একজন সদ্য ধনী হওয়া লোক সকালে ঘুম থেকে ওঠে নিজের বাড়ির বারান্দায় বসে বৌয়ের সাথে খোশগল্প করছেন।
বৌ বলছেন- দেখো, তোমার তো এখন অনেক টাকা পয়সা হয়েছে।
এখন আর অতো কিপটামি না করে, পোলাপানদের পুষ্টির জন্য কিছু টাকা পয়সা খরচ করো।
আমাদের একমাত্র ছেলে লটকার স্বাস্থ্যটা দেখেছো, কি নাজুক একটা অবস্থা?
এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন গোয়ালা দুধ নিয়ে যায়, অন্তত ১ লিটার দুধ তো ওর কাছ থেকে প্রতিদিন কিনতে পারো।
পিছন থেকে তখন লটকা বলে ওঠলো- মা, দুধ খামু।
বৌয়ের কথা কর্তার মনে ধরলো
বললেন- গোয়ালা দেখলেই আমারে ডাক দিবা
পরেরদিন সকালে যথা সময়ে গোয়ালা এসে হাজির।
কর্তা বললেন- ১ লিটার দুধের দাম কতো?
গোয়ালা বললো- আগ্গে, চল্লিশ টাকা।
ঠিক আছে
কাল সকাল থেকে প্রতিদিন ১ লিটার করে দুধ দিয়ে যাবা।
আচ্ছা ঠিক আছে কর্তা - বলেই গোয়ালা রওয়ানা দিলো।
কর্তা চিন্তা করলেন- চল্লিশ টাকায় ১ লিটার বলার সাথে সাথেই সে রাজি হয়ে গেলো!
দেখি না চল্লিশ টাকায় সে ২ লিটার দুধ দেয় কিনা?
গোয়ালাকে আবার ডেকে বললেন- আচ্ছা, চল্লিশ টাকায় তুমি কি ২ লিটার দিতে পারবা?
জ্বি বাবু, তা পারবো।
দুধ খেয়ে লটকার পুষ্টি বেশ যষ্টি হতে শুরু করেছে
লটকা পুষ্টিতে পরিপুষ্ট, কর্তা কত্রী দুজনেই বেশ তুষ্ট।
কিছুদিন পর কর্তা চিন্তা করলেন- চল্লিশ টাকায় ২ লিটারে রাজি হয়ে গেলো!
তাহলে সে ৩ লিটার দেয় কিনা চেষ্টা করে দেখি
গোয়ালাকে বললেন- এই তুমি কি চল্লিশ টাকায় ৩ লিটার দিতে পারবা?
জ্বি বাবু, তাও পারবো।
কিন্তু দুধ খেয়ে লটকার পুষ্টি এবার আর তেমন বাড়ে না।
খেলার মাঠে সামান্য ল্যাং খেলেই লটকা চ্যাং হয়ে ছিটকে পড়ে
কর্তা চিন্তা করলেন- দুধের পরিমাণ আরেকটু বাড়াতে হবে
গোয়ালাকে বললেন- চল্লিশ টাকায় ৪ লিটার দুধ দিতে পারবা?
জ্বি, আগ্গে
পারবো, কর্তা।
তবে দুধে পুষ্টি তো দূরের কথা দুধের রঙই আর খুঁজে পাবেন না।
সব জল রঙ হয়ে যাবে। এক লিটার দুধে আর কতো জল মিশানো যায় বলেন?
আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থাও অনেকটা এরকম
শিক্ষকদের ওপর নির্দেশ আসলো পাশের হার ষাট হবে
উনারা বললেন- নো প্রবলেম
শিক্ষাকর্তা ষাট এ সন্তুষ্ট না, আরো বাড়াতে হবে
অসুবিধা নাই, কতো চান, বলুন?
সত্তর পারসেন্ট!
আশি পারসেন্ট!
নব্বই পারসেন্ট!
নাকি
পঁচানব্বই পারসেন্ট?
চিন্তার কোনো কারণ নাই
এ প্লাস কতো চান?
শত?
হাজার?
দশ হাজার?
