চিলিতে ১৯৭৩ সালে যা ঘটেছিলো... (লং পোস্ট এলার্ট)
পাবলিক লিংক কমেন্টবক্সে
❄️
২৩.১২.২০২৪,সোমবার
তুমি তো আমাকে ভুলেই গিয়েছো,আমিও এ ভুলে যাওয়া একটু সামলে চলছি হয়তো নিজেকে গোছানোর অভিপ্রায়ে।
কি ভাবছিলাম জানো?মা'য়েরা সব জানে।কেন এমন ভাবনা মাথায় এলো!তুমি জানো আমার কিছু রুটিন চেকআপ আছে,সেগুলো করিনি দুই বছরের উপর।ব্লাডি জুলাই বাংলাদেশের আমার দেহে একটা থাবা রেখে গিয়েছে,মনের কথা আর নাই বা বললাম।
রুটিন চেকে গিয়েছি হাসপাতালে,ওদের ড্রেস পরতে হয়।টেস্টের ধরন অনুযায়ী ড্রেস দেয় মানে রঙ আর কি ড্রেসের।আমার ভাগে পড়েছে পিংক কালারের ড্রেস-নিজের জ্যাকেট ফ্যাকেট সব ঝুলিয়ে চেঞ্জ রুমে বসে আছি ডাক পাওয়ার জন্য।
নিজেই নিজের এই বৃদ্ধ ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু ড্রেসের কালারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম-এত মানিয়েছে আমাকে!চেঞ্জরুমের সেই কিউবিকলে বসে একা একা হাসলাম-এক ঈদে সকল জল্পনা কল্পনা অবসান করে কিভাবে কিভাবে যেন দুই দুইটা ফ্রক পেলাম।দু'টোই পিংক কালারের-আম্মু আমাকে হালকা কালার,পিংক কালার এসব কাপড় ই বেশি পরাতো।আমার আম্মু জানতো তার মেয়েকে কিসে মানায়,বুঝছো?
এই কালার নিয়ে ভেবেই গত কয়েকমাসে আমার মাথা ভারী হয়ে আছে-কালার রেভুলেশনের চক্বরে এই বিশ্ব ভুগছে কত না বছর!রাস্তায় বসেই দেখলাম সার্বিয়া উত্তাল সেই একই সিআইএ'র টেক্সট বুক,আমেরিকার জবরদস্তি দেশে দেশে।
সাড়ে তিনটায় এসেছি,হাসপাতালের দেয়া টাইম-কখন ডাক পাবো কে জানে! এ ফাঁকে মনে হলো কতকাল কবিতা পড়ি না।আমি তো প্রতিদিন পড়া মানুষ,বাংলাদেশের ঐসব তথাকথিত লেখক আমি না যারা গত ত্রিশ বছরে এক পাতা বই পড়েনি।আমার একমাত্র শক্তি পড়া,পড়া এবং পড়া।কি মনে করে পাবলো নেরুদা'র কবিতা পড়লাম। কতজনে যে অনুবাদ করেছে নেরুদার জবুথবু আত্মা কবিতাটা!
"আমরা এমনকি এই গোধূলিকেও হারিয়ে ফেলেছি।
আজ সন্ধ্যায় যখন পৃথিবীর বুকে নেমেছিল নীল রাত্রি
তখন কেউ আমাদেরকে হাতে হাত ধরা দেখেনি।
আমি আমার জানালা দিয়ে দেখেছি
দূরের পর্বতশিখরে সূর্যাস্তের উৎসব।
কখনো কখনো সূর্যের একটি টুকরো
আমার মুঠোতে বন্দি মুদ্রার মতো জ্বলে উঠেছিল।
তুমি যে বিষণ্ণতার কথা জানো তাতে জবুথবু
আমার আত্মাকে নিয়ে আমি তোমার কথাই ভাবছিলাম।
তুমি তখন কোথায় ছিলে?
আর কে ছিল তোমার সঙ্গে?
কী বলছিলে তোমরা?
