ফজরের আযানের সুমধুর ধ্বনি শুনেই ঘুম ভাঙে ইমরান সাহেবের। স্নিগ্ধ ভোরে তিনি উঠে অজু সেরে মসজিদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। যাওয়ার আগে তার স্ত্রী তাকে প্রয়োজনীয় কাজে সহায়তা করেন এবং নিজেও সালাত আদায়ের জন্য প্রস্তুতি নেন।
মসজিদে পৌঁছে ইমরান সাহেব দেখতে পান তাবলীগ জামাতের একটি দল এসেছে। অনেক নতুন মুখের দেখা মেলে। ফজরের সুন্নত নামাজ আদায় করে তিনি ফরজ নামাজের জন্য বসে যান। নামাজের আগে দোয়া করতে করতে তার মন অনেক প্রশান্তিতে ভরে ওঠে।
নামাজ শেষে তিনি বেরিয়ে যান পেয়ার আহমেদ সওদাগরের বিখ্যাত চায়ের দোকানে। যদিও পেয়ার আহমেদ এখন দুনিয়াতে নেই, তার ছেলেরা সেই দোকানটি চালিয়ে যাচ্ছেন। ইমরান সাহেব একটি চা আর দুটি পরোটা খেয়ে হাঁটার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
সকালবেলা হাঁটার জন্য টিএসপি ও ড্রাইডক কলোনী রোড বেশ পরিচিত। সেখানে হাঁটতে হাঁটতে তার মনে নানা চিন্তার ঢেউ খেলে যায়। জীবনের কঠিন সময়গুলো তাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। বিশেষ করে তিনি উপলব্ধি করেছেন, কাছের মানুষই অনেক সময় সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়।
তবু তিনি সবকিছু বুঝেও চুপ থাকেন। এই দেশে হালাল উপায়ে বড়লোক হওয়া খুব কঠিন। নিজের এলাকায় অনেকেই বাড়ি-গাড়ি করে ফেলেছে, কিন্তু তিনি পারেননি। আত্মীয়স্বজন প্রায়ই তাকে খোঁচা মেরে বলে, “এত পড়াশোনা করে কী লাভ হলো যদি পকেটে টাকা না থাকে?” এসব কথায় তিনি মুচকি হেসে বিষয়গুলো এড়িয়ে যান।
ইমরান সাহেব বিশ্বাস করেন, অল্প আয় হলেও সততার সঙ্গে চলা এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই জীবনের সার্থকতা। জীবনে উমরাহ কিংবা হজ্জ করতে না পারলেও তার মনে কোনো দুঃখ নেই। তার সন্তুষ্টি রয়েছে আল্লাহর দেওয়া ভাগ্যে।
হাঁটার সময় এলাকার অনেক মানুষের সাথে তার দেখা হয়। সবাই তাকে সালাম দিয়ে সম্মান জানায়। তিনি মনে করেন, যদি দেশের দূর্নীতি বন্ধ করা যেত, তাহলে মানুষের জীবন অনেক সহজ হতো। উচ্চ বিলাসিতা কমে গেলে সমাজের চেহারা পাল্টে যেত।
সব চিন্তা মাথায় নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তিনি বাড়ি ফিরে যান। আরেকটি দিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন।
এই সাদামাটা জীবনই ইমরান সাহেবের শান্তির ঠিকানা।
ইয়াছিন মনজু।