বিশ হাজার?
লাখ?
নো প্রবলেম
হচ্ছে, হবে, হয়ে যাবে।
যা চান সেই অনুযায়ী তাই সাপ্লাই দেয়া হবে
শিক্ষাকর্তা তো বেজায় খুশী
খালি পাশ আর পাশ
খালি প্লাস আর A প্লাসের ছড়া ছড়ি
এবার এই A প্লাস খাওয়া বাস্তবে একটা পুষ্টির নমুনা দেই
আমার ভাগ্নী-খুশীতে গদো গদো হয়ে নাচতে নাচতে ফোন করলো- মামা, শুধু জিপিএ ফাইভ না, এ প্লাস না একেবারে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি
জিপিএ ফাইভ আর গোল্ডেন এ প্লাস নামক এই অদ্ভূত জিনিস পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই
বললাম, ভালোই তো হলো,
আমরা আগে পরীক্ষা দিলে মার্কস পেতাম
তোরা সোনা পাওয়া শুরু করেছিস।
জমিয়ে রাখ, বিয়ের সময় হয়তো কোনো কাজে লাগবে!
আমার কথায় ও মনে হয় একটু রেগে গেলো।
বললো- তুমি না শুধু ঢং করো!
আচ্ছা আর কোন ঢং করবো না!
এবার বললাম- ইংরেজিতে কতো মার্কস পেয়েছিস?
তুমি না কিছুই বুঝো না,
বললাম না গোল্ডেন A প্লাস পেয়েছি!
এর কি মানে বোঝো?
তোর কাছ থেকে মানে বোঝারই তো চেষ্টা করছি
দেখি তোর গোল্ডেন এ প্লাসের নমুনা
বলতো আমার একটা পোষা বিড়াল আছে এবং আমি আমার বিড়ালটিকে খাওয়াই-এর ইংরেজি কি?
ভাগ্নি খিলখিল করে হেসে বললো ও মা, এইটা তো একেবারে সোজা
এর চেয়ে কতো কঠিন সৃজনশীল প্রশ্নের জবাব দিলাম।
এটার ইংরেজি হবে- I am a cat and I eat my cat. গ্রামার কি ঠিক হয়েছে মামা?
বললাম, গ্রামারের আর দরকার কি?
তোর নিজের গ্ল্যামার ঠিক রাখলেই হবে।
তোকে তো কর্তার ছেলে লটকার সাথে বিয়ে দিবো!
সে জল মিশ্রিত দুধ খেয়ে খেলার মাঠে লটকে থাকে
আর একটা শিক্ষার মাঠে নিজেই বিড়াল হয়ে নিজের বিড়াল খেতে থাকে!
কিছুদিন আগের ঘটনা
মফস্বলের এক অনুষ্ঠানে
জনৈক মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় একটি ঘরোয়া বৈঠকে বলছেন-
আপনারা আমাকে যেভাবে হসপিটালাইজড করেছেন তাতে আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি!
মন্ত্রী মহোদয়েরর কথা শুনে এ, ওর দিকে তাকায়, ঘটনাটা কি
মন্ত্রী আবার এখানে হাসপাতালে কবে ছিলেন?
আসলে উনি বলতে চেয়েছিলেন- যেভাবে হসপিটালিটি করেছেন!
বড়ই নাজুক একটা অবস্থা!
দুধ মনে করে পানি খাওয়ানো
এখনকার শিক্ষা ব্যবস্থাও তো খুবই নাজুক,
আসলে দুধের পরিবর্তে বেড়েছে শুধুই জল আর শিক্ষার মানের পরিবর্তে বেড়েছে শুধু পাশের ফল!
তারপরও যারা ভালো রেজাল্ট করে পাশ করেছো তোমাদের জন্য অনেক শুভকামনা আর যারা উদ্ভট জিপিএ ফাইভ অথবা গোল্ডেন এ পেলে না বলে মনে দুঃখ পাচ্ছো
তারা কোনো দুঃখো পেয় না
জীবনটা অনেক বড়ো, একটা সার্টিফিকেটই কিন্তু জীবনের সব কিছু না।