আমি যখন বিষণ্ণ এবং ভাবি যে তুমি অনেক দূরে
তখনই কেন সবটুকু ভালোবাসা অমন আচমকা জড়িয়ে ধরে আমাকে?
বরাবরের মতো ঠিক গোধূলিবেলায় শেষ হওয়া বইখানি হাত থেকে খসে পড়ে
পায়ের নিচে কুঁকড়ে থাকা আহত কুকুরের মতো গোটানো আমার নীল সোয়েটার।
সর্বদা, সর্বদাই তুমি সন্ধ্যার ভেতর দিয়ে
গোধূলি মুছে দেওয়া মূর্তিগুলোর দিকে ক্রমে অপসৃত হয়ে যাও।"
নোবেল বিজয়ী কবি,কত কি দেয়ার ছিল আমাদেরকে তার!কেন যেন দীর্ঘশ্বাস উঠে এলো আমার বুক চিরে অজান্তেই।কত কঠোর নিষ্ঠুর এ বিশ্ব রাজনীতি এবং আমেরিকা।
নেরুদার যে দেশে জন্ম সেই চিলিকে আমেরিকার সিআইএ ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিলো শুধু সেখানে তাদের পছন্দের শাসক ছিল না এ উসিলায়।
১৯৭৩ সালে চিলিতে আমেরিকা কি ঘটিয়েছে তার নথিপত্র আমেরিকা নিজেই উন্মুক্ত করেছে তারা চাইলেই যা খুশি করতে পারে তা বুঝানোর জন্য।১৯৭০ সালে ৪ সেপ্টেম্বর চিলিতে যে নির্বাচন হয়,তার মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে সালভাদর আলেন্দে বিজয় লাভ করেন।প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কিসিঞ্জার এ জিনিস একদমই সাদরে গ্রহণ করেননি।কারণ চিলিতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে পুরো লাতিন আমেরিকা দেখা যাবে একই পথে হাঁটবে,এবং তা হলে আমেরিকার ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সিআইএ ১৯৭০ সালে চিলির তৎকালীন সেনাপ্রধান রেনে স্নাইডারের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যায় অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখলের জন্য।স্নাইডার অমত জানানোর সাথে সাথে তাকে খু'ন করে সিআইএ।১৯৭০ সালের সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়।নিক্সন তার কাজ থামিয়ে রাখার কোন কারণ নেই।লাতিন আমেরিকায় নিক্সন তার মিত্রদের সাথে পরামর্শ করে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে চিলির প্রবেশ বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়।চিলির প্রধান রপ্তানি পণ্য তামার বৈশ্বিক মূল্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে নিক্সন প্রশাসন।চিলিতে আলেন্দে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-ধর্মঘট ঘটানোর জন্য অব্যাহত উস্কানি দিতে থাকে নিক্সন প্রশাসন।সাথে চলে চিলির সেনাবাহিনীকে অভ্যুত্থান করার লক্ষ্যে সমর্থন দেয়া।
নিক্সন বাহিনী খেয়াল করো সংবিধানের প্রতি অনুগত সেনাপ্রধান রেনে স্নাইডারকে খু'ন করে দুইধরনের লাভের জন্য এক রেনে স্নাইডার খু'ন হলে সেনা সদস্যদের বুঝানো সহজ হবে তাদের সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্ট আলেন্দের হাতে খু'ন হয়েছে,এতে আলেন্দে সেনা সমর্থন হারাবে;
