Posts

প্রবন্ধ

শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতা:

December 4, 2024

ইয়াছিন মনজু

222
View

শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতা: মানব সমাজের উন্নতির মূল চাবিকাঠি

শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতা—এই তিনটি শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে মানবজাতির সার্থকতার মূল দর্শন। আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, এবং বৈশ্বিক জীবনে এ তিনটি গুণ এমন এক ভিত্তি, যা মানুষকে সংঘাত থেকে রক্ষা করে এবং সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

শান্তি: হৃদয়ের গভীর প্রশান্তি

শান্তি মানে শুধু যুদ্ধ বা সংঘর্ষের অনুপস্থিতি নয়; এটি এমন এক মানসিক অবস্থা, যেখানে মানুষ নিজেকে ও অন্যকে নিয়ে তৃপ্ত থাকে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে শান্তি মানে নিজস্ব অন্তরের শান্তি। পরিবারে শান্তি মানে একে অপরের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসার চর্চা। আর সামাজিক বা বৈশ্বিক শান্তি অর্জন হয় যখন প্রতিটি ব্যক্তি ও রাষ্ট্র নিজেদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে পরস্পরের অধিকার ও মতামতকে সম্মান করে।

সম্প্রীতি: ঐক্যের শক্তি

সম্প্রীতি হলো ভিন্নমতের মাঝেও একতার শক্তি খুঁজে পাওয়া। আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা ও মতাদর্শের মানুষ বাস করে। এসব ভিন্নতা যেন বিভাজন সৃষ্টি না করে, বরং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মাধ্যমে সমাজে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা যায়।

বিশ্বের বড় বড় উন্নত দেশগুলোতে সম্প্রীতি তাদের অগ্রগতির মূল কারণ। তারা বুঝেছে, বিভেদের রাজনীতি মানুষকে পিছিয়ে দেয়, আর ঐক্যের নীতি মানুষকে এগিয়ে নেয়।

সহনশীলতা: মানবিকতার সেরা গুণ

সহনশীলতা একটি মহান গুণ, যা মানুষকে অন্যের ভিন্নতা মেনে নিতে শেখায়। এটি কেবল ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য নয়, বরং নিজেকে আরও পরিণত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার একটি মাধ্যম।

বর্তমান সমাজে আমরা অনেক সময় নিজেকে বড় করতে অন্যকে ছোট করার চেষ্টা করি। কিন্তু প্রকৃত সহনশীলতা শেখায়, শক্তি মানে অন্যের দোষ খুঁজে বের করা নয়, বরং অন্যের ভিন্নতাকে উপলব্ধি করে মিলনের পথ তৈরি করা।

শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতার গুরুত্ব:

১. দ্বন্দ্ব হ্রাস করে: যখন শান্তি ও সহনশীলতার চর্চা করা হয়, তখন পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে দ্বন্দ্ব কমে আসে।

২. সম্পর্ক দৃঢ় করে: সম্প্রীতি একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং ভালোবাসা তৈরি করে।

৩. উন্নয়নের পথ খুলে দেয়: শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষা, শিল্প এবং অর্থনীতি সবক্ষেত্রে উন্নতি হয়।

৪. মানবিক মূল্যবোধের চর্চা বাড়ায়: সহনশীলতা আমাদের ভেতরের মানবিকতাকে জাগ্রত করে এবং আমাদের আরও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।

আমাদের করণীয়:

আত্ম-শিক্ষা: নিজেকে শান্তিপূর্ণ এবং সহনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

পরিবারে শান্তি প্রতিষ্ঠা: পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একে অপরের মতামতকে সম্মান করে ভালোবাসার চর্চা করা।

অবহেলিতদের পাশে দাঁড়ানো: সমাজের দুর্বল এবং অবহেলিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের অধিকার নিশ্চিত করা।

সচেতনতা বৃদ্ধি: শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি এবং সহনশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরা।

শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতা কোনো ব্যক্তিগত গুণ নয়, এটি পুরো মানবজাতির জন্য অপরিহার্য। বর্তমান বিশ্বে এই গুণগুলোর অভাবে মানুষ ক্রমাগত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। তাই আসুন, আমরা একে অপরের প্রতি সহমর্মী হয়ে, ভিন্নতাকে সম্মান জানিয়ে এবং ভালোবাসার শক্তি দিয়ে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করি।

“একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে হলে আমাদের প্রত্যেককেই শান্তির দূত হতে হবে। একে অপরকে ভালোবাসার মাধ্যমে পৃথিবীকে বদলে দেওয়া সম্ভব।”

Comments

    Please login to post comment. Login