চন্দ্রপুর গ্রামটি ঘন জঙ্গলে ঘেরা। স্থানীয়দের মতে, এই জঙ্গলে সন্ধ্যার পর কেউ গেলে আর ফিরে আসে না। কথিত আছে, বহু বছর আগে এই জঙ্গলে এক গৃহস্থ পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, আর সেই থেকেই জঙ্গল অভিশপ্ত হয়ে উঠেছে।
রূপম, পেশায় একজন অভিযাত্রী, এই ধরনের রহস্যময় কাহিনি শুনে খুবই আগ্রহী। একদিন সে সিদ্ধান্ত নেয়, চন্দ্রপুরের জঙ্গল নিয়ে মানুষের ভীতি ভাঙাতে সেখানে যাবে। গ্রামের কিছু বয়স্ক মানুষ তাকে বারবার বারণ করে, কিন্তু রূপম কারও কথা শোনে না।
রাত গভীর হলে, রূপম তার ব্যাগে একটি টর্চ, একটি ক্যামেরা আর কিছু খাবার নিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করে। প্রথমদিকে সবকিছুই স্বাভাবিক মনে হয়। তবে ক্রমে চারপাশের গাছপালা আরও ঘন হতে থাকে, আর বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। হঠাৎই রূপমের সামনে একটি পাথরের ফলক দেখা যায়। সেখানে লেখা: "যে এগোবে, সে ফিরে আসবে না।"
রূপম হেসে বলে, “এ তো সাধারণ লোকের ভয় দেখানোর কৌশল।” সে আরও ভেতরে এগিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর, সে এক আশ্চর্য জিনিস দেখে। একটি গাছের নীচে লাল রঙের পোশাক পরা এক মেয়ে বসে আছে। তার পেছনে লালচে আলো জ্বলজ্বল করছে। রূপম ভেবেছিল মেয়েটি হয়তো হারিয়ে গেছে। সে কাছে গিয়ে বলল, “তুমি এখানে কী করছো?”
মেয়েটি কোনো উত্তর দেয় না। হঠাৎ তার মুখ ঘুরিয়ে দেয়, আর রূপম দেখে তার চোখে কোনো মণি নেই—সাদা ফাঁকা চোখ! রূপম ভয়ে পিছিয়ে আসে। মেয়েটি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।
ভয়ে দিশেহারা রূপম দৌড়াতে শুরু করে। কিন্তু যতই সে দৌড়ায়, ততই মনে হয়, সে একই জায়গায় ফিরে আসছে। চারপাশে গাছের ডাল থেকে শীষ দেওয়ার শব্দ ভেসে আসতে থাকে। হঠাৎ করেই রূপম একটি পুরনো কুঁড়েঘর দেখতে পায়। সে ভেতরে আশ্রয় নেয়।
ঘরের ভেতরটাও অদ্ভুত। দেয়ালে অনেক পুরনো ছবি ঝুলছে। ছবিগুলোতে দেখা যায়, এক পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হচ্ছে। আর ঘরের মেঝেতে একটি কুড়াল পড়ে আছে, যেটাতে শুকনো রক্তের দাগ।
হঠাৎ দরজার বাইরে থেকে আবার সেই মেয়েটির গলা শোনা যায়। “তুমি আমার জায়গায় ঢুকে পড়েছো। এখন তুমি এখান থেকে বাঁচবে না।”
রূপম দ্রুত জানালা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু জানালা খোলার আগেই মেয়েটি ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তার চোখ থেকে যেন আগুনের ফুলকি বের হতে থাকে।
রূপম শেষবারের মতো চিৎকার করে। তার কণ্ঠের আওয়াজ রাতের জঙ্গলে মিলিয়ে যায়। পরদিন সকালে, গ্রামের লোকেরা জঙ্গলের ধারে রূপমের ক্যামেরা খুঁজে পায়। কিন্তু রূপমের আর কোনো চিহ্ন তারা পায়নি।
চন্দ্রপুরের জঙ্গলের রহস্য আজও সমাধান হয়নি। কেউ জানে না, রূপমের সঙ্গে আসলে কী ঘটেছিল।