ঝড়ের আভাস
বহুকাল আগের কথা, যখন দৈব বলে ছাগলদের মাঝে মাঝে পাখা দেখা যেত। কিছু কিছু ছাগল উড়তে পারতো, এমন উড়তে পারা ছাগলদের মালিক নিজেদের অনেক লাকি মনে করতো। এমনই এক লাকি মানুষের দুইটা ছাগল ছিল। একজন উড়তে পারতো, আরেকটা ছাগল শুধুই ছাগল উড়তে সে পারতো না। এই নিয়ে উড়তে না পারা ছাগলের মানে সুপ্ত অনেক দুঃখও ছিল। সারাদিন সে মন খারাপ করে থাকতো, ঘাস চিবাতো আর শুধু হাটতো। সন্ধ্যায় নতমুখে বাড়িতে ফিরে নিজের থাকার জায়গায় ঢুকে পড়তো, মালিক জানতেও পারতোনা তার দুইটা ছাগল আছে। মালিক মনের আনন্দে সারাদিন উড়তে পারা ছাগল নিয়ে ব্যস্ত ছিল। উড়তে পারা ছাগলকে লোকজনকে প্রদশন করে বেড়াতো। আর বুক ফুলিয়ে অভিযানের গল্প শুনাতো।
তখন সেই সময় মাঝে মাঝে প্রচন্ড ঝড় হতো পৃথিবীতে। ঝড় এত জোরে হতো যে থামার পর আকাশ থেকে অনেক কিছু নিচে পড়ে যেত। এমনই একদিন তীব্র ঝড় শুরু হতেই উড়তে পারা ছাগলটা মালিককে নিয়ে আকাশের দিকে উড়াল দিলো। মালিক অবশ্য একবার চেষ্টা করেছিল উড়তে না পারা ছাগলটাকেও সঙ্গে নেওয়ার। অথচ ভারের জন্যে সম্ভব হলোনা, অগত্যা নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্যে মালিক ছাগলের পিঠে চড়ে উড়াল দিলো মেঘের উপরে সেখানে ঝড়ের প্রকোপ পৌঁছায় না।
নিচে থেকে উড়তে না পারা ছাগলটি মালিক আর তার সাথী উড়তে পারা ছাগলটাকে দেখছিলো। তার সুখ হচ্ছিলো যে মালিক বেঁচে যাবে হয়তো, আর দুঃখ হচ্ছিলো সে তার মালিককে নিয়ে উড়ে যেতে পারতো যদি তারও পাখা থাকতো। এমন ভাবতেভাবতেই ঝড়ের হঠাৎ দমক এসে মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা ছাগলটাকে এক ধাক্কায় শুনে তুলে ঘুরানো শুরু করলো, ঠিক তখনই উড়তে পারা ছাগল তার মালিককে সাথে নিয়ে আকাশ পারি দিয়েছে। এই ঝড় ছাগল টিকে ঘুরাতে ঘুরাতে টুপ্ করে নিয়ে এসে এক ফাঁকা দ্বীপে ফেলে দিলো। দ্বীপ সম্পূর্ণ ফাঁকা ছিলোনা, কিছু ক্ষুদার্থ মানুষ ছিল দ্বীপে।
ঝড়ের আগমনে যারা নিজেদের খাবারটাও সংগ্রহ করতে পারেনি ঘাস ফড়িঙের মতন অবস্থা তাদের। তখন সেই ক্ষুদার্থ লোকেদের মধ্যে থেকে একজন ধারালো কিছু একটা নিয়ে ছাগলটির দিকে এগিয়ে আসছিলো, ধারালো জিনিসটার দিকে চোখ পরে ছাগলটার মন উড়তে না পারা আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছিলো। সে উড়তে পারতোনা বলেই হয়তো এই লোকগুলো একবেলা খেয়ে বাঁচবে। ছাগলটি তখন চোখ বন্ধ করে নিজের ব্যাথা ভুলার চেষ্টা করে রবের শুকরিয়া আদায় করলো।