Posts

গল্প

বিচ্ছেদ পর্ব:৪

December 2, 2024

দেবশ্রী হালদার

Translated by দেবশ্রী

বিচ্ছেদ 

দু বছরের মাথায় ইয়াসিরের চাকরি হয়ে যায় এবং ফাইনালি দু পরিবারের সম্মতি তে আমাদের বিয়েটা হয়ে যায় । 
আমার জীবনে সবচাইতে খুশির দিন হয়ে যায় আমার বিয়ের দিন টা । 
আজকাল ভালোবাসে তো সবাই কিন্তু মানুষটা কে পায় কয়জন? 
আমি পেয়ে নিজেকে সর্বোচ্চ সুখী দাবী করতে থাকি । 
বাবা মা চাইছিলেন আমি অন্তত আমার পড়াশোনা টা বাসা থেকেই করি কিন্তু নাহ্ আমি বাসায় থাকলাম না শ্বশুরবাড়িতে গিয়েই উঠলাম । 
নতুন নতুন সংসার , নতুন সব খুব খুব ভালো লাগছিলো । 
শ্বশুরবাড়ির সবাই কি ভালোটাই বাসে! 
সংসারের তালে আমার আবার ওদিকে পড়াশোনা পিছিয়ে যেতে থাকলো , ওরও ছুটি শেষ হয়ে আসছিলো । 
ওর বাবা কে বলায় বাবা তো প্রায় সাথেসাথেই বললেন তোরা ঢাকায় যা , বন্ধ পেলে না'হয় আসবি । 
লেখাপড়ার ক্ষতি করার তো দরকার নেই । 
ওর বাবা এ কথা বললেও আমি একটা জিনিস লক্ষ করলাম মা ব্যাপারটা অতোটা পছন্দ করলেন না । 
যাক আমরা ঢাকায় চলে আসলাম । 
সব মোটামুটি ভালোই চলছিল , আমাদের দু'জনের ছোট্ট সংসার । 
আমার পড়াশোনা ওদিকে ওর অফিস , বন্ধ পেলেই হুট করে চলে যেতাম রংপুরে । 
সুখ স্বাচ্ছন্দ্যই কাটছিলো সময়৷  
দেখতে দেখতে দু'টো বছর কেটে যায় আমাদের সংসারের । 
একদিন সকালবেলা খবর আসে বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আমাদের যেতে হবে । 
আমরা তাড়াহুড়ো করে বেরুলাম , পথেই খবর এলো বাবা আর নেই ।
বাবা চলে যাওয়ার পর শোকের ছায়া নেমে এলো সংসারে । 
মা পাগলপ্রায় ।
তাকে সামলাতে আমরা কয়েক মাস থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম । 
আমার আব্বা-আম্মা এসে বোঝাতো ওনাকে , মাঝেমধ্যে ওনার পুরানো বান্ধবীদের সাথে দেখা করাতাম । 
ওনার বান্ধবীদের সাথে দেখা করতে গিয়ে হয়তোবা বাড়ির বউ দের নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল । 
উনি সেদিন বাসায় এসে আমাদের ডেকে বললেন_ 
" বিয়ে তো হয়েছে মেলাদিন হইলো , এটাই আসল সময় বাচ্চা কাচ্চা নেয়ার । পরে বয়স বেশি হয়ে গেলে তোর বউয়ের ই কষ্ট হবে।" 
আমি একদম ই প্রস্তুত ছিলাম না এটা শোনার জন্য । 
আমার ক্যারিয়ার গড়ার সময় এটা , আমি মোটেই বেবী চাইছিলাম না । 
এটাসেটা বুঝিয়ে সেদিনের মতো ব্যাপারটা সামাল দেয়া গেলো ।

