খাদিজার জীবনসংগ্রাম
খাদিজা ছিল এক ছোট্ট গ্রামের মেয়ে। গ্রামের নাম ছিল বটতলা। এই গ্রামে জন্ম থেকেই খাদিজা ছিল একেবারে আলাদা। শৈশবেই তার মাকে হারায়, আর বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর। সংসারে ছিল তার ছোট দুই ভাইবোন। অভাব আর দারিদ্র্য ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী।
খাদিজা ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখত, একদিন তার জীবনে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু কীভাবে, তা সে নিজেও জানত না। তার একটাই শক্তি ছিল—তীব্র ইচ্ছাশক্তি। সকালবেলায় বাবার সাথে কাজ করতে যেত, দুপুরে বাসায় ফিরে ভাইবোনদের দেখাশোনা করত, আর রাতে কুপি বাতির আলোয় বই পড়ত।
গ্রামের সবাই বলত, "মেয়েদের এত পড়ালেখার কী দরকার? রান্না আর সংসার সামলানোই তো তাদের ভবিষ্যৎ।" কিন্তু খাদিজা সেসব কথায় কান দেয়নি। তার প্রিয় শিক্ষক রুহুল স্যার তাকে সবসময় উৎসাহ দিতেন। তিনি বলতেন, "খাদিজা, যদি তুমি নিজের স্বপ্ন নিয়ে লড়ে যেতে পারো, তাহলে তোমার মতো মেয়েরা একদিন সমাজ বদলাবে।"
খাদিজা স্কুল শেষ করে গ্রামের বাইরে একটা কলেজে ভর্তি হলো। সেখানে পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য সে টিউশনি শুরু করল। দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করে সে নিজের পথ তৈরি করছিল। কলেজের পড়া শেষ করে একটা বৃত্তি পেল খাদিজা, যা তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ করে দিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করার পর খাদিজা নিজের গ্রামে ফিরে গেল। কিন্তু সে আর আগের মতো সাধারণ মেয়ে ছিল না। সে ছিল একজন শিক্ষিত, আত্মবিশ্বাসী নারী। গ্রামে ফিরে সে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করল, যেখানে গ্রামের মেয়েরা বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে পারত।
গ্রামের মানুষের মনোভাবও ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করল। খাদিজার উদাহরণ দেখে অনেক পরিবার তাদের মেয়েদের স্কুলে পাঠানো শুরু করল। খাদিজা শুধু নিজের জীবন নয়, পুরো গ্রামের ভবিষ্যৎ বদলে দিল।
শেষ কথা:
খাদিজা দেখিয়ে দিল, চাওয়া আর লড়াই করার সাহস থাকলে সব বাধা জয় করা সম্ভব। তার জীবন কেবল তার নিজের গল্প নয়, বরং হাজারো খাদিজার জন্য প্রেরণার প্রতীক।