রাত গভীর। শহরজুড়ে তুমুল বৃষ্টি। ব্যস্ত রাস্তাগুলো মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে গেছে। ছোট্ট একটি চায়ের দোকানের টিনের চাল থেকে টুপটাপ পানি পড়ছে। দোকানের মালিক খোকন মিয়া এক মগ চা নিয়ে বসে আছেন। চোখে কেমন যেন অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা।
হঠাৎ ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টির কণাগুলো আরো জোরে আছড়ে পড়তে লাগলো। এমন সময় দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো একটি মেয়ে। ভেজা শাড়ি, কাঁধে ছোট্ট একটা ব্যাগ। তার চোখে ভয় আর ক্লান্তির মিশেল।
“এক কাপ চা দিবেন, কাকু?”
খোকন মিয়া মেয়েটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। মেয়েটি বলল, “আপনি শুনতে পাচ্ছেন?”
“হ্যাঁ মা, শুনছি। তুমি এমন রাতে একা এখানে কেন?”
মেয়েটি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। বৃষ্টির শব্দের মধ্যে শুধু তার ভারী শ্বাস শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল।
খোকন মিয়া চা বানিয়ে মেয়েটির হাতে দিলেন। সে এক চুমুকে গরম চায়ের অর্ধেকটা শেষ করে বললো, “আমি পালিয়ে এসেছি। এই শহর থেকে অনেক দূরে যাব। কোনো এক জায়গায় যেখানে আমাকে কেউ চিনবে না।”
খোকন মিয়ার কপালে ভাঁজ পড়লো। “এত বড় সাহস করলি! তোর বয়স কত?”
মেয়েটি হেসে বলল, “১৮ হবে। সাহস তো করতেই হতো। জীবনটা আর কাটাতে পারছিলাম না ওখানে।”
খোকন মিয়া চুপ করে রইলেন। এমন কত মানুষ তিনি দেখেছেন যারা এক জীবনে হাজারটা যুদ্ধ লড়ে। তবে এই মেয়েটির চোখে তিনি দেখলেন অন্যরকম এক শক্তি।
“কোথায় যাবি, ঠিক আছে?”
“না, কিন্তু অনেক দূরে। যেখানে নতুন করে শুরু করা যায়।”
খোকন মিয়া মেয়েটির হাতে কিছু টাকা দিয়ে বললেন, “এত রাতে নিরাপদ জায়গায় থাক। সকালে তোর মতো সাহসী মেয়ে ঠিক পথ খুঁজে নেবে।”
মেয়েটি থমকে গেল। বলল, “আপনার এভাবে সাহায্য করার দরকার ছিল না।”
“জীবনে যে নিজেকে বাঁচাতে পারে, সে অন্যদের জীবনও বদলে দিতে পারে। তুই পারবি, মা। নিজের বিশ্বাসটুকু ধরে রাখিস।”
মেয়েটি চায়ের মগ রেখে বেরিয়ে গেল বৃষ্টির ভেতর। খোকন মিয়া দেখলেন, দূরে ঝলসে উঠছে বিদ্যুতের আলো। তার মনে হলো, মেয়েটির পথচলাও তেমনই আলোকিত হবে।
এই গল্পটি সাহস আর নতুন শুরু করার ইচ্ছার প্রতীক হয়ে রইল।