Posts

গল্প

বুলেট কিংবা কবিতা

May 15, 2024

ওমর ফারুক সাজ্জাদ

Original Author ওমর ফারুক সাজ্জাদ


মাঝরাতে শহরের নিঃশব্দতায় টের পাওয়া যায় নিজের নিঃশ্বাসের আওয়াজ।। কুকুর ঘুমিয়ে থাকে, কিছু গাড়ি পাশ কেটে যায়।। খোলা রাস্তায় এ সময় রিকশা পাওয়াটাই কঠিন ব্যাপার। আমি দাঁড়িয়ে আছি সিটি স্কোয়ারের সামনে, গন্তব্য গালিবের বাসা।।আধাঘন্টা হাঁটা পথ, হাঁটতে এসময় ভালো লাগবেনা।। রাতের রাস্তা একা হাঁটার জন্যও না।। জীবনের কোনো পর্যায়ে হিমু হওয়ার শখ থাকলেও এখন সেদিন নাই।। জীবন এখন প্র্যাক্টিকেল।। তারপরও ভাড়াটা বাঁচানো দরকার আপাতত, এটাই প্র্যাক্টিকেল কাজ এখন।। না চাইতেও এই জোছনা রাতে নিয়ন বাতির নিচে হেঁটে যেতে হবে।। যখন কিছু করতেই হবে, সেটা ভালোভাবে করাটাই ভালো।। টং থেকে সিগারেট ধরিয়ে শুরু করলাম নাইট ওয়াক।। রিচির হ্যালো গানটা এ মূহুর্তের সাথে যায় ভালো, চালাবো? নাকি এ মূহুর্তটা মাথার ভেতরের আওয়াজের সাথেই কাটাবো? নীৎশে বলেছিলো শান্তির সময়ে ক্যাওটিক মানুষ তার নিজেকেই মোকাবিলা করে।। আন্ডার পিসফুল কন্ডিশন দ্য মিলিট্যান্ট ম্যান অ্যাটাকস হিমসেল্ফ।। কিন্তু আমি নিজেকেই এড়িয়ে চলতে চাই।। জীবনের সাথে বেশকিছু বোঝাপড়া বাকি।। ফেলে রাখলে সেটা কি দ্বিগুণ হয়ে পরবর্তীতে আমাকে আবার গ্রাস করবেনা? করার কথা।। করুক, কি যায় আসে।। ধোঁয়া ছেড়ে তা বাতাসে মিলিয়ে যেতে দেখলাম।। বাষ্প থেকে বাষ্পতে।।
পুলিশের গাড়ি টহল দিচ্ছে, রাজার সম্রাজ্য রাতেও সামলে রাখতে হয়।। গালিবের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো আজ রাতটা সেখানেই থাকা, আর গালিব থেকে নাইন মিলিমিটারটা নিয়ে আসা।। শালাকে বলেছিলাম থাকুক আমার কাছে পিস্তলটা।।নাহ, তার বন্ধুদের দেখাবে সে, দেখাবে সে কতো বড় হারামজাদা হয়ে উঠছে দিনদিন।। আরে গাধা এগুলো পাগলামি।। প্রয়োজন ছাড়া গান ধরারই দরকার নেই।।এটা আর্ট না।। পিকাসোর আর্ট যেমন প্রয়োজন হলে দেখার দরকার নেই।। সকল সৌন্দর্যই প্রয়োজনের বাইরে।।কদর্যতা প্রয়োজনের ভিতরে।। যেমন- কাম।। দুজন মানুষ একে অপরকে কোনো প্রকার বাঁধা ছাড়াই গ্রহণ করছে এটা একটু কদর্য বিষয়, তবে চাইলেই ইহা আবার সৌন্দর্যের প্রতিক হয়ে উঠে।। যেমন গতকাল রাতেই বিছানায় আনিকাকে বলেছিলাম- দেখেছো আনিকা, আমি যৌনতাকে কত শৈল্পিক করে তুলতে পারি।। সে তখনো হাঁপাচ্ছে।। কথা তার কাছে অর্থহীন, কারণ সে কামনায় বন্দী।। কামনায় বন্দী মানুষ আমার পছন্দ না।। আই নিড সামওয়ান হু ক্যান লুক বিওন্ড দিজ।। মাঝরাতে আমরা কবিতা নিয়ে বসবো, গ্লাসে হুইস্কি আর হাল্কা চুমু।। মন্দ না।। আমি ক্লান্ত, সেও ক্লান্ত।।
ভালোকথা, গালিব থেকে গান নিয়ে যেতে হবে মফস্বলে, বিপ্লব ছড়িয়ে দিতে হবে গ্রাম থেকে।। একেবারে শিকড় থেকে সমাধান না করলে বেগার খাটুনি।। বাকিরা এসব বোঝেনা।। নীলা, কমলদা কেউ না, শহর তাদের কমফোর্ট জোন।।কিন্তু আমি জানি এ দেশে মতাদর্শ টিকে না কেনো।। মতাদর্শের মানুষেরা অনেক জানে, কিন্তু তাদের মধ্যে প্রজ্ঞা নেই।। তারা এখনো বুর্জোয়ার অংশ, বুর্জোয়াদের গালি দিয়েও।। নিতে পারবে তারা আসলে সিস্টেম বদলানোর ওজন? নাকি এটাও শুধু একধরনের মাস্টারবেশন! কিছু করছি অনুভব করা আর বাস্তবে কিছু করার পার্থক্য ধরতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ।। এসব ভাবছি কেনো? এসব সেকেন্ডারি থট।। এখনই প্রয়োজন নেই।। মায়ের অসুখ বাড়ছে, এটা ঠিক করে যেতে হবে যেখানেই যাও।। পিছুটান নেই কিছুর প্রতি, আদর্শের প্রতিও।। দস্তয়েভস্কি যা বলেছিলো, আমাকে একটা উত্তম আদর্শ দেখাও আমি সেটাই অনুসরণ করবো।। আসলে আর কোনো সম্মিলিত রাস্তা নেই এখন।। সবকিছু ভেঙে পড়ছে রাষ্ট্রের।। এগুলো নিয়ে না ভাবলেও সুখে থাকা যায়, রাতে ভালো ঘুম হয়, প্রেমে মনোযোগ আসে।। কিন্তু নাহ, এই যে রাস্তার পাশে কম্বলমুড়ি দেওয়া মানুষটার এই অবস্থায় আসার দায় কি শুধুই তার? একটা মানবজীবনকে এভাবে ধ্বংস করার ক্ষমতা আরেকটা মানুষকে কে দিলো! আহা, বনি ঈসরায়েল!
একটু দাঁড়াই আমি, দূরে দেখি রাষ্ট্রের হত্যা করা সকল মৃত মানুষেরা মার্চ করে আসছে।। বাম-ডান-বাম।। রাজনীতির দড়ি মানুষকে ফাঁস পড়িয়ে দিয়েছে, একটা জাতি আত্মহত্যা করছে।। সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সামনে এগুই।। কবিতায় কাজ হয় না, বুলেটে হবে? হয়তো না।।
অবশ্য তখন আমার অজান্তেই গালিবের গান থেকে গুলি বের হয়।। কাউকে রাষ্ট্র হত্যা করে, আবার কেউ নিজেকেই।। সবই অজানা উড়ন্ত বস্তু।।

Comments

    Please login to post comment. Login