Posts

কবিতা

আয়নাঘর: এক যুগের অশ্রুস্নাত আখ্যা

December 28, 2024

রবি আল ইসলাম

21
View

আয়নাঘর: এক যুগের অশ্রুস্নাত আখ্যান

রবি আল ইসলাম

আয়নাঘর—যে ঘর আয়নার মতো স্বচ্ছ নয়,

তবু সেখানে প্রতিফলিত হয় শোষণ, লাঞ্ছনা, আর অন্তহীন যন্ত্রণা।

নীরব এক কারাগার,

যেখানে শিকল-ঝনঝন শব্দের সাথে

মিশে আছে ছয় শতাধিক নিরীহ মানুষের দীর্ঘশ্বাস।

১৫ বছর ধরে যে ঘর বন্দি করে রেখেছিল

বিদ্রোহী মন, স্বাধীনতার স্বপ্ন আর প্রতিবাদের কণ্ঠ।

তারা কেউ সন্তানহারা বাবা,

যে নিজের হাতে লালন করেও ভুলে গেছে সন্তানের মুখ,

তারা কেউ স্ত্রী হারা নয়,

তবু বিরহ শোকের ভার নিয়ে কাটিয়েছে দিন।

তারা কেউ এতিম নয়,

তবু এতিমের মতোই হারিয়েছে স্বজনদের উষ্ণতা।

৫ই আগস্টের অভ্যুত্থানে

বাংলাদেশের মাটি কাঁপিয়ে মুগ্ধ সাইদরা

মুক্ত করেছে আয়নাঘরের অন্ধকার ঘর।

কেউ ফিরে এসেছে জীবনের আলোয়,

আবার কেউ চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে এবং

মৃত্যুর অন্ধকারে শুয়ে রয়েছে তাদেরই রক্তে ভেজা ভূমিতে।

যারা ফিরে এসেছে, তাদের চোখে ছিলো

১৫ বছরের জমে থাকা জল—

সুনীল আকাশ, শ্যামল মাঠ আর আপনজনদের জন্য।

তবু প্রশ্ন রয়েই যায়:

আয়নাঘরের দেয়ালে লেগে থাকা

স্বজনদের আর্তনাদ আর অশ্রুর দাগ,

তা কি মুছে ফেলতে পারবে কোনো স্বাধীনতার সূর্য?

যে সন্তান মায়ের কোলে ফিরে আসেনি,

যে স্বামী, স্ত্রীর প্রতীক্ষায় আর আসবে না,

তাদের জন্য কেমন ছিলো সেই অপেক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত?

তবুও, আশা জাগে।

আশা জাগে তাদের রক্তে লেখা নতুন দিনের।

যে দিন শোষণের শিকল ভাঙবে,

লাঞ্ছনার আয়নাঘর ধ্বংস হবে চিরতরে।

যে দিন প্রতিটি মুখে ফুটবে

স্বাধীনতার হাসি আর ভালোবাসার গান।

তাদের নামে রচিত হবে নতুন অধ্যায়,

যেখানে থাকবে কেবল আলো,

আর হৃদয়ের গভীরে অমর এক শপথ—

স্বাধীনতার মাটিতে আর কোনো আয়নাঘর হবে না।

২৮/১২/২৪

বিকেল ৪.০০

পল্লবী, মিরপুর


 

Comments

    Please login to post comment. Login