কাফকা তার প্রথম প্রেমিকা ফেলিসকে চিঠি লিখেন প্রায় পাঁচশটির ও বেশি। সম্পর্ক টিকেনি! তার দ্বিতীয় প্রেমিকা মিলেনাকে চিঠি লিখে প্রায় চারশোটির ও বেশি। তাও টিকেনি। প্রেম ধীরে মুছে গিয়েছে, নক্ষত্র ও বিলীন হয়েছে।
১৯২৩ সালের কথা, কাফকার জীবনের আলো ধীরে ধীরে নিভতে শুরু করেছে। ঠিক সে সময় তার সাথে পরিচয় হয় ডোরার। তার তৃতীয় প্রেমিকা।মৃত্যু যখন কাফকার দরজায় কড়া নাড়ছে ঠিক তখন দুই জন মিলে পরিকল্পনা করলেন তারা ফিলিস্তিন যাবেন, সুখের সংসার শুরু করবেন। রেস্তোরাঁ খুলে ডোরা রান্না করবেন, আর কাফকা হবেন ওয়েটার। সুন্দর ছিমছাম আর নির্ভেজাল বাকি জীবনটা দুই জন একসঙ্গে কাটিয়ে দেবেন। কিন্তু, সেই সুযোগ আর কাফকা পেলো কোথায়?
যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলেন আবারও। তার কিছুদিনের মাঝেই ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে।
১৯২৪ সালের ৩ জুন : শয্যাশায়ী কাফকা, ডাকবাক্সে চিঠি ফেলার অছিলায় বাইরে পাঠানো হয় কাফকার ডোরাকে। কিন্তু তাকে না দেখে অস্থির হয়ে উঠলেন কাফকা। তার অনুরোধেই দৌড় দিয়ে ডোরাকে ডেকে আনলেন কেউ। এদিকে চিকিৎসক ক্লপস্টককেও মিনতি করলেন, ‘আমাকে ছেড়ে যেও না।’ ক্লপস্টক বললেন, ‘আমি যাচ্ছি না।’ কাফকা উত্তরে বললেন, ‘কিন্তু আমি যাচ্ছি।’ এরপর চোখ বন্ধ করলেন। তিনি চোখ আর খুললেন না।
মৃত্যুর কিছুদিন আগে পুড়িয়ে ফেললেন তার সৃষ্টির একটি বড় অংশ এবং তার বন্ধু ম্যাক্সকে বললেন অবশিষ্ট লেখাগুলো ও যাতে সে পুড়িয়ে ফেলে!
ম্যাক্স বন্ধুর কথা রাখেনি। ধূলো জমা পাতাগুলো এক এক করে প্রকাশ করলেন। প্রকাশ করলেন - সর্বকালের সেরা উপন্যাসের একটি - দ্যা ট্রায়াল। বিষন্নতা কিংবা নি:সঙ্গতা যার নিত্যদিনের সঙ্গী ছিলো, সে শুধু বিখ্যাত ই বনে যাননি! তাকে নিয়ে গবেষণা হয়েছে সবচেয়ে বেশি, লেখা হয়েছে শত শত বই!
মার্কেজ কিংবা মুরাকামির মতো বিখ্যাত লেখক'রা ও কাফকা থেকে অনুপ্রানিত! তার লেখা নিয়ে মার্কেজ একটি মজার ঘটনা বলেছিলেন!
‘এক রাতে এক বন্ধু আমাকে কাফকার ছোটগল্পের একটি বই ধার দেন। আমি পেনশনে ফিরে গেলাম যেখানে আমি থাকতাম এবং দ্য মেটামরফোসিস পড়তে শুরু করলাম। প্রথম লাইনটি প্রায় আমাকে বিছানা থেকে ফেলে দিয়েছিলো। আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম!’