দুই নিক্সন তাদের পছন্দের কাউকে সেনাপ্রধান করতে পারবে যে ডানপন্থী হবে।এখানে উল্লেখ্য ১৯৫৩ সালে নিক্সন ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বলিভিয়া থেকে ব্রাজিল ও টেক্সাস সীমান্ত থেকে তিয়েরা দেল ফুয়েগো পর্যন্ত সমগ্র লাতিন আমেরিকায় বামপন্থীদের ঘায়েল করতে অভ্যুত্থান ঘটাতে ডানপন্থী স্বৈরশাসকদের মদদ দিতে থাকে।
চিলিতে ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত কয়েক দশক ধরে গণতন্ত্র বহাল ছিল। আলেন্দে আসাতে সেখানে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো,ধনী গরীবের ব্যবধান কমার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিলো এবং অনেক ব্যবসা প্রাইভেটাইজেশন থেকে জনকল্যাণে রাষ্ট্রের হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছিলো।
সিআইএ 'রাজনৈতিক যুদ্ধের' জন্য লাখ লাখ ডলার ইনভেস্ট করে যাচ্ছিলো অনেক বছর ধরেই।নিক্সন সিআইএ প্রধান হেলমকে আলেন্দের যেন অভিষেক না হতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
সিআইএর অবমুক্ত করা দলিলে দেখা যায় ১৯৭০ সালের ২৫ মার্চ,২৭ জুন ও ৭ আগস্ট কিসিঞ্জারের সভাপতিত্বে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত কমিটির বৈঠক হয়,যেখানে ছদ্মবেশী অভ্যুত্থান এবং আলেন্দে ও তার সোশ্যালিস্ট পার্টিকে শায়েস্তা করার সিদ্ধান্ত হয়।সিআইএ তাদের অনুগত সামরিক প্রধান খুঁজতে থাকে।
কি একটা অবস্থা! গণতন্ত্রের ফাঁক কি জানো? গণতন্ত্র এমন এক সরকার ব্যবস্থা,যেখানে জনগণ সরকার গঠন করলেও ক্ষমতা তাদের হাতে থাকে না।কারণ,ভোটাধিকার এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা এক জিনিস নয়।রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা থাকে নির্দিষ্ট কয়েকটি গোষ্ঠীর হাতে। আলেন্দে পড়ে যান চিলি ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্রের হাতে।সমাজতন্ত্র তো পুঁজিবাদের প্রসার ঘটাবে না।আলেন্দের সাথে নোবেলবিজয়ী কবি পাবলো নেরুদা ও জনপ্রিয় শিল্পী ভিক্টর হারার একাত্মতা প্রকাশ করেন।এতে আরও ক্ষুব্ধ হয় আমেরিকা,তার সিআইএ।
যেটা বলছিলাম চিলির ইন্টারন্যাশনাল টেলিফোন এন্ড টেলিগ্রাফ কোম্পানির (আইটিটি) পক্ষ থেকে সিআইএ ও হেনরি কিসিঞ্জারকে জানায় আলেন্দে যেন ক্ষমতায় না আসে-কারণ চিলির টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর আধিপত্য বিস্তারকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই আইটিটি'র আলেন্দে এলে তাদের প্রাইভেট বিনিয়োগ হারানোর আশঙ্কা ছিল,টেলি যোগাযোগ হয়ে যেতে পারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন।
আলেন্দে রাষ্ট্রে আয় বৈষম্য হ্রাস,বেকারত্ব বিলুপ্তি,শিক্ষা ও চিকিৎসাখাতে জনগণের অংশগ্রহণ সহজ করার চেষ্টা করছিলেন।তিনি চেয়েছিলেন চিলিতে বিদেশী কোম্পানিগুলোর জাতীয়করণ,বিশেষ করে তামা শিল্পের দুই বৃহৎ কোম্পানি এনাকোন্ডা ও কেইনকোটকে জাতীয়করণ করতে চেয়েছিলেন।
চিলি বৃহৎ তামা উৎপাদনকারী হলেও তামা খনিসমূহের উৎপাদন ও রপ্তানি ছিল আমেরিকার এই দুই কোম্পানির অধীনে।বুঝেছো তো আলেন্দে কোথায় হাত দিয়েছিলেন?
