Posts

গল্প

14 February

December 29, 2024

Kaniz Fatema Akhi

89
View

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, রাফসান সুমির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাফসানের হাতে  গোলাপ ফুলের গাছ। তাতে একটা ফুল আর চার পাঁচটা কলি আছে। সুমি জিজ্ঞেস করল, 
এটা কি? 
_গোলাপ ফুলের গাছ। গোলাপ ফুল কিনতে গিয়েছিলাম। দুইটা ফুল ৩০০ টাকা।  কি অবস্থা দেখতো! পরে  দেখলাম এক ভ্যানওয়ালা ফুলের গাছ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুদ্ধি করে তার কাছে গেলাম। এ গোলাপ ফুলের গাছটা কিনলাম ২০০ টাকা দিয়ে । এখানে একটা ফুল আর চার-পাঁচটা কলি আছে। কলিগুলো আর কয়েকদিন পরেই ফুটবে। 
_বুঝলাম, আমায় ডেকেছো কেন? 
_ইয়ে, মানে সুমি, আমি প্রত্যেক বছর তোমাকে ফুলের গাছ দিতে  চাই। তুমি নিবে? 
_মানে কি? ফুলের গাছ কেন দিবে? 
_ ইয়ে মানে, সুমি,সেই স্কুল লাইফ থেকে তোমাকে ভালো লাগে। বলব বলব করে আর বলা হচ্ছিল না। ভেবেছি চাকরি পেয়ে এরপর তোমায় বলবো। আমি সবসময়ই লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার খোঁজ খবর রাখতাম। কিছুদিন যাবত বিয়ের প্রপোজাল আসছে তোমার । বিয়ের বয়স হয়েছে বলে। ওইদিন থেকে আমার ঘুম শেষ। অনেক বুদ্ধি করে তোমার এক একটা বিয়ে আমি ভেঙে দিয়েছি  ।

সুমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। সে এত অবাক হয়েছে যে তার পুরো শরীর পাথর হয়ে গেছে। কিছু বলতে পারছে না।
রাফসান সুমির অবস্থা বুঝতে পারলো। এবার মাথা নিচু করে বলতে লাগলো, 
_আমি জানি তুমি রাগ করছ।কিন্তু আমি তোমায় আমার অবস্থা বোঝাতে পারবো না।প্রতিদিন নামাজ পড়ে আল্লাহ তায়ালা কে শুধু তোমার কথা বলেছি। আমি কলেজ এ ভর্তির পর থেকে টিউশনি করেছি। একটা টাকা কখনো নষ্ট করিনি। সব তোমার জন্য জমিয়েছি। প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার মত হয়েছে জানো?

আমি চাকরি পেয়েছি দেড় মাস হয়েছে। জানুয়ারিতে জয়েন করেছি। ফেব্রুয়ারি ১ তারিখে বেতন পেয়েছি। সবমিলিয়ে বেতন ৩০ হাজার টাকা পেয়েছি। এখন কি কিছু বলবে?

সুমি আসলে কি বলবে বুঝতে পারছে না। একই স্কুলে পড়েছে সুমি  আর রাফসান।  হাই, হ্যালো ছাড়া তেমন কোন কথা তাদের কখনোই হয়নি। এই ছেলে এত বছর পরে এসে বলছে ভালোবাসে। তার তার জন্য আশা বিয়ের প্রপোজাল গুলো সে ভেঙেছে। এসব শোনার পরেও কেন জানি সুমির রাফ্সানের উপরে রাগ হচ্ছে না। কিছু একটা হচ্ছে কিন্তু সেটা কি সে বুঝতে পারছে না।

_বেতনের টাকা কি করেছ? সুমি খুব শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল। 
_২৯ হাজার টাকা দিয়ে একটা আংটি কিনে ফেলেছি। স্বর্ণের আংটি, ২২ ক্যারেট। তোমাকে দিব বলে। 
_এই তুমি পাগল?  তোমার পকেটে আছে কত টাকা? এতগুলো টাকা একসাথে শেষ করেছ, তোমার মাস যাবে কি করে?

_একজনের কাছে টাকা  ধার চেয়েছি। সামনের মাসে দিয়ে দিব। 
_কারো কাছ থেকে কোন টাকা ধার নেওয়ার প্রয়োজন নেই। চলো আমার সাথে। যেই দোকান থেকে আংটি কিনেছো সেটা ফেরত দিয়ে দিবে। 
_একবার দেখে নাও আংটিটা। ভীষণ সুন্দর। 
_প্রয়োজন নেই। চলো এখন। আর তোমার দুই বন্ধুকে  ফোন দিয়ে ডাকো। 
_কোথায় ডাকবো? 
_এখানে কাছে কোথায় জানি কাজী অফিস আছে, ওখানেই ডাকো। আমরা আজকেই বিয়ে করবো। আংটিটা বিক্রি কর। টাকাটা নাও। বিয়ে করতে হলে তো কিছু না কিছু টাকা লাগবে, তাই না?

এবার রাফসান পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। সুমি  এবার বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রাফসান কে বলল, " কি হলো, ভয় পেয়েছো? আমি সিরিয়াসলি বলছি। তুমি যদি এতক্ষণ আমার সাথে নাটক করেও থাকো তাও তোমাকে বিয়ে করতে হবে আর যদি তুমি সত্যি সত্যিই  আমায় ভালোবেসে থাকো তাহলে তো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আজকে তুমি শেষ। 
এই শেষ হওয়ার জন্যই তো রাফসানের কত অপেক্ষা, কত প্রতীক্ষা। রাফসানের চোখে মুখে বিজয়ের আনন্দ। এতদিন সুমিকে দেখলে রাফসানের লজ্জা লাগতো। কিন্তু এখন কেন জানি রাফসানের সুমির দিকে তাকাতে লজ্জা লাগছে না। মনে মনে রাফসান বলছে, সুমি তুমি আমার, শুধুই আমার। 
 

Comments

    Please login to post comment. Login