সাহিত্য কি বিলাসিতা? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগতে পারে। যখন দুবেলা দুমুঠো অন্নের সংস্থানই দুষ্কর, তখন কবিতার ছন্দ কিংবা উপন্যাসের কাহিনি মানুষের কাছে বিলাসিতা বলে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলেই বোঝা যায়, সাহিত্য কখনোই বিলাসিতা নয়, বরং জীবনের এক অপরিহার্য অঙ্গ।
সাহিত্য আমাদের আত্মার খোরাক যোগায়। যেমন দেহের জন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্য, তেমনি মনের জন্য প্রয়োজন সাহিত্যের আলো। সাহিত্য আমাদের অনুভূতি, চিন্তা, স্বপ্নকে সমৃদ্ধ করে। জীবনের নানা রঙ, সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশাকে সাহিত্যের মাধ্যমেই আমরা অনুভব করি। সাহিত্য আমাদেরকে মানুষ হিসেবে পরিপূর্ণ করে তোলে।
সাহিত্য আমাদের চেতনার দুয়ার খুলে দেয়। ভালো সাহিত্য আমাদেরকে ভাবতে শেখায়, প্রশ্ন করতে শেখায়, বিশ্লেষণ করতে শেখায়। সাহিত্য আমাদেরকে সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। সাহিত্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করে, আমাদেরকে বদ্ধ ধারণার বাইরে নিয়ে যায়। সাহিত্য আমাদেরকে মানবতার মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।
সাহিত্য আমাদের সমাজের দর্পণ। সমাজের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সংগ্রাম-সাফল্য সবকিছুই সাহিত্যে ফুটে ওঠে। সাহিত্য আমাদেরকে সমাজের ভালো-মন্দ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে, আমাদেরকে সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলে। সাহিত্য আমাদেরকে সামাজিক পরিবর্তনের জন্য অনুপ্রাণিত করে।
সাহিত্য আমাদের জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক। সাহিত্যের মাধ্যমেই আমরা আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধারণ করি। সাহিত্য আমাদের জাতীয় ঐক্যকে সুদৃঢ় করে, আমাদের জাতীয় চেতনাকে জাগ্রত করে। সাহিত্য আমাদেরকে আমাদের শিকড়ের সন্ধান দেয়।
তাই, সাহিত্য কখনোই বিলাসিতা নয়। সাহিত্য আমাদের অস্তিত্বের অপরিহার্য অঙ্গ। সাহিত্য আমাদেরকে মানুষ করে, সভ্য করে, চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত করে। সাহিত্য আমাদেরকে স্বপ্ন দেখায়, আশা জাগায়, নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়।