খুব ভোরে সবসময় ওঠা হয় না জারার। শুক্রবারের একটা দিন, অফ ডে, আজকে কোনো ক্লাস নেই ভার্সিটিতে। হিম হিম শীতের সকাল, বাতাসে ভেসে আসে রাত শেষের ডাক, সাথে কিছু মানুষের কথা, কখনও নীচু গলায়, কখনোবা একটু জোরে জোরে, জারার নাম ধরে কে যেন ডাকে। এখানে এমনটা হওয়ার কথা নয়, জায়গাটা পুরোই অপরিচিত, বিশেষ করে একজায়গার মানুষ যখন অন্য জায়গায় যায় সবকিছু তার না চেনারই কথা। তাছাড়া এটা একটা লেডিস হোস্টেল।আরও কিছু মেয়ে ভোরের দিকে ওঠে। জারা কিন্তু চুপ করে বসেই থাকে। কে হতে পারে? কেনই বা তাকে ডাকছে? জোর করেই চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলে। অন্য কোনো মেয়েকে হয়তো ডেকে থাকবে। কিন্তু নাহ্ জারা জাহান বলেই ডাকছে। আর তো বসে থাকা চলে না। যদি ভিতরে চলে আসে, অবশ্য সে তো এখানে একা নয়, তার মামাতো বোন জাবিন এখানে আছে। কিন্তু নীচে নামতে যেয়ে সোজা উপরে উঠেই আসে, যদি তাদের রুমে অচেনা কেউ ঢুকে পড়ে! তাছাড়া তার রুমমেট তরীও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কি করা যায়? সাত পাঁচ ভেবে সে ঠিক করে আজকের দিনে পারতপক্ষে কোথাও না যাওয়ার। চেনাজানা কেউ হলে তো তাকে জানিয়ে আসতো অবশ্যই। ছেলেটা কে হতে পারে? জানালা দিয়ে আবছা আলোতে দেখার চেষ্টা করে জারা... কুয়াশায় বাইরের সবকিছু আচ্ছন্ন, শীতের বাতাসে নড়ছে গাছের পাতাগুলো, চুপচাপ বসে থাকে জারা! সে ভাবছে বাড়িতে জানাবে কি না; কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাপারটা গোপন রাখার, এমনিতেই সে একজন মেয়ে মানুষ, এভাবে নিশ্চিত যে কেউ কোনো কাজেই আসবে না প্রমাণ ছাড়া, উল্টো তাকেই গালি দিবে, মাথা বিগড়ে গেছে নাকি সেটা মনে করে। আর তাছাড়া এখন অবাক হয়েই লাভ কি। দেখে মনে হবে সে নিজেই দায়ী এইরকম কোলাহলের কারণে।