একদিনের কথা একটি ছোট্ট গ্রামের প্রান্তে বটগাছের নিচে বসে ছিল ছোট্ট ছেলে রাহুল। প্রতিদিনের মতো আজও সে গ্রামের মাঠে খেলতে যাচ্ছিল, কিন্তু আজ যেন মনের মধ্যে একটা ভারী ভাবনা জেগে উঠেছিল। গ্রামে এখন আর আগের মতো মানুষদের হাসিমুখ দেখা যায় না। সবাই ব্যস্ত, সবাই নিজের স্বার্থে মগ্ন।
একদিন রাহুল তার দাদু জামিল চাচার কাছে গিয়ে জানতে চাইল, “দাদু, আগে তো সবাই মিলে হাসি-আনন্দ করত, এখন কেন কেউ হাসে না? সবাই কেন শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবছে?”
জামিল চাচা একটু হাসলেন, তারপর গভীর দৃষ্টিতে রাহুলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “বাবা, মানুষের মনের গভীরে যে ভালোবাসা ও আন্তরিকতা থাকে, সেটা হারিয়ে গেছে। মানুষ এখন বাহির থেকে ভালো থাকার অভিনয় করে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা সব সময় ব্যস্ত। তারা ভুলে গেছে কীভাবে মন খুলে হাসতে হয়।”
রাহুল একটু ভেবে বলল, “কিন্তু দাদু, সবাই যদি নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তবে কীভাবে আমরা ভালো থাকব?”
জামিল চাচা তখন বললেন, “বাবা, মানুষ এখন অতিরিক্ত চাহিদার পেছনে দৌড়াচ্ছে। জীবনে যা সত্যিকারের মূল্যবান, যেমন ভালো মন, আন্তরিকতা, সেই জিনিসগুলো তারা আর খুঁজে পায় না। মানুষের জীবন হয়ে গেছে একটা প্রতিযোগিতার মতো, যেখানে সবাই শুধু জিততে চায়, কিন্তু সেই পথে হাঁটতে গিয়ে নিজেদের মনের শান্তি হারিয়ে ফেলছে।”
রাহুল চুপচাপ দাদুর কথা শুনছিল। তার মনে হলো, সে যেন সত্যিই এই কথাগুলোর অর্থ বুঝতে পারছে। সে ভাবল, “আমাদের চারপাশে সবাই যদি একে অন্যকে ভালোবেসে ও আন্তরিকভাবে সাহায্য করে, তাহলে নিশ্চয়ই জীবনটা সহজ হয়ে যাবে। তখন কেউ আর নিজেদেরকে প্রতিদিন এতটা ক্লান্ত মনে করবে না।”
এরপর রাহুল প্রতিজ্ঞা করল, সে নিজে ভালো থাকার ভান করবে না। সে মন খুলে হাসবে, অন্যদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলবে, এবং মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করবে যে জীবনে সবার আগে ভালো মন থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রামের বটগাছের নিচে বসে রাহুল সেই দিন নিজেকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পেল। হয়তো একদিন তার মতো আরো অনেকে বুঝবে যে জীবন শুধু নিজের জন্য নয়, বরং একে অন্যের জন্য ভালোবাসা ও আন্তরিকতা বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই প্রকৃত সুখ লুকিয়ে আছে।
ইয়াছিন মনজু।