আম্মু আজ নানুর বাড়ি গেছে। যাওয়ার সময় আমাকে বারবার বলল, “তুইও চল।”, কিন্তু মন আজ যেন যেতে চাইল না। তাই, আম্মু অনেক কিছু রান্না করে রেখে গেল, যেন আমি অনাহারে না থাকি। অথচ, দুপুরের ঘর ফাঁকা। নিঃস্তব্ধতার মাঝেই হঠাৎ পেটের ক্ষুধা জানান দিল, কিন্তু আজ কেন জানি মনের মধ্যে এক অদ্ভুত ভাবনা এলো— *নিজে কিছু রান্না করব!*
জীবনে কখনো চায়ের মতো সহজ কিছু বানাতে গিয়ে সেটাও জ্বালিয়ে ফেলা আমার স্বভাব। তবু আজ মনে হলো, হাতের কাঁচা কাজ দিয়েই না হয় নিজেকে চ্যালেঞ্জ দিই। কী বানানো যায়? ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল আমার হোস্টেলের প্রাণের খাবার— *খিচুড়ি!* সেই এক বাটি খিচুড়ি যা একেবারে সবার প্রিয়।
কিন্তু সমস্যা একটাই—আমি কোনো ব্যাক্তিগত রাঁধুনি নই যে তার কাছে সাহায্য চাইবো। কাউকে ফোন করব কি না ভাবতে গিয়ে আবার মনে হলো, আম্মু শুনলে বকাঝকা করবে, “অসুস্থ শরীর নিয়ে রান্না করবি?” তাই রাঁধুনির অভাবে এক পাকা পরামর্শকের দরকার। হঠাৎ মনে হলো, আমার তো *ChatGPT* আছে। ঠিক তখুনি তার শরণাপন্ন হলাম। রেসিপি হাতে পেয়ে মনে হলো, যুদ্ধ জয়ের পথ পেয়ে গেছি।
যেই ভাবা সেই কাজ। হাতা-খুন্তি আর রান্নার হাঁড়ি হাতে উঠে গেল। ডাল ভাজা, চাল ধোয়া, মসলার গন্ধ—সব যেন এক নতুন উৎসবের আয়োজন। রান্নার ধোঁয়ায় কখন যে ক্ষুধাটা দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে, খেয়াল নেই। একটু পর পর ঢাকনা খুলে দেখা, গন্ধে মুগ্ধ হওয়া আর নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে এক পায়ের রান্নার অপেক্ষা।
শেষমেশ, আলহামদুলিল্লাহ! খিচুড়ি রান্না শেষ।
বাটি ভরে খাবার নিয়ে বসতেই মনে হলো, এ যেন কোনো সাধারণ খাবার নয়। এটা আমার সাধনা, আমার একান্ত নিজের সাফল্য। জীবনের প্রথম রান্না—স্বাদের বিচারকও আমি নিজেই। অসম্ভব ভালো লাগল। হয়তো কারও কাছে ছোট কিছু, কিন্তু আমার কাছে এক বিশাল বিজয়। আজ আমি প্রমাণ করলাম, রান্না শুধু পেট ভরার জন্য নয়, এটা একান্ত আত্মতৃপ্তির এক শিল্প।
আমার সেই একাকী খিচুড়ি যেন বলে উঠল, “তুমি পেরেছো শিহাব!”
~~মুজাহিদ শিহাব (১৭-১২-২০২৪)