ক্যাম্পাসের এক কোণায় পুরোনো একটা বেঞ্চে বসে আছে সামি আর সোয়েব। সামির হাতে একটি পুরোনো ডায়েরি। চারপাশে ছাত্রছাত্রীদের ব্যস্ততা। গাছের পাতা ঝরে পড়ছে ধীরে ধীরে, যেন সময়টা কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেছে।
"এই ডায়েরিটা এত স্পেশাল কেন বল তো?" সোয়েব মজা করে প্রশ্ন করে।
"আমার দাদার। উনি যখন তরুণ ছিলেন, তখন এই ডায়েরিতে কবিতা লিখতেন। ভাবলাম, আজ একটু পড়ি," সামি মৃদু হেসে উত্তর দেয়।
ঠিক এই সময় সামিরা এসে দাঁড়ায়। "তোমরা কি এত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছ? ক্লাসের চেয়ে বেশি মজার কিছু?"
সামি চোখ তুলে তাকায়। "এই ডায়েরি নিয়েই বসে আছি। দাদার লেখা কবিতা পড়ছি। তবে বুঝতে পারছি না, ভালোবাসা কি এত কঠিন কিছু?"
সোয়েব হেসে ওঠে, "তুই তো ভালোবাসার কিছু বোঝার বয়সে পৌঁছাসনি রে। চল, ক্লাসের নতুন মেয়েটা কেমন, সেটা নিয়ে আলোচনা করি।"
পরের দিন সকালে ক্লাসে প্রথমবারের মতো দেখা যায় সাঞ্জাকে। মাঝারি উচ্চতা, ঢেউ খেলানো চুল আর উজ্জ্বল চোখের মেয়েটি যেন ক্লাসের সব আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছে।
সামি দূর থেকে সাঞ্জার দিকে তাকিয়ে থাকে। সোয়েব ফিসফিস করে বলে, "ভাই, চোখে-মুখে আগুন। এটাকে বলে প্রথম দর্শনেই প্রেম!"
কিন্তু সামি শুধু নিরবতা বজায় রাখে। সাঞ্জার মাঝে যেন সে অন্যরকম কিছু অনুভব করে।
রাতে সামি ডায়েরির পাতাগুলো আবার পড়ে। এক এক করে দাদার কবিতার শব্দগুলো যেন তাকে নতুন ভাবনার জগতে নিয়ে যায়।
ঠিক তখনই তার দাদা ঘরে আসে। "কি রে, পড়াশোনার বদলে ডায়েরি নিয়ে এত মগ্ন কেন?"
সামি হেসে বলে, "তোমার কবিতাগুলো পড়তে ভালো লাগে। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, এগুলো বুঝতে পারি না। ভালোবাসা এত কঠিন কেন?"
দাদা মৃদু হেসে বলে, "ভালোবাসা সহজ। কিন্তু বুঝতে হলে সঠিক মানুষ খুঁজে নিতে হয়। সময় এলেই সব স্পষ্ট হবে।"
পরদিন কলেজে সামির প্রথমবার সাঞ্জার সাথে আলাপ হয়। ক্লাসের বাইরে করিডোরে এক মুহূর্তের জন্য চোখাচোখি হয়।
সাঞ্জা এগিয়ে এসে বলে, "তোমার নাম সামি, তাই না? শুনেছি তুমি অনেক মজার ছেলে।"
সামি একটু লজ্জা পেয়ে বলে, "এইভাবে বললে তো লজ্জা পেতে হয়। তুমি নতুন, তাই না?"
সাঞ্জা হেসে জবাব দেয়, "হ্যাঁ, ঢাকার মেয়ে। বাবার চাকরির জন্য এখানে আসা।"
তারপর থেকে দুজনের আলাপ বাড়তে থাকে। কলেজের ব্যস্ততায়ও যেন সামি সময় বের করে সাঞ্জার সাথে কথা বলে।
কিন্তু ভালো সময়গুলো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। একদিন করিডোরে জাহিদের সাথে দেখা হয়। জাহিদ কলেজের তথাকথিত নেতা। সাঞ্জার দিকে তার দৃষ্টি পড়তেই সে সামিকে নিয়ে বিদ্রূপ করে।
"তুই নতুন মেয়েটার সাথে বেশ বন্ধুত্ব করেছিস দেখি। সাবধান থাকিস, এই কলেজে আমার নিয়ম চলে," বলে জাহিদ।
সামি বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে বলে, "তোর নিয়ম তোর জন্য, আমার জন্য নয়।"
জাহিদ চলে যায়, কিন্তু সামি নিজের মনোবল ধরে রাখে। সাঞ্জার সাথে বন্ধুত্ব গভীর হতে থাকে। জীবনের জটিলতাগুলোকে সামি সামলাতে শিখে যায়।
ডায়েরির কবিতাগুলো এখন আর কঠিন মনে হয় না। প্রতিটি শব্দ যেন নতুন অর্থ নিয়ে আসে। ভালোবাসা ধীরে ধীরে সহজ হয়ে ওঠে, যেমন ভোরের সূর্যের আলো অন্ধকারকে দূর করে।
শেষ নয়, শুরু
এই গল্পের পরিণতি শুধু সামি আর সাঞ্জার নয়, বরং নতুন সম্ভাবনার। জীবনের প্রতিটি অধ্যায় একটি নতুন ভোরের গল্প বয়ে আনে।