Posts

উপন্যাস

চন্দ্রমূখী

December 26, 2024

Tanjina Tabassum

137
View

ষাটোর্ধ আজমল আলী তার সামনে উপবিষ্ট কিশোরীর পানে কিছুটা আগ্ৰহ সহকারে জিজ্ঞাসা করলেন

  • - তা, কলি মা, তোমার মতামতটা খুইলা কও তো?
  • - জ্বি চাচা, আমি তো আপনারে আগেও কইছি, আমি এহন বিয়া শাদি করমু না।
  • আজমল আলীর ভ্রু কিছুটা কুচকে আসলো যা তার বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ। মেয়েটাকে এই নিয়ে তিনবার জিজ্ঞাসা করেছেন তিনি। একই উত্তর। এইটুকু মেয়ের মতামতের কি আছে তিনি বুঝলেন না। তবে জোরাজোরি করা উচিত কিনা, এই নিয়ে চিন্তিত তিনি। যতই হোক, আপন ছোট ভাইয়ের আদুরে মেয়ে। মৃত ভাইয়ের কথা মনে উঠতেই তার চোখ ছলছল করে উঠলো। তিনি ধৈর্য্য সহকারে আবারো জিজ্ঞাসা করলেন ভাই ঝি কে,
  • - এতো লেহাপড়ার কি দরকার মা? আমরা গরীব মানুষ। বামন হইয়্যা চান্দের পানে হাত দেওনের কি খুব দরকার?
  • কলি বুঝে উঠতে পারে না, শ্রদ্ধাভাজন চাচাকে কি করে বোঝানো যায়! এটা বিয়ে নয়, পড়াশোনার বয়স। 
  • - কিন্তু চাচা, আমি তো বামন না। আপনেই তো বলেন, বয়সের চাইতে আমারে লম্বা লাগে। তাছাড়া চান্দে ক্যাবল মানুষ হাত দেয় নাই, চান্দের মাটিতে হাটাহাটি ও করছে। আপনে মনে হয় জনেন না।

আজমল আলী আর ধৈর্য্য রাখতে পারলেন না। এই মেয়ে বেয়াড়া। বোঝানো বেশ মুশকিল। তাই হতাশ হয়ে তিনি  উঠে দাড়িয়ে একটু জোর গলায় বললেন

  • কলির মা, ও কলির মা, তোমার মাইয়্যা রে বুঝাও। শ্যাষ বারের মতো কইতাছি, এমন সম্বন্ধ সহজে পাওন যায় না। আমি উঠতাছি।
  • এই বলে তিনি হনহন করে বাড়ির বাহির হলেন। কলি চাচার পানে চেয়ে মুচকি হাসলো। পেছনে তাকাতেই দেখলো তার মা কাকলি বেগম বিরক্তি সহকারে তাকিয়ে আছেন তার দিকে। সে কিছু বলার আগেই কাকলি বেগম বললেন,
  • - তোরে কইছি না, তোর চাচার লগে আদব দিয়া কথা কইবি। তুই বেয়াদবি করছস তার লগে?
  • কলি জিহ্বায় কামড় দিয়ে হাসি মুখ করে বললো,
  • - কি কও আম্মা!  আমি কহন বেয়াদবি করলাম! চাচা না জানলে তারে জানাইতে হইবো না! তুমি আগে কও

তুলির জ্বর কমছে?

  • - হ, কিছুটা কমছে। তুই জামা বদলাইয়া খাইয়া নে। আমি জুলেখা ভাবির কাছ থাইক্যা একটা জরূরী আলাপ কইরা আসি।
  • এই বলে কাকলি বেগম দ্রুত পায়ে বের হলেন। কলি মাত্র স্কুল থেকে বাড়ি এসেছে। উঠানে পা রাখতেই দেখলো, তার শ্রদ্ধাভাজন চাচা চেয়ারে বসে পান চিবুচ্ছেন। তাকে দেখতেই ডাক দিলেন। সে অবশ্য বুঝতে পেরেছিলো, চাচা কোন ব্যাপারে কথা বলবেন। তাও বয়সে বড়ো। অমান্য করা যায় না। অগত্যা তাকে শুনতেই হলো। ক্লান্ত লাগছে তার। একটু বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ক্ষুধায় পেট জ্বলছে। ছোটো বোন তুলির আজ দু দিন যাবৎ জ্বর। মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে। বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে স্কুল ড্রেস ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে ভাত খেতে বসলো সে। সেদ্ধ ভাত আর আলু ভর্তা। সাথে শুকনো লঙ্কা পোড়া। এটাই ঢের। একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে খেয়ে নিলো কলি।
  •  

Comments

    Please login to post comment. Login