Posts

চিন্তা

বাংলাদেশের তরুণ সমাজ জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বিদেশি আগ্রাসন কিভাবে প্রতিরোধ করবে?

December 17, 2024

Yousuf Haque Chowdhury

আজ ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বাংলাদেশের ৫৪তম বিজয় দিবসে দেশের তরুণ প্রজন্মের দেশ প্রেম আমাকে মুগ্ধ করেছে। উপলব্ধি করলাম এই তরুণ প্রজন্মকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার দায় আমার উপরেও বর্তায়। সেই দায়ভার থেকেই আমার এই পরামর্শমূলক লেখা। সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইলো।

জুলাই বিপ্লবী ছাত্র-জনতা প্রতিবেশী কোন দেশ, ইসরায়েল কিংবা অন্য যে কোন রাষ্ট্রকেই শত্রু মনে করুক, তাকে মোকাবিলা করার জন্য তার মত সক্ষমতা আর যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। একটা উদাহরণ দেই। ধরা যাক বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ প্রত্যেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতের সামরিক আগ্রাসন প্রতিহত করতে গেল, ভারত কি করবে তখন? তারা শুরুতেই তাদের ব্যাটালিয়ন গুলোকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেবে? উত্তর হবে ‘না’। 

২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবান সরকারকে উৎখাত করতে আফগানিস্তানে অভিযান চালায়। মার্কিন বাহিনী কিন্তু প্রথমেই আফগানিস্তানে স্থল হামলা চালায়নি। কারণ তারা জানে আফগানরা যুদ্ধে পারদর্শী। প্রথম ৩/৪ মাস মার্কিন সেনারা তাদের সর্বাধুনিক সব বিমান দিয়ে মুহুর্মুহু বোমা হামলা চালিয়ে তালেবান ফ্রন্ট লাইনগুলো ধ্বংস করে দেয়। গ্যাস বোমা মেরে পাহাড়ি গুহার আস্তানাগুলো ব্যাবহারের অনুপযোগী করে ফেলা হয়। আরব সাগরে অবস্থান করা রণতরী থেকে ব্যালাস্টিক আর ক্রুজ মিসাইল মারা হয়। ভারতও একই কাজ করবে। ১৯৭১ সালে ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে ঢাকায় ভয়ানক বিমান হামলা চালিয়েই কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পর্যদুস্ত করে ফেলে ভারতীয় বিমান বাহিনী।

এখন প্রশ্ন বাংলাদেশ সেই বিমান আর মিসাইল হামলা ঠেকাবো কি দিয়ে? বাংলাদেশের কি এন্টি এয়ারক্রাফট মিসাইল আছে? আমাদের কাছে কি S-400 কিংবা Iron Dome এর মত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা আছে? কিছু প্রশিক্ষণ বিমান ছাড়া ফাইটার জেট কি আছে? সুই থেকে গাড়ি সব কিছুই ভারত আর চায়না থেকে আনতে হয়। ইসরায়েল বিশ্বে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা সরঞ্জাম তৈরী করে। সিসি ক্যামেরা থেকে আয়রন ডোম সবই ইসরায়েলি প্রোডাক্ট।

আমাদের দেখতে হবে শত্রুরা কেন আধিপত্য বিস্তার করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। তাদের মত সক্ষমতা অর্জন করতে না পারলে আমাদের আন্দোলন  ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের মত ব্যার্থতায় পর্যবাসিত হবে এবং আমাদের উপর আরও দীর্ঘমেয়াদি গোলামি কায়েম হবে। আমাদের হাতে সময় কম। একই সাথে শিক্ষা ও প্রযুক্তি দুটোতেই সমানতালে এগুতে হবে। গণহারে বিবিএ আর অনার্স না পড়ে প্রযুক্তি বিষয়ে লেখাপড়া বাড়াতে হবে। ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউটগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিভিন্ন অস্ত্র আর প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরীর কারখানা দেশেই স্থাপন করতে হবে।

ভারত আর ইসরায়েল দুটি দেশই আইটি সেক্টরে উন্নত। দুটি দেশই আবার বন্ধু রাষ্ট্র। চিকিৎসা, প্রযুক্তি, অস্ত্র, বাণিজ্য এমন কি সাহিত্যেও ইসরায়েল দিনের পর দিন আরব দেশগুলোকে পেছনে ফেলেছে। পিছিয়ে পড়তে পড়তে এখন তারা ইসরায়েলের হাতের পুতুল হয়ে গেছে। 
আরব দেশগুলোতে পর্যন্ত  ভারতীয় নাগরিকদের আধিপত্য। ভারতীয়রা শিক্ষা, ভাষা আর দক্ষতায় বাংলাদেশিদের থেকে এগিয়ে থাকায় তাদের অধিনে বাঙালিদের কাজ করতে হয়। বেতনের ক্ষেত্রেও বিশাল ফারাক। এমনকি সৌদি আরবেও আমি একই অবস্থা দেখেছি।

দক্ষিণ এশিয়ার আইটি রাজধানী বলা হয় ভারতের ব্যাঙ্গালোর শহরকে। একটা উদাহরণ দেই। এই অঞ্চলের যে কেউ তার ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ডটি যখন পাঞ্চ করে তখন সিগনালটি প্রথম ব্যাঙ্গালোরে পৌছায়। এর কারণ Vissa কিংবা Master কার্ড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আঞ্চলিক অফিস ভারতে অবস্থিত।

আরেকটা বিষয় হলো আমেরিকা, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিউনে ভারতের মত শক্তিশালী লবি তৈরি করা। এই লবি গ্রুপ তাদের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ নিয়ে দরকষাকষি করবে। এসব না করলে বাংলাদেশ বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর দাবা খেলার কোর্ট হয়েই থাকবে। শুধু আত্মবিশ্বাস, সাহস আর জাসবা দিয়ে জয়ী হওয়া যায়না। ওটা সাময়িক আবেগ মাত্র।

Comments

    Please login to post comment. Login