো আসছে। আলোটি ক্রমশ ট্রেনের সমান হয়ে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল।
সে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইল, কিন্তু তখনই একজন মধ্যবয়সী সহযাত্রী তার পাশের সিটে এসে বসে বলল, “আপনিও দেখলেন কি?” রাহুল ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী দেখলাম?”
লোকটি ফিসফিস করে বলল, “এই রুটে এমন কিছু জিনিস ঘটে, যা আপনি বিশ্বাস করবেন না। এখানে কিছু আত্মা আটকা পড়ে আছে। সাবধান থাকুন। রাত ১২টার আগে এই ট্রেন থেকে নামতে হবে। কারণ এরপর এই ট্রেন আর ট্রেন থাকে না।”
রাহুল লোকটির কথা শুনে বিরক্তি নিয়ে বলল, “এসব বাজে কথা শুনতে চাই না।”
অদ্ভুত ঘটনা শুরু
ট্রেনটি ধীরে ধীরে আরও গভীর জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করল। রাহুল লক্ষ্য করল, ট্রেনের বাতিগুলো ঝিমিয়ে আসছে। জানালার বাইরে তাকিয়ে সে দেখল, জঙ্গলের মধ্যে একটি সাদা পোশাক পরা মেয়ে ট্রেনের সমান্তরালে ছুটে চলেছে।
মেয়েটির মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু তার গতি ছিল অস্বাভাবিক দ্রুত। রাহুল ভয় পেয়ে ভেতরে ফিরে তাকাল। তখনই একটি কাঁপুনি দিয়ে ট্রেন থেমে গেল।
ট্রেন থামার পর রাহুল জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখল, একটি পুরনো পরিত্যক্ত স্টেশন। স্টেশনের নাম ছিল "মৃত্যুঘাট"। রাহুলের মনে হলো, সে ভুল দেখছে। কারণ সে জানত, এই রুটে কোনো স্টেশন নেই।
অপরিচিত যাত্রীদের রহস্য
স্টেশনে কয়েকজন যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের মুখে কোনো অভিব্যক্তি ছিল না। ধীরে ধীরে তারা ট্রেনে উঠতে শুরু করল। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, তারা সবাই যেন ভাসছিল। তাদের পায়ের নিচে কোনো শব্দ হচ্ছিল না।
রাহুলের বুক ধড়ফড় করতে লাগল। হঠাৎ সে পাশের লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখল, সে আর মানুষ নেই। তার চোখগুলো গর্ত হয়ে গেছে, আর মুখ থেকে রক্ত ঝরছে।
রাহুল ভয় পেয়ে উঠে দাঁড়াল। সে বগির অন্য যাত্রীদের দিকে তাকিয়ে দেখল, তারা সবাই ধীরে ধীরে আত্মার রূপ নিচ্ছে।
পালানোর চেষ্টা
রাহুল বুঝতে পারল, সে বিপদে পড়েছে। সে ট্রেন থেকে নামার চেষ্টা করল, কিন্তু দরজা কোনোভাবেই খুলতে পারল না। ট্রেনটি আবার চলতে শুরু করল। এবার সেটি অস্বাভাবিক গতিতে ছুটছিল।
বগির এক কোণে গিয়ে রাহুল দেখতে পেল, একটি পুরনো লাল রঙের ট্রাঙ্ক রাখা। ট্রাঙ্কটি থেকে হালকা গুনগুন শব্দ আসছিল। সে এগিয়ে গিয়ে ট্রাঙ্কটি খোলার চেষ্টা করল।
ট্রাঙ্ক খোলার সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়ে পুরো বগি ঢেকে দিল। ধোঁয়ার মধ্যে রাহুল দেখতে পেল, এক বৃদ্ধা তাকে ডেকে বলছে, “আমাদের মুক্ত করো! এই ট্রেনের অভিশাপ থেকে আমাদের বের করো!”
গন্তব্যে পৌঁছানো
রাহুল ধোঁয়ার ভেতরে অজ্ঞান হয়ে পড়ল। যখন তার জ্ঞান ফিরল, তখন সে একটি নির্জন স্টেশনে পড়ে ছিল। স্টেশনের নাম ছিল "শ্মশানঘাট"। সেখানে ট্রেনের কোনো অস্তিত্ব ছিল না।
গ্রামের মানুষ পরে তাকে উদ্ধার করে জানায়, অনেক বছর আগে এই রুটে একটি ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। সেই ট্রেনে থাকা সব যাত্রী মারা যায়, এবং তখন থেকেই সেই ট্রেন পূর্ণিমার রাতে চলতে শুরু করে।
রাহুল তখনই বুঝতে পারল, সে সেই ট্রেনের যাত্রী হয়েছিল।
শেষ।