Posts

গল্প

তোমার ছায়ায় আলো

December 26, 2024

Md. Alamgir Hossain

119
View

 

ঢাকার গরম দুপুর। তৃষ্ণার্ত মানুষ ছুটে চলে ঠান্ডা হাওয়ার খোঁজে। এমনই এক ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ির ভিড় ঠেলে ছুটছে একটি রিকশা। রিকশায় বসে আছে দুজন—তন্ময় আর মেঘলা। তাদের মধ্যে একটি অদ্ভুত নীরবতা। দুজনই চুপচাপ, তবে মনে যেন হাজারো প্রশ্ন, অনুভূতি আর স্মৃতি ভিড় করছে।

তন্ময়ের মন ফিরছে পাঁচ বছর পেছনে, যখন সে মেঘলাকে প্রথম দেখে। ইউনিভার্সিটির ক্লাসরুমে পেছনের বেঞ্চে বসা সেই মেয়েটি, যার মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকত। মেঘলা সবার মধ্যে আলাদা, তার আচরণ, হাসি আর কথাগুলোতে ছিল এক ধরনের স্নিগ্ধতা।

ক্লাসের ফাঁকে প্রথমবার তন্ময় তাকে জিজ্ঞেস করেছিল,
“তুমি এত হাসো কীভাবে? জীবন কি সত্যিই এত সহজ?”
মেঘলা হেসে বলেছিল,
“জীবন কখনো সহজ নয়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, হাসি হলো সেই আলো, যা আমাদের অন্ধকারে পথ দেখায়।”

এই প্রথম তন্ময় অনুভব করেছিল, মেঘলার মধ্যে এমন কিছু আছে, যা অন্য সবার থেকে আলাদা।

সম্পর্কের সূচনা

তন্ময় আর মেঘলার বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে গভীর হয়। তারা একসঙ্গে ক্লাস করত, লাইব্রেরিতে পড়ত, আর মাঝে মাঝে শহরের রাস্তায় হেঁটে বেড়াত। তন্ময় মনে মনে অনুভব করত, তার জীবনে মেঘলা এক নতুন রঙ এনেছে। কিন্তু সে কখনো সাহস করে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেনি।

একদিন হঠাৎ মেঘলা বলল,
“তন্ময়, তুমি কখনো ভেবেছো, আমরা মানুষ আসলে কেমন করে সম্পর্ক গড়ে তুলি?”
তন্ময় অবাক হয়ে বলল, “কেন বলো তো?”
মেঘলা উত্তর দিল, “আমার মনে হয়, আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে একে অপরের ছায়া। কেউ কারও পাশে থাকে, আলো দেয়। আবার কেউ কেউ হারিয়ে যায়।”

তন্ময় সেদিন মেঘলাকে কিছু বলতে পারেনি। কিন্তু তার মনে হলো, মেঘলা যেন তার মনের গভীর চিন্তা বুঝতে পেরেছে।

এক অনাকাঙ্ক্ষিত দূরত্ব

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হলো। তন্ময় ভেবেছিল, সে মেঘলাকে তার ভালোবাসার কথা বলবে। কিন্তু হঠাৎ করেই মেঘলা একদিন তাকে জানায়, সে অন্য একটি শহরে যাবে। তার পরিবারের কিছু জরুরি কাজের জন্য তাকে কয়েক মাসের জন্য দূরে থাকতে হবে।

তন্ময় মেঘলার চলে যাওয়ায় ভীষণ কষ্ট পেল। সে বুঝতে পারল, তার জীবনে মেঘলার গুরুত্ব কতটা। কিন্তু মেঘলা চলে যাওয়ার সময় বলেছিল,
“তুমি জানো, তন্ময়, ছায়া কখনো কাউকে ছেড়ে যায় না। আমি হয়তো কিছুদিন দূরে থাকব, কিন্তু তোমার সঙ্গে সবসময় আছি।”

মেঘলার এই কথাগুলো তন্ময়ের মনে শক্তি জোগাত।

পুনর্মিলন

কয়েক মাস পরে মেঘলা ফিরে এলো। তন্ময়ের মনে হয়েছিল, তার জীবনের হারিয়ে যাওয়া আলো আবার ফিরে এসেছে। মেঘলা আগের মতোই ছিল, কিন্তু তার চোখে একটা ক্লান্তি ছিল। তন্ময় তা বুঝতে পারল, কিন্তু কিছু বলল না।

একদিন মেঘলা তাকে বলল,
“তন্ময়, তুমি কি জানো, জীবন মাঝে মাঝে আমাদের পরীক্ষা নেয়? আমি যখন দূরে ছিলাম, অনেক কিছু শিখেছি। কিন্তু আমি সবসময় জানতাম, তুমি আমার পাশে আছ। এই বিশ্বাস আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।”

তন্ময় মেঘলাকে তার ভালোবাসার কথা জানাতে চেয়েছিল সেদিন। কিন্তু আবারও থেমে গেল।

সত্য প্রকাশ

একদিন মেঘলা হঠাৎ করে তন্ময়ের সামনে খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। তন্ময় ভয় পেয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখনই সে জানতে পারে, মেঘলা গুরুতর অসুস্থ। তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। মেঘলা এতদিন এটা তন্ময়ের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিল।

তন্ময় ভেঙে পড়ল। সে বুঝতে পারল, মেঘলার হাসির আড়ালে কতটা কষ্ট লুকিয়ে ছিল। মেঘলা তন্ময়কে বলল,
“তুমি তো জানো, আমি হাসি দিয়ে অন্ধকারকে দূর করি। কিন্তু এবার মনে হয়, এই অন্ধকার আমাকে গ্রাস করতে চায়।”

তন্ময় মেঘলার হাত ধরে বলল,
“তুমি আমার ছায়া। তুমি যতদিন থাকবে, আমার জীবনে আলো থাকবে। আমি তোমার সঙ্গে থাকব, তোমার সব কষ্ট ভাগ করে নেব।”

শেষ অধ্যায়

তন্ময় আর মেঘলা একসঙ্গে লড়াই শুরু করল। মেঘলার চিকিৎসা চলতে লাগল, আর তন্ময় তার প্রতিটি মুহূর্তে পাশে থাকল।

একদিন মেঘলা তন্ময়কে বলল,
“তুমি জানো, তন্ময়? আমি জানি না, এই লড়াই আমি জিতব কি না। কিন্তু আমি জানি, তুমি আমার জীবনে আসার পর থেকে আমি সত্যিই সুখী। তোমার ছায়ায় আমি আলোর দেখা পেয়েছি।”

তন্ময় মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুমি যদি আলোর মতো হয়ে থাকো, তাহলে আমি তোমার ছায়া। ছায়া কখনো আলোকে ছেড়ে যায় না।”

গল্পের পরিণতি

মেঘলার চিকিৎসা সফল হলো। সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠল। তন্ময় আর মেঘলা একসঙ্গে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করল। তারা বুঝতে পারল, ভালোবাসা শুধু দুজন মানুষের সম্পর্ক নয়, বরং একে অপরের ছায়া হয়ে পাশে থাকা।

তন্ময় আর মেঘলা প্রতিজ্ঞা করল, তারা একে অপরের জীবনে সবসময় আলো হয়ে থাকবে।

শেষ।

Comments

    Please login to post comment. Login