Posts

প্রবন্ধ

Duel economic theory and its relevance to Bangladesh

December 26, 2024

Fojla Rabbi

485
View

আমাদের সমাজে একটি গল্প প্রচলিত আছে যে, একবার এক ভিক্ষুককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যদি তাকে ১ কোটি টাকা দেওয়া হয় তবে সে এই টাকা দিয়ে কী করবে। জবাবে ভিক্ষুক বলেছিল সে ওই টাকা দিয়ে একটা শপিংমল বানাবে যাতে তাকে আর অন্যজনের শপিংমলের সামনে দাড়িয়ে ভিক্ষা করতে না হয়।
বাস্তবে যদিও এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যে কি না নিজের শপিংমলের সামনে দাড়িয়ে ভিক্ষা করছে। তবে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে বিলাসবহুল শপিংমল বা হোটেল-মোটেলের গেটে কাউকে ভিক্ষা করতে দেখা খুবই সাধারণ একটি দৃশ্য। যখন কেউ  এসব বিলাসবহুল শপিংমল বা রিসোর্ট ভিতরে থাকে তখন হয়তো সে নিজেকে কোনো উন্নত দেশে অবস্থানকারী ভাবতেই পারে। তখন তার কল্পনাতেও আসবে না যে তার থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরেই কেউ মলিন বা ছেড়া কাপড়ে দাড়িয়ে সাহায্য চাচ্ছে একবেলা খাবার জোগার করতে।

কিংবা ভারতে মুম্বাইয়ে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল বাড়ি আটলান্টিয়ার ছাদ থেকে দেখা মিলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বস্তির। এই বস্তিও মুম্বাইয়েই অবস্থিত।

এই দৃশ্যগুলো মূলত অল্প স্থানের ব্যবধানে অবস্থিত দুই পৃথিবীর করুণ বাস্তবতা তুলে ধরে। যেটি উন্নয়ন অর্থনীতির ভাষায় "দ্বৈত অর্থনীতির তত্ত্ব " নামে পরিচিত। উন্নয়ন অর্থনীতির জনক ও নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ "স্যার আর্থার লুইস" এই দ্বৈত অর্থনীতি ধারনাটি প্রথম প্রদান করেন। তিনি মনে করেন একটি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশে সাধারণত একই সময়ে দুইটি খাত বা দুই ধরনের চিত্র দেখা যায়। যার একটি হলো প্রথাগত অর্থনীতি ( Traditional economy)  আর অপরটি হলো আধুনিক অর্থনীতি বা (Modern economy)।

প্রথাগত বা গতানুগতিক অর্থনীতি বলতে কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিকে বুঝানো হয় যেখানে শ্রমের উদ্বৃত্ত পরিস্থিতি বিরাজমান থাকে। আর এর বিপরীত চিত্র হলো আধুনিক অর্থনীতি যেটি মূলত শিল্প নির্ভর সমাজে প্রতিনিধিত্ব করে।

স্যার অর্থার লুইসের মতে, যেহেতু কৃষিতে উদ্বৃত্ত শ্রমিক কাজ করে তাই তাদের মজুরি স্বল্প হয়ে থাকে। ফলে শিল্প খাতে যদি তারা কমপক্ষে ৩০% মজুরি বেশি পায় তবে তারা গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে কলে-কারখানায় কাজ করে। আর এতে শিল্প খাত লাভবান হয় স্বল্প মজুরিতে শ্রমের অসীম সরবরাহ পেয়ে আবার কৃষিখাতের উপর থেকেও উদ্বৃত্ত শ্রমের চাপ কমে যায়। এই যে শিল্পখাতে বিনিয়োগকারীরা স্বল্প খরচে শ্রমের সরবারাহ পাচ্ছে ফলে তারা সাশ্রয় হওয়া অর্থ পুনরায় বিনিয়োগ করতে পারছে। এতে বিকশিত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। তবে গ্রাম থেকে শহরে বা কৃষি থেকে শিল্পখাতে স্বস্তা শ্রম বা শ্রমের অসীম সরবারাহের ধারা যে সবসময় একই রকম থাকে ব্যাপারটি এমনও নয়। এই গতানুগতিক চিত্রও একসময় বদলে যায় যেটি "লুইস বাঁক ( Luis turning point) " বা দ্বিতীয় স্তর নামে পরিচিত।

