পুরোনো একটি দোতলা বাড়ি। দেখলে জমিদার বাড়ির মতো মনে হলেও ভিতরে ফাঁকা। একটি মেয়ে তার ঘরের জানালা দিয়ে বাড়ির উঠোনে কি যেন দেখছে। একদৃষ্টিতে সে সেখানে তাকিয়ে রয়েছে । ঘরটি খুবই অগোছালো, কিন্তু সেদিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। মেয়েটি তার ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে উঠোনের সেই জিনিসটার কাছে গেল যেটা তাকে বিমোহিত করে রেখেছিল। জিনিসটা ছিল একটি হাসনাহেনা গাছ।আজ প্রথম সেই গাছে অনেক ফুল ফুটেছে। দেখলে মনে হবে যেন আকাশ থেকে তারারা নেমে এসেছে থোকায় থোকায়।"হেনা এই হেনা"- মেয়েটির মা তাকে কখন থেকে ডাকছে, কিন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। খেয়াল হতেই সে দৌড়ে তার মায়ের কাছে চলে গেল।দিন যায় রাত যায়, মেয়েটি প্রতিদিন সেই হাসনাহেনা গাছের কাছে গিয়ে বসে থাকে, সেটাকে পানি দেয় ও যত্ন করে। এই গাছটি তার জীবনের সাথেও জড়িয়ে গেছে। হঠাৎ একদিন মেয়েটির বাবার ভীষণ অসুখ করে। এর জন্য সে কথাও কাজে যেতে পারে না। একদিকে মেয়েটির বাবার অসুস্থতা, অন্যদিকে দেনার টাকা। পাওনাদাররা প্রতিদিন তাগাদা দিতে থাকে। কিন্তু মেয়েটির বাবার কিছু করার ছিল না। একদিন সে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। দুইদিন পর বাড়িতে তারা সবকিছু গোছাতে থাকে, কারণ বাড়িটা তার বাবা বিক্রি করে দিয়েছে। সবাই সবকিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও মেয়েটি চলে যায় তার পরম বন্ধু ও আপন সেই হাসনাহেনা গাছটার কাছে। মেয়েটি কিছু বলতে পারেনা শুধু তার চোখ বেয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। "হেনা তোর হলো?"- বাইরে থেকে মা ডাকতে থাকে। হঠাৎ করেই মেয়েটি তার খেয়ালে চলে আসে। মেয়েটি উঠে চলে আসতে থাকে, কিন্তু মায়ার টান তাকে বাধ্য করে আবার ঐ হাসনাহেনা গাছটার দিকে ফিরে তাকাতে। শেষ মুহুর্তে মেয়েটি যখন তার চিরচেনা হাসনাহেনা গাছটির দিকে তাকায় তখন তার বুকে যেন চিনচিনিয়ে একটা ব্যথা অনুভূত হয়।