একটি ছেলে তার মাকে বলছে মা আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।
ছেলেটির মা বলছে বলো বাবা। ছেলেটি বলল না মুখে না আমি লিখে বলতে চাই কারণ ছেলেরা মনের কথা ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না। এতে ছেলেটির মা খুশি হয়ে গেল বলল তুমি লিখে দাও আমি পড়ছি। ছেলেটি লিখলো আমার কিছু বলার আছে মা এরপর বলা শুরু করল।
বাড়ি থেকে এখন বিয়ে দিবে না, আমি বেকার বলে। অনেক কষ্টে ফ্যামিলি কে রাজি করালাম। ভালোবেসে বিয়ে করলাম আমার প্রিয়তম স্ত্রীকে।পরিবার দরিদ্র।দুজনই নির-উপায়। আমি কটা টিউশনি করাই আর জব প্রিপারেশন নিচ্ছি। এরপর ম্যাছ থেকে ১ রুমের একটি বাড়ি ভাড়া নিই ।
তার ওপর ইচ্ছে করে ওকে আমার কাছে রেখেছি। আমার মা বাবা ওকে পছন্দ করে না ওর বাবা গরীব বলে।
যদি ওকে আমার বাড়িতে রাখতাম তাহলে আমি ঠিক মত পড়াশোনায় মন দিতে পারতাম না। আর আমার এখন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ সময়।
কিন্তু আমার মা বাবা কে কিছূতে বুজাতে পড়ি না। তাদের শুধু এক কথা এত পড়াশোনায় করে কোনো চাকরি পাচ্ছে না ? জব তো এমনি এমনি হবেনা।অ্যাপ্লিকেশন করতেও টাকা লাগে।খুব কষ্টে এখন দিন পার করছি ।এভাবে কেটে গেল একটি বছর। বিয়ে করেছি। সব মিলিয়ে অভাব যেনো জোর দিচ্ছে।
এর মধ্যে বাড়ি থেকে ফোন দিয়ে মা-বাবা চাপ দেওয়া শুরু করল। আশেপাশের সব ছেলেরাই বাসায় অনেক টাকা পাঠায়, আমি কেন তাদের টাকা পাঠাতে পারি না? নানান প্রশ্ন আত্মীয় স্বজন ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করে। রাগ করে সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম।
আর তাই, শত কষ্টের মাঝেও বাড়িতে টাকা পাঠাতাম প্রতি মাসে খুবই অল্প পরিমাণে। এ সময়টা আমি বড়ই চিন্তায় ছিলাম। জীবনের এই অভিজ্ঞতা থেকে বাঁচার উপায় খুঁজতে লাগলাম।
চাকরি পাওয়াটা আমার জন্য যেন একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালো।
এর মধ্যে হঠাৎ করে একদিন আমার বউ এসে বলল যে, সে প্যাগনেন্ট। সে সময় আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ল।রাগের মাথায় কিছু না বলেই অন্য রুমে চলে গেলাম। সারারাত টেনশনে ঘুম আসছেনা। এরমধ্যে আবার সকাল হতে না হতেই বাড়ি থেকে ফোন এলো, আর মা বললো,আমার বাবা একটু অসুস্থ তাই বাড়িতে যেন কিছু টাকা পাঠাই।
কোনো রকম ভাবে অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা ম্যানেজ করে বাড়িতে দিলাম। অনেক হয়েছে আর না। এবার আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আর আমাকে এবার চাকরি পেতেই হবে। ঠিক করলাম দিন-রাত পড়া ছাড়া আর কিছু নাই জীবনে। দুচারটা টিউশনি দিয়ে তো আর জীবন চলে না তাই টিউশনের পাশাপাশি সারাদিন নেই রাত মিলে,সব কিছু বাদ দিয়ে পড়া শোনায় খুব মনোযোগী হলাম।কারো সাথে কথা বলি না।এমনকি আমার বউ জানেনা আমি কখন ঘুমাই কখন ঘুম থেকে উঠি।এভাবে চলে গেল আরো দুই মাস।
একে একে অনেকগুলো পরীক্ষা দিলাম কিন্তু লাভ হলো না। এবার আমার জীবনের একটা বড় চ্যালেঞ্জ চলে এলো। আর একটি পরিক্ষার তারিখ চলে এলো।
