“ মৌন, মা আমার। সাতটা বেজে গেছে। উঠে পড়। এখন না উঠলে তোমার কিন্তু কলেজ যেতে দেরি হয়ে যাবে।‘’ মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন আহমেদ সাহেব। ‘’ তোমার এই ডাকে যদি তোমার আদুরের দুলালী উঠত তাহলে তো হয়েই যেত’’ –বললেন মিসেস আহমেদ। একটা স্মিত হাসি দিয়ে আহমেদ সাহেব আবার তার আদরের মেয়েকে ডাকতে থাকলেন। ‘’ বাবা আরেকটু ঘুমাই না! ‘’ – মৌন। ‘’ না মা, আজকে না তোমার কলেজে প্রথম দিন। প্রথমদিন এক্টু আগে যেতে হয়। ‘’ – আহমেদ সাহেব। ‘’ যাও মৌন আর কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে খেতে এসো। আর হ্যাঁ তুমি গিয়ে বাবাকে ডেকে নিয়ে এসো। ‘’-মিসেস আহমেদ। মৌন আর কোন উপায় না পেয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
(এতক্ষণে তো আপনারা বোধহয় বুঝেই গিয়েছেন যে মৌন হচ্ছে এ গল্পের মূল চরিত্র। মূল চরিত্র হিসেবে আরেকজন আছে। তার পরিচয় আমরা কিছুক্ষন পরেই পাবো। আহমেদ চৌধুরী সাহেব হচ্ছেন এদেশের একজন বড় বিজনেসম্যান। তার বাবা হাসান চৌধুরী তাদের চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা। তবে হাসান চৌধুরী এখন রিটায়ার্ড করেছেন। আর ফাজরিন চৌধুরী মৌনতা হচ্ছে আহমেদ চৌধুরী সাহেবের একমাত্র কন্যা। সে এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে।)
মৌন আর মাহিরা তাড়াতাড়ি নাস্তা খেয়ে গাড়ি করে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। গাড়িতে বসেও মৌন ঝিমাতে থাকে। মাহিরা এবার ওকে বকা দেয়। বলে- ‘’একটা মানুষের এত ঘুম কিভাবে আসে। চুপচাপ ঠিক হয়ে বস।‘’ মৌন কিছু না বলে এর বদলে একটা হাসি দেয়। মাহিরা আবার বলতে শুরু করে-‘’তুই তো ঢাকায় আসলি ঠিক আছে, কিন্তু তুই সাথে আমাকেও ধরে আনলি। এটা কোনো কথা? এছাড়া আমার বাবা মাই বা কিভাবে আমাকে ঢাকায় আসার জন্য পারমিশন দিয়ে দিল, ওইটাও তো বুঝলাম না।‘’
‘’আরে শোন, আঙ্কেলেরও কয়দিন পরেই ঢাকায় আসা লাগতো। তখন আন্টি নিশ্চই চট্টগ্রাম এ বসে থাকত না। সেও আঙ্কেলের সাথে ঢাকায় আসতো আর সাথে তোকেও নিয়ে আসতো। আর এমনিতেও দেখ তুই আর আমি সেই ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি, স্কুলেও একসাথে পড়েছি, কোথাও ঘুরতে গেলেও একসাথে গিয়েছি। এখন কলেজে পড়বো তুই সাথে থাকবি না তাই কি আর হয়?? তাই তোকেও সাথে নিয়ে এসেছি।‘’- এই বলে মৌন মাহিরা কে জড়িয়ে ধরলো।