বাবার ভালোবাসা ও মাহিনের মনঃকষ্ট:
মাহিন ৮ বছরের ছোট্ট একটি ছেলে। সে যেমন পড়াশোনায় মেধাবী, তেমনি খেলাধুলায়ও পারদর্শী। কিন্তু তার মনের মধ্যে একটি বড় শূন্যতা আছে। এই শূন্যতা কোনো শখের জিনিসের জন্য নয়, বরং তার বাবার স্নেহময় সঙ্গের জন্য।
মাহিনের বাবা একজন চাকরি জীবি। যিনি চাকরির জন্য পরিবারের থেকে অনেক দূরে থাকতে বাধ্য হন। চাকরি তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য এটি অপরিহার্য। তবুও মাহিনের বাবা জানেন যে, তার অনুপস্থিতি মাহিনের জীবনে একটি বিশাল প্রভাব ফেলে।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় যখন মাহিন তার পড়াশোনা শেষ করে, সে খুব আকুলভাবে তার বাবার মুখোমুখি হওয়ার আশা করে। সে তার বাবার সঙ্গে গল্প করতে চায়, তাদের প্রিয় খেলা খেলতে চায়, আর বাবার কাছ থেকে স্নেহের স্পর্শ পেতে চায়। কিন্তু মাহিনের প্রতীক্ষা সব সময় পূরণ হয় না। সে জানে যে তার বাবা তাকে খুব ভালোবাসেন, কিন্তু কাজের ব্যস্ততার কারণে বাবাকে তার কাছে পাওয়া সম্ভব হয় না।
এমন একটি পরিস্থিতিতে মাহিনের মন ভারাক্রান্ত হয়। সে মাঝে মাঝে দুঃখী হয়ে পড়ে, কারণ সে বুঝতে পারে না কেন তার বাবা তার পাশে থাকতে পারেন না। তার ছোট্ট মন খুব বেশি অনুভব করতে পারে না যে, তার বাবার চাকরিই তাদের জীবনকে সুরক্ষিত রাখছে। তবুও, মাহিন তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া স্নেহের প্রতিটি মুহূর্তকে মনে রাখে এবং সেই মুহূর্তগুলোই তাকে সামনের দিনগুলোতে সুখী করে রাখে।
মাহিনের বাবা, যিনি দূরে থেকেও সন্তানের প্রতি ভালোবাসা অক্ষুণ্ণ রাখেন, চেষ্টা করেন তাকে বুঝতে এবং সান্ত্বনা দিতে। প্রযুক্তির উন্নতির কারণে এখন ফোনে কথা বলা বা ভিডিও কলে দেখা করা সহজ হয়েছে। যদিও তা মুখোমুখি সঙ্গের মতো নয়, তবুও মাহিন তার বাবার কণ্ঠ শুনে এবং তাকে দেখে কিছুটা শান্তি পায়।
এই দূরত্ব সত্ত্বেও, মাহিনের বাবা তার ছেলের প্রতিটি প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেন। তিনি ছুটির দিনে যখনই পারেন, তার ছেলের সঙ্গে সময় কাটান, তাকে উপহার দেন এবং সব সময় তার পাশে থাকার আশ্বাস দেন। মাহিনও জানে, বাবার কাছে না থাকলেও তার ভালবাসা তার সাথে আছে।
মাহিনের জন্য তার বাবার অনুপস্থিতি একটি শিক্ষা হিসেবে দাঁড়ায়। সে ধীরে ধীরে শিখছে কিভাবে ভালোবাসা শুধু উপস্থিতিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মন থেকে অনুভব করা যায়। মাহিন জানে, তার বাবা সবসময় তার পাশে আছেন আর তাদের মধ্যে যে দূরত্ব, তা কখনও ভালোবাসার বাঁধনকে দুর্বল করতে পারবে না।
দূরত্বের কারণে মাহিনের মন কষ্ট পেলে ও সে তার বাবার প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসে অটল থাকে। এই ভালোবাসাই মাহিনকে জীবনে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে এবং বাবার প্রতি তার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আরও গভীর করে।