(১)
কানে ভেসে আসে সানাইয়ের সুর, চারে দিকে আলোর রোশনায়। তবুও ঝিঝি পোকার ডাক শোনা যায়। জাহিন বাসর ঘরে প্রবেশ করলো, দেখলো শিমু বসে আছে ঘোমটা দিয়ে। জাহিন শিমুকে ঘোমটা দিয়ে বসে থাকতে দেখে বলল তুমি দেখি সেকেলে মেয়েদের মত। শিমু ঘোমটা দিয়ে থাকায় তার অভিব্যক্তি জাহিন বুঝতে পারল না, জাহিন বলল আমাদের আজ বাসর রাত। মানুষের জীবনে এ রাত সব চেয়ে স্মরনীয় রাত। চুপটি করে থেকে এ রাতিটি নষ্ট কর না।
শিমু কোন কথা বলে না দেখে জাহিন শিমুর হাত ধরতে গেল। শিমু হাত সরিয়ে নিল। বলল আমাকে ছুবেন না। জাহিন ভ্রু কুচকিয়ে বলল কেন?
আমি একটা ছেলে কে ভালবাসি,
জাহিন দীর্ঘশ্বাস চেপে বলল তারপর?
ছেলেটিও আমকে ভালবাসে।
তারপর( চোখে মুখে স্পষ্ট কষ্টের ছাপ)?
আমাদের পরিবার আমাদের ভালবাসা মেনে নেয়নি।
আমি ওকে আমার সব কিছু দিয়েছি, ওকে ছাড়া আমি কাউকে আমার জীবনে কলনা করতে পারব না। জাহিন বলল তারপর?
মেয়েটি বলল তারপর আমি এখানে। জাহিন দীর্ঘশ্বাস চেপে রাখতে পারল না।
জাহিনের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। জানালা দিয়ে চলে আসা আলোর রোশনায়ে চোখ দুটো দেখতে আরো সুন্দর লাগছিল। কিন্তু সেই ব্যথা ভরা সৌন্দর্য্য কেউ বুঝলো না।
শিমু হঠাত জিজ্ঞাসা করল আপনি কাউকে ভালবেসেছেন?জাহিন মনের অজান্তেই বলে উঠলো
যারা বুঝতে পারে প্রকৃত ভালবাসাকে হারিয়ে ফেলেছি তাদের মনে সুখ থাকে না। আর যারা বুঝতেই পারে না প্রকৃত ভালবাসা কি, তারা কোনদিন সুখি হয় না।কারন তাদের জীবনে ভালবাসায় আসেনা।তাই আমার জীবনে ভালবাসা আসেনি।যাইহোক ঘুমিয়ে পড়ো।আমার ঘুম পাচ্ছে।
শিমু বললো সেই ভালো।
(২)
রাত সবে ১২টা বাজে ।পুর্ণিমার আলোয় মাখামাখি প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান।জানালা খুলে অর্ষা পুর্নিমায় ভরা প্রকৃতির খেলা দেখছিল।এত সুন্দর আলোয় ভরা রাতে মনটা বিষন্নতায় ভরা। কিছুক্ষন আগেও কত মানুষ ওর চারে পাশে ছিল।সবাই তাকে ঘিরে আনন্দ উল্লাস করছিল কিন্তু কেউ বুঝতে পারেনি এত আনন্দ যাকে ঘিরে তার মন না পাওয়ার ব্যথায় ভরা। কিছুক্ষন আগে অর্র্ষার বর নুহিনও ছিল, সেও বুঝতে পারেনি। সুন্দর মুখের অধিকারী মানুষ গুলো মনে দুঃখ বহন করলে ,মুখটি অসম্ভব মায়াজালে ভরে ওঠে।নুহিনও হয়তো সে মায়ায় পড়ে অর্ষার মনের ব্যথা বুঝতে পারেনি।জানালা বন্ধ করে অর্ষা বিছানার উপর নতুন বউয়ের মত ঘোমটা দিয়ে বসলো ,আর ভাবছে নুহিন কে সব বলবে কিনা ।নুহিন এসে অর্ষার হাতের উপর হাত রাখতেই অর্ষার চোখের কয়েক ফোটা জল তার হাতে পড়ল । নুহিন বলল একি !