তিনি এ দুই কোম্পানিকে জাতীয়করণে ঘোষণা দেন,ক্ষতিপূরণ না দিয়েই-কারণ এ দুই কোম্পানি ১৯৫৫ থেকে যে অতিরিক্ত মুনাফা করেছে তাদের আর ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির জায়গা ছিল না।এদিকে আইটিটিওও কিন্তু জাতীয়করণ হয়।যুক্তরাষ্ট্রের নথি অনুযায়ী ১৯৭০ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত আলেন্দেকে ক্ষমতাচ্যুত করার আগ পর্যন্ত আমেরিকা তিন বছরে ৮ মিলিয়ন ডলার খরচ করে শুধু ষড়যন্ত্রের পেছনে।
সিআইএ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে,সেনাবাহিনীতে আলেন্দের জনপ্রিয়তা কমানোর প্রোজেক্ট হাতে নেয়।এ ষড়যন্ত্রে সামিল হয় চিলির অভিজাত,বিত্তশালী ও সোশ্যাল প্রেশার ক্রিয়েট করতে পারে এমন জনগোষ্ঠী।
১৯৭৩ সালের ২৯ শে জুন আলেন্দে একটি স্যুডো অভ্যুত্থানের শিকার হন,এটা ছিল আদতে মূল অভ্যুত্থানের আগের মহড়া।এ সময় আলেন্দে পিনোশেকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন,যে ছিল আমেরিকার চর প্রকৃতার্থে।ইতিমধ্যে আমেরিকা তার সব নাগরিককে চিলি থেকে সরিয়ে নেয়।১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পিনোশে ক্ষমতা দখল করে-
রাস্তায় নামে ট্যাংক,আকাশে জঙ্গীবিমান,পানিতে যুদ্ধজাহাজ।আলেন্দের রাজনৈতিক দলের যাকে সামনে পাওয়া গিয়েছে তার উপর নেমে আসে পিনোশে বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ।আমার কবি পাবলো নেরুদাকে হাসপাতালে মেরে ফেলে পিনোশে।নিজের ভবনে প্রেসিডেন্ট আলেন্দে আত্মহত্যা করেন পিনোশের হাতে যেন মরতে না হয় সেজন্য।জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ভিক্টর হারার কে সান্তিয়াগো ফুটবল স্টেডিয়ামে ১৬ সেপ্টেম্বর ৪০ টি গুলি করে হত্যা করে পিনোশে বাহিনী সিআইএর মদদে।
পিনোশে জাতীয় কংগ্রেস বিলুপ্ত করে,গণতন্ত্রপন্থীদের হাজারে হাজারে গুম খুন করে,ডানপন্থীরাও এ থেকে রক্ষা পায় না।সতেরো বছরে চিলির গণতান্ত্রিক ইতিহাস পিনোশে দুমড়েমুচড়ে আস্তাকুঁড়েতে ফেলে দেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকা বিশ্ব রাজনীতিতে ছলচাতুরি ছাড়া কোন কাজ করেনি।তারা গণতন্ত্র,বাক স্বাধীনতা,ন্যায় বিচার এসব গালভরা বুলি কপচে যেই তার স্বার্থবিরোধী হয়েছে তার দেশেই সেনা অভ্যুত্থান,গুপ্তহত্যা বা গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে সেই দেশে নিজের অপছন্দের সরকারের পতন ঘটিয়েছে।আলেন্দের পতনের সাথে সাথে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের ৭ থেকে ১৪ বয়সের শিশুদের যে বিনা খরচে দুধ দেয়া হতো স্কুলে তা বন্ধ হয়ে যায়।টুইশন ফ্রি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়।গৃহহীনদের ঘর তুলে দেবার কার্যক্রম হারিয়ে গেল।বিদ্যুতের দাম কমানোর প্রকল্প শেষ হলো।বিভিন্ন খাতে যে ট্যাক্স কমিয়েছিলেন তা অদৃশ্য হয়ে গেল।
