শিরোনাম : ভূতুড়ে ট্রেন স্টেশন
কলকাতা শহরের প্রান্তে একটি পুরনো ট্রেন স্টেশন আছে—বরুণপুর স্টেশন। এটি বহু বছর আগে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। লোকমুখে শোনা যায়, সেখানে প্রতি পূর্ণিমার রাতে একটি ট্রেন এসে থামে, আর যারা সেই ট্রেনে ওঠে, তারা আর কখনো ফিরে আসে না।
তরুণ সাংবাদিক অদ্রিজা এই ঘটনাটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সাহসী মেয়ে হিসেবে তার মনে হয়, এই গল্পগুলো হয়তো নিছক গুজব। সে এক পূর্ণিমার রাতে বরুণপুর স্টেশনে যায়।
স্টেশনে পৌঁছে সে দেখে, জায়গাটি সম্পূর্ণ নির্জন। প্ল্যাটফর্মের ইট ভাঙা, চারপাশে আগাছা গজিয়েছে। তবে তার সবচেয়ে আশ্চর্য লাগে, স্টেশনটি এমনভাবে নীরব যেন সময় থেমে গেছে।
রাত বারোটার দিকে অদ্রিজা প্ল্যাটফর্মে বসে ছিল। হঠাৎ সে দূর থেকে ট্রেনের হুইসেলের শব্দ শুনতে পায়। সে উঠে দাঁড়ায়। স্টেশন ঝলমল করে ওঠে, আর ধোঁয়ায় ঢাকা একটি ট্রেন এসে থামে।
ট্রেনটি অত্যন্ত পুরনো, যেন কোনো ভিন যুগের। জানালাগুলো ধোঁয়ায় ঝাপসা, আর প্রতিটি বগি থেকে এক ধরনের অদ্ভুত গন্ধ আসছে।
অদ্রিজার মনে হয়, এটা হয়তো কোনো বিশেষ ট্রেন। সে ট্রেনের প্রথম বগিতে উঠে পড়ে। বগিতে মাত্র দু’জন যাত্রী বসে ছিল। তারা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সামনের দিকে।
অদ্রিজা তাদের জিজ্ঞাসা করল, “আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?”
কেউ উত্তর দিল না। হঠাৎ ট্রেনের লাইট ঝিকমিক করে উঠল, আর বগির ভেতর থেকে অদ্ভুত ফিসফিসানি শোনা গেল।
ট্রেন চলতে শুরু করল। অদ্রিজা দেখতে পেল, জানালার বাইরে পৃথিবী যেন অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর, জানালার বাইরে শুধু কুয়াশা আর একরকম অদ্ভুত ছায়া ভেসে বেড়াতে লাগল।
ট্রেনের প্রতিটি বগি পেরিয়ে সে শেষ বগিতে গেল। সেখানে একটি আয়না ছিল। আয়নায় সে নিজেকে দেখতে পেল, কিন্তু তার প্রতিবিম্বটি তাকে দেখে হাসতে লাগল।
ভয়ে সে ট্রেনের দরজার কাছে গিয়ে চিৎকার করে বলল, “আমাকে নামতে দাও!”
ট্রেন হঠাৎ থেমে গেল। দরজা খুলে গেল, আর অদ্রিজা ট্রেন থেকে নেমে পড়ল।
সে চারদিকে তাকিয়ে দেখল, এটা কোনো স্টেশন নয়। বরং একটা শ্মশানের মতো জায়গা। চারপাশে মৃত মানুষের কঙ্কাল ছড়িয়ে আছে।
হঠাৎ পেছন থেকে একটি কণ্ঠ ভেসে এল, “তুমি এখানে চলে এসেছো। এখন আর ফিরে যাওয়ার উপায় নেই।”
অদ্রিজা পেছনে তাকিয়ে দেখতে পেল, ট্রেনটি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে।
পরের দিন সকালে, বরুণপুর স্টেশনের কাছে একটি কুয়োর ধারে অদ্রিজার ক্যামেরা পাওয়া যায়। ক্যামেরার শেষ ছবিতে ছিল ট্রেনের জানালায় একটি মুখ—যে মুখটি অদ্রিজার নিজের ছিল, কিন্তু তার চোখ দুটি ছিল ফাঁকা।
বরুণপুর স্টেশন নিয়ে গুজব আজও থামেনি। কিন্তু অদ্রিজার সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা তার ক্যামেরার ফ্রেমেই থেকে গেছে।
শেষ।