Posts

গল্প

অন্ধকার থেকে আলো

December 3, 2024

Mohona


জয়নব, এক সাধারণ গ্রামীণ মেয়ে, যে পরিস্থিতির শিকার হয়ে পড়ে এমন এক জগতে, যেখানে নারীদের শুধু পণ্য হিসেবে দেখা হয়। তার গল্প একজন নিরপরাধ মেয়ের অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রার।


---


পশ্চিম বাংলার সীমান্তবর্তী ছোট্ট একটি গ্রামে জয়নবের জন্ম। মেধাবী ও স্বপ্নবিলাসী জয়নবের জীবন পাল্টে যায়, যখন ১৫ বছর বয়সে বাবার ঋণের কারণে তাকে এক স্থানীয় দালালের হাতে বিক্রি করা হয়। দালাল তাকে নিয়ে যায় একটি অজানা শহরে, যেখানে মেয়েদের জীবনের দাম কেবল তাদের সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে।

জয়নবকে বিক্রি করে দেওয়া হয় একটি পতিতালয়ে। প্রথমে প্রতিটি মুহূর্ত ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। সে পালানোর চেষ্টা করে, কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়।


---

পতিতালয়ের মালিক রুবি ম্যাডাম ছিল কঠোর, কিন্তু জয়নবের বুদ্ধিমত্তা ও সাহস তাকে মুগ্ধ করে। ধীরে ধীরে জয়নব সেখানে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করে। অন্য মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখায়, এবং পতিতালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হয়ে ওঠে।

একদিন জয়নব জানতে পারে, তার গ্রামের আরও কয়েকজন মেয়েকেও এখানে এনে বিক্রি করা হয়েছে। এই ঘটনায় তার হৃদয়ে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। সে প্রতিজ্ঞা করে, শুধু নিজের মুক্তি নয়, বরং এই নরক থেকে বাকি মেয়েদের মুক্ত করবেই।


---

জয়নব কৌশলে স্থানীয় অপরাধচক্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই চক্রের মধ্যমণি হয়ে ওঠার জন্য তার বুদ্ধি ও সাহস ব্যবহার করে। সে বুঝতে পারে, ক্ষমতা পেতে হলে শত্রুদের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।

রুবি ম্যাডামের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে, জয়নব পুরো পতিতালয় এবং তার নিয়ন্ত্রণাধীন অপরাধচক্র নিজের হাতে নেয়। কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল অন্যরকম—মেয়েদের আর বিক্রির শিকার হতে দেওয়া নয়।


---


জয়নব নিজের সংগঠনকে এমনভাবে গড়ে তোলে, যা বাইরে থেকে অপরাধচক্র মনে হলেও ভিতরে এটি নির্যাতিত মেয়েদের রক্ষাকবচ। যারা মেয়েদের বিক্রির সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তি দিতে শুরু করে জয়নবের দল।

তিনি পতিতালয়ের মেয়েদের পড়াশোনা ও বিকল্প কাজের সুযোগ করে দেন। নিজের জীবন দিয়ে শিখেছেন, সমাজে টিকে থাকতে হলে কেবল দয়া নয়, নিজের অবস্থান শক্ত করাও জরুরি।


---


জয়নবের এই পরিবর্তনের যাত্রা সহজ ছিল না। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা তার ওপর হামলা চালায়, কারণ তার কাজ তাদের অপরাধমূলক আয়ের পথ বন্ধ করে দিচ্ছিল।

একদিন এক প্রভাবশালী নেতার মেয়েকে তার দলের কেউ ভুল করে অপহরণ করে ফেলে। এই ঘটনায় জয়নবের বিরুদ্ধে পুরো প্রশাসন ঝাঁপিয়ে পড়ে। জয়নব বুঝতে পারে, তাকে এখন নিজের জীবন দিয়ে হলেও এই অন্যায় ব্যবস্থা ভাঙতে হবে।


---

জয়নব নিজেকে আইনের হাতে তুলে দেয়, কিন্তু তার গ্রেপ্তারের আগেই পতিতালয়ের সব মেয়েকে মুক্ত করে দিয়ে যায়। তার এই সাহসিকতা ও ত্যাগ তাকে সাধারণ মানুষের কাছে একজন কিংবদন্তিতে পরিণত করে।

কারাগারে থেকেও সে তার লক্ষ্য পূরণ করে—তার কর্মকাণ্ডের কারণে প্রশাসনকে নারীদের পাচার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করা হয়।

জয়নবের মৃত্যুর পর, তার নামে একটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে নির্যাতিত নারীরা নতুন জীবনের সুযোগ পায়।


---

Comments

    Please login to post comment. Login