এখনও ভালোবাসি! সময়টা ছিল যখন সদ্য কলেজে উঠেছি। ইচ্ছা ছিল দূরে কোথাও ভর্তি হবো, কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠেনি। তবে খুব বেশি কাছে যে ভর্তি হয়েছিলাম তাও না। বাসা থেকে হেঁটে গেলে প্রায় ৪০ মিনিট লাগতো, আর রিক্সা বা অটোরিক্সা করে লাগতো ২০ মিনিট। মোটামুটি দূরে! তবে শুরুর দিক হেঁটে গেলেও পরে বেশির ভাগ সময় রিক্সা করেই গিয়েছি। সেসব কথা না হয় থাক। এসএসসি দিলাম, রেজাল্ট আসানোরূপ হলো না। খারাপ লাগলো, রেজাল্ট নিয়ে লজ্জা এর চিন্তা ২ ই কাজ করতো। সবাই কত ভালো ভালো জায়গায় যেতে পারবে ভালো রেজাল্ট নিয়ে, আমি আর কি করবো! খুব বেশি যে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিয়েছিলাম তাও না, পরীক্ষার ২-৩ মাস আগেই পড়েছি, তাও কোনমতে, তবে A+ পাওয়ার মতো পরীক্ষা দিয়েছিলাম, ০.২৮ এর জন্য আর A+ টা এলো না। মনে কষ্ট ছিল অনেক। তবে নতুন কলেজে ভর্তি হয়ে এত নতুন মানুষ দেখে পুরো ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমাদের কলেজের আমাদের বিজ্ঞান শাখা ছিল ২ টা, আমি ছিলাম ক শাখায়, খ শাখায় ছিল বাকিরা। প্রত্যেক শাখাতেই ১২০ করে সিট বরাদ্দ ছিল, তবে আমাদের শাখায় ছিল ১১২ জন আর অন্য শাখায় ছিল ৭০-৮০ জন যত দুর মনে পড়ে। আমাদের শাখায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা ছিল অনেক। বয়সের দোষ বা অন্য দোষই বা হোক না কেনো, মেয়েদের প্রতি স্বভাবতই আকর্ষণ থাকতো, তবে সেভাবে কাউকে দেখতাম না, শুধু এক পলক তাকিয়ে - ঘাড় ঘুরিয়ে নিতাম, যদি দেখে ফেলে! যদি কিছু মনে করে! আর আমি অনেক বেশি লাগুক প্রকৃতির ছিলাম। মেয়েদের সাথে কথা বলতাম না কখনো, তবে কথা বলতে গেলে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারতাম না, হয় নিচে তাকিয়ে বা অন্য কোথাও খেয়াল দিয়ে শুধু কান খাড়া করে কথা শুনতাম এর জবাব দিতাম। তবে তেমন গুরুত্বপুর্ণ কোনো কারণে কখনো কারো সাথে কথা হয়নি। তবে সবার সাথে পরিচিত হতে গিয়ে একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়, কথা হয়, দেখতে সুন্দরী ছিল, তবে প্রথমবার দেখে প্রেমে পড়ার মত অনুভূতি হয়নি, অনুভূতি ছিল স্বাভাবিক।
ফিজিক্স ১ম পত্রে বল ও ভরবেগ সম্পর্কিত চ্যাপ্টার অনুশীলন ছিল, সেগুলো স্যার করিয়ে আমাদের বাসায় করতে দিত, বাসায় এসে করতে বসতাম, একটা পারলে বাকি ৩ টা পারতাম না, কলেজ গিয়ে অন্যদের থেকে হেল্প নিয়ে তারপর করতে হতো। তবে আসতে আসতে কিছুটা ভালো করতে লাগলাম। তবে একদিন - কোনো একটা ম্যাথ আমি করেছি, কিন্তু সেটা হয়েছি কি না, সেটা আমি নিশ্চিত ছিলাম না। ঠিক আগের মত করেই কলেজ গেলাম, দেখলাম ক্লাসে বেশি কেও নেই, ৩-৬ জন হবে, তবে তারা ম্যাথ ইস্যু নিয়েই কথা বলছে, তবে একটা মেয়ের দিক খেয়াল গেলো যে আমার ম্যাথ টা খুলে বসে আছে, হ্যাঁ এটা সেই মেয়ে, যার সাথে পরিচিত হয়েছিলাম শুরুর দিন। আমি কিছু না ভেবেই তাকে তার খাতাটা দিতে বললাম, সে দিলো, আমি আমার খাতা বের করে তার ম্যাথ এর সাথে মিলাতে লাগলাম, মেয়েটাও কাছে আসলো, দেখলো যে আমি একই ম্যাথ একই ভাবে করেছি - "তুমি তো ম্যাথ করছই, আবার আমার থেকে চাইলে যে? কারণ কি?" আমি পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম! "আহ, আমি তো আমার..." ঠিক তখনই মেয়েটাকে অন্য এখন ডাক দিলো, মেয়েটা তার খাটা নিলো, আমার দিক একটু তাকালো, তবে তাকানোর মধ্যে আমি ভাষা খুঁজে পেয়েছিলাম - "আমায় পছন্দ করো? নাকি অন্য কিছু? নিজে ম্যাথ করার পরেও আমার থেকে কেনো খাতা নিলে? হম?"
ব্যাপার টা এমন না যে মেয়েরা রাগ করে তাকিয়েছে, আবার এমনও না যে রোমান্টিক ভঙ্গিমায় তাকিয়েছে! কেমন যেনো ঠিক এই কথাটাই শেষবার তাকিয়ে মনে হয় বলে গেলো আমায়! আমি চুপ! আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। তবে এমনটা ভাবার কিছু নেই যে এই মেয়েটাকে নিয়েই আমার গল্প!!! হাহাহা!!! এটা বলার কারণ এটাই যে ক্ষুদ্র কোনো বিষয়েও আমার মাথা খুব সিরিয়াস ভাবে কাজ করে, ঘুরে! আর এই বিষয়টি নিয়ে আমি ৩ দিন যাবত শুধু ভাবছি যে ও কি যে ভাবলো!!! তবে মেয়েটার প্রতি প্রেম সম্পর্কিত কোনো ফিলিংস কাজ করেনি আসলে। একদম খাঁটি ক্লাসমেট যাকে বলে, ঠিক তেমনই মনে হয়েছে।
চলতে থাকবে...