দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী জীবনযাপন করছেন ফিলিস্তিনি লেখক ওয়ালিদ দাক্কা। বোন ম্যারো বা অস্থি মজ্জার ক্যান্সারে আক্রান্ত এই লেখক বর্তমানে কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। প্রায় দুই মাস আগে তিনি তার সাজার মেয়াদ পূর্ণ করলেও ইসরায়েলি আদালত তাকে মুক্তি দিতে ইচ্ছুক নয়। কারাগারে সেলফোন পাচারে সহায়তা করার জন্য তাকে আরও আড়াই বছর অতিরিক্ত সাজা ভোগ করতে হবে।
ক্যান্সার আক্রান্ত ৬১ বছর বয়সী এই লেখকের মুক্তির দাবিতে অধিকৃত পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি শহর এবং লেবাননের ফিলিস্তিনি শিবিরগুলোতে গত সপ্তাহে বিক্ষোভ করেছেন ফিলিস্তিনিরা।
৩ জুন, শত শত লোক দাক্কার মুক্তি চেয়ে অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় মিছিল করেছেন। ৪ জুন, ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী এই লেখকের নিজ শহর বাকা আল ঘারবিয়েতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছেন।
মে মাসের শেষের দিকে ইসরায়েলি আদালত মানবিক কারণে দাক্কাকে মুক্তি দিতে অস্বীকার করে। এরপর ৬১ বছর বয়সী ক্যান্সারে আক্রান্ত এই লেখকের সমর্থনে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়।
গত বছরের ডিসেম্বরে দাক্কার একটি বিরল ধরনের অস্থিমজ্জার ক্যান্সার ধরা পড়ে। গুরুতর অসুস্থতার কারণে প্রথমে তাকে ইসরায়েলের একটি সিভিল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরে মে মাসের শুরুতে রামলেহ কারাগারের ক্লিনিকে ফিরিয়ে আনা হয়।
ওয়ালিদ দাক্কার স্ত্রী সানা সালামেহ দ্য নিউ আরবকে বলেছেন, ‘আমরা ওয়ালিদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি, বিশেষ করে যেহেতু ডাক্তারদের রিপোর্ট ইঙ্গিত করে যে তার অবস্থা খুবই সংকটজনক।‘
এদিকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্যালেস্টিনিয়ান প্রিজনার্স ক্লাব একটি বিবৃতিতে দাক্কার চিকিৎসায় অবহেলার জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে। তকে মুক্তি না দেওয়ার ইসরায়েলি আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছে।
১৯৮৬ সালে ইসরায়েলি একজন সৈন্যকে হত্যায় জড়িত থাকার অপরাধে ২৫ বছর বয়সী ওয়ালিদ দাক্কাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তাকে ৩৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। চলতি বছরের মার্চ মাসে তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু তাকে মুক্তি না দিয়ে অন্য একটি মামলায় আরও আড়াই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।
অথচ ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি অনুযায়ী যে কয়জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল, ওয়ালিদ দাক্কা তাদের একজন ছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে সে সময় তাকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
তার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা সত্ত্বেও তিনি কারাগারে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। দাক্কা ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের বর্ণনা দিয়ে উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং কবিতাও প্রকাশ করেছেন, যা সারা বিশ্বে পৌঁছেছে।
‘দ্য টেল অব দ্য সিক্রেট অব অয়েল’ নামের উপন্যাসটি তিনি ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোরদের জন্য লিখেছেন। বইটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়। তিনি কারাগারে এই বই লেখেন।
এই উপন্যাসে জুড নামের ১২ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি কিশোরের গল্প বলা হয়েছে। এই কিশোরটির বাবা তার জন্মের আগে থেকেই ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী। কিন্তু কারাগার থেকে পাচার করা তার বাবার শুক্রাণু থেকে জন্ম হয় জুডের।
এই উপন্যাসে ওয়ালিদ দাক্কার জীবনের প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। জুডের মত দাক্কার একমাত্র মেয়ে মিলাদের জন্মও এই ভাবেই হয়েছিল।
দ্য টেল অব দ্য সিক্রেট অব অয়েল বইটি ২০১৮ সালে ইয়ং অ্যাডাল্ট ক্যাটাগরিতে এতিসালাত অ্যাওয়ার্ড জয় করে।
সূত্র: দ্য নিউ আরব, আল জাজিরা, আল মনিটর, হারেৎজ