অসমর্থিত সূত্র অনুযায়ী পিনোশে মোট ৫০ হাজার নেতাকর্মী যারা আলেন্দের সমর্থক ছিলেন তাদের হত্যা করেন।পিনোশে জনকল্যাণমূলক ও সমাজতান্ত্রিক সমস্ত কর্মসূচী বাতিলে করে দেয়।
১৯৭৪ সালে আলেন্দের স্ত্রী আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে বলেন যে সিআইএ'র সব দেশে একই প্যাটার্ন প্রথমে যে দেশে আমেরিকা আগ্রাসন চালাবে সে দেশের
অর্থনীতি ভেঙ্গে দেয়,
গোলমাল করে,
শ্রমিক ধর্মঘট উস্কে দেয়,
ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করে
গভঃ এর জনপ্রিয়তা হ্রাস করে
এলোপাথাড়ি খুন খারাবি করে
জনমতকে বিভ্রান্ত করে
ভাব দেখায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার
তারপর ধীরে ধীরে মিলিটারি বা তাদের পছন্দের গোষ্ঠী থেকে বাছাই করা লোকদের বসিয়ে দেয়
আলেন্দের স্ত্রী শেখ মুজিবকেও আলেন্দের মতো হত্যা করা হবে এ আশঙ্কা ব্যক্ত করে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর কাছে সেই ১৯৭৪ সালে।
প্রযুক্তির ব্যবহারে,সময়ের পরিক্রমায় সিআইএ ও তার দোসরদের কার্যপদ্ধতি কিছুটা বদলেছে সেই ১৯৭৩ বা ১৯৭৫ এর জায়গায়।কিন্তু টার্গেট সেই একই।আগে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের আধিপত্য খর্ব করা,এখন চীনের আধিপত্য খর্ব করার প্রক্রিয়া তাদের হাতে।এজন্য তারা বঙ্গোপসাগরে আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে চীনকে চাপে রাখতে চায়।এর সাথে তো ধরো যে যুক্ত হয়েছে ডিডলারাইজেশবের আশঙ্কা,ব্রিকস;আছে তেলের উপর আধিপত্য বিস্তার,জলপথ নিয়ন্ত্রণ করা,সুপেয় পানির দখল নেয়া।
তাই আমরা যে সাদা কালো রাজনীতির কথা বলি তা একধরনের রূপকথা।চিলিতে ১৯৭৩ এ যা ঘটেছে,এরপর ধরো আর্জেন্টিনা,ব্রিটেনে মার্গারেট থ্যাচার যা করেছে,ইরাক,হালের সিরিয়া,ইউক্রেন,তিউনিশিয়া,মিশর এরকম এন্তার এন্তার দেশের দিকে যদি তাকাও তাহলে বুঝবে আমাদের অবস্থা কতটা নাজুক।এখানে যদি লীগ সমর্থিত সরকার না থেকে আমেরিকার বশংবদ কোন কলাগাছ থাকতো তাহলে এত ঘটনা হয়তো ঘটতো না।
আমাদের মানুষের বোঝাপড়া খুব কম।তাদের রাজনৈতিক শিক্ষার জায়গাটা আমরা সেভাবে তৈরী করতে পারিনি।যাদের তৈরী করার সুযোগ ছিল তারা এবারের ষড়যন্ত্রে প্রত্যেকে চিলির বিত্তশালীদের মতো,ব্যবসায়ীদের মতো অংশগ্রহণ করেছে অর্থ,পদ-পদবীর হাতছানিতে।তাদের সন্তানরা কেউ আন্দোলন করেনি,মরেনি।তাদের কেউ চাকরীহারা হয়নি।তাদের কেউ ক্রমাগত মূল্যস্ফীতিতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে না।
আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারো এত কথা বলি কিন্তু উত্তরণের কথা বলি না কেন।এ আলাপ পরের লেখায় দেব।
আপাতত আমার গোলাপী এপ্রন পরা ছবি দেখো,দেখে চিলিতে সেই যে নীল সোয়েটার হারিয়ে গিয়েছিলো ভিক্টরের গিটার আর নেরুদার কবিতাসহ তা নিয়ে কল্পনা ভাবো;পৃথিবীতে প্রেম থাকে নীরবে,আর সেই প্রেমের ঘাতকশক্তি আমেরিকা থাকে ছদ্মবেশী বন্ধু হয়ে খঞ্জর হাতে।
তুমি কবে ফিরবে?