কিন্তু ওর মাথায়ও ব্যাপারটা গেঁথে গেছিলো বুঝি! 
ও আমাকে প্রায়ই ভাবতে বলতো , কীভাবে পরিস্থিতি সামলানো যাবে তার প্ল্যান করতো । 
এর ওদিকে তো মা প্রতিদিনই বলতেই থাকলো । 
আমাদের সংসারে অশান্তি মূলত এই বাচ্চা ঘটিত তর্ক বিতর্ক নিয়েই শুরু হলো । 
একসময় আমিও ভাবলাম স্বামী, শ্বাশুড়িকে নারাজ করি কেনো? 
বাচ্চা তো দূর্বলতা না হয়ে শক্তি হতে পারে? 
আমি রাজি হয়ে গেলাম । 
আমার ক্লাস মিস যাচ্ছিলো বললাম ঢাকায় ফেরত যেতে । 
ও ওর মা, ভাই বোনকে একা ছাড়তে পারছিলো না আমি বললাম আমাদের সাথে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হোক? 
কিন্তু নাহ্ আমার শ্বাশুড়ি কিছুতেই যাবেন না ঢাকায় । 
ওনার সাজানো সংসার ছেড়ে নাকি ইট পাথরের শহরে এসে ওনার একদমই ভালো লাগবে না । 
অনেক বোঝালাম আমরা কিন্তু আম্মা রাজি না । 
শেষে চাচা শ্বশুর বললেন তারা দেখবেন কোনো সমস্যা নেই । 
প্রয়োজনে তাদের ছেলে আর ছেলের বউ এ বাড়িতে উঠবে । 
এখানে একটা কথা চাচা শ্বশুরের ছেলের সাথে আমার একদিনও দেখা হয়না এর মাঝে কারণ ছেলেটা ময়মনসিংহে জব করতো ও নাকি বদলি নিয়ে রংপুরে শিফট করতে চায় এখন । 
কথা ওটাই হলো ওরাই আমাদের বাড়িতে থেকে সার্বিক টা দেখাশোনা করবেন । 
আমরা খুশিই হলাম । 
আরো একটা বছর গেলো এভাবে ই । 
আমি বিসিএস এর প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম ওদিকে বেবী প্ল্যানও করছিলাম কিন্তু চেষ্টা করেও কনসিভ করতে পারছিলাম না । 
মায়ের প্রেশার বেড়ে গেলো কিন্তু ও আমার পাশে ছিলো । 
ডাক্তার দেখানো হলো , ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলো । 
নানারকম বাজে চিন্তা আসছিলো আমার মাথায় । 
একরকম উত্তেজনার বসে আমিই পরদিন হসপিটালে গিয়ে খবর নিলাম একা একা । 
ডাক্তার আমার হাতে রিপোর্ট দিয়ে বললো "ইউ আর আ্যাবসোলিউটলি ফাইন , ইউ ক্যান বি আর মাদার বাট মেইন প্রবলেম তোমার হাজবেন্ড এর মধ্যে । ও কখনো বাবা হতে পারবে না ।" 
আমি থমকে গেছিলাম এটা শুনে । 
কাতর হয়ে জানতে চাইলাম কোনো চিকিৎসা করানো পসিবল কি না? 
কিন্তু ডাক্তার বলে দিলো চিকিৎসা ফলপ্রসূ হবে না   ।
আমি সারা রাস্তা ভাবতে ভাবতে আসছিলাম কি করা যায়?
ব্যাপারটা জানলে ও খুব খুব কষ্ট পাবে । 
ঠিক করলাম এখন জানাবো না , কিন্তু ও তো রিপোর্ট চাইবে? 
কিছু তো দরকার , জানিনা কেনো আমি রিপোর্ট চেইঞ্জ করানোর সিদ্ধান্ত নিলাম । 
ভাবলাম ওকে বলবো চিকিৎসা করালেই আমি সুস্থ হয়ে যাবো আর আমার একটা কনফিডেন্স ছিলো আমি ও এই সংবাদ শুনলেও আমার হাত ছাড়বে না । 
আমি ওটাই করলাম । রিপোর্ট বদলে দিলাম । 
ও রিপোর্ট হাতে পেয়ে নির্বাক হয়ে বসে ছিলো কতক্ষণ । 
তারপর আমাকে বললো সমস্যা নেই আল্লাহ চাইলে হবে । 
মা ব্যাপারটা জানার পর খুব নারাজ হয়ে গেলেন । 
আমি আবার আমার পড়াশোনার দিকে নজর দিলাম । 
