Posts

গল্প

পুনর্জন্ম

December 3, 2024

Muzahid Shihab

বিজয় একজন সাধারণ ছেলে। দিন কাটে ক্লাস, বন্ধুদের সাথে আড্ডা,আর ফেসবুকে হাসি-ঠাট্টা করে। তার বন্ধুদের মাঝে সে পরিচিত ছিল "এলোমেলো" নামে। কারণ সে কখনোই কোনো কিছুতে ধারাবাহিক ছিল না।সারাদিন মেয়েদের পোস্টে "কেয়ার রিঅ্যাক্ট" দেওয়া, মজা করে প্লাটিং করা, আর জীবনের প্রতি উদাসীন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলাই তার জীবনের নিয়ম।

তার বন্ধুদের কাছে মজার ছেলেটা হিসেবে পরিচিত হলেও, নিজের মনে একধরনের শূন্যতা কাজ করত। কিন্তু সে কখনো তা স্বীকার করত না।এমনকি কেউ তাকে কিছু করতে বললে সে ইচ্ছে করেই তার উল্টোটা করত। সারাজীবন নিজের মতো থাকার এই অহংকার তার মনের গভীরে লুকিয়ে ছিল।

হঠাৎ করেই তার জীবনে এল একজন মেয়ে। নাম মুনা। সে ছিল একদম আলাদা—সাজানো-গোছানো, দারুণ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী, আর জীবনের প্রতি গভীরভাবে আবেগী।তাদের পরিচয়টা হয়েছিল খুব সাধারণভাবে, তবে ধীরে ধীরে মুনা বিজয়ের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে শুরু করে।

মুনা শুধু একটি সম্পর্কের নাম নয়, বরং একটি পরিবর্তনের প্রতীক। তার সহজ-সরল কথা, তার চিন্তাধারা, আর তার প্রতি বিজয়ের ভালোবাসা এক এলোমেলো ছেলেকে এমনভাবে পাল্টে দিল, যা সে নিজেও কখনো কল্পনা করেনি।

বিজয় তার নিজের গল্প লিখতে গিয়ে বলল, “আমি যেমন তোমার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করি, একসময় আমি এমন ছিলাম না। সারাদিন শুধু হাসি-ঠাট্টায় মেতে থাকা ছেলেটি যখন তোমার মতো একটি মেয়ের জীবনে প্রবেশ করে, তখন সবকিছু বদলে যেতে শুরু করে।”

তাদের সম্পর্ক তখন ৬৮ দিনের। এ সময়টুকুর মধ্যে বিজয় নিজের ভেতরের অনেক পরিবর্তন অনুভব করে। আগে যেখানে সে মেয়েদের ফেসবুক পোস্টে গিয়ে রিঅ্যাক্ট দিত, সেখানে এখন তার মনে পড়ে, "আমার একজন ব্যক্তিগত মানুষ আছে।" যখন বন্ধুরা তাকে বলে, "কোনো মেয়ে তোকে পছন্দ করে, কথা বলবি?" তখন তার মুখ থেকে বের হয়, “মামা, আমার বউ আছে। আমি তাকে কখনো ঠকাতে পারব না।”

বিজয়ের জীবনে এ পরিবর্তন শুধু কথায় নয়, কাজেও স্পষ্ট। যে ছেলে কারো কথা শুনত না, সে এখন মুনার প্রতিটি কথা মেনে চলার চেষ্টা করে। সে জানে, তার মেজাজ মাঝেমধ্যে খুব খারাপ হয়ে যায়, রাগে এমন কথা বলে ফেলে যা সে নিজেও বিশ্বাস করে না। কিন্তু এই মুহূর্তগুলোতে সে একটাই আশা করে—"তুমি আমাকে আগলে রাখো, আমার পাগলামিকে মেনে নাও। কারণ আমি তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারি না, আর সারাজীবন তো দূরের কথা।"

একদিন বিজয় গভীরভাবে চিন্তা করতে বসল। তার মনে হতে লাগল, সে কি সত্যিই বদলে গেছে? আগে যেখানে সে নিজেকে "লস্ট প্রজেক্ট" ভাবত, সেখানে এখন সে নিজেকে নিয়ে আশাবাদী। কারণ সে জানে, তার জীবনে মুনার মতো একজন মানুষ আছে। যে জীবনে এমন একজন ভালোবাসার মানুষ থাকে, সেই জীবন কখনো বৃথা হতে পারে না।

সে নিজের ভেতরের দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলল, “আমি জানি, আমি এখনো পুরোপুরি তোমার চিন্তাধারার মতো হতে পারিনি। আমি রাগ করি, খারাপ ব্যবহার করি, এমনকি তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলি। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি এসব তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য করি না। আমি নিজে বুঝি না কেন এমন বলি। হয়তো আমার ভেতরের অস্থিরতাই আমাকে এমন পাগলামির দিকে ঠেলে দেয়।”

তার মনে হয়, কোথাও হারিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার চিন্তাতেও সে মুনার কথা ভাবে। তার এই ভালোবাসা যেন সবকিছু ছাপিয়ে যায়।

শেষে বিজয় তার মনের সব কথাকে একটি বাক্যে আবদ্ধ করে বলে, “আমি জানি না, আমার ভবিষ্যৎ কেমন। কিন্তু এটুকু জানি, আমি তোমাকে ভালোবেসেছি, ভালোবাসি, আর আমৃত্যু ভালোবেসে যাব। আমার একটাই অনুরোধ, আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না। কারণ তুমি ছাড়া আমি কিছুই না।”

মুনার মতো একজন মানুষের ভালোবাসা কেবল একটি সম্পর্ক নয়, এটি ছিল বিজয়ের পুনর্জন্ম। যে "লস্ট প্রজেক্ট" একসময় জীবনের কোনো অর্থ খুঁজে পেত না, সে আজ নতুন আশা নিয়ে বেঁচে আছে। কারণ তার জীবনে এমন একজন মানুষ এসেছে, যার ভালোবাসা তার অস্তিত্বকে নতুন রূপ দিয়েছে।

~~মুজাহিদ শিহাব 

Comments

    Please login to post comment. Login