চকচকে দৃষ্টি। গম্ভীর স্বরে বলতে থাকেন –
– ডিপার্টমেন্টে ডাকাবুকো বলে আমার সুনাম ছিল। চোর-ডাকাত, জানোয়ার, অফিসার কাউকেই রেয়াত করতাম না। ফিল্ডওয়ার্ক আমায় বেশি টানত। কর্মসূত্রে অনেক অরণ্যে ঘুরেছি, বহু বনবাংলোতে রাত কাটিয়েছি। কিন্তু একটা বাংলোর অভিজ্ঞতা আমার সাহসে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছিল। নামটা আমি বলব না। আজ সেখানে পাকা রাস্তা হয়েছে, ট্যুরিষ্টদের বিলাসবহুল নতুন বাংলো হয়েছে । জানি না আর সেই ব্রিটিশ আমলের কাঠের পোড়ো বাংলোটা টিঁকে আছে কিনা।
কিন্তু একটা বাংলোর অভিজ্ঞতা আমার সাহসে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছিল।
তখন আমার বয়স বত্রিশ-তেত্রিশ হবে। সার্ভের কাজে প্রায় বিশ কিমি হেঁটে সেই বাংলোতে পৌঁছতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেল। বেয়ারা আর আদিবাসী চৌকিদার দুজনে মিলে কাঠের আঁচে ঝপাঝপ খাবার বানিয়ে ফেলল। আমার সঙ্গী বিশু উসখুস করে। ওর চঞ্চলতা দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না হাঁড়িয়ার নেশা চাগাড় দিয়েছে। চৌকিদার মংলুকে বলি, ওর জন্যে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে। মংলুদের গ্রাম প্রায় পাঁচ কিমি দূরে। সেখানে পাওয়া যাবে। কিন্তু এই রাতে গিয়ে আবার ফেরা অসম্ভব। তাই ওদের দুজনকেই চলে যেতে বলি গ্রামে। আমি একাই বেশ এনজয় করব রাতটা। মংলু অদ্ভুত নজরে আমায় দেখে বার বার। যেন কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু বলতে পারছে না। দুহাত কচলে কাঁচুমাচু হয়ে যা বলে, তাতে বুঝি ও আমায় বাইরে বেরতে বারণ করছে। আর রাতে যেন কোনও কারণেই আর দরজা না খুলি। ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বালিয়ে আরও কাঠকুটো রেখে যায়। পাতকুয়ো থেকে পর্যাপ্ত জল তুলে রাখে চানঘরে। জলের জগও ভর্তি করে দেয় কাঁচের গেলাসসহ, যাতে রাত্রে আর কোনও কারণেই আমায় বাইরে না যেতে হয়। যাওতার আগে বলে- বাবু দোরটা এঁটে নিন।
গ্রামের মানুষদের ভূত-প্রেতে বিশ্বাস, কুসংস্কার এসব আকছার দেখেছি। ওকে ধমক দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। যেতে গিয়েও মংলু বলে যায়- আমার কথাটা রাখেন। দোর না দিয়ে শোবেননিকো।
বলে হ্যারিকেনটা সেন্টার টেবিলে রেখে ওরা চলে গেল।