তুমি কাদছো কেন ?
অর্ষার মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে সে বলবে কি বলবে না। নিজেকে বুঝতেই অর্ষার কয়েক মুহুর্ত চলে যায়।
নুহিন আবার জিজ্ঞাসা করে নরম স্বরে আরে পাগলি কি হয়েছে? আমাকে যদি না বল তবে বলবে কাকে। মাটি ফাটা রোদে যদি বটবৃক্ষ নাই হতে পারলাম তবে কেন তোমার স্বামী হব। আমি তোমার বর না আমি তোমার স্বামী। বর তো সবাই হতে পারে স্বামী কজন হতে পারে।
নুহিন কত সুন্দর করে কথা বলে ভাবছে অর্ষা।
চৈত্রের রোদে ছায়া দেব, বর্ষায় হব ছাতা। কষ্টে যখন পিষ্ট হবে রাখবে আমার বুকে মাথা।
নুহিন এক হাতে থুতনিটা ধরে অন্য হাত দিয়ে অর্ষার চোখে পানি মুছে দিতে দিতে কথা গুলো বলল।
অর্ষা বলল না থাক কিছু না। নুহিন বলল এত দিন তোমার কাছের মানুষ ছিলেন হয়তো বাবা মা, আর আজ থেকে আমি আমাক বলবে নাতো কাকে বলবে?
হ্যা অর্ষা আজ বলবে, আজ বলবে নাতো কবে বলবে? এই মানুষটাকে যদি না বলি তবে কাকে বলব।কাপা কাপা গলায় বলল আ আ আমি জাহিন নামে একটা ছেলে কে প্রচন্ড ভালবাসতাম। কিন্তু ও আমাকে ভালবাসেনি।ও আমকে ঠগিয়েছে।
নুহিন শান্ত গলায় বলল ভালই হয়েছে।
অর্ষা বলল কেন?
নুহিন বলল ও তোমাকে না ঠগালে আমি তোমাকে পেতাম কি করে। তুমি এখন থেকে আমাকে ভালবাসবে আমি তোমাকে ঠগাবো না। প্রচন্ড ভালবাসব।
তোমার কোন খারাপ লাগছে না? অর্ষা জিজ্ঞাসা করল।
না। বরং আমি খুশি।
কেন?
যে মেয়ে একটা সাধারন ছেলে কে এতো ভালবাসতে পারে স্বামীকে কত খানি না ভালবাসবে।
শোন এ যুগে এসে যদি এসব ধরে বসে থাকি তাহলে আমি কিভাবে আধুনিক যুগের স্বামী হব। তবে হ্যা যা হয়েছে সেটা তোমার অতীত, আমি তোমার বর্তমান, আশা করি ভবিষ্যতে অতীতের পুনরাবৃত্তি হবে না।
আমার বুকে মাথা রেখে দেখ, যদি শান্তি পাও তাহলে আর কি দরকার।
মানুষ ধন সম্পদ নয় একটু শান্তির আশায় এত কিছু করে, আমি তোমাকে সে শান্তি দেব।
কি সে শান্তি পেয়ে কি আমাকে ধন্য করবে?
অর্ষা মুগ্ধ হয়ে নুহিনের কথা শুনছিল। একটা মানুষ এতো সুন্দর করে, শান্ত হয়ে গুছিয়ে কথা বলতে পারে?
অর্ষা ভাবলো সত্যিতো মানুষ ধন- সম্পদের পেছনে নয় শান্তির পেছনে ছুটে। সে শান্তি যদি এ মানুষটার মাঝে না পায় তবে আর কোথায় পাব।
এ মানুষটাকেই আমি ভালবাসব। তাই ভেবে অর্ষা নুহিনের বুকে মাথা রাখলো। নুহিনও আলতো করে অর্ষাকে জড়িয়ে ধরলো। শুধু দুজন দুজনাকেই জড়িয়ে ধরলো না, বিশ্বাস, ভরসা, আশ্বাস ও তাদের ছুয়ে দিল।