এই স্তরে আর স্বস্তা শ্রমের অসীম সরবরাহ বজায় থাকে না। কারণ গ্রাম থেকে শহরে অধিক অভিবাসনের কারণে কৃষি উৎপাদন কিছুটা কমে যায়। ফলে খাদ্য পণ্যের দামও বৃদ্ধি পায় যেটি কারখানা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়।

আর তৃতীয় স্তরে এসে কৃষি উৎপাদন পুরোপুরি বাণিজ্যিক হয়ে পরে যেহেতু বাড়তি শ্রমিকের কোন চাপ বা এই খাতে কোনো ছদ্ম বেকারত্ব বিদ্যমান থাকে না। ফলে শিল্প ও কৃষি উভয় খাত লাভবান হয় এবং দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যায়। আর মোটাদাগে এটাই হলো দ্বৈত অর্থনীতির মূল কথা।

তবে অন্যসব তত্ত্বের মতো এই দ্বৈত অর্থনীতি তত্ত্বও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। কারণ যেই কৃষিখাতে ছদ্ম বেকারত্ব বা উদ্বৃত্ত শ্রমের কথা বলা হয়েছে সেটি পুরোপুরি বাস্তবসম্মতও নয়। যদি বাংলাদেশের কথাও বিবেচনা করা হয় তবে দেখা যায় এদেশে কৃষিখাতে শ্রমিকে উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি মূলত নির্ভর করে ফসল উৎপাদনের মৌসুম বা ঋতুর উপর। বিশেষ করে ধান বীজ রোপন বা ধান কাটার সময় যেমন শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দেয় আবার অন্য কোনো মৌসুমে হয়ত শ্রমিকের উদ্বৃত্তও দেখা দেয়া।

আবার সবসময়ই যে শিল্পে বিনিয়োগকারীরা স্বল্প মজুরি দিয়ে উৎপাদন চালাতে পারে ব্যাপারটিও এমন নয়। কারণ কোনো কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে বা সরকার ও শ্রমিক সংগঠনের দাবির মুখেও অনেক সময় মালিকপক্ষ মজুরি বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষপটে বিবেচনা করলে এই বাস্তবতাটি আরও বেশি দেখা যায় এদেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাতে। যে খাতে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ একটি নিত্যদিনের ঘটনা।

এই তত্ত্বে যেমনটি দাবি করা যে, শিল্পে বিনিয়োগকারীরা স্বল্প মজুরিতে শ্রমিক পেলে সাশ্রয় হওয়া অর্থ পুনরায় বিনিয়োগ করে। ফলে কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক কাঠামোগত পরিবর্তন আসে। তবে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন দেখা যায়। যেমন বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকেই বিদেশে অর্থ পাচার ও উন্নত দেশে সেকেন্ড হোম প্রজেক্টে যুক্ত থাকতে দেখা যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই তত্ত্বের বাস্তব প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

তবে বাস্তবে যেমন কোন তত্ত্বই সকল দেশের প্রেক্ষাপটে শতভাগ কার্যকরি হয় না তেমনি সেসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও একটি স্বাভাবিক ব্যাপার৷ তাই তত্ত্বটিকে শতভাগ ভুলও বলা যায় না আবার দেশের অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তনে  এর অবদানও অস্বীকার করা যায় না।

তথ্যসূত্র:
1. হক, র. (২০২৩, ফেব্রুয়ারি)। উন্নয়নের অর্থনীতি (অধ্যায় ৩: উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার তত্ত্ব, পৃষ্ঠা ৪২-৬২)।
2. Kishtainy, N. (2021, December). A Little History of Economics (Chapter: Big Push, pp. 159-165).
3. WallStreetMojo. (n.d.). Dual economy. Retrieved from https://www.wallstreetmojo.com/dual-economy/

Comments

    Please login to post comment. Login