ও পূর্বের তুলনায় একটু চুপচাপ হয়ে গেছিলো , মা কল দিলে ওকে আলাদা হয়ে কথা বলতে বলতো । 
আমার খারাপ লাগতো কিন্তু প্রকাশ করতাম না কারণ আমার ওর ওপর আস্থা ছিলো । 
যেই পড়াশোনার পেছনে এত কষ্ট করছিলাম আমি সেটার ফল পেলাম ফাইনালি । 
বিসিএসএ আ্যাডমিন ক্যাডারে হয়ে গেলো । 
পোস্টিং হলো রংপুরে ই । 
দারুণ খুশি হয়েছিলাম যে যাক এখন শ্বশুরবাড়িতেই থাকতে পারবো কোনো সমস্যা হবে না । 
ওর জব ঢাকায় থাকার কারণে ও থেকে গেলো আমিই রংপুরে চলে গেলাম । 
আমার শ্বাশুড়ি আমাকে আগের মতো পছন্দ করতো না ঠিক । 
আমার সাথে তেমন কথাবার্তা বলতো না , আমি চেষ্টা করছিলাম সম্পর্ক সহজ করার কিন্তু ওদিক থেকে সাঁড়া নেই । 
একটা ইন্টারেস্টিং কথা শুনবেন? 
আমার চাচা শ্বশুরের ছেলে কে ছিলো জানেন? 
আমার সেই স্কুল জীবনের বেস্ট ফ্রেন্ডের বয়ফ্রেন্ড টা । 
এতবছর পর ওকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেছিলাম । 
ওর বউ আমার বান্ধবী নয় অন্য মেয়ে । 
আমাকে দেখে ছেলেটা বললো_ কি ভাবী চমকে গেলেন আমাকে দেখে? আগের কথা মনে রাখবেন না । বয়স কম ছিলো ভুল করে ফেলেছি কিন্তু এখন আমারও সংসার হয়েছে!
আমি পূর্বের কাজের জন্য অনুতপ্ত ।
ছেলেটা বললেও আমি কেনো যেন বিশ্বাস করতে পারলাম না , একদিকে ভাবছিলাম নাহ্ হয়তো আসলেই  ভালো হয়েছে  বউ-বাচ্চা আছে চরিত্র ভালোও হতে পারে । আমার সিক্সথ সেন্স বলছিল ও আমার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে । 
এর মাঝে আবার ইয়াসির অসুস্থ হয়ে গেলো । 
গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওকে হসপিটালে এডমিট করা হলো । 
জানা গেলো ওর কিডনিতে প্রবলেম , রিপ্লেস করতে হবে । 
আম্মা আমাকে দোষারোপ করলেন । 
কেঁদে কেঁদে বললেন এই অলক্ষীটা আমার সংসার খেতে ই এসেছে । 
না সন্তান দিতে পারে আর না সংসারী । 
আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম আম্মার কথা শুনে । 
ভালো খারাপ সময় সব সংসারে ই আসে তা'হলে এটা নিয়ে আম্মা আমাকে কীভাবে দোষারোপ করতে পারেন? 
সব ঝামেলা আমাকেই পোহাতে হচ্ছিলো ইয়াসিরের কিডনি রিপ্লেসের জন্য ডোনার খুঁজছিলাম অন্যদিকে মায়ের খারাপ কথা । 
সহ্য করার মতো না তবুও দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যাচ্ছিলাম । 
আল্লাহ্ কে ডাকছিলাম খুব করে । 
আল্লাহ্ সহায় হলেন এবং ডোনার পাওয়া গেলো । 
এ যাত্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসলো ইয়াসির । 
কিন্তু ওর ভেতর আমূল পরিবর্তন আসলো যেন! 
বাসায় সবসময় আম্মা আমাকে নিয়ে অভিযোগ করতে থাকলেন । 
ওর মন মস্তিষ্ক বিষিয়ে তোলার ছোট্ট প্রয়াস । 
বুঝতে পারছিলাম ওদের পরিকল্পনা ছেলেকে আরেকটা বিয়ে করানোর । 
আমি চুপচাপ ছিলাম । আমাদের ভালোবাসা পরীক্ষা করার সময় । 
__

চলবে

Comments

    Please login to post comment. Login