এটাই আমার জীবনের চরম সুযোগ তাই কাজে লাগাতে হবে। আমি আরো বেশি মনোযোগী হলাম আর বেশি বেশি করে পড়াশোনা করতে লাগলাম ।
দেখা যাক কি হয় আল্লাহ আমার ভাগ্যে কি লিখে রেখেছে।
এজন্য আমি এতদিন অপেক্ষা করছিলাম। ১২,০০০ পরীক্ষার্থী, আর নিবে মাত্র বিশ জন। কঠিন থেকে কঠিনতম পরিক্ষায় আমাকে টিকতেই হবে। দুই ধাপে পরীক্ষা হবে।ঐদিনই রেজাল্ট।পরীক্ষা দিলাম। আক মাত্র বেকার রাই জানে এই আভিজ্ঞতা।
সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আমি টিকলাম। একে একে দুই ধাপে টিকলাম। এবার শেষ ভাইভা এবারও,আমার নাম এসেছে।
আমি অবিশ্বাস্য ভাবে চাকরিটা পেয়ে গেলাম।
সাথে সাথে আমার বাড়িতে ফোন দিলাম। বাবা আর মাকে বললাম। তারা অনেক খুশি হল। কাছের মানুষগুলো একে একে ফোন দিতে থাকলো।এতদিন যাদের কোনো খোঁজ ছিল না আজকে সব একে একে ফোন দেওয়া শুরু করেছে।
যাই হোক এখন আমার খুশির খবরটা আমার স্ত্রীকে বলার জন্য ওকে ফোন দিলাম। কিন্তু ততোক্ষনে আমার ফোনের ব্যালোন্স শেষ।
ভাবলাম, বাসায় তো যাচ্ছি গিয়েই বলি।
বাড়িতে এসে দেখি দরজায় তালা মারা। পাশের বাসায় নক করলে তারা বললো, আমি ঢাকায় যাওয়ার পর আমার বউ টা খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল
তাই তারা মেডিকেলে ভর্তিকরেছে। তারাতাড়ি মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
যাবার সময় ভাবলাম,ও আমার খুশীর খবর টা শুনলে অনেক বেশি খুশি হবে।
দুই বছর হচ্ছে বিয়ে হওয়া এর মধ্যে তাকে আমি একদিনের সময় দিতে পারিনি। না কোন রোমান্টিক সময় পার করতে পেরেছি আর না কোথাও নিয়ে ঘুরতে যেতে পেরেছি। তাই মেডিকেলে যাওয়ার সময় ওর জন্য একটা গোলাপ নিয়ে যাই । আর ওকে বলবো কালকে আমরা ঘুরতে যাব যাই হোক মনটা খুব খুশি আজ। কেন জানিনা আজকে মেডিকেলে রাস্তা অনেক বড় লাগছে । আমার যেতে একটু দেরি হলো।
গিয়ে দেখি আসলেই আমার অনেক দেরি হয়ে গেছে।
যে মেয়েটা আমার অনুমতি ছাড়া বিয়ের পরে বাসার বাইরে কখনো যায়নি, আমার যাতে পড়াশোনায় কোনো কষ্ট না হয়, খাওয়া দাওয়ায় যেন কমতি না হয় তাই সে আমায় একা রেখে বাপের বাড়িতেও কখনো এক রাত থাকেনি।
আজ সে আমায় না বলেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।
কতো কষ্ট নিয়ে চলে গেছে। আজ খুশির খবর দিতে একটা গোলাপ নিয়ে এসেছিলাম সেটা আর দেওয়া হলো না। বলতে পারলাম না তাকে আমি অনেক কিছু দিতে চাই। যেদিন থেকে আমার কাছে এসেছিলো সে দিন থেকে ওকে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দিতে পারি নি।
আমি আশেপাশে তাকালাম একটি নার্স পেলাম তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছিল আমার বউয়ের? সে বলল, রক্তশূন্যতা ও অপুষ্টি জনিত কারণেই সে মারা গেছে কারণ সে প্রেগনেন্ট ছিল।
আমি যেন স্তব্ধ হয়ে পড়লাম। মুখের সব ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে, সে প্রেগনেন্ট ছিল। আমি কখনো তাকে নিয়ে ভাবি নি। নিজের স্বপ্ন পূরণের আশায় আর মা বাবার কথা ভাবতে ভাবতে কখনো তার দিকে তাকানোর সময় পাইনি। আমার জীবনের সাথে মিশে থাকা,শত কষ্টেও পাশে থাকা মানুষটির কথা আমি কিভাবে ভুলে গেলাম?
সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজার বার চাওয়ার পরে চাকরিটা পেলাম ঠিকই কিন্তু যা না চাইতে পেয়েছিলাম তা আজ অবহেলায় হারিয়ে ফেলেছি।
এখন মনে হচ্ছে আমার আগের জীবনটাই ভালো ছিল। আমি জানিনা কিভাবে ওকে কবর দেব? আমি জানিনা কিভাবে ওর মুখের দিকে তাকাবো? আমি কিছুই যেন বুঝতে পারছি না। ভালোবেসে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছিলাম তাই, সে কখনোই আমায় কষ্ট দেয়নি কিন্তু আমার থেকে পেয়েছে শুধু অবহেলা।
দোষটা প্রকৃতপক্ষে আমারই ছিল। কারণ আমি যদি পড়াশোনার পাশাপাশি আমার গর্ভবতী স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল হতাম,তাহলে হয়তো আজকের দিন দেখতে হতো না। আমি তাকে আমার দিক থেকে কিছু দিতে পারলাম না। না পারলাম বলতে না পারলাম ধরতে আর নাইবা পারলাম ভালবাসতে।
যখন সে আমায় খুশির খবরটা দিয়েছিল, তখন আমি এত রেগে গিয়েছিলাম যে, সে আমায় আর একবারও ভুলেও সেই প্রসঙ্গে কোন কিছু বলার সাহস করেনি। সে আমার কথা ভেবেই হয়তো নিজের কষ্ট চেপে রাখত। আমি কখনোই তার দিকে ভেবে দেখিনি।
যদি তাকে আজ একটি বলতে পারতাম, আমার অনেক বড় চাকরি হয়েছে আমার স্যালারি বেশ ভালো কিন্তু আমার কিছু একটা অভাব রয়েছে সেটা হচ্ছে তোমার।
আমি তখন বুঝতে পারছিলাম না আমি চাকরিটা করব কিনা? তারপরও পরিবারে তাগিদে করছি।
আমি জানি আমার মা বাবার এতে কোন কিছু যায় আসে না তারা অনেক খুশি। আমার বউ মরার একমাস পর আমার মা-বাবা বলে আমাকে বিয়ে করতে। আমি জানি আমার এখন চাকরি দেখে অনেক ভালো ভালো সম্বন্ধ আসে কিন্তু তারা এটাও জানবে না যে, কোন পর্যায় থেকে আমি আজ এ পর্যায়ে এসেছি। একমাত্র আমি জানি আমি জীবনে কি হারিয়েছি।
প্রকৃত ভালোবাসা আমার স্ত্রী আমি তাকে কোনদিনও ভুলতে পারবো না। আমি সারা জীবন তার কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকব।
মা তুমি দয়া করে এখন আমাকে বিয়ে করতে বল না।
আমাকে একটু সময় দাও।
আমি নিজেকে সুদ্রে নি।
ছেলেটির মা তার নিজ ভুল বুজতে পারল। আর সাথে সাথে কেঁদে ফেলল।
আর মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল।